নিউইয়র্কের অ্যাওয়ার্ড বাণিজ্য-২ : কমিউনিটিতে এতো আলোচনা-সমালোচনার পরও কারো মাথাব্যথা নেই
- প্রকাশের সময় : ০৯:০৬:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ ডিসেম্বর ২০১৪
- / ১৪৫৮ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটিতে অ্যাওয়ার্ড বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। কে কিভাবে, কাকে অ্যাওয়ার্ড দিচ্ছেন, কে কোন যোগ্যতায় অ্যাওয়ার্ড নিচ্ছেন তার কোন ইয়ত্তা নেই। প্রশ্ন উঠেছে হাজার ডলার ব্যয়ে অনুষ্ঠানের অর্থ আসে কোত্থেকে? এই বিপুল অর্থের যোগানই বা দেন কে? নিউইয়র্কে আলমগীর খান আলম ১৪ বছর আগে শো টাইম মিউজিক এন্ড কালচারাল অ্যাওয়ার্ড নামে ‘ঢালিউড অ্যাওয়ার্ড‘ অনুষ্ঠান আয়োজন করলেও হাল আমলে নতুন নতুন নামে প্রতিষ্ঠান গজিয়ে উঠছে এবং অ্যাওয়ার্ড বাণিজ্য শুরু করেছে। যা রীতিমত কমিউনিটিতে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এসব অনুষ্ঠানে দেশে ও প্রবাসের নামী-দামী ব্যক্তিবর্গসহ সরকারী কর্মকর্তা, সাংবাদিক, এটর্নী-আইনজীবি, শিল্পী, ব্যবসায়ী, ডক্টরেট ডিগ্রীধারী প্রচারমুখী কতিপয় মানুষের নাম, উপস্থিতি ও অ্যাওয়ার্ড গ্রহণের ঘটনায় প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে তথাকথিত ‘অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান’। বিষয়টি নিয়ে কমিউনিটিতে এতো আলোচনা-সমালোচনার পরও এনিয়ে কারো কোন মাথাব্যথা নেই, নেই মান নিয়ে প্রশ্ন। এদিকে অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান আয়োজনকারীরা দাবী করেছেন যে, ‘অর্থের বিনিময়ে অ্যাওয়ার্ড’ প্রদানের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূলত: টাইটেল স্পন্সর, পৃষ্ঠপোষক আর ‘আন্ডার গ্রাউন্ডে বিশেষ সুবিধার লেন-দেন’-এর বিনিময়ে কমিউনিটিতে অ্যাওয়ার্ড লেন-দেন হয়ে আসছে। সূত্র মতে, কোন কোন ক্ষেত্রে জনপ্রতি ৫০ থেকে ৫০০ ডলার পর্যন্ত ‘বানিজ্যের বিনিময়ে অ্যাওয়ার্ড লেন-দেন’ হচ্ছে। ‘আইডেনটিটি ক্রাইসিস’-এ ভোগা এক শ্রেণীর প্রবাসীর পাশাপাশি কমিউনিটিতে ‘গ্রহণযোগ্যহীন’ ব্যক্তিবর্গ আয়োজকদের ‘বিশেষ অফার’ বা ‘প্রলোভন’-এর শিকার হয়ে এসব অনুষ্ঠানে জড়িয়ে পড়ছেন। আর এই অনুষ্ঠান বৈধ করতে বা অনুষ্ঠানের গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি করতে দেশ ও প্রবাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকেও অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হচ্ছে। এথেকে বাদ পড়ছেন না দেশের মন্ত্রী, জাতীয় নেতা আর জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীরাও। সচেতন মহলের প্রশ্ন এই প্রবাস থেকে দেশের জাতীয় নেতা-শিল্পীদের এমন অ্যাওয়ার্ড পেলেই কি, না পেলেই কি? অপরদিকে রাতারাতি ‘ব্যাঙের ছাতা’র মতো গজিয়ে উঠা কিছু ভূঁইফোঁড় সংগঠন সদ্য ভূমিষ্ঠ হয়ে কালই অ্যাওয়ার্ড প্রদানের ঘোষণা দিচ্ছে। কিছু মিডিয়ায় বিজ্ঞাপন দিয়ে তারা কৌশলে এর বৈধতাও নিয়ে নিচ্ছে।
নিউইয়র্কে অ্যাওয়ার্ড কালচার সম্পর্কে শো টাইম মিউজিক এন্ড কালচারাল অ্যাওয়ার্ড ও এনআরবি অ্যাওয়ার্ড-এর কর্ণধার আলমগীর খান বলেন, আমি বিগত ১৪ বছর ধরে প্রবাসে ঢালিউড অ্যাওয়ার্ড আর গত ৫ বছর ধলে এনআরবি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করে আসছি। ঢাকার সেলিব্রেটিদের ঢালিউড অ্যাওয়ার্ডে আর প্রবাসের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মাঝে এনআরবি অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। তিনি বলেন, প্রথম প্রথম স্পন্সর ও পৃষ্টপোষকদের সহযোগিতায় এসব অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান আয়োজন করা হলেও এখন ব্যক্তিগত উদ্যোগ আর নির্ধারিত স্পন্সরদের সহযোগিতায় অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। তিনি আরো বলেন, কারা কিভাবে, কোন মানদন্ডে অ্যাওয়ার্ড দিচ্ছেন তা নিয়ে আমারও প্রশ্ন। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে আয়োজিত একটি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান থেকে আমাকে ‘অ্যাওয়ার্ড’ প্রদানের কথা বলা হয়েছিলো কিন্তু আমি যাইনি। কেননা, যে বা যারা এর আয়োজক তারা কারা, তাদের অ্যাওয়ার্ড দেয়া-নেয়ার যোগ্যতা কি তা আমি জানতাম না। তাই তাদের অনুষ্ঠানেও যাইনি, আ্যাওয়ার্ডও নেইনি। তিনি বলেন, যেকোন অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠান মানসম্পন্ন হওয়া উচিৎ।
