এফবিআইকে ঘুষ: যুক্তরাষ্ট্রে বিএনপি নেতার ছেলের দন্ড
- প্রকাশের সময় : ০৮:১৬:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ মার্চ ২০১৫
- / ১০১২ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: বাংলাদেশী এক রাজনীতিকের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সংরক্ষিত তথ্য পেতে এফবিআইয়ের এক সদস্যকে ঘুষ দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এক বিএনপি নেতার ছেলেকে কারাদন্ড দিয়েছে দেশটির একটি আদালত। দন্ডিত রিজভী আহমেদ ওরফে সিজার (৩৬) বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাসাসের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনের ছেলে। পরিবার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাটের ফেয়ারফিল্ড কাউন্টিতে বসবাস করছেন মামুন। সাড়ে তিন বছরের কারাদন্ডপ্রাপ্ত সিজার বর্তমানে জামিনে আছেন। আগামী ২০ এপ্রিল তাকে কারাগারে রিপোর্ট করতে হবে। ৪ মার্চ বুধবার নিউইয়র্কের হোয়াইট প্লেইন ফেডারেল আদালতের বিচারক ভিনসেন্ট এল ব্রিকেটি এ আদেশ দেন।
একই মামলায় ঘুষ লেনেদেনে মধ্যস্থতাকারী যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক জোহানেস থালেরকেও আড়াই বছরের কারাদন্ড দিয়েছে আদালত। মামলার প্রধান আসামী এফবিআইয়ের স্পেশাল এজেন্ট রবার্ট লাস্টিকের সাজার বিষয়ে আগামী ৩০ এপ্রিল আদেশ দেবে এই আদালত।
সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউ ইয়র্কের অ্যাটর্নি প্রিত ভারারার মুখপাত্র কুইলিজ জেনিফার জানান, ২০১৩ সালের ১৩ অগাস্ট গ্রেপ্তার হন থালের ও সিজার। গত ১৭ অক্টোবর আদালতে দোষ স্বীকার করেন তারা। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পরের বছর মার্চ পর্যন্ত এফবিআইয়ের সে সময়ের স্পেশাল এজেন্ট রবার্ট লাস্টিককে ঘুষ সাধার কথা স্বীকার করেন তারা। লাস্টিক ওই সময় এফবিআইয়ের কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স স্কোয়াডে কাজ করতেন।
থালের হলেন লাস্টিকের ছোটবেলার বন্ধু। আর একটি দোকানে একসঙ্গে কাজ করার সুবাদে রিজভীর সঙ্গে তার পরিচয়। জবানবন্দিতে রিজভী বলেন, তার বিপরীত মতাদর্শের একজন বাংলাদেশী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলারক্ষা বাহিনীর গোপন নথি এবং ‘সন্দেহজনক’ কর্মকান্ডের বিষয়ে একটি প্রতিবেদন পাওয়ার জন্য তিনি ওই ঘুষ সাধেন। তবে ওই বাংলাদেশী রাজনীতিকের নাম-পরিচয় প্রকাশ করেনি যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ।
রিজভী ও থালের জবানবন্দিতে বলেন, ওই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের অবস্থান জেনে তার এবং তার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ‘ক্ষতি করতেই’ ওই গোপন তথ্য চাইছিলেন রিজভী। এ বিষয়ে রবার্ট লাস্টিকের সঙ্গে মেইল ও মোবাইলে মেসেজ চালাচালি হয়। এফবিআই এজেন্ট লাস্টিক প্রাথমিকভাবে ৪০ হাজার ডলার এবং পরে মাসিক ভিত্তিতে ৩০ হাজার ডলারের বিনিময়ে ‘সব তথ্য’ দিতে রাজি হন।
যুক্তরাষ্ট্রের অনলাইন সংবাদমাধ্যম এক্সামিনার ওই মামলার এজাহারের যে অনুলিপি প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, ২০১১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর, ১৩ অক্টোবর ও ৩ নভেম্বর লাস্টিকের নির্দেশে একজন এজেন্ট তিন দফা এফবিআইয়ের তথ্যভান্ডারে প্রবেশ করেন এবং ওই বাংলাদেশী রাজনীতিকের বিষয়ে ‘সন্দেহজনক কার্যক্রমের’ গোপন নথি সংগ্রহ করেন। এরপর ২০১১ সালের ৯ ডিসেম্বর ডানবুরির এক বিপণীবিতানের ফুড কোর্টে থালের ও রিজভীর বৈঠক হয়। সেখানে থালের এফবিআইয়ের ওই গোপন নথি রিজভীর হাতে দেন এবং বিনিময়ে রিজভী এক হাজার ডলার দেন। এরপর রিজভীকে চাপ দিয়ে কীভাবে বাড়তি টাকা আদায় করা যায়, সে বিষয়ে থালের ও লাস্টিকের মধ্যে এসএমএস আদান-প্রদান হয়। একটি রেস্তোরাঁয় বৈঠক করার বিষয়েও তারা সম্মত হন।
এসএমএস থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের আরেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে অভিযোগ বাদ দেওয়ার জন্য ঘুষ দিতেও রাজি হন রিজভী ও তার ‘সঙ্গীরা’।
২০১২ সালে জানুয়ারির শেষ দিকে লাস্টিক জানতে পারেন, রিজভী আরেকটি সূত্র থেকে গোপন তথ্য বের করার চেষ্টায় আছেন। এরপর তিনি থালেরকে একটি এসএমএস পাঠান, যাতে ওই এফবিআই এজেন্ট বাংলাদেশী সেই রাজনীতিকের নম্বর পেয়েছেন এবং দ্রুত তাকে ১০ হাজার ডলার না দিলে তিনি রিজভীর কর্মকান্ডের কথা ফাঁস করে দেবেন বলে বলা হয়।
আদালতের রায়ের পর সিজারের বাবা মোহাম্মদ উল্লাহ মামুন টেলিফোনে বলেন, “বিএনপির দুয়েকজনের বিশ্বাসঘাতকতার বলি হলো আমার ছেলে। এর বেশি কিছু বলতে চাই না।”