কেন্দ্রীয় নেতা মাহিদ কী ম্যাসেজ নিয়ে লন্ডন ফিরলেন
- প্রকাশের সময় : ০১:৪৯:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ নভেম্বর ২০১৬
- / ১০২০ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র কমিটি সহ বিভিন্ন ষ্টেট কমিটি গঠনের ব্যাপারে তৃণমূল পর্যায়ে খবরাখবর নিয়ে দুই সপ্তাহ নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে কি ম্যাসেজ নিয়ে লন্ডন ফিরলেন কেন্দ্রীয় বিএনপি’র অন্যতম আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মাহিদুর রহমান। দীর্ঘ চার বছর ধরে কমিটি বিহীন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে বিশেষ মিশন নিয়ে নিউইয়র্ক সফরকারী মাহিদুর রহমানসহ ব্যারিষ্টার আবু সায়েম লন্ডন ফিরে যাওয়ার পর এই কথাই আলোচিত হচ্ছে দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির কোন কোন নেতার ‘মাহিদ-সায়েম’ অবস্থানকারী হোটেলে অবস্থান এবং তাদের সাথে সখ্যতার সুযোগ নেয়ার অভিযোগ উঠেছে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি পরিবারে। এছাড়া দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে ‘অর্থ গ্রহণ’-এর অভিযোগ ছাড়াও প্রশ্ন উঠেছে ‘মাহিদ-সায়েম’ কাদের অর্থে দুই সপ্তাহ নিউইয়র্ক সফর করলেন, তাদের থাকা-খাওয়ার অর্থই বা দিলো কে? বিষয়গুলোর স্বচ্ছতার দাবী রাখে বলে অভিমত একাধিক নেতার।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র কমিটির দাবী আর নিউইয়র্ক ষ্টেট বিএনপি’র একাধিক কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দ্বিধা-ত্রিধা বিভক্ত যুক্তরাষ্ট্র বিনপি’র নেতা-কর্মীকে ঐক্যবদ্ধ করতে নতুন উদ্যোগের অংশ হিসেবেই দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে স্থানীয় পরিস্থিতি জানতে লন্ডন থেকে দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল নিউইয়র্ক সফর করেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। কেন্দ্রীয় দুই নেতা মাহিদ-সায়েম গত ১৫ অক্টোবর শনিবার লন্ডন থেকে নিউইয়র্কে আসার পর উঠেন লাগোর্ডিয়া এয়ারপোর্ট সংলগ্ন প্লাজা হোটেলে। সেখানেই চলে দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক-আলোচনা। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির শীর্ষ নেতারাও পৃথক পৃথকভাবে তাদের সাথে কথা বলেছেন। খোঁজা হচ্ছে সঙ্কট আর সমাধান। ‘মাহিদ-সায়েম’ গত ৩১ অক্টোবর সোমবার লন্ডনের উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক তাগ করেন বলে জানা গেছে। খবর ইউএনএ’র।
সূত্র মতে, লন্ডন থেকে আগত প্রতিনিধি দল আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা-কর্মীদের সাথে বৈঠক না করলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে কথা বলেছেন। তারপর দলের শীর্ষ পর্যায়ে কথা বলে পরবর্তীতে পদক্ষেপ নেয়া হবে। সূত্রগুলো বলছে, নিউইয়র্ক সফররত দুই নেতা তাদের ‘অবজারভেশন’-এর ভিত্তিতে লন্ডনে অবস্থানকারী দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে রিপোর্ট পেশ করবেন। তাদের রিপোর্টের প্রেক্ষিতেই যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি সহ অঙ্গরাজ্য সমূহের কমিটি গঠনের ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
ইতিপূর্বে কেন্দ্রীয় বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলনের তত্ত্বাবধানে নিউইয়র্ক ষ্টেট বিএনপি সহ যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোর কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে জনাব মিলনের প্রতি প্রচন্ড ক্ষুব্ধ দলীয় নেতা-কর্মীরা। তিনি কাউন্সিলের মাধ্যমে নিউইয়র্ক ষ্টেট কমিটি গঠনের ঘোষণা এবং নির্বাচন কমিশন গঠনের পর তা বাতিল করার পর চার চারটি ষ্টেট কমিটি গঠন হওয়ায় দলীয় কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। এজন্য অনেকেই সাবেক প্রতিমন্ত্রী মিলনকেই দায়ী করছেন। আবার নিউইয়র্ক ষ্টেট কমিটির চারটির মধ্যে একটির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় নেতা মিলনের স্বাক্ষর জালের অভিযোগ উঠেছে। এনিয়ে স্বয়ং মিলন দলীয় প্যাডে ‘জরুরী প্রেস বিজ্ঞপ্তি’ প্রদত্ত বিবৃতির মাধ্যমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র উদ্ভুত পরিস্থিতিতে কেন্দ্রের বিমাতাসূলভ আচরণে দলের বেশীরভাগ নেতা-কর্মী ক্ষুব্ধ, বিব্রত। তাদের অভিযোগ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক, শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং তাঁর