সিলেট-১ আসন থেকে ড. মোমেনকে মনোনয়ন দেয়ার দাবী
- প্রকাশের সময় : ০৮:১৪:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ অক্টোবর ২০১৭
- / ১২৩৩ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন-এর সভাপতি ও চট্টগ্রাম এক্সচেঞ্জ-এর চেয়ারম্যান ড. একে আব্দুল মোমেনকে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের আগামী নির্বাচনে সিলেট-১ আসন থেকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার প্রতি প্রবাসী বাংলাদেশীরা দাবী তুলে বক্তারা বলেছেন, ড. মোমেন শুধু সিলেটেরই কৃতি সন্তান নন। তিনি গোটা বাংলাদেশের কৃতি সন্তান। তিনি মনোননয়ন পেলে নির্বাচিত হবেন এবং এমপি হলে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদেও অধিষ্ঠিত হবেন। বক্তারা আগামী দিনে ড. মোমেনকে আওয়ামী লীগ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান।
যুক্তরাষ্ট্রস্থ বৃহত্তর সিলেটবাসীদের উদ্যোগে ড. একে আব্দুল মোমেনের সম্মানে আয়োজিত নাগরিক সংবর্ধনা সভায় বক্তারা উপরোক্ত কথা বলেন। জাতিসংঘের ৭২তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদানকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে ড. মোমেনের নিউইয়র্ক আগমন উপলক্ষ্যে গত ৪ অক্টোবর বুধবার সন্ধ্যায় সিটির জ্যাকসন হাইটসস্থ বেলিজিনো পার্টি হলে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। খবর ইউএনএ’র।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতাকালীন সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োগ দেন। স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে ড. মোমেন ৯ বছর দায়িত্ব পালন করার পর প্রধানমন্ত্রী তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে নেন এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেন। এছাড়াও তিনি অর্থমন্ত্রী এম এ মুহিত-এর পক্ষে সিলেটের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প দেখভালো করার দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন-এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও ড. মোমেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ছিলেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বৃহত্তর সিলেটবাসীদের উদ্যোগে ড. মোমেনের সংবর্ধনা সভার আয়োজন করা হলেও সভায় নিউইয়র্ক প্রবাসী সর্বস্তরের বাংলাদেশী তথা বিশেষ করে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, বিক্রমপুর-মুন্সীগঞ্জ প্রভৃতি জেলার প্রবাসীদের উপস্থিতিতে সভাটি সর্বজনীন সভায় পরিণত হয়। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সহ দলের বিভিন অঙ্গ ও সংগঠনের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি আর সমর্থণে সভাস্থল উৎসবমুখর হয়ে উঠে।
ড. মোমেন সংবর্ধনা কমিটির আহ্বায়ক ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি সৈয়দ বশারত আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক’র সভাপতি কামাল আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র আলেয়া সারোয়ার ডেইজী, বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকা’র সাবেক সভাপতি ও ড. মোমেনের বড় ভাই শেলী এ মুবদী, বিশিষ্ট শিল্পপতি জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকার ট্রাষ্ট্রি সদস্য জহিরুল ইসলাম, ফার্মাসিস্ট আব্দুল আওয়াল সিদ্দিকী, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ডা. মাসুদুল হাসান, এম এ জলিল ও তোফায়েল আহমেদ চৌধুরী, সহ সভাপতি আবুল কাশেম, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন দেওয়ান, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক মিসবাহ আহমেদ, শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ফরিদ আলম, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ যুক্তরাষ্ট্র কমান্ডের কমান্ডার ডা. এম এ বাতেন, মুক্তিযোদ্ধা সরাফ সরকার, দি অপটিমিস্ট-এর প্রধান সমন্বয়কারী রানা চৌধুরী, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাজী আব্দুর রহমান, যুক্তরাষ্ট্র জাসদ-এর (একাংশ) সভাপতি দেওয়ান শাহেদ চৌধুরী, নিউইয়র্ক ষ্টেট আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আজমল, কানেকটিকাট আওয়ামী লীগের সভাপতি জুনেদ এ খান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ফকু চৌধুরী, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট ছদরুন নূর ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ নেতা খসরুজ্জামান খসরু।
