নিউইয়র্ক ০১:৩১ অপরাহ্ন, রবিবার, ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

আজ কামাল আহমেদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:৫৪:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ এপ্রিল ২০২১
  • / ৫৯ বার পঠিত

আহবাব চৌধুরী খোকন: আজ ৫ এপ্রিল বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক এর নির্বাচিত, সভাপতি কমিউনিটির অতি প্রিয় আপনজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় কামাল আহমেদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। গত বছরের এই দিনে বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কামাল আহমেদ ছিলেন সত্যিকার অর্থে কমিউনিটির এক বটবৃক্ষ। যিনি দীর্ঘকাল যাবৎ কমিউনিটিকে সুখে দুঃখে আগলে রেখেছেন। সদ্য হাস্যজ্জল ন¤্র ভদ্র ও সজ্জন এই মানুষটি তাঁর নিঃস্বার্থ কর্মকান্ডের জন্য কমিউনিটির প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। দল মত নির্বিশেষে হয়ে উঠেছিলেন সকলের প্রিয় কামাল ভাই।
মরহুম কামাল আহমেদের জন্ম সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায়। ১৯৭৪ সনে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করে চাকুরী জীবন শুরু করেছিলেন সোনালী ব্যাংকের একজন চৌকুস ব্যাংকার হিসাবে। কিন্তু হিসাব নিকাশের এই গতবাধা জীবন তাঁর ভালো লাগেনি বেশী দিন। তাই সরকারী চাকুরী ত্যাগ করে ১৯৭৭ সালে নোঙ্গর ফেলেন আটলান্টিক তীরের ব্যস্ততম এই দেশটিতে এবং তার পর সাড়ে চার দশকের ও বেশী সময় তার বহুমুখী কর্মকান্ডের মাধ্যমে পুরো কমিউনিটিতে একটি বিশেষ স্থান করে নিতে সক্ষন হন। ব্যক্তি জীবনে প্রচুর অর্থ উপার্জন করলেও কখনো নিজের জন্য কিছু করতে দেখিনি। আমৃত্যু ভাড়া ঘরে থেকে জীবন অতিবাহিত করেছেন। কারো বিপদ-আপদ কিংবা অসুসস্থতা শুনলে নিজের শেষ অর্থটি পর্যন্ত দিয়ে সাহায্য করতে চেয়েছেন। উপার্জনের বেশীর ভাগ অর্থ ব্যয় করছেন সমাজের কল্যাণে। বাংলাদেশী সংস্কৃতির বিকাশ ও কমিউনিটির উন্নয়ন ছিল তাঁর স্বপ্ন। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিয়ানীবাজার সমিতি, লীগ অব আমেরিকা, জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ও বাংলাদেশ সোসাইটি যখন যে সংগঠনে সময় দেয়া দরকার কিংবা যখন যে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে তা পালনে কখনো কুন্ঠিত হননি।  