আজ ফোর্থ জুলাই : যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস

- প্রকাশের সময় : ১২:০৯:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫
- / ৭ বার পঠিত

DETROIT, UNITED STATES: Fireworks fired from barges on the Detroit River as part of the International Freedom Festival light up the Detroit, Michigan skyline 30 June 1999. Reports estimated the crowd at over 1,000,000 people who lined both the Detroit and Windsor, Canada sides of the river to watch the fireworks. AFP PHOTO/Jeff KOWALSKY (Photo credit should read JEFF KOWALSKY/AFP via Getty Images)
নিউইয়র্ক (ইউএনএ): আজ শুক্রবার ফোর্থ অব জুলাই, যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৯তম স্বাধীনতা দিবস। দিনটি ‘ফোর্থ অব জুলাই’ কিংবা ‘ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে’ হিসাবেই পরিচিত। দিনটি ফেডারেল ছুটির দিন। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যের সর্বত্রই আমেরিকানরা স্বাধীনতা উদযাপনে মেতে উঠবে। দিনের উল্লেখযোগ্য কর্মকান্ডের মধ্যে থাকবে পতাকা শোভিত শোভাযাত্রা, আনন্দ হৈ-হল্লা, বার-বি-কিউ পার্টি। সন্ধ্যায় আতশবাজির হল্কা। বিশেষ করে নিউইয়র্কে মেসি’র ঐতিহ্যবাসী আতশবাজি তো থাকছে-ই। খবর ইউএনএ’র।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটির অনেকেই বার্বিকিউ পার্টির আয়োজন করবে বলে জানা গেছে। আবার অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে বা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে মেসি’র ফায়ার ওয়ার্ক প্রত্যক্ষ করবেন। কেউ কেউ পার্টিরও আয়োজন করবেন বলে জানা গেছেন। এদিন নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিস বন্ধ থাকবে।
ইতিহাস বলে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রটি ৪ জুলাই ১৭৭৬ সালে পেনসিলভানিয়া প্রাদেশিক আইনসভায় অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসের সভায় গৃহীত হয়। এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের সাথে যুদ্ধরত তৎকালীন তেরটি আমেরিকান উপনিবেশ নিজেদের ব্রিটিশ শাসনের বাইরে স্বাধীন ও সার্বভৌম হিসেবে ঘোষণা করে এবং ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা- ইউএসএ নামে নতুন রাষ্ট্র গঠন করে। পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি কংগ্রেসে ভোটাভুটির জন্য আগেই আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণার একটি খসড়া প্রস্তুত করে রেখেছিলেন। একটি ঐতিহাসিক দলিল।
এর আগে এক বছর ধরে চলে আমেরিকানদের ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবী যুদ্ভে জীবন দেন ২৫ হাজার বিপ্লবী আমেরিকান। ১৩টি উপনিবেশ একসঙ্গে ইংল্যান্ডের রাজার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে স্বাধীনতা সংগ্রাম চলতে থাকে। ভার্জিনিয়া উপনিবেশের জর্জ ওয়াশিংটন ছিলেন প্রধান সেনাপতি। আর সেই যুদ্ধে উপনিবেশগুলোর বিজয়ের প্রাক্কালে ১৭৭৬ সালের ২ জুলাই দ্বিতীয় কন্টিনেন্টাল কংগ্রেসে ভোটের মাধ্যমে স্বাধীনতা ঘোষণার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এর পর পাঁচজনের একটি কমিটি স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র রচনা করে। টমাস জেফারসন, জন অ্যাডামস, বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন ছিলেন এ কমিটির অন্যতম সদস্য। টমাস জেফারসন ছিলেন মূল লেখক। রচিত ঘোষণাপত্রটি নিয়ে কংগ্রেসে তর্ক-বিতর্ক হয় এবং পরিশেষে ঘোষণাপত্রটি চূড়ান্ত রূপ লাভ করে। ঘোষণাপত্রটি কংগ্রেসের অনুমোদন পায় ৪ জুলাই ১৭৭৬ সালে।
