নিউইয়র্ক ০১:১৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834
টক অব দ্যা কমিউনিটি

আলমগীর খান আলমের নীরব প্রস্থান

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১২:৩৫:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • / ১২২ বার পঠিত

বিশেষ প্রতিনিধি: চলেই গেলেন। চলে যাওয়ার নানান কারনও থাকে, যুক্তি থাকে। কিন্তু হঠাৎ করেই নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী কমিউনিটির পরিচিত ও প্রিয়মুখ ‘শোটাইম মিউজিক’র স্বত্ত¡াধিকারী, প্রবাসে ‘ঢালিউড ফিল্ম এন্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ড’র ও ‘এনআরবি অ্যাওয়ার্ড’র প্রবর্তক আলমগীর খান আলম কাউকে না জানিয়ে বাংলাদেশে চলেই গেলেন। শনিবার (৮ ফেব্রæয়ারী) সকালে দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বাংলাদেশের পথে রওয়ানা হয়েছেন তিনি। খবরটি ঢাউর হওয়ার সাথে তা ‘টক অব দ্যা কমিউনিটি’তে পরিণত হয়।
জানা যায়, দীর্ঘ প্রায় তিন দশক ধরে নিউইয়র্ক প্রবাসী আলমগীর খান আলম। তরুণ বয়সে পড়ালেখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। স্থানীয় একটি কমিউনিটি কলেজেও পড়াশুনা করেছেন। তার ফেসবুক পেজে দখা যায় তিনি সিটি কলেজ, ঢাকা ও দ্য সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কে পড়াশুনা করেছেন। সর্বশেষ ৩০ জানুয়ারী তিনি তার ফেসবুকে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সাপ্তাহিক আজকাল সম্পাদক শাহ নেওয়াজ-এর জন্মদিনের অনুষ্ঠানের ছবি পোষ্ট করেছেন। কিন্তু কাউকে না জানিয়ে আকস্মিকভাবে তার চলে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কমিউনিটির নানানজন নানান কথা বলছেন। আর এমন এক সময়ে তিনি চলে গেলেন যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের গণ ডিাপোর্ট কর্মসূচী চলছে। কেউ বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ নিলেও আলমের বৈধ নিজের কাগজ-পত্র হয়নি। আর সে কারণেই ট্রাম্প প্রশাসনের আন ডকুমেন্টে অভিবাসী গ্রেফতার ও ডিপোর্ট অভিযানের শিকার না হয়ে নিজেই বাংলাদেশে ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। আবার কেউ বলছেন তার মায়ের আকস্মিক অসুস্থতার খবর পেয়ে তিনি তিনি দেশে চলে গেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে ‘ঢালিউড ফিল্ম এন্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ড’ ও ‘এনআরবি অ্যাওয়ার্ড’র অনুষ্ঠান চালু করে আলমগীর খান আলম কমিউনিটিতে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। আর এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠান ঘিরে বাংলাদেশর সিনেমা ও নাট্যজগতের বহু অভিনেতা, অভিনেত্রী, গায়ক, গায়িকা তার অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। আমন্ত্রিত হয়েছিলেন বলিউড ও কলকাতার নায়ক-নায়িকা ও গায়ক-গায়কীরাও। বিশেষ করেন বাংলাদেশের ও সঙ্গীত জগতের দুই জীবন্ত কিংবদন্তী ও জনপ্রিয় শিল্পী রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমীনকে নিয়ে একত্রে এক মঞ্চে গানের অনুষ্ঠান আয়োজন ছিলো তার সেরা আয়োজন।
