কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য তালিকা নেই
- প্রকাশের সময় : ১২:৫৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৪
- / ৪০০৪ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি (জাপা) সহ প্রবাসে রাজনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালনাকারী বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য তালিকা নেই। এই দলগুলোর বাইরে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), গণ ফোরাম প্রভৃতি সংগঠনের সভা-সমাবেশ আর বিবৃতি লক্ষ্য করা গেলেও দলগুলোর কোন নিবন্ধিত সদস্য তালিকা নেই। এব্যাপারে নেই কোন জবাবদিহিতা। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য হচ্ছে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে আমাদেরকে দল করতে হয়। তাই সাংগঠনিক নিয়ম-কানুন মেনে চলা সম্ভব হয়ে উঠে না। এদিকে পুরো দস্তর দেশীয় স্টাইলে পরিচালিত রাজনৈতিক দলগুলো কর্মকান্ড নিয়ে মূলধারার রাজনীতিকসহ কমিউনিটির সচেতন মহলে নানা প্রশ্ন বিদ্যমান।
বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সহ বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জাসদ, বাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি, এনডিপি, ন্যাপ, জাকের পার্টি প্রভৃতি নামধারী শতাধিক রাজনৈতিক দল থাকলেও শুধুমাত্র জামায়াতে ইসলামী ছাড়া অন্য কোন রাজনৈতিক দলের যেমন নিবন্ধিত সদস্য তালিকা নেই, তেমনি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক দলগুলোরও একই অবস্থা। কোন দলই হলপ করে বলতে পারবে না যে তাদের সদস্য সংখ্যা কত। অথচ যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক কালচারে এই দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতা-কর্মী-সমর্থকদের নিবন্ধিত হওয়ার সংস্কৃতি রয়েছে। দেশের দলগুলোর রাজনীতি প্রবাসী বাংলাদেশী কেন্দ্রীক হলেও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক এ কালচার থেকে কোন দলই কোন শিক্ষা নিচ্ছে না। অথচ সকল দলেরই সাংগঠনিক কাঠামো রয়েছে। রয়েছে সকল দলেরই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক সহ সাংগঠনিক সম্পাদক, দপ্তর সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ প্রভৃতি পদ-পদবী। প্রশ্ন উঠেছে এসব গুরুত্ব পদ-পদবীধারী ‘রাজনৈতিক ব্যক্তি’দের কাজ কি, দায়িত্ব কি?
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাপা প্রভৃতি রাজনৈতিক দলের মাঠ পর্যায়ের একাধিক নেতা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বলেছেন, দলগুলোর নেতারা দলের নামে, দলের পদ-পদবী ব্যবহার করে ব্যক্তিগত স্বার্থ উদ্ধারে ব্যস্ত। আমরা দলগুলোর আদর্শে উজ্জীবিত বলেই মনের তাগিদে রাজনীতি করি। দলের সভা-সমাবেশে যোগ দেই। প্রতিবাদ সমাবেশ করি। কিন্তু আমাদের লাভের লাভ কি? কমিটি থাকলেও দলগুলো পরিচালনায় কোন সাংগঠনিক নিয়ম-নীতি মানা হচ্ছে না। নেই দলগুলোর মধ্যে অর্থিক স্বচ্ছতা। ফলে দলগুলোর নেতা-কর্মীদের মধ্যে বাড়ছে দলীয় কোন্দল, বিভক্তি, ক্ষোভ। সেইসাথে নেই কারো কোন দায়বদ্ধতা।
মূলত: প্রবাসের বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র রাজনীতি কেন্দ্রীক। এই দল দু’টির হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক, শুভ্যানুধ্যায়ী রয়েছে। এই দুই দলের সভা-সমাবেশে বিশেষ করে জাতিসংঘের সামনে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে-বিপক্ষে আয়োজিত সমাবেশগুলোতে শত শত নেতা-কর্মীর উপস্থিতিই প্রমান করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র অবস্থান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, দলগুলোর মধ্যে সাংগঠনিক নিয়ম-নীতি আর জবাবদিহিতা না থাকায় দলগুলোতে যা ইচ্ছে তা হচ্ছে। বিশেষ করে দলীয় কর্মকান্ড পরিচালনায় যারা অর্থ দিয়ে সাহায্য করেন তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তির কাছে অনেকেই জিম্মি হয়ে পড়েন। দলের জন্য যথেষ্ট ত্যাগ থাকলেও আর্থিক সমস্যার কারণে তিনি ‘লাইম টাইট’এর বাইরে থাকেন। আর যিনি আর্থিক অনুদান দিয়ে সহযোগিতা করেন তিনিই পান মঞ্চে আসন, বক্তৃতার সুযোগ। আবার দলগুলোর সভা-সমাবেশের ব্যয় নির্বাহের জন্য উপস্থিত নেতা-কর্মীদের অনুদান উত্তোলন নিয়েও নানা সময়ে ঘটে অঘটন। কে কত অনুদান দিচ্ছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন কেউ কেউ। এনিয়ে প্রকাশ্যে হৈচৈ-এর ঘটনাও ঘটে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ দেয়ার দিন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ জাতিসংঘ ভবনের সামনে আনন্দ সমাবেশ আর যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি বিক্ষোভ-প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। কয়েক হাতের ব্যবধানে আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র সমাবেশ চলে। ঐদিন আওয়ামী লীগের সমাবেশে দৃশ্যত: নেতা-কর্মীর উপস্থিতি কম হয় এবং এজন্য প্রধানমন্ত্রীর পুত্র ও তাঁর উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয় তীব্র ক্ষোভও প্রকাশ করেন। ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরাও। অপরদিকে বিএনপির সমাবেশে শত শত নেতা-কর্মীর উপস্থিতি ছিলো লক্ষণীয়। এব্যাপারে দলের এক নেতা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দৈন্যতা আর সাংগঠনিক নিয়ম-কানুন না থাকায় দলীয় নেতা-কর্মীরা হতাশ হয়ে অনেকেই জাতিসংঘের সম্মুখের সমাবেশে যোগ দেননি।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ-বিএনপি সহ সকল রাজনৈতিক দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের দাবী দলগুলোর মধ্যে সাংগঠনিক নিয়ম-নীতি বজায় রাখার মধ্য দিয়ে আর্থিক স্বচ্ছতা আর সদস্য নিবন্ধিকরণ করার উদ্যোগ নেয়া হোক।