নিউইয়র্ক ০৩:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে আন্দোলন : পারভেজ সাজ্জাদ

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:০২:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ মে ২০১৮
  • / ৯০০ বার পঠিত

হককথা রিপোর্ট: বিএনপি’র চেয়ারপার্সন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবিলম্বে মুক্তি দাবী করেছে তারেক রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সংগ্রাম পরিষদ। পরিষদের সভাপতি পারভেজ সাজ্জাদ এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই দাবী জানিয়ে বলেন, অন্যথায় শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। সাংবাদিক সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে তার বক্তব্য ও দাবীর প্রতি সমর্থন জানান।
গত ৬ মে রোববার সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের একটি রেষ্টুরেন্টে তারেক রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সংগ্রাম পরিষদ ইউএসএ’র পক্ষ থেকে এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সাংবা;িদক সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. মজিবুর রহমান মজুমদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু, সাবেক ছাত্র নেতা আব্দুস সবুর, জাকির এইচ হাওলাদার, এবাদ চৌধুরী, খলকু রহমান, মার্শাল মুরাদ, মতিউর রহমান লিটু প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পারভেজ সাজ্জাদ বলেন, গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত ৯ বছর ৪ মাস যাবত দেশে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার কিভাবে দু:শাসন চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারী দল আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডার এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট সদস্যরা বিরোধী দল, এবং সরকারের দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদের লুন্ঠণের বিরুদ্ধে সমালোচনাকারী সুশীল সমাজ, পেশাজীবী, এমনকি সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার নিপীড়ণ চালিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ক্যাডার, গুন্ডা ও মাস্তানরা হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে বেপরোয়াভাবে। দলীয় ক্যাডার ও আইন প্রয়োগকারীরা জনগণের বাক, ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করে দেশকে এক উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত করেছে। দেশের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তবাদী দল-‘বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে এবং বিএনপিকে নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করার জন্য রাজপথে পর্যন্ত নামতে দেয়া হচ্ছে না। তারা বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রের সকল অঙ্গকে সরকারের তাবেদার প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। বিএনপিকে নেতৃত্ব শূন্য করার জন্য এবং জিয়া পরিবারকে ধ্বংস করার জন্য তারা সরকারের আজ্ঞাবহ আদালতকে ব্যবহার করছে। তথাকথিত সাজানো মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট দুর্নীতি মামলায় তিন বারের সফল প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গত ৮ই ফেব্রুয়ারী আদালত তাকে কারাদন্ড দিয়েছে এবং গত তিন মাস যাবত তিনি কারান্তরালে কাটাচ্ছেন। দেশ বঞ্চিত হচ্ছে তার নেতৃত্ব থেকে।
তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিক্ষেপ করার পেছনে বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী ভোটার বিহীন নির্বাচনে ক্ষমতায় আসীন এ আওয়ামী শাসক চক্রকে দেশের গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণ এবং আন্তর্জাতিক মহল ‘অবৈধ’ সরকার হিসেবেই গণ্য করে আসছে। কিন্তু সেদিকে তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য তারা ক্ষমতার উৎস জনগণের উপর নয় দলীয় অস্ত্রধারী ক্যাডার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর উপর নির্ভর করছে। ক্ষমতায় অব্যাহতভাবে কুক্ষিগত করে রাখার লক্ষ্যে দেশের সবচেয়ে বৃহৎ ও জনপ্রিয় দল বিএনপিকে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাইরে রাখতে তারা সকল অপকৌশল প্রয়োগ করতে শুরু করেছে। বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী করে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, তারুণ্যের অহঙ্কার ও বাংলাদেশের আগামী দিনের দেশনায়ক তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালিয়ে তারা দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করছে। কিন্তু কুচক্রী আওয়ামী সরকার তাতেও নিশ্চিত হতে পারছে না। বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে বা তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে অহর্নিশি কুৎসা রটনা করেও বিএনপির প্রতি জনগণের আস্থা এবং বিএনপির নেতৃত্বের উপর জনগণের বিশ্বাস দেখে ক্ষমতাসীন মহল বিচলিত। তারা উপলব্ধি করতে পারছে যে, তাদের অপশাসনে জনগণ ক্ষুব্ধ এবং সুযোগ পেলেই সে রোষ বিস্ফোরিত হয়ে তাদের অস্তিত্ব বিলীন করবে এবং তাদের পরিণতি হবে নিকট অতীতের স্বৈরশাসক ইরাকের সাদ্দাম হোসেন ও লিবিয়ার মুয়াম্মার গাদ্দাফীর মতো। সেজন্য শেখ হাসিনা ও তার সরকার বিএনপি তথা দেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষের নেতৃত্বের উপর মরণাঘাত হানতে শুরু করেছে। বিএনপির রাজনীতির ইতিহাস অত্যন্ত স্বচ্ছ। আওয়ামী লীগ যখন জাতির উপর একদলীয় শাসন চাপিয়ে দিয়েছিল এবং এর ভয়াবহ পরিণতিতে সদ্য স্বাধীন দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছিল, তখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে একদলীয় শাসনের অবসান ঘটিয়ে দেশে প্রতিষ্ঠিত হয় বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং বিএনপির উদ্যোগেই ১৯৯৬ সাল থেকে দেশে পূর্ণ সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চলে আসছে। কিন্তু ক্ষমতার মোহ আওয়ামী লীগকে এতোটাই অন্ধ করে দিয়েছে যে, তারা তাদের অতীতের মতো এখনো সংসদীয় গণতন্ত্রকে অপব্যবহার করছে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য। দেশ এখন কার্যত শেখ হাসিনার একনায়কতন্ত্রের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। সেজন্যই দলটির নেতাদের মুখে দম্ভোক্তি শোনায় যায়,“‘যতদিন শেখ হাসিনা জীবিত থাকবেন, কোন শক্তিই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে পারবে না।” এটি গণতন্ত্রের ভাষা নয় এবং গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল কোন ব্যক্তিই এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারেন না। তা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ নিজেদেরকে গণতন্ত্রের ‘চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে দাবী করতে লজ্জিত হয় না।
পারভেজ সাজ্জাদ বলেন, বিএনপি আন্দোলনে রয়েছে এবং দেশনেত্রী খালেদার জিয়ার মুক্তির জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন নতুন মাত্রা যোগ করেছে। দেশে ও প্রবাসে বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী শত প্রতিকূলতার মধ্যে বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ ও অবিলম্বে তাঁকে মুক্তি দেয়ার দাবীর মধ্য দিয়ে তাঁর প্রতি, বিএনপির প্রতি এবং সর্বোপরি গণতন্ত্রের প্রতি ভালোবাসা তা প্রকাশ করে চলেছেন। তাকে যে অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে এবং জনগণ তা গ্রহণ করেনি তাও প্রমাণিত হয়েছে। তারা আরো প্রমাণ করছেন যে, বেগম জিয়াই বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা এবং তাকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছে। বিএনপি বিশৃংখলার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। দেশনেত্রী কারাগারে যাওয়ার আগে দলের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলে গেছেন সকলকে ধৈর্য ধরতে, শান্ত থাকতে এবং শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি চালিয়ে যেতে। আমাদের সকল কর্মসূচি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করার জন্য এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য। বিএনপি মুক্ত খালেদা জিয়াকে নিয়েই আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এবং দেশনেত্রীকে ছাড়া দেশে কোন অর্থবহ নির্বাচন হবে না বলেই আমরা বিশ্বাস করি। তাকে ছাড়া কেউ নির্বাচন চিন্তা করলে সেটা হবে দুঃস্বপ্ন। আমরা নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার চাই, আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন চাই, যারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দেশের জনগণের আশা-আকাংখার বাস্তবায়ন ঘটাবে।
তিনি বলেন, দেশে ও বিদেশে দেশনেত্রীর মুক্তি আন্দোলনে আরো স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, করাগারে বন্দী বেগম খালেদা জিয়ার এবং বিএনপির জনপ্রিয়তা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। মুক্ত খালেদা জিয়ার চেয়ে বন্দি খালেদা জিয়া আরো বেশি শক্তিশালী। অন্যায়ভাবে তাকে দেয়া এই কারাদন্ড স্বৈরাচারী নিষ্ঠুর আওয়ামী সরকার পতনের প্রথম ধাক্কা। এই সাজার কারণে সরকারের পতন ত্বরান্বিত হবে। সরকার খালেদা জিয়াকে দীর্ঘদিন কারাগারে রাখার অপচেষ্টায় লিপ্ত থেকেও গণবিক্ষোভ থেকে বাঁচতে পারবে না। সমগ্র দেশবাসী তার মুক্তির দাবিতে ফুঁসে উঠায় সরকার দিশেহারা হয়ে উঠেছে এবং তার মুক্তির আন্দোলনকে উপেক্ষা করে দেশব্যাপী গণগ্রেফতার শুরু করেছে। প্রতিদিনই আমরা বিএনপির নেতাকর্মীসহ শতশত লোককে গ্রেফতার করার খবর পাচ্ছি। এভাবে গণগ্রেফতার করে দেশের তিন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা যাবে না। জনগণই বেগম জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করে আবার ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনবে। অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ তার সুযোগ্য নেতৃত্বে গণতন্ত্র মুক্ত হবে এবং গণতন্ত্র ও গণমানুষের স্বাধীনতা ফিরে আসবে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, আমরা বিশ্বাস করি করি নির্বাচন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনের গতি প্রতিদিন বৃদ্ধি পাবে৷ শাসক দল আওয়ামী লীগ এখনই বিএনপির জনপ্রিয়তা দেখে হতাশ হয়ে পড়েছে। ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দীনের দুই বছর সহ টানা ১১ বছর চার মাস ধরে বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর শত অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েও বিএনপিকে নি:শষ করতে পারেনি সরকার। এজন্য তারা মরণ কামড় দিতে শুরু করেছে। বিএনপি ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েছে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছে জনগণের চিত্তে স্থায়ী স্থান করে নিয়েছে। এবারও বিএনপি সতর্কতা বজায় রেখেই আন্দোলনে ভূমিকা রাখছে, যাতে সরকার আমাদের আন্দোলনকে বেআইনী বা অনিয়তান্ত্রিক বলে চিহ্নিত করতে না পারে। সরকার বিএনপিকে কোনঠাসা করতে চাইলেও তারা নিজেরাই বুঝতে পারছে যে জনগণের উপর তাদের কোন প্রভাব নেই। বিএনপির পরিপক্ক রাজনীতি প্রতিবাদের ক্ষেত্রে যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। কারাগারে যাওয়ার আগে বেগম জিয়া দলকে যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা অনুসরণ করছে বিএনপির নেতাকর্মীরা এবং এতে জনসমর্থনও বেড়ে চলেছে তাদের প্রতি।
পরিশেষে পারভেজ সাজ্জাদ বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনে দেশের মতো আমরা প্রবাসেও সক্রিয় এবং ঐক্যবদ্ধ। সরকারের ফাঁদে পা না দিয়ে আমরা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে এ আন্দোলন চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। দলীয় চেয়ারপর্সনকে মুক্ত করতে আমরা রাজপথের আন্দোলন ও আইনি প্রক্রিয়ায় সর্বতোভাবে সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে আন্দোলন : পারভেজ সাজ্জাদ