প্রায় তিন দশক ধরে আলমের প্রবাস জীবনের সময়ে অসংখ্য মানুষের সাথে তার বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। তার অকস্মিক চলে যাওয়ায় তারা সবাই আলমের জন্য মনোকষ্টে ভূগছেন। কিছুদিন আগে তিনি মস্তিস্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে কয়েকদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তখন থেকেই তিনি বাংলাদেশে ফিরে যাবার কথা ভাবছিলেন বলে তার এক ঘনিষ্টজন জানান।
জানা গেছে, শনিবার এ্যামিরাত এয়ারলাইন্সের সকাল সাড়ে ১১টার একটি ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশ্যে জন এফ কেনেডী আন্তর্জতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন আলমগীর খান আলম। এসময় কোন এক বাংলাদেশী তাকে দেখে তার বন্ধু-বান্ধবদের জানালে খবরটি কমিউনিটিতে ঢাউর হয়ে যায়। চলতে থাকে সঠিক সন্ধানের। নিউইয়র্কের বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকার হোটেল-রেস্তোরায় দিনভর চলতে থাকে আলম-কে নিয়ে নানা কথা। ফলে খবরটি ‘টক অব দ্যা কমিউনিটি’তে পরিণত হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আলমের এক ঘনিষ্ট বন্ধু জানান, আলম ভাই সত্যিই বাংলাদেশে চলে গেছেন। তার বাসা ছাড়াও আমরা জেএফকে বিমানবন্দরেও আমরা খোঁজ নিয়েছি এবং যেটুকু খোঁব পেয়েছি তাতে বলা যায় তিনি কাউকে না বলেই ঢাকার উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক ত্যাগ করে প্রায় তিন দশকের প্রবাস জীবনের ইতি টানলেন। অবিবাহিত আলম নিউইয়র্কে একাকী জীবন কাটালেও একাধিকবার তার বিয়ের গুঞ্জনও উঠলেও তিনি অবিবাহিত ছিলেন। প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বিয়ে কওে সংসার করারও।
এদিকে আলমগীর খান আলমের চলে যাওয়ায় সামাজিক যোগাযগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেইে অকে কথা লিখছেন, বলছেন। এসঙ্গে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আবিদ রহমান লিখেছেন: ‘আপন সা¤্রাজ্যের একছত্র অধিপতি বীর বেশে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। অভিনন্দন অবিরাম ভালোবাসা।’
ফটো সাংবাদিক নিহার সিদ্দিকী লিখেছেন: মায়ের অসুস্থতার জন্য চার ঘন্টার নোটিশে বাংলাদেশে চলে গেলেন বহির বিশ্বে জনপ্রিয় প্রোমোটার আলমগীর খান আলম। মায়ের টানে দেশে ফিরে গেলেন বহির্বিশ্বের অন্যতম এবং ঢালিউড খ্যাত জনপ্রিয় প্রোমোটার আলমগীর খান আলম দেশে ফিরে গেলেন । গত ১৮ জানুয়ারী ছিল ঢালিউডের ২৪ তম অনুষ্ঠান। প্রতিবছর ২৫ থেকে ৩০ জন শিল্পী এনে বহির্বিশ্বের এই স্বনামধন্য প্রোমোটার আমাদের প্রবাসীদের বিশেষ করে নিউইয়র্ক এবং অন্যান্য স্টেটে তিনি তার এই প্রোগ্রাম করতেন, তার পর্যায়ে কোন প্রোমোটার এখনও আসতে পারেননি, তার এই চলে যাওয়া বন্ধু মহল এবং শিল্পীদের মনে বেদনার সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন আপনজনরা ফোন করে তার এই