সভার শুরুত পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত ও বিশেষ মুনাজাত পরিচালনা করেন ডাউন টাউন ম্যানহাটান মসজিদের খতিব মওলানা কারী মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ। এরপর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের পর প্রজেক্টটরে ড. মোমেনকে নিয়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরের অংশ বিশেষ ও কর্মকান্ড তুলে ধরা হয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুলের তোড়া দিয়ে ড. মোমেনকে সংবর্ধিত করা হয়। সংবর্ধনা আয়োজক কমিটি ছাড়াও ড. মোমেনকে পুষ্পস্তবক অর্পণকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে রয়েছে: সুনামগঞ্জ জেলা সমিতি ইউএসএ, জকিগঞ্জ সোসাইটি ইউএসএ, গোপালগঞ্জ সমিতি ইউএসএ, সিলেট সদর সমিতি ইউএসএ, তারার আলো, যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টি, এবিবিএ, যুক্তরাষ্ট্র সেচ্ছাসেবক লীগ, দি অপটিমিস্ট, বাংলাদেশ ল সোসাইটি ইউএসএ, দক্ষিণ সুরমা সমিতি ইউএসএ, বাংলাদেশ পূজা সমিতি, সাউথ কলকতা সিলেট এসোসিয়েশন, যুক্তরাষ্ট্র মহিলা আওয়ামী লীগ ও আমেরিকান-বাংলাদেশী ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন। যৌথভাবে সভাটি পরিচালনা করেন সংবর্ধনা কমিটির সদস্য সচিব হুমায়ুন আহমেদ চৌধুরী ও যুগ্ম সদস্য সচিব ইফজাল আহমেদ চৌধুরী।
সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা রানা ফেরদৌস চৌধুরী।
সভায় বিশেষ অতিথিবৃন্দ ছাড়াও সংবর্ধনা কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক হাজী এনাম সহ অন্যান্যের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুজ্জামান, আওয়ামী লীগ নেতা আলহাজ কফিল আহমেদ, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক রেজাউল করীম চৌধুরী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আহসান হাবিব, মূলধারার রাজনীতিক আব্দুস শহীদ, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট শাহ মিজানুর রহমান, নাসির উদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবীর, এএফ মিসবাহউজ্জামান, কবি সোনিয়া কাদের, বাংলাদেশ সোসাইটি নিউইয়র্ক’র সাংস্কৃতিক সম্পাদিকা মনিকা রায়, ওসমানী স্মৃতি পরিষদের সভাপতি নজমুল ইসলাম চৌধুরী, নিউইয়র্ক ষ্টেট আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এম এইচ মতিন, নিউজার্সী আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতান, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগ নেতা এমাদ উদ্দিন, জাভেদ সিরাজ, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শেখ জামাল হোসেন, সেবুল মিয়া ও রহিমুজ্জামান সুমন, যুবলীগ নেতা শোয়েব আহমেদ, যুবলীগের জর্জিয়া যুবলীগের সভাপতি নূরুল তালুকদার নাহিদ প্রমুখ।
সভায় অধ্যাপিকা রানা ফেরদৌস চৌধুরী তার বক্তব্যে ড. মোমেনের উল্লেখযোগ্য কর্মকান্ড তুলে ধরে বলেন, তার সম্পর্কে রাত-দিন বলেও শেষ করা যাবে না। তিনি জাতিসংঘে তার কর্মগুণে বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে অনেক উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। ড. মোমেনের জন্য প্রবাসীদের দায়-দায়িত্ব বেড়ে গেছে।