ব্রিটিশদের অরাজকতা থেকে বের হয়ে আসার জন্য ‘প্রতিটি মানুষই সমান এবং একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি’ এই বাণীকে সামনে রেখে থমাস জেফারসন লিখলেন স্বাধীনতার বাণী। প্রাথমিকভাবে এটি মুদ্রিত আকারে প্রকাশিত হয়। যা ছিলো থমাস জেফারসনের একটি হাতে লেখা পত্র। মুদ্রিত এই সংস্করণটি ব্যাপকভাবে বিতরণ ও প্রচার করা হয়।
পরে জন অ্যাডামস ও বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের সংশোধন ও সংযোজনকৃত একটি কপি তৈরি হয়। আর তার ওপর জেফারসনের টিকা সংবলিত মূল খসড়াটি লাইব্রেরি অব কংগ্রেসে সংরক্ষণ করা হয়। ঘোষণাপত্রের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট এবং সাক্ষরকৃত সংস্করণ যেটি দাপ্তরিক সংস্করণ হিসেবে অধিক পরিচিত সেটি ওয়াশিংটন ডিসির ন্যাশনাল আর্কাইভসে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে।
ঘোষণাটির উৎস ও ব্যাখ্যা পন্ডিতদের অনুসন্ধানের বিষয়বস্তু। ঘোষণাটি যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় জর্জের বিরুদ্ধে অনুযোগসমূহ এবং কতিপয় সহজাত ও আইনগত অধিকার, বিপ্লবের অধিকার যার অন্যতম, বর্ণনার মাধ্যমে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতার যথার্থতা প্রমাণ করে।
আব্রাহাম লিংকন তার বিখ্যাত গেটিসবার্গ ভাষণে এই ঘোষণাপত্রকেই মূলভিত্তি হিসেবে অনুসরণ করেন। আর তারপর থেকে ঘোষণাটি বিশেষ করে এর দ্বিতীয় বাক্যটি ‘We hold these truths to be self-evident, that all men are created equal, that they are endowed by their Creator with certain unalienable Rights, that among these are Life, Liberty and the pursuit of Happiness.’ মানবাধিকারের উপর একটি সুপরিচিত উক্তিতে পরিনত হয়।
ইংরেজি ভাষার সবচেয়ে সুপরিচিত এই উক্তি এমন এক নৈতিক মান নির্দেশ করে যা অর্জনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে সর্বাতœক সংগ্রাম করতে হয়েছে। আব্রাহাম লিঙ্কন এই ঘোষণাপত্রটিকেই তার রাজনৈতিক দর্শনের ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা করেন এবং পরবর্তীতে ঘোষণাটিতে বিবৃত নীতিমালার আলোকে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান রচিত হয়। বিভিন্ন দেশের আরো অনেক সমশ্রেণীর দলিল প্রণয়নে অনুপ্রেরণা হিসেবেও কাজ করে এই ঘোষণাপত্র।
নতুন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর প্রথম দুই দশক ৪ জুলাই তারিখটি খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে পালিত হয়েছে এমনটা খুব জানা যায়নি। আমেরিকানরা তখন স্বাধীনতার স্বাদ নিতেই ব্যস্ত। কিন্তু ১৮২৬ সালের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিতে ঘটে যায় এক ঘটনা। ঠিক ওই দিনটিতে মৃত্যু হয় থমাস জেফারসন ও জন অ্যাডামসের। ঘোষণাপত্রের প্রধান দুই কুশীলব আর সাবেক দুই রাষ্ট্রপতির একই দিনে মৃত্যু ৪ জুলাইকে নতুন করে গুরুত্ববহ করে তোলে আর সেই থেকেই দিবসটি স্বাধীনতা দিবস হিসেবে মর্যাদার সাথে উদযাপন শুরু হয়। আর ১৯৭০ সালে স্বাধীনতার প্রায় ১০০ বছর পর যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেস দিনটিকে সরকারি ছুটির দিন হিসাবে ঘোষণা করে।
মেসি’জ এর আতশবাজি: মেসি’জ এর আতশবাজির এবার টানা ৪৯ বছর। মেসি’জ এর আয়োজনে এবারের ৪ জুলাইও নিউইয়র্কের আকাশ উজ্জ্বল হবে নানা রংয়ের আতশবাজির ফোয়ারায়। ইস্ট রিভারের দুই পাড়ে বেশ কয়েকটি স্থানে আয়োজন করা হবে এই ফায়ারওয়ার্কের। সূর্য ডোবার আগেই সন্ধ্যা সাড়ে ৮ টা থেকে শুরু হবে আতশবাজি।