চলে যাওয়ার সত্যতা যাচাই করছেন। গতকাল (শুক্রবার) রাত দশটা পর্যন্ত নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে তার প্রিয় জায়গা গ্রাফিক্স ওয়ার্ল্ডে দেখা গেছে। ৩০ বছরের প্রবাস জীবনের ইতি টেনে দেশে চলে গেলেন। তিনি ছিলেন একমাত্র প্রোমোটার বাংলাদেশের স্বনামধন্য শিল্পীদের এনে বিভিন্ন স্টেটে তিনি প্রোগ্রাম করতেন। তার এই চলে যাওয়ার কারণ হিসাবে বিভিন্ন মহল আমেরিকার সার্বিক পরিস্থিতির কারণ হিসেবে মনে করছেন। তিনি ছাত্র জীবনে এদেশে আসেন এবং মধ্য বয়স পর্যন্ত এই প্রিয় শহরে নিউইয়র্কে বসবাস করতেন। তিনি একমাত্র প্রমোটার ছিলেন, যিনি বাংলাদেশ এবং ইন্ডিয়ার সমান স্বনামধন্য শিল্পীদের এনে দর্শক এবং শ্রোতাদের মন জুগিয়েছেন ।
বাংলাদেশ সোসাইটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক অনিক রাজ লিখেছেন: আলম ভাইর সাথে প্রতিদিন দেখা হয় যখন আমার অফিসের সামনে দিয়ে হেটে যান জ্যাকসন হাইটস। গতকাল (শুক্রবার) জুম্মার নামাজ পরে দেখা হলে বলি আলম ভাই চলেন একসাথে লাঞ্চ করি। খুবই ভারাক্রান্ত মনে না অনিক রাতে আসবো। রাতে আসলেন তখনও মন খারাপ। পরে ভাইয়ের সাথে শেষ কথা হয় গতাকাল ১২ টার (রাত) দিকে। সকালে এরকম একটা খবর শুনে ঘুম ভাঙ্গবে ভাবতেও পারিনি। মনটাও খুবই খারাপ। তার পর থেকে ফোন আসতেই থাকে। বাস্তবতা হচ্ছে আল্লাহ যা করবেন সবই ভালোর জন্য। তবুও আমার মন বলছে যদি খবরটা মিথ্যা হয়ে যেতো। কেনো বল্লাম?! এরকমটা হলে অন্তত কেউনা কেউ জানতো। আর এও হতে পারে যে জানলে আমরা বাসা চেইঞ্জ করার ব্যাপারে বলতাম। যেহেতু বাসা চেইঞ্জ এর বিষয়ে গত পরশু আমাদের অফিসে আলাপ করছিলাম। নিজের রক্তের না হলেও আলম ভাই অসুস্থ হওয়ার পর থেকে কেনো জানি আগের থেকে একটু বেশি আমার সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে এবং আলম ভাই অনেকটা চুপচাপ হয়ে যান। আপনি নিজেও জানেন না মানুষ কতো ভালোবাসে আপনাকে। এতো ফোন পেয়েছি। আপনি অনেক কিছু দিয়েছেন বাঙালী কমিউনিটিকে। আপনার অবদান অনেক। আলম ভাই আপনি যেখানেই থাকুন সুস্থ থাকুন।
কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট আহসান হাবীব লিখেছেন: মায়ের টানে একজন সজ্জন নির্মোহ ও নিভৃতচারি মানুষের নীরব প্রস্থান। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অশ্রæসিক্ত নয়নে লিখতেও পারছি না। অভিমানে নীরবে এভাবেই স্বদেশের উদ্দেশে চলে গেলেন ভাই! ভালো থাকুন আলম ভাই। আপনার সহচার্য খুবই মিস করবো। আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নাই। কিছু ভালোবাসার সত্যিই প্রতিদান হয় না। আপনার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা অবিরাম। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। সৃস্টিকর্তার কৃপা আপনার সাথে সবসময় থাকবে—–
আরো একজন আরো লিখেছেন-
প্রিয় আলম ভাইয়ের জন্য লিখা……
‘ওই আস্তাবলের মাথায় যে আকাশটা, ওরই ওপারে পূর্বদিকে বহুদুরে তাহাদের নিশ্চিন্দিপুর। আজ কতদিন সে নিশ্চিন্দিপুর দেখে নাই-
তি-ন বৎসর! ক-ত-কা-ল!