প্রকাশের সময় : ১১:০২:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৯ মে ২০১৮

হককথা রিপোর্ট: বিএনপি’র চেয়ারপার্সন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবিলম্বে মুক্তি দাবী করেছে তারেক রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সংগ্রাম পরিষদ। পরিষদের সভাপতি পারভেজ সাজ্জাদ এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই দাবী জানিয়ে বলেন, অন্যথায় শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। সাংবাদিক সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থেকে তার বক্তব্য ও দাবীর প্রতি সমর্থন জানান।
গত ৬ মে রোববার সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের একটি রেষ্টুরেন্টে তারেক রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন সংগ্রাম পরিষদ ইউএসএ’র পক্ষ থেকে এই সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সাংবা;িদক সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. মজিবুর রহমান মজুমদার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু, সাবেক ছাত্র নেতা আব্দুস সবুর, জাকির এইচ হাওলাদার, এবাদ চৌধুরী, খলকু রহমান, মার্শাল মুরাদ, মতিউর রহমান লিটু প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পারভেজ সাজ্জাদ বলেন, গণতন্ত্রের ছদ্মাবরণে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিগত ৯ বছর ৪ মাস যাবত দেশে স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার কিভাবে দু:শাসন চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারী দল আওয়ামী লীগের সশস্ত্র ক্যাডার এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসমূহের রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট সদস্যরা বিরোধী দল, এবং সরকারের দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদের লুন্ঠণের বিরুদ্ধে সমালোচনাকারী সুশীল সমাজ, পেশাজীবী, এমনকি সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার নিপীড়ণ চালিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ক্যাডার, গুন্ডা ও মাস্তানরা হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছে বেপরোয়াভাবে। দলীয় ক্যাডার ও আইন প্রয়োগকারীরা জনগণের বাক, ব্যক্তি স্বাধীনতা হরণ করে দেশকে এক উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত করেছে। দেশের প্রধান বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তবাদী দল-‘বিএনপি’র নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটক রাখা হয়েছে এবং বিএনপিকে নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করার জন্য রাজপথে পর্যন্ত নামতে দেয়া হচ্ছে না। তারা বিচার বিভাগসহ রাষ্ট্রের সকল অঙ্গকে সরকারের তাবেদার প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। বিএনপিকে নেতৃত্ব শূন্য করার জন্য এবং জিয়া পরিবারকে ধ্বংস করার জন্য তারা সরকারের আজ্ঞাবহ আদালতকে ব্যবহার করছে। তথাকথিত সাজানো মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট দুর্নীতি মামলায় তিন বারের সফল প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে গত ৮ই ফেব্রুয়ারী আদালত তাকে কারাদন্ড দিয়েছে এবং গত তিন মাস যাবত তিনি কারান্তরালে কাটাচ্ছেন। দেশ বঞ্চিত হচ্ছে তার নেতৃত্ব থেকে।
তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিক্ষেপ করার পেছনে বর্তমান স্বৈরাচারী সরকারের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করা। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী ভোটার বিহীন নির্বাচনে ক্ষমতায় আসীন এ আওয়ামী শাসক চক্রকে দেশের গণতন্ত্রপ্রিয় জনগণ এবং আন্তর্জাতিক মহল ‘অবৈধ’ সরকার হিসেবেই গণ্য করে আসছে। কিন্তু সেদিকে তাদের ভ্রুক্ষেপ নেই। ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য তারা ক্ষমতার উৎস জনগণের উপর নয় দলীয় অস্ত্রধারী ক্যাডার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর উপর নির্ভর করছে। ক্ষমতায় অব্যাহতভাবে কুক্ষিগত করে রাখার লক্ষ্যে দেশের সবচেয়ে বৃহৎ ও জনপ্রিয় দল বিএনপিকে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাইরে রাখতে তারা সকল অপকৌশল প্রয়োগ করতে শুরু করেছে। বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী করে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, তারুণ্যের অহঙ্কার ও বাংলাদেশের আগামী দিনের দেশনায়ক তারেক রহমানের বিরুদ্ধে নানা অপপ্রচার চালিয়ে তারা দেশবাসীকে বিভ্রান্ত করছে। কিন্তু কুচক্রী আওয়ামী সরকার তাতেও নিশ্চিত হতে পারছে না। বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে বা তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে অহর্নিশি কুৎসা রটনা করেও বিএনপির প্রতি জনগণের আস্থা এবং বিএনপির নেতৃত্বের উপর জনগণের বিশ্বাস দেখে ক্ষমতাসীন মহল বিচলিত। তারা উপলব্ধি করতে পারছে যে, তাদের অপশাসনে জনগণ ক্ষুব্ধ এবং সুযোগ পেলেই সে রোষ বিস্ফোরিত হয়ে তাদের অস্তিত্ব বিলীন করবে এবং তাদের পরিণতি হবে নিকট অতীতের স্বৈরশাসক ইরাকের সাদ্দাম হোসেন ও লিবিয়ার মুয়াম্মার গাদ্দাফীর মতো। সেজন্য শেখ হাসিনা ও তার সরকার বিএনপি তথা দেশের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষের নেতৃত্বের উপর মরণাঘাত হানতে শুরু করেছে। বিএনপির রাজনীতির ইতিহাস অত্যন্ত স্বচ্ছ। আওয়ামী লীগ যখন জাতির উপর একদলীয় শাসন চাপিয়ে দিয়েছিল এবং এর ভয়াবহ পরিণতিতে সদ্য স্বাধীন দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছিল, তখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বে একদলীয় শাসনের অবসান ঘটিয়ে দেশে প্রতিষ্ঠিত হয় বহুদলীয় গণতন্ত্র এবং বিএনপির উদ্যোগেই ১৯৯৬ সাল থেকে দেশে পূর্ণ সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চলে আসছে। কিন্তু ক্ষমতার মোহ আওয়ামী লীগকে এতোটাই অন্ধ করে দিয়েছে যে, তারা তাদের অতীতের মতো এখনো সংসদীয় গণতন্ত্রকে অপব্যবহার করছে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য। দেশ এখন কার্যত শেখ হাসিনার একনায়কতন্ত্রের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। সেজন্যই দলটির নেতাদের মুখে দম্ভোক্তি শোনায় যায়,“‘যতদিন শেখ হাসিনা জীবিত থাকবেন, কোন শক্তিই আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে পারবে না।” এটি গণতন্ত্রের ভাষা নয় এবং গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল কোন ব্যক্তিই এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারেন না। তা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ নিজেদেরকে গণতন্ত্রের ‘চ্যাম্পিয়ন’ হিসেবে দাবী করতে লজ্জিত হয় না।
পারভেজ সাজ্জাদ বলেন, বিএনপি আন্দোলনে রয়েছে এবং দেশনেত্রী খালেদার জিয়ার মুক্তির জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন নতুন মাত্রা যোগ করেছে। দেশে ও প্রবাসে বিএনপির অসংখ্য নেতাকর্মী শত প্রতিকূলতার মধ্যে বেগম খালেদা জিয়ার কারাবাসের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ ও অবিলম্বে তাঁকে মুক্তি দেয়ার দাবীর মধ্য দিয়ে তাঁর প্রতি, বিএনপির প্রতি এবং সর্বোপরি গণতন্ত্রের প্রতি ভালোবাসা তা প্রকাশ করে চলেছেন। তাকে যে অন্যায়ভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে এবং জনগণ তা গ্রহণ করেনি তাও প্রমাণিত হয়েছে। তারা আরো প্রমাণ করছেন যে, বেগম জিয়াই বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা এবং তাকে অন্যায়ভাবে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছে। বিএনপি বিশৃংখলার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। দেশনেত্রী কারাগারে যাওয়ার আগে দলের নেতাকর্মী ও দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলে গেছেন সকলকে ধৈর্য ধরতে, শান্ত থাকতে এবং শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি চালিয়ে যেতে। আমাদের সকল কর্মসূচি দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করার জন্য এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য। বিএনপি মুক্ত খালেদা জিয়াকে নিয়েই আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে এবং দেশনেত্রীকে ছাড়া দেশে কোন অর্থবহ নির্বাচন হবে না বলেই আমরা বিশ্বাস করি। তাকে ছাড়া কেউ নির্বাচন চিন্তা করলে সেটা হবে দুঃস্বপ্ন। আমরা নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার চাই, আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন চাই, যারা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে দেশের জনগণের আশা-আকাংখার বাস্তবায়ন ঘটাবে।
তিনি বলেন, দেশে ও বিদেশে দেশনেত্রীর মুক্তি আন্দোলনে আরো স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, করাগারে বন্দী বেগম খালেদা জিয়ার এবং বিএনপির জনপ্রিয়তা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। মুক্ত খালেদা জিয়ার চেয়ে বন্দি খালেদা জিয়া আরো বেশি শক্তিশালী। অন্যায়ভাবে তাকে দেয়া এই কারাদন্ড স্বৈরাচারী নিষ্ঠুর আওয়ামী সরকার পতনের প্রথম ধাক্কা। এই সাজার কারণে সরকারের পতন ত্বরান্বিত হবে। সরকার খালেদা জিয়াকে দীর্ঘদিন কারাগারে রাখার অপচেষ্টায় লিপ্ত থেকেও গণবিক্ষোভ থেকে বাঁচতে পারবে না। সমগ্র দেশবাসী তার মুক্তির দাবিতে ফুঁসে উঠায় সরকার দিশেহারা হয়ে উঠেছে এবং তার মুক্তির আন্দোলনকে উপেক্ষা করে দেশব্যাপী গণগ্রেফতার শুরু করেছে। প্রতিদিনই আমরা বিএনপির নেতাকর্মীসহ শতশত লোককে গ্রেফতার করার খবর পাচ্ছি। এভাবে গণগ্রেফতার করে দেশের তিন তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা যাবে না। জনগণই বেগম জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করে আবার ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনবে। অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ তার সুযোগ্য নেতৃত্বে গণতন্ত্র মুক্ত হবে এবং গণতন্ত্র ও গণমানুষের স্বাধীনতা ফিরে আসবে।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, আমরা বিশ্বাস করি করি নির্বাচন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনের গতি প্রতিদিন বৃদ্ধি পাবে৷ শাসক দল আওয়ামী লীগ এখনই বিএনপির জনপ্রিয়তা দেখে হতাশ হয়ে পড়েছে। ফখরুদ্দীন-মঈনুদ্দীনের দুই বছর সহ টানা ১১ বছর চার মাস ধরে বিএনপির নেতাকর্মীদের উপর শত অত্যাচার নির্যাতন চালিয়েও বিএনপিকে নি:শষ করতে পারেনি সরকার। এজন্য তারা মরণ কামড় দিতে শুরু করেছে। বিএনপি ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়েছে, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছে জনগণের চিত্তে স্থায়ী স্থান করে নিয়েছে। এবারও বিএনপি সতর্কতা বজায় রেখেই আন্দোলনে ভূমিকা রাখছে, যাতে সরকার আমাদের আন্দোলনকে বেআইনী বা অনিয়তান্ত্রিক বলে চিহ্নিত করতে না পারে। সরকার বিএনপিকে কোনঠাসা করতে চাইলেও তারা নিজেরাই বুঝতে পারছে যে জনগণের উপর তাদের কোন প্রভাব নেই। বিএনপির পরিপক্ক রাজনীতি প্রতিবাদের ক্ষেত্রে যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা। কারাগারে যাওয়ার আগে বেগম জিয়া দলকে যে নির্দেশনা দিয়েছেন তা অনুসরণ করছে বিএনপির নেতাকর্মীরা এবং এতে জনসমর্থনও বেড়ে চলেছে তাদের প্রতি।
পরিশেষে পারভেজ সাজ্জাদ বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলনে দেশের মতো আমরা প্রবাসেও সক্রিয় এবং ঐক্যবদ্ধ। সরকারের ফাঁদে পা না দিয়ে আমরা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ঐক্যবদ্ধভাবে এ আন্দোলন চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। দলীয় চেয়ারপর্সনকে মুক্ত করতে আমরা রাজপথের আন্দোলন ও আইনি প্রক্রিয়ায় সর্বতোভাবে সহযোগিতা করার জন্য প্রস্তুত।