আগামী বছর থেকে ‘লিটল বাংলাদেশ মেলা’

- প্রকাশের সময় : ১১:০১:৩৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৩ জুলাই ২০২২
- / ৯৯ বার পঠিত
বিশেষ প্রতিনিধি: নিউইয়র্ক সিটি প্রশাসন কর্তৃক বাংলাদেশী অধ্যুষিত ব্রæকলীনের চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড স্কয়ার ‘লিটল বাংলাদেশ’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় আগামী বছর থেকে ব্রæকলীন পথমেলা ‘লিটল বাংলাদেশ মেলা’ নামে আয়োজিত হবে। বাংলাদেশী আমেরিকান ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি অব নিউইয়র্ক এবং ৬৬ প্রিসিন্ক্ট কমিউনিটি কাউন্সিল যৌথভাবে ‘ব্রæকলীন পথমেলা’র আয়োজন করে আসছিলো। এদিকে এবারের মেলায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত কাউন্সিলওম্যান শাহানা হানিফ বলেন, আমি ব্রæকলীনের মেয়ে, ব্রæকলীনে আমার জন্ম। আমি আপনাদেরই মেয়ে। আমরা সবাই মিলে চার্চ-ম্যাকডোনাল্ড স্কয়ার ‘লিটল বাংলাদেশ’ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার বিষয়টি সেলিব্রেট করবো।
মেলা কমিটির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ১৬ জুলাই ব্রæকলীনের বাংলাদেশী অধ্যুষিত চার্চ এন্ড ম্যাকডোনাল্ড এভিনিউতে অনুষ্ঠিত হয় প্রবাসের ইতিহাস সৃষ্টিকারী এ যাবৎ কালের সবচেয়ে বৃহৎ পথমেলা। এদিন ব্রæকলীন মেলায় মানুষের ঢল নেমেছিল। বাংলাদেশী আমেরিকান ফ্রেন্ডশিপ সোসাইটি অব নিউইয়র্ক এবং ৬৬ প্রিসিন্ক্ট কমিউনিটি কাউন্সিল কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত ব্রæকলীনে মৌসুমের প্রথম এই মেলায় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্ক সিটি কন্ট্রোলার ব্র্যাড ল্যান্ডার, সিটি কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট ৩৯ এর নির্বাচিত কাউন্সিওম্যান শাহানা হানিফ, ডিস্ট্রিক্ট ৪০-এর কাউন্সিলওম্যান রিতা জোসেফ, ৬৬ প্রিসিনক্ট-এর কমান্ডিং অফিসার ডেপুটি ইনস্পেকটর জেসন হ্যাগস্টেড, এক্সও ক্যাপটেইন ব্র্যাট গ্রানোউইটার, কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স অফিসার জ্যামস জেমন প্রমুখ।
ঐদিন বেলা আড়াইটায় কাজী সাখাওয়াত হোসেন আজম এর সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব ফিরোজ আহমেদ ও সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুল হক চৌধুরীর যৌথ সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফিতা কেটে ও বেলুন উডিয়ে মেলার উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট কলামিস্ট ও হোমকেয়ার ব্যবসায়ী, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সমিতি ইউএসএ’র সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া, স›দ্বীপ সোসাইটির উপদেষ্টা লুৎফুল করিম, বাংলাদেশ সোসাইটির নির্বাচনে সভাপতি পদপ্রার্থী কাজী আশরাফ হোসেন নয়ন, মেলার আহবায়ক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শাহ নেওয়াজ, কুইন্স ডেমোক্রেটিক পার্টির ডিষ্ট্রিক লিডার এট লার্জ এটর্নী মঈন