সে জানে নিশ্চিন্দিপুর তাহাকে দিনে রাতে সবসময় ডাকে,
শাঁখারিপুকুর ডাক দেয়,
বাঁশবনটা ডাক দেয়,
সোনাডাঙ্গার মাঠ ডাক দেয়,
কদমতলার সায়েবের ঘাট ডাক দেয়…’
(পথের পাঁচালী’র) অপুর তিন বছর অসীম মহাকালের অন্তহীন চক্রে হয়তো অতি নগন্য। কিন্তু ভাগ্যান্বেষণে স্বদেশের সীমানা পেরিয়ে ভীন দেশে পাড়ি জমানো কোন প্রবাসীর অস্থির অনুভবে ত্রিশ বছরের ব্যপ্তি অপরিমেয়। এখানে ঝলমলে হাসি, ঝিকিমিকি সুখ আর জমকালো আনন্দের মাঝেও কি যেন নেই। দিনের অবসরে অবর্ণনীয় এক শূন্যতা, রাতের নীরবতায় এক বুক হাহাকার…
‘কুল ছেড়ে এসে মাঝ দরিয়ায়
পিছনের পানে চাই,
ফেলে আসা তীরে,কি মায়া যে টানে
মন বলে ফিরে যাই- সবসময়। সবসময়।
লিটন খান লিখেছেন: আলম ভাই যে লেখাগুলো দেখছি বা আপনি চলে গেছেন দেশে, এটা বলতে ঠিক বুঝতে পারছি না যে, আপনি চলে গেলেন মানে কি আপনার আম্মুকে দেখে এসে আবার চলে আসবেন, নাকি একেবারেই বাংলাদেশে চলে গেলেন। এ ব্যাপারটা কেউই আমরা কিন্তু ক্লিয়ার হচ্ছে না। তো যদি আপনি বাংলাদেশে থেকে যান দয়া করে প্লিজ আমার ইনবক্সে আপনার ইমেইল এবং ঢাকার টেলিফোন নম্বরটা অবশ্যই অবশ্যই পাঠাবেন আমাকে। তো আপনি ভালো থাকুন, আপনার আম্মার প্রতি দোয়া রইল।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

টক অব দ্যা কমিউনিটি

আলমগীর খান আলমের নীরব প্রস্থান

প্রকাশের সময় : ১২:৩৫:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বিশেষ প্রতিনিধি: চলেই গেলেন। চলে যাওয়ার নানান কারনও থাকে, যুক্তি থাকে। কিন্তু হঠাৎ করেই নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশী কমিউনিটির পরিচিত ও প্রিয়মুখ ‘শোটাইম মিউজিক’র স্বত্ত¡াধিকারী, প্রবাসে ‘ঢালিউড ফিল্ম এন্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ড’র ও ‘এনআরবি অ্যাওয়ার্ড’র প্রবর্তক আলমগীর খান আলম কাউকে না জানিয়ে বাংলাদেশে চলেই গেলেন। শনিবার (৮ ফেব্রæয়ারী) সকালে দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বাংলাদেশের পথে রওয়ানা হয়েছেন তিনি। খবরটি ঢাউর হওয়ার সাথে তা ‘টক অব দ্যা কমিউনিটি’তে পরিণত হয়।
জানা যায়, দীর্ঘ প্রায় তিন দশক ধরে নিউইয়র্ক প্রবাসী আলমগীর খান আলম। তরুণ বয়সে পড়ালেখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। স্থানীয় একটি কমিউনিটি কলেজেও পড়াশুনা করেছেন। তার ফেসবুক পেজে দখা যায় তিনি সিটি কলেজ, ঢাকা ও দ্য সিটি ইউনিভার্সিটি অব নিউইয়র্কে পড়াশুনা করেছেন। সর্বশেষ ৩০ জানুয়ারী তিনি তার ফেসবুকে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সাপ্তাহিক আজকাল সম্পাদক শাহ নেওয়াজ-এর জন্মদিনের অনুষ্ঠানের ছবি পোষ্ট করেছেন। কিন্তু কাউকে না জানিয়ে আকস্মিকভাবে তার চলে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কমিউনিটির