হাজী এনাম বলেন, সিলেট-১ আসনের সম্ভাব্য দুই প্রার্থী জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত ড. মোমেন আর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজ উদ্দিন আহমেদকে নিয়ে আমাদের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব নেই। জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকেই মনোনয়ন দেবেন আমরা তার জন্যই কাজ করবো। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাই সমঝোতার মাধ্যমে আমাদের ঐক্য বজায় রাখতে হবে।
কবি সোনিয়া কাদের বলেন, ড. মোমেন নক্ষত্র সম মানুষ। তার আলোতে পুরো বাংলাদেশ আলোকিত হবে। আমরা তাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই।
জহিরুল ইসলাম ড. মোমেনকে এক সৎ, কর্মঠ, দেশপ্রেমিক, শিক্ষানুরাগী মানুষ আখ্যায়িত করে বলেন, তার জন্য আমরা কাজ করবো। তিনি জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়ে বিশেষ করে সিলেটের শিক্ষা আর যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর সুদৃষ্টি দেবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আগামী নির্বাচনে প্রবাস থেকে কমিটি গঠন করে ড. মোমেনের জন্য কাজ করার প্রস্তাব দেন।
এম এ সালাম বলেন, ড. মোমেন সিলেট তথা বাংলাদেশের জন্য আলোকবর্তিকা। আমরা তাকে বাংলাদেশ সরকারের উচু স্থানে দেখতে চাই। প্রবাসী আর সিলেটবাসীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে ড. মোমেনের বিজয় নিশ্চিত।
আব্দুস সামাদ আজাদ বলেন, ড. মোমেন আমাদের গর্ব। তাকে আমরা যোগ্য আসনে দেখতে চাই। জননেত্রী শেখ হাসিনা তাকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন। আমরা তার জন্য কাজ করবো।
আবুল কাশেম বলেন, ড. মোমেন একজন সফল শিক্ষক থেকে রাজনীতিক, আর রাজনীতিক থেকে সফল কূটনীতিক। আমরা তাকে আরো উপরে দেখতে চাই।
ডা. মাসুদুল হাসান বলেন, আমরা ড. মোমেনকে আগামী নির্বাচনে সিলেট-১ আসন থেকে এমপি হিসেবে দেখতে চাই। তাকে পরবর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দেখতে চাই।
ড. সিদ্দিকুর রহমান তার বক্তব্যে জাতিসংঘে ড. মোমেনের কর্মকান্ডের প্রশংসা করে বলেন, বাংলাদেশ মিশন মানেই ড. মোমেন। তার জন্য আমরা যা করার করবো।
সভায় ড. মোমেন তাকে সম্মানিত করার জন্য আয়োজক কমিটি সহ সকল প্রবাসীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আমি আপনাদেরই একজন। আগামী দিনে আপনাদের হয়েই কাজ করতে চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন এবং কিছু দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি সেই দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সরকারের অর্থমন্ত্রীর সহযোগিতায় সিলেটের উন্নয়নে কিছু কাজ করে চলেছি। প্রসঙ্গত ড. মোমেন বলেন, আমাদের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল মুহিতের মতো ব্রিলিয়ান্ট মানুষ পৃথিবীতে খুব কমই আছে।
ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলছে। এই বাংলাদেশকে আরো এগিয়ে নিতে হবে। তিনি সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরে বলেন, নোবেল কমিটি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে নোবেল পুরষ্কার দিলে নোবেল কমিটিই ধন্য হবে।
ড. মোমেন বলেন, আগামী নির্বাচনে আমি জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হই বা না হই, সিলেটের জন্য কাজ করে যাবো। আমি সিলেটকে দৃষ্টি নন্দন সিলেট আর বাংলাদেশ দেখতে চাই। এজন্য দেশে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে, মানব সম্পদ কাজে লাগাতে হবে, সন্ত্রাসমুক্ত সমাজ গড়তে হবে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। তিনি বলেন, দীর্ঘ প্রবাস জীবন ছেড়ে দুই বছর ধরে আমি বাংলাদেশে বসবাস করছি। আমি ভালো আছি, শান্তিতে আছি, উই আর ভেরী হ্যাপি। তবে যানজট বড় সমস্যা বটে। আগামী দিনের পথ চলায় তিনি সকল প্রবাসীর সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে সর্বস্তরের বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী সহ ড. মোমেনের বড় ভাই শেলী এ মুবদী, মেঝো ভাই এ এস এ মুইজ সুজন, ছোট ভাই এবিএম মুমিত ফুয়াদ ও কন্যা সহ অন্যান্য স্বজনরাও উপস্থিত ছিলেন।