নবগঠিত বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন ইউএসএ এই প্রথমবারের মতো ‘বঙ্গবন্ধু লীডারশীপ অ্যাওয়ার্ড’২০১৪ পদক প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। আগামী ১৩ ডিসেম্বর শনিবার জ্যাকসন হাইটস্থ ফুডকোর্ট রেষ্টুরেন্টের কনফারেন্স রুমে অনুষ্ঠিতব্য এই অনুষ্ঠানে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধিসহ ১৩জনকে (মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিক, সাংবাদিক, কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট, ইমাম) পদক দেয়া হবে। এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান সম্পর্কে ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ আব্দুস সালাম ফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, চলতি বছরের মাঝামাঝি এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রবাসে যারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে বিশ্বাসী বা যারা মুজিব আদর্শের রাজনীতির সাথে জড়িত থেকে কমিউনিটির সেবায় অবদান রেখেছেন তাদেরকেই ‘বঙ্গবন্ধু লীডারশীপ অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘অর্থের বিনিময়ে’ অ্যাওয়ার্ড প্রদানের অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। তিনি দৃঢ়তার সাথে বলেন, কেউ যদি এমন অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেন তাহলে হাত কেটে ফেলবো। তবে তিনি এবিষয়ে বিস্তারিত জানতে সংগঠনের সভাপতির সাথে কথা বলার অনুরোধ জানান। পরবর্তীতে গত শনি ও রোববার ফাউন্ডেশনের সভাপতি পীরজাদা নূরুল আবেদীনের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি এবং ভয়েস মেল ফুল থাকায় কোন মেসেজ রাখাও সম্ভব হয়নি।
জেমিনি স্টার মিউজিক অ্যাওয়ার্ড-এর প্রেসিডেন্ট বেলাল আহমেদ বলেন, নিউইয়র্ক তথা নর্থ আমেরিকার শিল্পীদের প্রতিভার স্বীকৃতি দিতেই এই অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। নতুন-পুরাতন মিলে ৪০/৪৫জন শিল্পী রয়েছেন। তাদের মধ্য থেকে ১২জন সহ ঢাকা থেকে আগত ৪জন শিল্পীকে মনোনীত করে তাদের সম্মানিত করি। ৫ সদস্যের একটি কমিটি এই শিল্পীদের মনোনীত করেন। অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তদের কাছ থেকে অর্থ নেয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে তিনি দাবী করে বলেন, ৫জন স্পন্সরশীপের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের ব্যয় নির্বাহ করা হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে অ্যাওয়ার্ড দেয়া-নেয়ার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন এই ধরনের কালচার বন্ধ হওয়া উচিত। ১৯৯১ সাল থেকে সংগঠনের সাথে জড়িত। বাংলাদেশের শিশু সংগঠন ‘ফুলকুলি ফাউন্ডেশন‘-এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আমি। বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় ফাউন্ডেশনটি অবহেলিত ও বঞ্চিত শিশু-কিশোর-কিশোরীদের ১৫০টি স্কুলের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্য সেবাসহ বিভিন্ন সেবা দিয়ে থাকি। তাই দেশের মতো প্রবাসেও বাংলা শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতেই অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। উল্লেখ্য, গত ২৮ নভেম্বর নিউইয়র্কে প্রথমবারের মতো জেমিনি স্টার মিউজিক অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।