নানানজন নানান কথা বলছেন। আর এমন এক সময়ে তিনি চলে গেলেন যখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের গণ ডিাপোর্ট কর্মসূচী চলছে। কেউ বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাসের সুযোগ নিলেও আলমের বৈধ নিজের কাগজ-পত্র হয়নি। আর সে কারণেই ট্রাম্প প্রশাসনের আন ডকুমেন্টে অভিবাসী গ্রেফতার ও ডিপোর্ট অভিযানের শিকার না হয়ে নিজেই বাংলাদেশে ফিরে যাবার সিদ্ধান্ত নেন তিনি। আবার কেউ বলছেন তার মায়ের আকস্মিক অসুস্থতার খবর পেয়ে তিনি তিনি দেশে চলে গেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে ‘ঢালিউড ফিল্ম এন্ড মিউজিক অ্যাওয়ার্ড’ ও ‘এনআরবি অ্যাওয়ার্ড’র অনুষ্ঠান চালু করে আলমগীর খান আলম কমিউনিটিতে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন। আর এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান অনুষ্ঠান ঘিরে বাংলাদেশর সিনেমা ও নাট্যজগতের বহু অভিনেতা, অভিনেত্রী, গায়ক, গায়িকা তার অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। আমন্ত্রিত হয়েছিলেন বলিউড ও কলকাতার নায়ক-নায়িকা ও গায়ক-গায়কীরাও। বিশেষ করেন বাংলাদেশের ও সঙ্গীত জগতের দুই জীবন্ত কিংবদন্তী ও জনপ্রিয় শিল্পী রুনা লায়লা ও সাবিনা ইয়াসমীনকে নিয়ে একত্রে এক মঞ্চে গানের অনুষ্ঠান আয়োজন ছিলো তার সেরা আয়োজন।
প্রায় তিন দশক ধরে আলমের প্রবাস জীবনের সময়ে অসংখ্য মানুষের সাথে তার বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। তার অকস্মিক চলে যাওয়ায় তারা সবাই আলমের জন্য মনোকষ্টে ভূগছেন। কিছুদিন আগে তিনি মস্তিস্কে রক্তক্ষরণজনিত কারণে অসুস্থ হয়ে কয়েকদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। তখন থেকেই তিনি বাংলাদেশে ফিরে যাবার কথা ভাবছিলেন বলে তার এক ঘনিষ্টজন জানান।
জানা গেছে, শনিবার এ্যামিরাত এয়ারলাইন্সের সকাল সাড়ে ১১টার একটি ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশ্যে জন এফ কেনেডী আন্তর্জতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন আলমগীর খান আলম। এসময় কোন এক বাংলাদেশী তাকে দেখে তার বন্ধু-বান্ধবদের জানালে খবরটি কমিউনিটিতে ঢাউর হয়ে যায়। চলতে থাকে সঠিক সন্ধানের। নিউইয়র্কের বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকার হোটেল-রেস্তোরায় দিনভর চলতে থাকে আলম-কে নিয়ে নানা কথা। ফলে খবরটি ‘টক অব দ্যা কমিউনিটি’তে পরিণত হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আলমের এক ঘনিষ্ট বন্ধু জানান, আলম ভাই সত্যিই বাংলাদেশে চলে গেছেন। তার বাসা ছাড়াও আমরা জেএফকে বিমানবন্দরেও আমরা খোঁজ নিয়েছি এবং যেটুকু খোঁব পেয়েছি তাতে বলা যায় তিনি কাউকে না বলেই ঢাকার উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক ত্যাগ করে প্রায় তিন দশকের প্রবাস জীবনের ইতি টানলেন। অবিবাহিত আলম নিউইয়র্কে একাকী জীবন কাটালেও একাধিকবার তার বিয়ের গুঞ্জনও উঠলেও তিনি অবিবাহিত ছিলেন। প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন বিয়ে কওে সংসার করারও।
