নিউইয়র্ক ০৫:৫১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

স্বামীর পর ২০ বছরের সংসার আর ৩ সন্তান রেখে গেলেন : যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরেক বাংলাদেশী ডিপোর্ট

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৮:২৪:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ এপ্রিল ২০১৮
  • / ৯৯৩ বার পঠিত

হককথা ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রে ২০ বছর ধরে বসবাস করেন বাংলাদেশী সেলিনা সিকান্দার। এখানে সন্তানদের নিয়ে সুখের সংসার ছিল তার। কিন্তু সুখ তার কপালে সইলো না। ২০ বছরের সংসার ফেলে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। বৃহস্পতিবার (২৯ মার্চ) রাতে তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেয়া হয়। এ রাতটি ছিল তার জন্য তার সন্তানদের জন্য এক বিষাদময় সময়।
অনলাইন নিউজার্সী জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, নিউজার্সির রানেমেডে বসবাস করতেন সেলিনা সিকান্দার। তিন সন্তানকে ফেলে তাকে দেশে ফিরে আসতে হচ্ছে। বিদায়ের কয়েকটি ঘণ্টা তার কাছে, তার সন্তানদের কাছে ছিল রোজ কিয়ামতের মতো। মনে হচ্ছিল পৃথিবীর সবটুকু কষ্ট তাদের গ্রাস করেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আইন, তা কোনো মানবতাকে স্পর্শ করেনি। সেলিনা সিকান্দারকে উঠিয়ে দেয়া হয়েছে বিমানে। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে দাঁড়িয়ে তখন তিন সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে সাজেদা সিকান্দার আর্ত-চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারি করছিলেন। সাজেদা হাইস্কুল জুনিয়র। এ কষ্ট তিনি সহ্য করতে পারছেন না। বাংলাদেশী এ পরিবারটি যেন তছনছ হয়ে গেছে এমন যন্ত্রণায়। সেলিনা সিকান্দারের অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর কথা। ওই মুখপাত্র বলেছেন, সেলিনাকে অভিবাসন বিষয়ক বিচারক যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, তাকে বাংলাদেশে ফেরত যেতে হবে। ২০১০ সালের আদালতের সেই নির্দেশ নিয়ে আইনি লড়াই চলছিল এতদিন। সেলিনা আশ্রয় চেয়ে বারবার আবেদন করেছেন। সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন আদালত।
উল্লেখ্য, সেলিনা সিকান্দারের স্বামীর নাম শামসুদ্দিন সিকান্দার। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন ১৯৯৩ সালে। এখানে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন। কিন্তু ১৯৯৮ সালে অভিবাসন বিষয়ক বিচারক প্রথম সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন। ২০১০ সালে একই রায় আসে। ফলে বাংলাদেশেই উড়ে যান সেলিনা। রেখে গেছেন তার সন্তানদের। এ এক করুণ ইতিহাস। করুণ কাহিনী।
শনিবার (৩১ মার্চ) টাইম টেলিভিশন-এর খবরে বলা হয়: স্বামীর পর এবার ডিপোর্টের শিকার হলেন এক বাংলাদেশী নারী। দীর্ঘ কুড়ি বছর স্বপ্নের সোনার হরিণের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেও শেষ রক্ষা হলো না তার। বৃহস্পতিবার রাতে নিজের মেয়ের সামনেই দেশত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। বাংলাদেশী হতভাগ্য এ ওই নারীর ডিপোর্টের বিষয়টি মূলধারার গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন, ‘ইউএস ইমিগ্রেশন এন্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট-আইএস’র এক মুখপাত্র।
১৯৯৩ সালে সেলিনার স্বামী সামছুদ্দিন সিকান্দারের দুই সন্তান’সহ যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন। এরপর তারা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু  ১৯৯৮ সালে  ‘অ্যাসালমটি ডিনাই’ করেন ইমিগ্রেশন অফিসার। পরে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয় তাদের। ২০১০ সালে আদালতও তার রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনাকে নাকচ করে দেন। অসহায় পড়েন পুরো পরিবার। তবুও সন্তানদের নিয়ে নিউজার্সিতে এতদিন বসবাস করে আসছিলেন। কোন প্রকার ক্রিমিনাল রেকর্ড না থাকায় ওবামা প্রশাসন তাদের দেশত্যাগে সিদ্ধান্ত নেয়নি। কিন্তু বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসন এ বিষয়ে কোন ছাড় দিচ্ছেন না।  সেলিনা সিকান্দার নামের এ বাংলাদেশী নারী দেশত্যাগের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত তার সন্তানের সামনেই ছিলেন। আইসের হাতে আটকের পর গেল কয়েকটি রাত নির্ঘম কেটেছে তাদের। সেলিনার সন্তান সাজেদা সিকান্দার ও সজিব সিকান্দার এবং আরেক ছোট ভাই আমেরিকাতে নিকর্ট আত্মীয় স্বজনদের সাথে বসবাসের সুযোগ থাকছে। কারণ তারা দুজন ড্রিমার। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস দীর্ঘ ২০ বছর পর বাবাকে বিচ্ছিন্নের পর এবার মায়ের শেষ রক্ষা না হওয়ার খবরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সবাই। এর আগে গেল বছরের নভেম্বরে ডিপোর্টেশনের শিকার হতে হয় সেলিনার সিকান্দরের স্বামী সামছুদ্দিন সিকান্দারকে। বাবা-মাকে ছাড়া সন্তানেরা এখন কেবলই অনিশ্চিত এক অন্ধকারের নিমজ্জিত। এমনটি বলছে মূলধারার গণমাধ্যমগুলো।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

স্বামীর পর ২০ বছরের সংসার আর ৩ সন্তান রেখে গেলেন : যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরেক বাংলাদেশী ডিপোর্ট

প্রকাশের সময় : ০৮:২৪:০৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১ এপ্রিল ২০১৮

হককথা ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রে ২০ বছর ধরে বসবাস করেন বাংলাদেশী সেলিনা সিকান্দার। এখানে সন্তানদের নিয়ে সুখের সংসার ছিল তার। কিন্তু সুখ তার কপালে সইলো না। ২০ বছরের সংসার ফেলে তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। বৃহস্পতিবার (২৯ মার্চ) রাতে তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেয়া হয়। এ রাতটি ছিল তার জন্য তার সন্তানদের জন্য এক বিষাদময় সময়।
অনলাইন নিউজার্সী জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, নিউজার্সির রানেমেডে বসবাস করতেন সেলিনা সিকান্দার। তিন সন্তানকে ফেলে তাকে দেশে ফিরে আসতে হচ্ছে। বিদায়ের কয়েকটি ঘণ্টা তার কাছে, তার সন্তানদের কাছে ছিল রোজ কিয়ামতের মতো। মনে হচ্ছিল পৃথিবীর সবটুকু কষ্ট তাদের গ্রাস করেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আইন, তা কোনো মানবতাকে স্পর্শ করেনি। সেলিনা সিকান্দারকে উঠিয়ে দেয়া হয়েছে বিমানে। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে দাঁড়িয়ে তখন তিন সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে সাজেদা সিকান্দার আর্ত-চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারি করছিলেন। সাজেদা হাইস্কুল জুনিয়র। এ কষ্ট তিনি সহ্য করতে পারছেন না। বাংলাদেশী এ পরিবারটি যেন তছনছ হয়ে গেছে এমন যন্ত্রণায়। সেলিনা সিকান্দারের অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর কথা। ওই মুখপাত্র বলেছেন, সেলিনাকে অভিবাসন বিষয়ক বিচারক যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের হয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, তাকে বাংলাদেশে ফেরত যেতে হবে। ২০১০ সালের আদালতের সেই নির্দেশ নিয়ে আইনি লড়াই চলছিল এতদিন। সেলিনা আশ্রয় চেয়ে বারবার আবেদন করেছেন। সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন আদালত।
উল্লেখ্য, সেলিনা সিকান্দারের স্বামীর নাম শামসুদ্দিন সিকান্দার। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন ১৯৯৩ সালে। এখানে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন। কিন্তু ১৯৯৮ সালে অভিবাসন বিষয়ক বিচারক প্রথম সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেন। ২০১০ সালে একই রায় আসে। ফলে বাংলাদেশেই উড়ে যান সেলিনা। রেখে গেছেন তার সন্তানদের। এ এক করুণ ইতিহাস। করুণ কাহিনী।
শনিবার (৩১ মার্চ) টাইম টেলিভিশন-এর খবরে বলা হয়: স্বামীর পর এবার ডিপোর্টের শিকার হলেন এক বাংলাদেশী নারী। দীর্ঘ কুড়ি বছর স্বপ্নের সোনার হরিণের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করেও শেষ রক্ষা হলো না তার। বৃহস্পতিবার রাতে নিজের মেয়ের সামনেই দেশত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। বাংলাদেশী হতভাগ্য এ ওই নারীর ডিপোর্টের বিষয়টি মূলধারার গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন, ‘ইউএস ইমিগ্রেশন এন্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট-আইএস’র এক মুখপাত্র।
১৯৯৩ সালে সেলিনার স্বামী সামছুদ্দিন সিকান্দারের দুই সন্তান’সহ যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন। এরপর তারা রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন যুক্তরাষ্ট্রে। কিন্তু  ১৯৯৮ সালে  ‘অ্যাসালমটি ডিনাই’ করেন ইমিগ্রেশন অফিসার। পরে আদালতের দ্বারস্থ হতে হয় তাদের। ২০১০ সালে আদালতও তার রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনাকে নাকচ করে দেন। অসহায় পড়েন পুরো পরিবার। তবুও সন্তানদের নিয়ে নিউজার্সিতে এতদিন বসবাস করে আসছিলেন। কোন প্রকার ক্রিমিনাল রেকর্ড না থাকায় ওবামা প্রশাসন তাদের দেশত্যাগে সিদ্ধান্ত নেয়নি। কিন্তু বর্তমান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসন এ বিষয়ে কোন ছাড় দিচ্ছেন না।  সেলিনা সিকান্দার নামের এ বাংলাদেশী নারী দেশত্যাগের পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত তার সন্তানের সামনেই ছিলেন। আইসের হাতে আটকের পর গেল কয়েকটি রাত নির্ঘম কেটেছে তাদের। সেলিনার সন্তান সাজেদা সিকান্দার ও সজিব সিকান্দার এবং আরেক ছোট ভাই আমেরিকাতে নিকর্ট আত্মীয় স্বজনদের সাথে বসবাসের সুযোগ থাকছে। কারণ তারা দুজন ড্রিমার। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস দীর্ঘ ২০ বছর পর বাবাকে বিচ্ছিন্নের পর এবার মায়ের শেষ রক্ষা না হওয়ার খবরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সবাই। এর আগে গেল বছরের নভেম্বরে ডিপোর্টেশনের শিকার হতে হয় সেলিনার সিকান্দরের স্বামী সামছুদ্দিন সিকান্দারকে। বাবা-মাকে ছাড়া সন্তানেরা এখন কেবলই অনিশ্চিত এক অন্ধকারের নিমজ্জিত। এমনটি বলছে মূলধারার গণমাধ্যমগুলো।