এবছরই রেকর্ড ১৫০ জনের মতো বিশ্বের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান যোগ দিচ্ছেন
- প্রকাশের সময় : ০৮:০৩:২৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩
- / ৪২ বার পঠিত
সালাহউদ্দিন আহমেদ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক আসছেন। এবারের অধিবেশন হচ্ছে জাতিসংঘের ৭৮তম অধিবেশন। বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের মতো জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে যুক্তরাষ্ট্র সফরে আসছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ-এর সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। তিনি বাংলাদেশ দলের নেতৃত্ব দেবেন। এদিকে গত ৫ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ অধিবেশন। যার মূল বিতর্ক পর্ব শুরু হবে ১৮ সেপ্টেম্বর সোমবার থেকে। অধিবেশন চলবে ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। প্রতিবছরের মতো এবারও জাতিসংঘের মূল অধিবেশনে ২২ সেপ্টেম্বর শুক্রবার শেখ হাসিনা বাংলায় ভাষণ দেবেন। খবর ইউএনএ’র।
জাতিসংঘ সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বে যুদ্ধ-বিগ্রহ পরিহার করে চলমান খাদ্য ও জ্বালানি সংকট নিরসন, আর্থিক অনিশ্চয়তা মোকাবেলা করার লক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করা, বিশ্বশান্তি, বহুপাক্ষিকতাবাদ ও টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর বৈশ্বিক উদ্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তন, নারীর ক্ষমতায়ন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যসমূহ অর্জন প্রভৃতি বিষয় এবারের জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে গুরুত্বপূর্ণ পাবে।
অপরদিকে শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নিউইয়র্কের ম্যানহাটানে জাতিসংঘের বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের বঙ্গবন্ধু মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মিশন প্রধান রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আব্দুল মুহিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হসিনার নেতৃত্বে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮ তম অধিবেশনে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের কর্মসূচী তুলে ধরেছেন।
রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আব্দুল মুহিত বলেন, ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৮ তম অধিবেশনের উচ্চ পর্যায়ের বিতর্ক পর্ব শুরু হতে যাচ্ছে। এ অধিবেশনে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল আগমী ১৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে পৌঁছাবেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রী, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ বিষয়ক মন্ত্রী, বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খািনজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা, মাননীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এসময় প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবেন। তিনি বলেন, এ বছর সাধারণ বিতর্কের প্রতিপাদ্য হচ্ছে “ÒRebuilding trust and reigniting global solidarity: Accelerating action on the 2030 Agenda and its Sustainable Development Goals towards peace, prosperity, progress and sustainability for allÓ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে বিশ্বাস পনর্গঠন এবং বিশ্বব্যাপী সংহতি পনরুজ্জীবিত করার বিষয় এবারের অধিবেশনে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে। বৈশ্বিক শান্তি, সমৃদ্ধি, অগ্রগতি এবং একটি টেকসই ভবিষ্যতের জন্য সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ২০৩০ এজেন্ডা এবং এর টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জন সংক্রান্ত আলোচনা এবারের অধিবেশনে বিশেষ প্রাধান্য পাবে।
রাষ্ট্রদূত মুহিত বলেন, অন্যান্য বছরের ন্যায় এবারও প্রধানমন্ত্রী সাধারণ পরিষদের সাধারণ বিতর্কে বক্তব্য প্রদান করবেন। জাতিসংঘের সর্বশেষ শিডিউল অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রী আগামী ২২ সেপ্টেম্বর বক্তব্য প্রদান করবেন। তাঁর বক্তব্যে অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে বাংলাদেশের অভাবনীয় উন্নয়ন অগ্রযাত্রা, অন্তর্ভূক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং স্বাস্থ্যখাতে সাফল্য ইত্যাদি বিষয়ের উপর আলোকপাত করবেন। পাশাপাশি, বিশ্বশান্তি, নিরাপত্তা, নিরাপদ অভিবাসন, বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক সংকট, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সম্পর্কিত বিষয়সমূহ উঠে আসবে।