এদিকে আলমগীর খান আলমের চলে যাওয়ায় সামাজিক যোগাযগ মাধ্যম ফেসবুকে অনেইে অকে কথা লিখছেন, বলছেন। এসঙ্গে মিডিয়া ব্যক্তিত্ব আবিদ রহমান লিখেছেন: ‘আপন সা¤্রাজ্যের একছত্র অধিপতি বীর বেশে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন। অভিনন্দন অবিরাম ভালোবাসা।’
ফটো সাংবাদিক নিহার সিদ্দিকী লিখেছেন: মায়ের অসুস্থতার জন্য চার ঘন্টার নোটিশে বাংলাদেশে চলে গেলেন বহির বিশ্বে জনপ্রিয় প্রোমোটার আলমগীর খান আলম। মায়ের টানে দেশে ফিরে গেলেন বহির্বিশ্বের অন্যতম এবং ঢালিউড খ্যাত জনপ্রিয় প্রোমোটার আলমগীর খান আলম দেশে ফিরে গেলেন । গত ১৮ জানুয়ারী ছিল ঢালিউডের ২৪ তম অনুষ্ঠান। প্রতিবছর ২৫ থেকে ৩০ জন শিল্পী এনে বহির্বিশ্বের এই স্বনামধন্য প্রোমোটার আমাদের প্রবাসীদের বিশেষ করে নিউইয়র্ক এবং অন্যান্য স্টেটে তিনি তার এই প্রোগ্রাম করতেন, তার পর্যায়ে কোন প্রোমোটার এখনও আসতে পারেননি, তার এই চলে যাওয়া বন্ধু মহল এবং শিল্পীদের মনে বেদনার সৃষ্টি করেছে। বিভিন্ন আপনজনরা ফোন করে তার এই চলে যাওয়ার সত্যতা যাচাই করছেন। গতকাল (শুক্রবার) রাত দশটা পর্যন্ত নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে তার প্রিয় জায়গা গ্রাফিক্স ওয়ার্ল্ডে দেখা গেছে। ৩০ বছরের প্রবাস জীবনের ইতি টেনে দেশে চলে গেলেন। তিনি ছিলেন একমাত্র প্রোমোটার বাংলাদেশের স্বনামধন্য শিল্পীদের এনে বিভিন্ন স্টেটে তিনি প্রোগ্রাম করতেন। তার এই চলে যাওয়ার কারণ হিসাবে বিভিন্ন মহল আমেরিকার সার্বিক পরিস্থিতির কারণ হিসেবে মনে করছেন। তিনি ছাত্র জীবনে এদেশে আসেন এবং মধ্য বয়স পর্যন্ত এই প্রিয় শহরে নিউইয়র্কে বসবাস করতেন। তিনি একমাত্র প্রমোটার ছিলেন, যিনি বাংলাদেশ এবং ইন্ডিয়ার সমান স্বনামধন্য শিল্পীদের এনে দর্শক এবং শ্রোতাদের মন জুগিয়েছেন ।
বাংলাদেশ সোসাইটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক অনিক রাজ লিখেছেন: আলম ভাইর সাথে প্রতিদিন দেখা হয় যখন আমার অফিসের সামনে দিয়ে হেটে যান জ্যাকসন হাইটস। গতকাল (শুক্রবার) জুম্মার নামাজ পরে দেখা হলে বলি আলম ভাই চলেন একসাথে লাঞ্চ করি। খুবই ভারাক্রান্ত মনে না অনিক রাতে আসবো। রাতে আসলেন তখনও মন খারাপ। পরে ভাইয়ের সাথে শেষ কথা হয় গতাকাল ১২ টার (রাত) দিকে। সকালে এরকম একটা খবর শুনে ঘুম ভাঙ্গবে ভাবতেও পারিনি। মনটাও খুবই খারাপ। তার পর থেকে ফোন আসতেই থাকে। বাস্তবতা হচ্ছে আল্লাহ যা করবেন সবই ভালোর জন্য। তবুও আমার মন বলছে যদি খবরটা মিথ্যা হয়ে যেতো। কেনো বল্লাম?! এরকমটা