মানবতাবাদী ও পরোপকারী কামাল ভাই ছিলেন আমার দীর্ঘ সময়ের একজন ভালো হিতাকাংখী। প্রতি মাসে তাঁর সাথে যেমন দেখা হতো, তেমনি ফোনে কথা হতো প্রায়ই। যতটুকু মনে পড়ে মৃত্যুর দিন দশেক আগে (২০২০ সালের ২৫ মার্চ) তার সাথে আমার শেষ কথা হয়েছিল। করোনা ভাইরাস তখন সর্বত্র জেঁকে বসেছে। নিউইয়র্ক জুড়ে কার্ফ্যু চলছে। পুরো নগরী পরিণত হয়েছে মৃত্যু পুরিতে। আমি নিজে অসুস্থ হয়ে গৃহবন্দি। কমিউনিটির প্রিয়মুখ ময়নুজ্জামান চৌধুরী, সৈয়দ ইলিয়াস খসরু, আব্দুল হাসিম হাসনু, গিয়াস উদ্দিন, সৈয়দ আল ওয়াহিদ নাজিম সহ চারিদিকে পরিচিতজন অনেকেই অসুস্থ। এমন সময় তার ভগ্নিপতি সিলেট বিভাগ উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ফারুক চৌধুরীর নিকট থেকে শুনলাম কামাল ভাই অসুস্থ। খবরটি শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। এক রিং হতেই ফোন ধরেছেন। কামাল ভাই কেমন আছেন জিজ্ঞেস করতেই ভাঙ্গা কন্ঠে উত্তর, “আমি ভালো আছি। তবে একটু কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয়ে গেছে। তোমার ভাবী বেশী অসুস্থ। উনার জন্য দোয়া কর। ভাবছি না কমলে উনাকে দিন দুয়েকের মধ্যে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেবো। সাবধানে থেকো এবং যদি দেখা না হয় ক্ষমা করে দিও।”
ছবি: কামাল আহমেদ 

কামাল ভাই সেদিন আমার সাথে ফোনালাপে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খসরু ভাইয়ের খবর জানতে চেয়েছিলেন। সাথে একটি দায়িত্বও দিলেন। বললেন করোনা আক্রান্ত মানুষের জন্য বাংলাদেশ সোসাইটির পক্ষ থেকে ১০০০ প্যাকেট গ্রোসারী সামগ্রী তৈরী করে রাখা আছে। সাদি ভাইকে বলেছেন ব্রঙ্কসে ২৫০ প্যাকেট পাঠাতে। আমি যেন বিলি-বণ্ঠনে একটু সহযোগিতা করি। তারপর থেকে আমি ফোনে আর তাঁকে পাইনি। তবে ফারুক ভাই ও সাদি ভাইয়ের মাধ্যমে নিয়মিত খবর রেখেছি। তার শরীর ক্রমেই খারাপ হতে থাকলো। ভাবীকে লং আইল্যান্ড হাসপাতালে পাঠিয়ে ২৮ মার্চ নিজে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে এলমার্ষ্ট হাসপাতালে গেলেন। আমরা খুব উদ্বেগ উৎকন্ঠায় কাটাচ্ছিলাম। পরীক্ষায় ধরা পড়ে কোভিড ১৯ পজেটিভ। তারপর ৫ এপ্রিল দিবাগত রাত ৪ ঘটিকায় সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। তাঁর বিদেহী আতœার মাগফেরাত কামনায় জালালাবাদ এসোসিয়েশন ও বাকা সহ বিভিন্ন সংগঠন তাৎক্ষনিক ভার্চ্যুয়াল দোয়া মাহফিলের আয়োজন করলেও আমরা এতোটা ভাগ্যাহত যে করোনা ভাইরাসের বিধি নিষেধের কারণে প্রিয় এই মানুষটির বিদায় বেলা কবরে দু মুঠো মাটি দেয়ার ও সুযোগ পাইনি। তার জন্ম হয়েছিলো বোধকরি কেবল দেওয়ার জন্য। শুধু দিয়েই গেলেন। যাওয়ার সময় কাউকে একটু ঋণ পরিশোধেরও সুযোগ দিলেন না।
কামাল ভাই খুব ভালো একজন মানুষ ছিলেন। আজিমুর রহমান বুরহান, আব্দুল হাসিম হাসনু, সৈয়দ ইলিয়াস খসরু, মকবুল রহিম চুনই, মোহাম্মদ সাদি মিন্টু, ফারুক চৌধুরী, দেওয়ান মহিউদ্দিন, রুহুল আমিন সিদ্দিকী জে মোল্লা সানি, ময়নুজ্জামান চৌধুরী, মইনুল ইসলাম, বাকের আজাদ, আব্দুল খালেক, আব্দুর রব মিয়া ও জাহিদ মিন্টু প্রমুখদের সমন্বয়ে কমিউনিটিতে একটি শক্তিশালী সোসাইটি গড়ে তুলেছিলেন। কামাল ভাই ছিলেন এই গ্রæপের প্রাণ। আমরা নিয়মিত প্রায়ই বিভিন্ন জায়গায় বসতাম। বিভিন্ন সমস্যায় এই গ্রæপের মাধ্যমে অনেক ভালো কাজ করার চেষ্টা করেছেন। তার সাথে কাজ করার অনেক স্মৃতি আমার রয়েছে।
