নিউইয়র্ক: উত্তর আমেরিকায় অবস্থিত বৃহত্তর চট্টগ্রামের অধিবাসীদের আয়োজনে ২৮ রমজান (৩ জুলাই) রোববার ব্রুকলীনের ব্যস্ততম এলাকা চার্চ ম্যাকডোনাল্ড এভিনিউস্থ রাধুনী রেষ্টুরেন্টে দোয়া ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে। উক্ত মাহফিলে অনেক চট্টগ্রামবাসীর উপস্থিতির সমাগম হয়। বিভিন্ন রকমের ইফতার আইটেমের বিশাল সমাহারে সকলে প্রাণখুলে উপভোগ করেন। আয়োজনে ছিলেন বৃহত্তর চট্টগ্রামের সচেতন নাগরিকগণ। সন্ধ্যা ৭টায় চট্টগ্রাম সমিতির অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সাবেক সদস্য সচিব মোহাম্মদ সেলিমের শুভেচ্ছা বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ইফতার মাহফিল আরম্ভ হয়। দোয়া ও মিলাদ পড়ান চট্টগ্রামের বিশিষ্ট আলেম মওলানা আব্দুর রউফ। মোনাজাতের পূর্বে কয়েকজন সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে মোহাম্মদ সেলিম সবাইকে স্মরণ করিয়ে দেন যে, এ মাহফিল কোন ধরনের নির্বাচনী প্রচারনামূলক সভা নহে, শুধুমাত্র চট্টগ্রামবাসীদেরকে চট্টগ্রাম সমিতির সদস্যপদলাভে উদ্ভুদ্ধ করনের লক্ষ্যে। বিগত কয়েকমাস যাবত বারবার সদস্য ভর্তির বিজ্ঞাপন দিয়েও কেন এখনও ১৫০ জনের বেশি সদস্য ভর্তি হয়নি উল্ল্যেখ করে তিনি বলেন, বর্তমান কার্যকরী পরিষদ সদস্য ভর্তির ফি কোন কারণ ব্যতিত বৃদ্ধি করে ৩০ ডলারে উন্নীত করেছে। সাথে চট্টগ্রাম সমিতির ছবিযুক্ত মেম্বার আইডি নেয়ার শর্ত জুড়ে দিয়েছে। এখানে উল্লেখ করা দরকার যে, অনেক মহিলা পর্দানশীল ও রক্ষনশীল হওয়ায় তাদের ছবি দিতে আগ্রহী নয়, তাছাড়া এ ধরনের আইডি এর ব্যবহার উপযোগিতা নেই। চট্টগ্রাম সমিতির সাবেক সভাপতি মোঃ হানিফ আলোচনায় বলেন বর্তমানে সমিতি ভবন ঋণমুক্ত। সদস্য ভর্তি ফি ৩০ ডলার করার কোন যুক্তি নেই, যদি ১০ ডলার ধার্য করতো তাহলে চট্টগ্রামবাসীরা নিজ উদ্যোগে আজকে দশ হাজার সদস্য হয়ে সমিতির ফান্ডে একশত হাজার ডলার জমা হতো। বর্তমান কার্যকরী পরিষদে বিগত ২২ মাসের কোন ধরনের হিসাবের সচ্ছতা নেই। পরপর দু’বার ইন্টারনাল অডিট কমিটি গঠন হলেও কাউকেউ কাজ করার জন্য দায়িত্ব দেয়নি কারণ সভাপতির দুর্বলতা বেরিয়ে আসবে বলেই। তাই তিনি সকল চট্টগ্রামবাসীকে অনুরোধ করেছেন যাতে ১৬ জুলাই শেষ হওয়ার পূর্বেই সমিতিরি কার্যকরী পরিষদের সাথে যোগাযোগ করে অতিসত্বর সদস্যপদ গ্রহণ করে নির্বাচনী কার্যক্রম গ্রহণ করার মাধ্যমে সুযোগ্য নের্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেন।
আলোচনায় হাসান চৌধুরী বলেন, বিগত দিনে বর্তমান সভাপতি কোন নিয়ম মানেনি। তাই সাংবিধানিক নিয়ম প্রতিষ্ঠার জন্য নেতৃত্বের পরিবর্তন অপরিহার্য।