হলে অন্তত কেউনা কেউ জানতো। আর এও হতে পারে যে জানলে আমরা বাসা চেইঞ্জ করার ব্যাপারে বলতাম। যেহেতু বাসা চেইঞ্জ এর বিষয়ে গত পরশু আমাদের অফিসে আলাপ করছিলাম। নিজের রক্তের না হলেও আলম ভাই অসুস্থ হওয়ার পর থেকে কেনো জানি আগের থেকে একটু বেশি আমার সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে এবং আলম ভাই অনেকটা চুপচাপ হয়ে যান। আপনি নিজেও জানেন না মানুষ কতো ভালোবাসে আপনাকে। এতো ফোন পেয়েছি। আপনি অনেক কিছু দিয়েছেন বাঙালী কমিউনিটিকে। আপনার অবদান অনেক। আলম ভাই আপনি যেখানেই থাকুন সুস্থ থাকুন।
কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট আহসান হাবীব লিখেছেন: মায়ের টানে একজন সজ্জন নির্মোহ ও নিভৃতচারি মানুষের নীরব প্রস্থান। হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অশ্রæসিক্ত নয়নে লিখতেও পারছি না। অভিমানে নীরবে এভাবেই স্বদেশের উদ্দেশে চলে গেলেন ভাই! ভালো থাকুন আলম ভাই। আপনার সহচার্য খুবই মিস করবো। আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর ভাষা নাই। কিছু ভালোবাসার সত্যিই প্রতিদান হয় না। আপনার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা অবিরাম। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন। সৃস্টিকর্তার কৃপা আপনার সাথে সবসময় থাকবে—–
আরো একজন আরো লিখেছেন-
প্রিয় আলম ভাইয়ের জন্য লিখা……
‘ওই আস্তাবলের মাথায় যে আকাশটা, ওরই ওপারে পূর্বদিকে বহুদুরে তাহাদের নিশ্চিন্দিপুর। আজ কতদিন সে নিশ্চিন্দিপুর দেখে নাই-
তি-ন বৎসর! ক-ত-কা-ল!
সে জানে নিশ্চিন্দিপুর তাহাকে দিনে রাতে সবসময় ডাকে,
শাঁখারিপুকুর ডাক দেয়,
বাঁশবনটা ডাক দেয়,
সোনাডাঙ্গার মাঠ ডাক দেয়,
কদমতলার সায়েবের ঘাট ডাক দেয়…’
(পথের পাঁচালী’র) অপুর তিন বছর অসীম মহাকালের অন্তহীন চক্রে হয়তো অতি নগন্য। কিন্তু ভাগ্যান্বেষণে স্বদেশের সীমানা পেরিয়ে ভীন দেশে পাড়ি জমানো কোন প্রবাসীর অস্থির অনুভবে ত্রিশ বছরের ব্যপ্তি অপরিমেয়। এখানে ঝলমলে হাসি, ঝিকিমিকি সুখ আর জমকালো আনন্দের মাঝেও কি যেন নেই। দিনের অবসরে অবর্ণনীয় এক শূন্যতা, রাতের নীরবতায় এক বুক হাহাকার…
‘কুল ছেড়ে এসে মাঝ দরিয়ায়
পিছনের পানে চাই,
ফেলে আসা তীরে,কি মায়া যে টানে
মন বলে ফিরে যাই- সবসময়। সবসময়।
লিটন খান লিখেছেন: আলম ভাই যে লেখাগুলো দেখছি বা আপনি চলে গেছেন দেশে, এটা বলতে ঠিক বুঝতে পারছি না যে, আপনি চলে গেলেন মানে কি আপনার আম্মুকে দেখে এসে আবার চলে আসবেন, নাকি একেবারেই বাংলাদেশে চলে গেলেন। এ ব্যাপারটা কেউই আমরা কিন্তু ক্লিয়ার হচ্ছে না। তো যদি আপনি বাংলাদেশে থেকে যান দয়া করে প্লিজ আমার ইনবক্সে আপনার ইমেইল এবং ঢাকার টেলিফোন নম্বরটা অবশ্যই অবশ্যই পাঠাবেন আমাকে। তো আপনি ভালো থাকুন, আপনার আম্মার প্রতি দোয়া রইল।