স্থায়ী মিশন ও কনস্যুলেটের যৌথ উদ্যোগে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ উন্নয়ন মেলা’য় অগ্রগতির জয়গান
- প্রকাশের সময় : ০৯:৩৮:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ নভেম্বর ২০১৮
- / ৪৭৩ বার পঠিত
সালাহউদ্দিন আহমেদ: বর্ণাঢ্য আয়োজনে বিপুল দর্শক সমাবেশের মধ্য দিয়ে নিউইয়র্কে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হল ‘বাংলাদেশ উন্নয়ন মেলা’। জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ও নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেলের যৌথ উদ্যোগে সিটির কনস্যুলেট জেনারেল অডিটোরিয়ামে গত ৯ নভেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় এতে স্থানীয় প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিপুল অংশগ্রহনের পাশাপাশি মেলায় বিদেশী অতিথিদের উপস্থিতিও ছিল লক্ষনীয়। আমন্ত্রিত অতিথি আর প্রবাসীদের পদভারে কনস্যুলেট জেনারেল অডিটোরিয়াম কানায়-কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথি আর সকল বক্তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যকর ও গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রসংশা করেন। সবার মুখে উঠে আসে বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ আর দেশের উন্নয়ন আগ্রগতি। যা জাতিসংঘ সহ বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ও প্রশংসিত বলেও সংশ্লিষ্টরা উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় শেখ হাসিনা সরকার অভাবনীয় সফাল্য দেখিয়ে চলেছেন। বিশেষ করে, নারীর ক্ষমতায়ন, শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, তরুণ প্রজন্মের নেতৃত্ব বৃদ্ধি, তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর রাষ্ট্রব্যবস্থায় মাইলফলক অর্জন করেছে দেশটি। এছাড়াও বক্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘কার্যকর ও গতিশীল’ নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রসংশা করে বলেন তার ‘দূরদর্শী ও যোগ্য নেতৃত্বেই’ উন্নয়নের রোল-মডেল বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারী জেনারেল এবং স্বল্পোন্নত, ভূ-বেষ্টিত স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রসমূহের দায়িত্বে নিযুক্ত উচ্চ প্রতিনিধি মিজ ফেকিতামোইলোয়া কাটোয়া উতোইকামানু। এছাড়াও বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউএনডিপি’র হিউম্যান ডেভোলপমেন্ট রিপোর্ট অফিসের পরিচালক ড. সেলিম জাহান ও নিউইয়র্কস্থ ভারতের কনসাল জেনারেল রাষ্ট্রদূত সন্দ্বীপ চক্রবর্তী। অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভোলপমেন্ট পলিসি’র সিনিয়র ইকোনমিক অফিসার ম্যাথিয়াস ব্রুকনার, ইউনিসেফের হিউম্যানিট্যারিয়েন ফিল্ড সার্পোট এর প্রধান মিজ সারা বরডাস-এড্ডি, জাতিসংঘের ক্যাপিটাল ডেভোলপমেন্ট ফান্ডের প্রোগ্রাম ম্যানেজার জেফার ম্যাকানো, ইউএস-বাংলাদেশ গ্লোবাল চেম্বার অব কমার্স এর চেয়াম্যান আজিজ আহমেদ ও সিনিয়র অ্যডভাইজর স্যাভিও চ্যান। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামসুদ্দিন আজাদ, নিউইয়র্কের কুইন্স বোরো প্রেসিডেন্ট মেডিন্ডা কার্টজ-এর কমিউনিটি সমন্বয়ক মোহামেদ হ্যাক ও নিউইয়র্ক মেয়র অফিসের কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েটস তাহিতুন মারিয়াম।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘অদম্য বাংলাদেশ’ ও ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিক্রমা’ শীর্ষক দু’টি ভিডিও চিত্র পরিবেশিত হয়। স্থানীয় সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী ‘নৃতাঞ্জলী’ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী, ‘জাতির পিতা’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে একটি বিশেষ নৃত্য।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কনসাল জেনারেল মিজ সাদিয়া ফয়জুন্নেছা। এরপর জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনের বক্তব্যের পর অতিথিরা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানের মাঝে ‘নৃত্যাঞ্জলী’র শিশু শিল্পী নতুন প্রজন্ম পরিবেশিত হয় ‘জয় বাংলা বাংলার জয়’ ও ‘তাকধুম তাকধুম বাজে বাংলাদেশের ঢোল’ সঙ্গীত দু’টির সুরে আরও দু’টি নৃত্যানুষ্ঠান। এছাড়া প্রবাসের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এসএএম মুক্তাদিরের কন্ঠে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত ‘বিদ্রোহী’ ও ‘সৃষ্টি সুখের উল্লাসে’ কবিতা দু’টি কবিতার আবৃত্তি আর বাংলাদেশের উপর শ্রী চিন্ময় সেন্টারের একদল শিল্পীর সঙ্গীত পরিবেশনা উন্নয়ন মেলায় আগত দর্শক-শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে শিল্পীদের মাঝে সার্টিফিকেট বিতরণ করেন রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন ও কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেসা।