আদর্শকে ভালোবেসে সময়, অর্থ আর জানমালের বিনিময়ে আমরা বিএনপির রাজনীতি করি। আমরা দলীয় চেয়ারপার্সন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আর তারুণ্যের অহংকার তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপির পতাকা যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে তুলে ধরে রাখছি। কিন্তু দলীয় নেতারা আমাদের মূল্যায়ন না করলে আর কি করা। এমন পরিস্থিতিতে কেউ কেউ দলীয় কর্মকান্ড থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছেন, কেউ বা নিরব প্রতিবাদ করে সভা-সমাবেশে আসছেন না। আবার কেউ কেউ রাগে-ক্ষোভে বিএনপির রাজনীতি বাদ দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছেন। আরো উল্লেখ্য, ‘মওলা-বাতেন’, ‘সাজ্জাদ-লিটু’, ‘আতিকুল্লাহ-সাঈদ’ ও ‘সুফিয়ান-বাসেত’-এর নেতৃত্বে নিউইয়র্ক ষ্টেট বিএনপি’র চারটি কমিটির আতœপ্রকাশ ঘটেছে। এরমধ্যে ‘মওলা-বাতেন’ কমিটি নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করে এবং এটি কেন্দ্র কর্তৃক অনুমোদিত হয়েছে বলে দাবী করা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় নেতা মাহিদুর রহমান ও ব্যারিষ্টার আবু সায়েম-এর নিউইয়র্ক সফর প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ সম্রাট রোববার (৬ নভেম্বর) রাতে ইউএনএ প্রতিনিধিকে বলেন, তারা কি কারণে, কি ম্যাসেজ নিয়ে নিউইয়র্ক সফর করলেন তা স্পষ্ট নয়। তাদের কাছে দলের পক্ষ থেকে দাপ্তরিক কোন আদেশ ছিলো বলেও আমার জানা নেই। তারা দুই সপ্তাহ নিউইয়র্ক সফর করলেও আমার সাথে একদিন কথা হয়েছে। তাদের অবস্থানকারী হোটেল কক্ষে অনুষ্ঠিত অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে দলের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছে। সেখানে আমি দলের স্বার্থে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব রেখেছি। কিন্তু পরবর্তীতে তাদের কার্যক্রমে তার কোন প্রতিফলন দেখিনি।
আব্দুল লতিফ সম্রাট বলেন, তারা নিউইয়র্ক আসার পর শুনলাম তারা যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র কমিটি গঠন করবেন, আবার শুনলাম নিউইয়র্ক ষ্টেট বিএনপি’র কমিটি গঠন করবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই হলো না। বরং তারা দুই সপ্তাহ ব্যয় বহুল হোটেলে থাকলেন, ঘুরলেন, বেড়ালেন, কারো কারো সাথে বৈঠক করলেন। তিনি বলেন, তাদের থাকা-খাওয়ার অর্থ কোথা থেকে এলো, কে দিলো তার স্বচ্ছতার দাবী রাখে। তিনি বলেন, তারা যে হোটেলে ছিলেন, সেই হোটেলেই যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র এক নেতাও ছিলেন। কিন্তু কেনো? কি তার উদ্দেশ্য?
আব্দুল লতিফ সম্রাট বলেন, সাংগঠনিক নিয়ম-নীতির মাধ্যমে দল পরিচালিত হলে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কেন্দ্রীয় বিএনপি’র দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি‘র কমিটি গঠন করা। যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ষ্টেট কমিটি গঠন করবে আর ষ্টেট কমিটি সিটি কমিটি গঠন করবে। এটিই সাংগঠনিক নিয়ম। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় বিএনপি’র আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলন ইতিপূর্বে যুক্তরাষ্ট্র সফরকালীন সময়ে দলের বৃহত্তর স্বার্থে ষ্টেট কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেন। তিনি ছয়টি কমিটিও গঠন করেন এবং কেন্দ্র তা অনুমোদন করে।
আব্দুল লতিফ সম্রাট দলীয় চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রতি দলীয় সাংগঠনিক নিয়ম নীতি-মেনে কেন্দ্রের প্রতিনিধি পাঠিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র কমিটি গঠনের আকুল আবেদন জানিয়ে বলেন, সময় অনেক নষ্ট হয়েছে। এখন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে শক্তিশালী করার সময়। যাকে-তাকে, যখন-তখন দায়িত্ব দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির নেতা-কর্মীকে আর বিভক্ত না করে দলীয় নেতা-কর্মীদের সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবী জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি’র আরেক নেতা রোববার ইউএনএ প্রতিনিধিকে বলেন, এখন আমাদের আর কোন দাবী নেই। কেন্দ্র যেটা ভালো মনে করবেন, তাই হবে। কেন্দ্রীয় নেতা নিউইয়র্ক সফর করে লন্ডনে ফিরে গেছেন। তারা দলের সিনিয়র ভাইস চেয়াম্যান তারেক রহমানের কাছে রিপোর্ট দেবেন। তাদের রিপোর্টের প্রেক্ষিতেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।