চৌধুরী, চাইনিজ কমিউনিটি লিডার লূ লুইস, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট রফিকুল মাওলা, মার্কস হোমকেয়ারের আমীর হোসাইন কামাল, হেলথ ফাস্ট-এর সালেহ আহমেদ, মেলার সাংস্কৃতিক বিষয়ক চেয়ারম্যান এস এম ফেরদৌস, রাজনীতিক আবু তালেব চৌধুরী চান্দু, নিউইয়র্ক আমেরিকা বাংলাদেশ লায়ন্স ক্লাবের সভাপতি আহসান হাবীব ও সেক্রেটারী হাসান জিলানী, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট বখতিয়ার উদ্দীন, গোলাম মাহমুদ, প্রফেসর সৈয়দ আজাদ, ইকবাল হায়দার, জাহাঙ্গীর সোহরাওয়ার্দী, সালেহ মানিক প্রমুখ।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কমিউনিটির নেতৃবৃন্দকে অ্যাওয়ার্ড প্রদান ছাড়াও এই মেলা থেকে চার্চ ম্যাকডোনাল্ডকে সিটি কাউন্সিল মেম্বার শাহানা হানিফ ‘লিটল বাংলাদেশ’ ঘোষনা সংক্রান্ত পাশ হওয়া বিলের বিস্তারিত বর্ণনা করেন এবং সিটি প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে একটি ঐতিহাসিক ঘোষনা বলে উপস্থিত দর্শক এবং আয়োজকরা মনে করেন। শাহানা হানিফ তার বক্তব্যে বাংলাদেশীদের জন্য এটা একটা ঐতিহাসিক ঘটনা বলে উল্লেখ করেন, তখন হাজার হাজার দর্শক হাততালির মাধ্যমে শাহানা হানিফকে অভিনন্দন জানান। তিনি আরো বলেন, এই এলাকায় তার জন্ম এবং বেড়ে উঠা সুতরাং এই এলাকার জন্য তার সাধ্যের সবটুকু দিয়ে তিনি অতীতেও কাজ করেছেন এবং আগামীতেও করবেন।
গত পেন্ডামিকে কমিউনিটি এবং মানবতার পক্ষে অবদানের জন্য মেলায় ‘পেন্ডামিক হিরো’ হিসেবে চার জনকে সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হয়। তারা হলেন চিকিৎসা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বিশিস্ট চিকিৎসক এবং বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি ডা. মোহাম্মদ হামিদুজ্জামান, বিশিস্ট চিকিৎসক এবং রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ডা. মুজিবুর রহমান মজুমদার, বিশিস্ট চিকিৎসক এবং এই মেলার প্রধান অতিথি ডা. চৌধুরী সরওয়ারুল হাসান। পেন্ডামিকের সময়ে নিউইয়র্ক থেকে একমাত্র নিয়মিত প্রিন্টিং ভার্সন পত্রিকা প্রকাশ করার জন্য সাপ্তাহিক নবযুগ পত্রিকা’র সম্পাদক সাহাব উদ্দিন সাগরকে এবং সমাজকর্মে অবদানের জন্য সম্মাননা প্রদান করা হয় যথাক্রমে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু জাফর মাহমুদ, বিশিস্ট রিয়েল স্টেট ইনভেস্টর ও তরুণ সমাজকর্মী নূরুল আজিম, চট্টগ্রাম সমিতির সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও বিশিষ্ট ব্যাংকার সৈয়দ এম রেজা, সংগীত শিল্পী ত্রিনীয়া হাসান এবং সংগঠন হিসেবে নিউইয়র্ক বাংলাদেশ আমেরিকান লায়ন্স ক্লাব-কে।
এছাড়াও ৬৬ প্রিসিনক্ট এর বেশ কয়জন পুলিশ অফিসারকে তাদের কর্ম দক্ষতা ও কমিউনিটিতে সহযোগিতার জন্য আয়োজক সংগঠনের পক্ষ থেকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। তাদের মধ্যে উলে-খযোগ্য হচ্ছেন প্রিসিনক্টের কমান্ডিং অফিসার ডেপুটি ইনস্পেকটর জেসন হ্যাগস্টেড ও কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স অফিসার জ্যামস জেমন প্রমুখ।