‘বাংলাদেশ উন্নয়ন মেলা’য় বক্তব্য রাখছেন (বা থেকে) জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারী জেনারেল মিজ ফেকিতামোইলোয়া কাটোয়া উতোইকামানু, ভারতের কনসাল জেনারেল সন্দ্বীপ চক্রবর্তী, রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন ও কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুন্নেছা : ছবি: নিহার সিদ্দিকী
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মিজ ফেকিতামোইলোয়া কাটোয়া উতোইকামানু তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন অভিযাত্রা এবং শেখ হাসিনা সরকারের বিভিন্ন অর্জনের উচ্চকিত প্রশংসা করেন। বিশেষ করে শক্তিশালী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জাতীয় মালিকানা, নেতৃত্ব, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন কৌশল, শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান, দ্রুত শিল্পায়ন ও অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্যমন্ডিত অগ্রযাত্রার কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন এশিয়ার মধ্যে সফলতার স্বাক্ষরবহনকারী উল্লেখযোগ্য একটি দেশ হিসেবে স্বীকৃত।
উন্নয়ন অভিযাত্রায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বের কথা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বলেন, রক্তক্ষয়ী মহান মুক্তিযুদ্ধের ধ্বংসস্তুপ থেকে বাংলাদেশ আজকের উত্থান যেন ফনিক্স পাখির কল্পকথাকেও হার মানায়। বাংলাদেশের উন্নয়ন গাঁথা আজ উন্নয়নশীল বিশ্বে শ্রেষ্ঠ একটি সফলতার কাহিনী। বাংলাদেশের এই স্বীকৃতি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অদম্য নেতৃত্বে যিনি বাংলাদেশকে ‘জাতির পিতা’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত করতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। রাষ্ট্রদূত মাসুদ জাতিসংঘে বাংলাদেশের বিভিন্ন অর্জনের কথা উল্লেখ করে বলেন বিশেষ করে রোহিঙ্গা সমস্যা-কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এই সমস্যা সমাধানে সরকার সাধ্য মতো কাজ করছে। এছাড়াও তিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাফল্যের কথাও তুলে ধরেন।
কনসাল জেনারেল মিজ সাদিয়া ফয়জুন্নেছা তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘জাতির পিতা’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘সোনার বাংলা’ বলতে কী বুঝিয়েছিলেন তা আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। জাতির পিতা’র এই সোনার বাংলা শুধু মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিই নয়, এটি হলো প্রান্তিক পর্যায় থেকে শুরু করে সর্বোচ্চস্তর পর্যন্ত সামগ্রিক উন্নয়ন। ‘সোনার বাংলা’ হলো জনগণের ক্ষমতায়ন ও অগ্রসরতা। তিনি উপস্থিত সুধীজনের সামনে শেখ হাসিনা সরকারের উন্নয়নের বিভিন্ন তথ্যচিত্র তুলে ধরেন। তিনি দেশের উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য প্রবাসী বাংলাদেশীদের ধন্যবাদ জানান ও বাংলাদেশে আরও বেশী বিনিয়োগ করতে আহ্বান জানান।
ড. সেলিম জাহান বাংলাদেশের উন্নয়নকে অভূতপূর্ব আখ্যা দেন এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সাথে বাংলাদেশের উন্নয়নের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন।
বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন অংশীদার আর নিকটতম প্রতিবেশী উল্লেখ করে নিউইয়র্কে ভারতের কনসাল জেনারেল সন্দ্বীপ চক্রবর্তী বলেন, বাংলাদেশকে আমার খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারত সবসময়ই পাশে আছে। বাংলাদেশ শুধু দক্ষিণ এশিয়ায় নয়, গোটা বিশ্বেই উন্নয়নের উজ্জ্বল উদাহরণ। আর এটি সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার দূরদর্শী ও যোগ্য নেতৃত্বে।
‘বাংলাদেশ উন্নয়ন মেলা’র গোটা ভ্যেনুকে সুসজ্জিত করা হয়েছিল বিভিন্ন ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সরকারের অর্জিত সাফল্যের তথ্য ও তথ্যচিত্র সম্বলিত প্রচারণা সামগ্রী ও পোস্টার দিয়ে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রবাসী বাংলাদেশী, বিদেশী কূটনৈতিক, আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি ও যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ কর্তৃক উন্নয়ন মেলাটি ব্যাপকভাবে প্রসংশিত হয়। ছবি: নিহার সিদ্দিকী