ছবি:  আহবাব চৌধুরী

কামাল আহমেদ প্রথমবার যখন বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি নির্বাচিত হন আমিও তাঁর সাথে একই কমিটিতে ছিলাম। তখন দেখেছি সোসাইটিকে শক্তিশালী করতে তাঁর উদ্যোগ। তিনি বাংলাদেশী সংস্কৃতির বিকাশে সোসাইটির প্রথম বৈঠকে বারো মাসে তেরটি অনুষ্ঠান করার প্রস্তাব করেছিলেন। সোসাইটি ভবনে নিজ হাতে গঠন করেছিলেন একটি লাইব্রেরী। প্রতিষ্টা করেছিলেন কম্পিউটার ও বাংলা স্কুল। তিনি চেয়েছিলেন বাংলা স্কুল চালু হলে আমাদের নতুন প্রজন্ম যেমনি বাংলা ভাষা পড়া ও লেখা শেখার সুযোগ পাবে, তেমনি নতুন অভিবাসী কম্পিউটার শিখে নিজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র আসতে তিনি যেমন বিপুল সংখ্যক লোককে স্পন্সর করেছেন, তেমনি দেশ থেকে নতুন আসা লোকদের কর্মসংস্থান ও আবাসন সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করতেন। কারো অসুস্থতা কিংবা মৃত্যু সংবাদ শুনলে সর্বাগ্রে এগিয়ে যেতেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি খুবই ধার্মিক ছিলেন। দেশে নিজ এলাকায় যেমন অনেক মসজিদ ও স্কুল স্থাপনে সহযোগিতা করেছেন, তেমনি এই যুক্তরাষ্ট্রে এমন কোন মসজিদ নেই যেখানে কামাল আহমেদ আর্থিক সহযোগিতা নেই। পবিত্র রমজান মাসে বিভিন্ন জায়গায় যেমন ইফতার মাহফিলের আয়োজন করতেন, তেমনী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পুজা পার্বনে মিষ্টি পাঠিয়ে মহৎ হৃদয়ের পরিচয় দিয়েছেন। মৃত্যুর আগে তিনি করোনায় মৃত্যুবরণকারী সকল বাংলাদেশীকে বিনামূল্যে সোসাইটির কবর স্থানে দাফন করার সিদ্ধান্ত দিয়ে গিয়েছিলেন। সোসাইটির সভাপতি হিসাবে এটাই ছিল তাঁর শেষ দায়িত্ব ও সিদ্ধান্ত। দেখেছি দেশে অস্বচ্ছল মানুষের একটি দীর্ঘ তালিকা তাঁর নিকট সব সময় থাকতো। যাদেরকে তিনি প্রতি মাসে অর্থ পাঠিয়ে সহযোগিতা করতেন। নিউইয়র্কে এমন কোন সংগঠন নেই যে তিনি আর্থিক সহযোগিতা করেননি। আমাদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী আমেরিকান কালচারাল এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তিনি আমাদেরকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। কামাল ভাই আমাদের নিকট থেকে অকালে চলে গেলেও তাঁর সৎ কর্মের জন্য মানুষের অন্তরে বেঁচে থাকবেন চীরকাল। আমি তাঁর বিদেহী আতœার মাগফেরাত কামনা করি। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)