রাষ্ট্রদূত মুহিত বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জাতিসঘের ৫টি উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণ করছেন। এগুলো হচ্ছে- প্রথমতঃ আগামী ১৮-১৯ সেপ্টেম্বর SDG Summit ২০২৩ অনুষ্ঠিত হবে। দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই সভায় জাতিসংঘ উন্নয়ন অভীষ্ট লক্ষ্যসমূহ অর্জনের অগ্রগতি, প্রতিবন্ধকতাসমূহ এবং এই প্রতিবন্ধকতাসমূহের উত্তরণ ঘটিয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে কিভাবে লক্ষ্যসমূহ অর্জন করা যায়, সে বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। এই সামিটের অধীনে বিভিন্ন থিমের ওপর ৪টি “Leaders Dialogue” অনুষ্ঠিত হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৮ সেপ্টেম্বর Leaders Dialogue-4” এ কথা বলবেন। Leaders Dialogue-4এর বিষয় হল Strengthening integrated policies and public institutions for achieving the SDGs”।
* দ্বিতীয়তঃ আগামী ২০ সেপ্টেম্বর High-level meeting on pandemic prevention, preparedness and response অনুষ্ঠিত হবে। প্রধানমন্ত্রী এই সভার প্লেনারি সেশনে কথা বলবেন।
* তৃতীয়তঃ ২০ সেপ্টেম্বর Annual Meeting of the UNGA Platform For Women Leaders অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠিত হবে। এই সভাটি প্রতিবছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি বিশ্বের নারী নেতৃবৃন্দের সম্মানে আহবান করে থাকেন। এবং প্রধানমন্ত্রী এতে অংশগ্রহণ করবেন।
* চতুর্থঃ ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ মহাসচিবের আহবানে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত ‘ Climate Climate Ambition SummitAmbition Summit’ অনুষ্ঠিত হবে। এই সামিটের High Level Thematic Session Delivering climate justice: Accelerating ambition and implementation on adaptation and early warnings for all’-এ কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী।
* পঞ্চমতঃ ২১ সেপ্টেম্বর ২১ সেপ্টেম্বর High-level Event on Universal Health Coverage level Event on Universal Health Coverage অনুষ্ঠিত হবে। এই সভার প্লেনারি সেশনে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন স্বাস্থ্যবান্ধব নীতি এবং জনগণের স্বাস্থ্য উন্নয়নে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অর্জনসমূহ তুলে ধরবেন প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের অন্যান্য দেশের রাষ্ট্রপ্রধান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রধানদের আহ্বানে ৪টি উচ্চ-সভায় অংশগ্রহণ করবেন। অপরদিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ২টি হাই লেবেল সাইড ইভেন্ট আয়োজন করা হবে। এতে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন বলে জানান রাষ্ট্রদূত মুহিত।
রাষ্ট্রদূত মুহিত বলেন, এবারের অধিবেশনে বাংলাদেশের জন্য রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে প্রত্যাবর্তন এক নম্বর প্রায়োরিটি ইস্যু। এই বক্তব্যই আবারও বিশ্ববাসীর কাছে পৌছে দিতে একটি সাইড ইভেন্ট আয়োজন করা হয়েছে। পাশাপাশি ১১টি উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর সাথে জাতিসংঘ মহাসচিব এবং বেশ কয়েকটি দেশ ও সংস্থার প্রধানরা দিপাক্ষিক সভা করবেন।
এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ফাস্ট লেডি জিল বাইডেনের আমন্ত্রনে বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সাথে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় একটি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। প্রধানমন্ত্রীর সাথে বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে অংশ নেয়ার পাশাপাশি পররাষ্ট্র মন্ত্রী টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ঠ, জলবায়ু পরিবর্তন, LDC, ACD,LDC, ACD, OIC, NAM, BIMSTEC, G-77, বিষয়ক বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণ করবেন। ২টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে হাঙ্গেরিহ এবং কাজাখাস্তান-এর সাথে। পাশাপাশি ঘানা, অস্ট্রেলিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং নেদারল্যান্ডস-এর বৈদেশিক বাণিজ্য এবং উন্নয়ন সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রীর সাথে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হবে।
এবার প্রধানমন্ত্রীর সফর সঙ্গী হিসেবে কারা কারা থাকছেন এমন এক প্রশ্নের উত্তরে রাষ্ট্রদূত মুহিত বলেন, এব্যাপারে এখন পর্যন্ত তার কাছে কোন সঠিক তথ্য নেই।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে রাষ্ট্রদূত মুহিত বলেন, প্রতিবছর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের আলোচ্য বিষয় বাস্তবায়ন সময় সাপেক্ষ্য আর দীর্ঘ মেয়াদী ব্যাপার। সেই আলোকে বিগত বছরগুলোর সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নে আশানরূপ ফলাফল নেই।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে রাষ্ট্রদূত মুহিত বলেন, এবছরই রেকর্ড ১৫০ জনের মতো বিশ্বের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান বা তাদের প্রতিনিধিরা ৭৮তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন। যাদের মধ্যে ৯২জন রাষ্ট্রপ্রধান আর ৪৯জন সরকার প্রধান থাকছেন।