মেলায় আমেরিকার স্থানীয় এবং সিটি ও স্টেটের অনেক নির্বাচিত অফিসিয়াল’স উপস্থিত হতে না পেরে তাদের প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন এবং সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রক্লোমেশন ও সাইটেশন প্রদান করেছেন তার মধ্যে উলে¬খযোগ্য হচ্ছে এসেম্বলী ডিস্ট্রিক ৪৪ থেকে নির্বাচিত এসেম্বলি মেম্বার রবার্ট ক্যারল-এর অফিসের ল্যাজিসলেটিভ ডাইরেক্টর ডেভিড পেসেপ্সকীর মাধ্যমে প্রক্লোমেশন ও সাইটেশন প্রদান করেছেন সংগঠনের সভাপতি কাজী আজম, সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুল হক চৌধুরী, কনভেনর শাহ নাওয়াজ ও মেম্বার সেক্রেটারী ফিরোজ আহমেদকে। ডিস্ট্রিক্ট ৩৮ থেকে নির্বাচিত এসেম্বলি মেম্বার জেনিফার রাজকুমার তার প্রতিনিধি হিসেবে তার অফিসের কমিউনিটি এফেয়ার্স লিজিয়ন মোহাম্মদ আলীর মাধ্যমে তার শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন এবং সমাজিক কাজে সহযোগিতা এবং নিজ নিজ কর্মে অবদানের জন্য সাইটেশন প্রদান করেন শিল্পী ও ব্যবসায়ী রানু নেওয়াজ, ব্যবসায়ী ও সমাজ কর্মী নুসরাত চৌধুরী নিপা, ব্যবসায়ী ও সমাজ কর্মী মুনমুন হাসিনা বারী, ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী খাদিজা চৌধুরী বিউটি, ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী কাজী শামীমা বেগম (সামু) এবং ফ্যাশন ডিজাইনার ও ব্যবসায়ী আরিফা হক বৈশাখী-কে।
প্রবাসের জনপ্রিয় উপস্থাপিকা সারমিনা সিরাজ সোনিয়া এবং সংগঠক এস এম ফেরদৌস এর যৌথ সঞ্চালনায় মেলার সাংস্কৃতিক পর্বে বাংলাদেশের ৮ বার জাতীয় পুরস্কার পাওয়া জাতীয় শিল্পী এস আই টুটুল এবং বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক দেয়া জনপ্রিয় শিল্পী রিজিয়া পারভিন ছাড়াও নিউইয়র্ক এর জনপ্রিয় শিল্পীরা সংগীতের মূর্ছনায় মেলায় আগতদের সারাক্ষন আনন্দে মাতিয়ে রাখেন। তাদের মধ্যে উল্লেযোগ্য শিল্পীরা হলেন- শিল্পী রানু নেওয়াজ, শাহ মাহবুব, চন্দন চৌধুরী, ত্রীনিয়া হাসান, শামীম সিদ্দীকি, অনিক রাজ, রিয়া রহমান, শম্পা জামান, ডা. কামরুল ইসলাম, খাইরুল বাসার এবং শিশু কিশোরদের সংগঠন চারু কন্ঠ ।
প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পীদের পরিবেশনার পর বিকেলে মঞ্চে আসেন রিজিয়া পারভীন। তিনি একে একে জনপ্রিয় গান দিয়ে সকল শ্রোতা দর্শক কে দীর্ঘক্ষণ মুগ্ধ করে রাখেন। সবশেষে মঞ্চে আসেন এস আই টুটুল। তিনি তার স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে গিটার বাজিয়ে গান পরিবেশন করে মেলায় অন্য রকম এক আবহ সৃষ্টি করেন। বিশেষ করে তরুণরা নেচে নেচে গান উপভোগ করেন।
সন্ধ্যা সাড়ে আটটায় মেলার আয়োজক সংগঠনের সভাপতি কাজী আজম এবং মেলা উদযাপন কমিটির আহবায়ক শাহ নেওয়াজের ধন্যবাদ বক্তব্যের মাধ্যমে মেলার সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদুল হক চৌধুরী ও মেলা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ফিরোজ আহমেদ।
হককথা/টিএ