লেখক: কলাম লেখক ও কমিউনিটি নেতা, নিউইয়র্ক ।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

আজ কামাল আহমেদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী

প্রকাশের সময় : ১১:৫৪:১৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ এপ্রিল ২০২১

আহবাব চৌধুরী খোকন: আজ ৫ এপ্রিল বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক এর নির্বাচিত, সভাপতি কমিউনিটির অতি প্রিয় আপনজন সর্বজন শ্রদ্ধেয় কামাল আহমেদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। গত বছরের এই দিনে বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। কামাল আহমেদ ছিলেন সত্যিকার অর্থে কমিউনিটির এক বটবৃক্ষ। যিনি দীর্ঘকাল যাবৎ কমিউনিটিকে সুখে দুঃখে আগলে রেখেছেন। সদ্য হাস্যজ্জল ন¤্র ভদ্র ও সজ্জন এই মানুষটি তাঁর নিঃস্বার্থ কর্মকান্ডের জন্য কমিউনিটির প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। দল মত নির্বিশেষে হয়ে উঠেছিলেন সকলের প্রিয় কামাল ভাই।
মরহুম কামাল আহমেদের জন্ম সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলায়। ১৯৭৪ সনে স্নাতক ডিগ্রী অর্জন করে চাকুরী জীবন শুরু করেছিলেন সোনালী ব্যাংকের একজন চৌকুস ব্যাংকার হিসাবে। কিন্তু হিসাব নিকাশের এই গতবাধা জীবন তাঁর ভালো লাগেনি বেশী দিন। তাই সরকারী চাকুরী ত্যাগ করে ১৯৭৭ সালে নোঙ্গর ফেলেন আটলান্টিক তীরের ব্যস্ততম এই দেশটিতে এবং তার পর সাড়ে চার দশকের ও বেশী সময় তার বহুমুখী কর্মকান্ডের মাধ্যমে পুরো কমিউনিটিতে একটি বিশেষ স্থান করে নিতে সক্ষন হন। ব্যক্তি জীবনে প্রচুর অর্থ উপার্জন করলেও কখনো নিজের জন্য কিছু করতে দেখিনি। আমৃত্যু ভাড়া ঘরে থেকে জীবন অতিবাহিত করেছেন। কারো বিপদ-আপদ কিংবা অসুসস্থতা শুনলে নিজের শেষ অর্থটি পর্যন্ত দিয়ে সাহায্য করতে চেয়েছেন। উপার্জনের বেশীর ভাগ অর্থ ব্যয় করছেন সমাজের কল্যাণে। বাংলাদেশী সংস্কৃতির বিকাশ ও কমিউনিটির উন্নয়ন ছিল তাঁর স্বপ্ন। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে বিয়ানীবাজার সমিতি, লীগ অব আমেরিকা, জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকা ও বাংলাদেশ সোসাইটি যখন যে সংগঠনে সময় দেয়া দরকার কিংবা যখন যে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে তা পালনে কখনো কুন্ঠিত হননি।  মানবতাবাদী ও পরোপকারী কামাল ভাই ছিলেন আমার দীর্ঘ সময়ের একজন ভালো হিতাকাংখী। প্রতি মাসে তাঁর সাথে যেমন দেখা হতো, তেমনি ফোনে কথা হতো প্রায়ই। যতটুকু মনে পড়ে মৃত্যুর দিন দশেক আগে (২০২০ সালের ২৫ মার্চ) তার সাথে আমার শেষ কথা হয়েছিল। করোনা ভাইরাস তখন সর্বত্র জেঁকে বসেছে। নিউইয়র্ক জুড়ে কার্ফ্যু চলছে। পুরো নগরী পরিণত হয়েছে মৃত্যু পুরিতে। আমি নিজে অসুস্থ হয়ে গৃহবন্দি। কমিউনিটির প্রিয়মুখ ময়নুজ্জামান চৌধুরী, সৈয়দ ইলিয়াস খসরু, আব্দুল হাসিম হাসনু, গিয়াস উদ্দিন, সৈয়দ আল ওয়াহিদ নাজিম সহ চারিদিকে পরিচিতজন অনেকেই অসুস্থ। এমন সময় তার ভগ্নিপতি সিলেট বিভাগ উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ফারুক চৌধুরীর নিকট থেকে শুনলাম কামাল ভাই অসুস্থ। খবরটি শুনে মনটা খারাপ হয়ে গেল। ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। এক রিং হতেই ফোন ধরেছেন। কামাল ভাই কেমন আছেন জিজ্ঞেস করতেই ভাঙ্গা কন্ঠে উত্তর, “আমি ভালো আছি। তবে একটু কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয়ে গেছে। তোমার ভাবী বেশী অসুস্থ। উনার জন্য দোয়া কর। ভাবছি না কমলে উনাকে দিন দুয়েকের মধ্যে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেবো। সাবধানে থেকো এবং যদি দেখা না হয় ক্ষমা করে দিও।”
ছবি: কামাল আহমেদ 

কামাল ভাই সেদিন আমার সাথে ফোনালাপে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খসরু ভাইয়ের খবর জানতে চেয়েছিলেন। সাথে একটি দায়িত্বও দিলেন। বললেন করোনা আক্রান্ত মানুষের জন্য বাংলাদেশ সোসাইটির পক্ষ থেকে ১০০০ প্যাকেট গ্রোসারী সামগ্রী তৈরী করে রাখা আছে। সাদি ভাইকে বলেছেন ব্রঙ্কসে ২৫০ প্যাকেট পাঠাতে। আমি যেন বিলি-বণ্ঠনে একটু সহযোগিতা করি। তারপর থেকে আমি ফোনে আর তাঁকে পাইনি। তবে ফারুক ভাই ও সাদি ভাইয়ের মাধ্যমে নিয়মিত খবর রেখেছি। তার শরীর ক্রমেই খারাপ হতে থাকলো। ভাবীকে লং আইল্যান্ড হাসপাতালে পাঠিয়ে ২৮ মার্চ নিজে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে এলমার্ষ্ট হাসপাতালে গেলেন। আমরা খুব উদ্বেগ উৎকন্ঠায় কাটাচ্ছিলাম। পরীক্ষায় ধরা পড়ে কোভিড ১৯ পজেটিভ। তারপর ৫ এপ্রিল দিবাগত রাত ৪ ঘটিকায় সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। তাঁর বিদেহী আতœার মাগফেরাত কামনায় জালালাবাদ এসোসিয়েশন ও বাকা সহ বিভিন্ন সংগঠন তাৎক্ষনিক ভার্চ্যুয়াল দোয়া মাহফিলের আয়োজন করলেও আমরা এতোটা ভাগ্যাহত যে করোনা ভাইরাসের বিধি নিষেধের কারণে প্রিয় এই মানুষটির বিদায় বেলা কবরে দু মুঠো মাটি দেয়ার ও সুযোগ পাইনি। তার জন্ম হয়েছিলো বোধকরি কেবল দেওয়ার জন্য। শুধু দিয়েই গেলেন। যাওয়ার সময় কাউকে একটু ঋণ পরিশোধেরও সুযোগ দিলেন না।
কামাল ভাই খুব ভালো একজন মানুষ ছিলেন। আজিমুর রহমান বুরহান, আব্দুল হাসিম হাসনু, সৈয়দ ইলিয়াস খসরু, মকবুল রহিম চুনই, মোহাম্মদ সাদি মিন্টু, ফারুক চৌধুরী, দেওয়ান মহিউদ্দিন, রুহুল আমিন সিদ্দিকী জে মোল্লা সানি, ময়নুজ্জামান চৌধুরী, মইনুল ইসলাম, বাকের আজাদ, আব্দুল খালেক, আব্দুর রব মিয়া ও জাহিদ মিন্টু প্রমুখদের সমন্বয়ে কমিউনিটিতে একটি শক্তিশালী সোসাইটি গড়ে তুলেছিলেন। কামাল ভাই ছিলেন এই গ্রæপের প্রাণ। আমরা নিয়মিত প্রায়ই বিভিন্ন জায়গায় বসতাম। বিভিন্ন সমস্যায় এই গ্রæপের মাধ্যমে অনেক ভালো কাজ করার চেষ্টা করেছেন। তার সাথে কাজ করার অনেক স্মৃতি আমার রয়েছে।
ছবি:  আহবাব চৌধুরী

কামাল আহমেদ প্রথমবার যখন বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি নির্বাচিত হন আমিও তাঁর সাথে একই কমিটিতে ছিলাম। তখন দেখেছি সোসাইটিকে শক্তিশালী করতে তাঁর উদ্যোগ। তিনি বাংলাদেশী সংস্কৃতির বিকাশে সোসাইটির প্রথম বৈঠকে বারো মাসে তেরটি অনুষ্ঠান করার প্রস্তাব করেছিলেন। সোসাইটি ভবনে নিজ হাতে গঠন করেছিলেন একটি লাইব্রেরী। প্রতিষ্টা করেছিলেন কম্পিউটার ও বাংলা স্কুল। তিনি চেয়েছিলেন বাংলা স্কুল চালু হলে আমাদের নতুন প্রজন্ম যেমনি বাংলা ভাষা পড়া ও লেখা শেখার সুযোগ পাবে, তেমনি নতুন অভিবাসী কম্পিউটার শিখে নিজের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে। বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্র আসতে তিনি যেমন বিপুল সংখ্যক লোককে স্পন্সর করেছেন, তেমনি দেশ থেকে নতুন আসা লোকদের কর্মসংস্থান ও আবাসন সমস্যা সমাধানে সহযোগিতা করতেন। কারো অসুস্থতা কিংবা মৃত্যু সংবাদ শুনলে সর্বাগ্রে এগিয়ে যেতেন।
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি খুবই ধার্মিক ছিলেন। দেশে নিজ এলাকায় যেমন অনেক মসজিদ ও স্কুল স্থাপনে সহযোগিতা করেছেন, তেমনি এই যুক্তরাষ্ট্রে এমন কোন মসজিদ নেই যেখানে কামাল আহমেদ আর্থিক সহযোগিতা নেই। পবিত্র রমজান মাসে বিভিন্ন জায়গায় যেমন ইফতার মাহফিলের আয়োজন করতেন, তেমনী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের পুজা পার্বনে মিষ্টি পাঠিয়ে মহৎ হৃদয়ের পরিচয় দিয়েছেন। মৃত্যুর আগে তিনি করোনায় মৃত্যুবরণকারী সকল বাংলাদেশীকে বিনামূল্যে সোসাইটির কবর স্থানে দাফন করার সিদ্ধান্ত দিয়ে গিয়েছিলেন। সোসাইটির সভাপতি হিসাবে এটাই ছিল তাঁর শেষ দায়িত্ব ও সিদ্ধান্ত। দেখেছি দেশে অস্বচ্ছল মানুষের একটি দীর্ঘ তালিকা তাঁর নিকট সব সময় থাকতো। যাদেরকে তিনি প্রতি মাসে অর্থ পাঠিয়ে সহযোগিতা করতেন। নিউইয়র্কে এমন কোন সংগঠন নেই যে তিনি আর্থিক সহযোগিতা করেননি। আমাদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশী আমেরিকান কালচারাল এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে তিনি আমাদেরকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। কামাল ভাই আমাদের নিকট থেকে অকালে চলে গেলেও তাঁর সৎ কর্মের জন্য মানুষের অন্তরে বেঁচে থাকবেন চীরকাল। আমি তাঁর বিদেহী আতœার মাগফেরাত কামনা করি। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)
লেখক: কলাম লেখক ও কমিউনিটি নেতা, নিউইয়র্ক ।