ইফতার মাহফিলে বাংলাদেশ সোসাইটির আসন্ন নির্বাচেনে সভাপতি পদপ্রার্থী যথাক্রমে আজমল হোসেন কুনু ও কামাল আহমেদ এবং সাধারন সম্পাদক পদপ্রার্থী যথাক্রমে চট্টগ্রাম সমিতির সাবেক সভাপতি কাজী আজম ও রুহুল আমিন সিদ্দিকী ছাড়াও উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিবর্গের মধ্যে নির্বাচন কমিশনার গিয়াস উদ্দিন, উপদেষ্টা হাজী শফিউল আলম, মোঃ নাজের, ওমর ফারুক, মফজল আহমদ, কার্যকরি কমিটির সহ-সভাপতি খোকন কে চৌধুরী, পরিমল কান্তিনাথ, সাধারন সম্পাদক আবু তাহের, যুগ্ম-সম্পাদক মাসুদ সিরাজী, দপ্তর সম্পাদক মোঃ দিদার, সমাজকল্যাণ সম্পাদক টি. আলম, নাসির মাষ্টার, অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির সাবেক সদস্য কামাল হোসেন মিঠু, আবুল কাসেম, মোঃ কাউসার, কমান্ডার নুরুন্নবি, শফি শিকদার প্রমুখ উপস্থিত মধ্যে ছিলেন।
ইফতার মাহফিলে বলা হয়: উক্ত বিশাল আয়োজনে বিপুল সংখ্যক চট্টগ্রামবাসীর উপস্থিতি প্রমান করে বিগত দিনের চট্টগ্রাম সমিতির প্রতি মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। চট্টগ্রামবাসী সবসময় চায় কিছু যোগ্যব্যক্তি সমিতির নেতৃত্বে আসুক। কিন্তু গত ২০১৪ সালের আগষ্টে সঠিকভাবে কার্যকরি পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও কিছু স্বার্থবাদী যারা বারবার সমিতিতে দুর্ণীতি করেছে, সমিতির আর্থিক ক্ষতিসাধন করেছে তাদের কু-পরামর্শে বর্তমান সভাপতি সংবিধানকে অবমাননা করে অন্যায়ভাবে সমিতির পরিচালনা করতে শুরু করেন। অসাংবিধানিকভাবে কার্যকরী কমিটির কোন সিদ্ধান্ত না মেনে নিজের মতো করে সমিতির অর্থ খরচ করেন।
কার্যকরি কমিটির সকল সদস্য সিদ্ধান্ত দেয় যে, ট্রাষ্টিবোর্ডকে তাদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে সমিতি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করে সমিতির জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে, কিন্তু আকবর আলী দূনীতি করার পরিকল্পনা মাথায় রেখে ট্রাষ্টি বোর্ডকে দুরে রাখার জন্য আসাংবিধানিকভাবে ট্রাষ্টিবোর্ডের পরিবর্তন করে মূলতঃ ট্রাষ্টি বোর্ডকে অকার্যকর করে রাখে। তার পরিকল্পনা মোতাবেক দুই জন স্বার্থবাদী যারা বিগত দিনে সমিতির টাকা আত্মস্বাতের মাধ্যমে দুর্নীতি করেছে। তাদেরকে বিতর্কিত ট্রাষ্টি বোর্ড চেয়ারম্যান, কো-চেয়ারম্যান বানিয়ে সমিতিকে কুক্ষিগত করে রেখেছে। তারা নিজের মত করে দুর্নীতি করে যাচ্ছে। ফলে গত দুই বছর ধরে সমিতির সকল কর্মকান্ডে বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। গতবার বার্ষিক বনভোজনে মানুষজন না খেয়ে এসেছে। মিলাদুন্নবীতে নিম্নমানের ও নষ্ট খাবার খেয়ে অনেকের পেট খারাপ হয়ে অসুস্থ হয়েছেন। গতবার ইফতার মাহফিলে মানুষকে দাওয়াত দেয়নি, এবার দাওয়াত দিয়েও ফকির-মিসকীনের মতো খাবার পরিবেশন করেছে। জানা গেছে পরিবেশনকৃত সামান্য খাবার নাকি ৭ ডলার ব্যয় হয়েছে কিন্তু অনেকেরই দাবী সেই খাবারের মূল্য ৩ ডলারের বেশী হবে না। এভাবে বিগত দুই বছর ধরে সমিতিকে কুক্ষিগত করে যে মহড়া চলছে তা থেকে পরিত্রান পাওয়ার জন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাই।