সিটি অ্যার্ফোডেবল হাউজিংয়ের আওতায় প্রতিবছর ২৫ হাজার নতুন আবাসনের ব্যবস্থা

- প্রকাশের সময় : ০৫:৪৭:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুলাই ২০১৮
- / ৪৫২ বার পঠিত
শিবলী চৌধুরী কায়েস: নিউইয়র্ক সিটির ব্রুকলীনে সর্ববৃহৎ একটি হাউজিং প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাজিও। প্রায় ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে মার্সি হাউজিং প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়। গত ১১ জুলাই বুধবার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনকালে সিটি মেয়র বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে নিউইয়র্কের বৃহৎ সংখ্যক অধিবাসীরা, এখন একটি কমিউনিটির ছায়াতলে ফিরে এসেছে। মেয়র বলেন, সবার নিরাপদ ও বাসযোগ্য একটি পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যেই কাজ করছে সিটি প্রশাসন। সিটিতে যেমনি রয়েছে অফার সম্ভাবনা তেমনি জীবন-যাত্রা ব্যয়টাও অনেক বেশী। যার প্রভাব পড়ছে শ্রমজীবীদের ওপর। এ জন্য প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে ‘নিউইয়র্ক সিটি হাউজিং অথরিটি-নাইসা’।
জানা গেছে, মার্সি প্রকল্প নিউইয়র্কে ব্রুকলীনের ফ্লাশিং, নর্স্ট্র্যান্ড, মার্টিল এভিনিউ সংলগ্ন বেডস্টাই এরিয়ার সর্ববৃহৎ জায়াগা জুড়ে গড়ে উঠেছিল প্রকল্পটি। তৎকালিন আইনজীবী ও জনপ্রতিনিধি উইলিয়াম এল মারসির নামানুসারে ১৭৮৬ থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত ধাপে ধাপে প্রকল্পটি গড়ে উঠে। এরপর ১৯৪৯ সালের ১৯ জানুয়ারী মাসে পুরো প্রকল্পটির কাজ শেষ হয়। ৬তলা বিশিষ্ট ২৭টি ভবনে সর্বমোট ১৭শ ৫টি অ্যাপার্টমেন্ট তৈরী করা হয়। যাতে প্রায় ৪ হাজার ২শ ৮৬ জন অভিবাসীর বাস ছিল।
পরিবেশগতভাবে মার্সি প্রকল্পের আধুনিকায়ন’সহ নানা উদ্যোগ নেয় তৎকালীন সিটি প্রশাসন। ২০০৯ সালের ১৯ জানুয়ারী সাবেক মেয়র মাইকেল ব্লুমবার্গ প্রকল্পটির ৬০তম বার্ষিকীতে মার্সি হাউজ দিবস ঘোষণা করেন। প্রায় দুই দশক ধরে, বিভিন্ন ব্যাক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে থাকা মার্সি প্রকল্প এখন নিউইয়র্ক সিটি হাউজিং অথরিটির নিয়ন্ত্রণে। প্রকল্পের নাম দেয়া হয়েছে, মার্সি হাউজেস কমিউনিটি সেন্টার।
বুধবার এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাজিও। অনুষ্ঠানের শুরুতেই আফ্রিকান-আমেরিকান এক তরুণী বলেন, এ ধরণের কমিউনিটি সেন্টার তাদের জীবন-যাত্রায় অনেক পরিবর্তন এনেছে।
‘নিউইয়র্ক সিটি হাউজিং অথরিটি-নাইসা’র সার্বিক তত্ত্বাবধানে এমন একটি হাউজিং প্রকল্প বাস্তবায়ন অনেক কঠিন ছিল। এমন দাবী করে মেয়র ডি ব্লাজিও বলেন, সবশেষ চার বছরে প্রায় ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার ব্যায়ে মার্সি হাউজিং প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। তিনি জানান, এই কমিউনিটিতে অনেক মেধাবীদের বাস। যাদের জন্য দরকার ছিল একটি নিরাপদ আবাসস্থল এবং বিনোদন সেন্টার।
অনুষ্ঠানে নিউইয়র্ক সিটির হাউজিং কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি, ব্রুকলীনের স্থানীয় কাউন্সিল মেম্বার, বোরো প্রেসিডেন্ট, স্টেট সিনেটর’সহ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং মার্চি সেন্টার কমিউনিটি সংশ্লিষ্টরাও বক্তব্য রাখেন। তারা বলেন, কমিউনিটির প্রতি সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাজিও দায়বদ্ধতা তাদের অনুপ্রাণিত করেছে। তবে, ব্রুকলীনের মার্সি হাউজ ঘিরে গড়ে উঠা নেইভরহুড এক সময়ে সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্য ছিল। সে বিষয়গুলো মাথায় রেখেই পুরো এলাকাটিকে একই ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসা হয়েছে। মার্সি হাউজের বাসিন্দাদের জীবন-যাত্রার মানউন্নয়ন, নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও সহনীয় ভাড়ার তাগিদে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সিটি হাউজিং কর্তৃপক্ষের অধীনে প্রকল্পের আধুনিকায়নও করা হয়েছে।
এদিকে ব্রুকলীনের মার্সি হাউজিং কমিউনিটি সেন্টার উদ্বোধনের পাশাপাশি, নিউইয়র্ক সিটির বিভিন্ন প্রকল্পকে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রায় ২ হাজার ৪শ অ্যাপার্টমেন্টের আধুনিকায়নে সিটি হাউজিং কর্তৃপক্ষের আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে- প্রায় ৪শ মিলিয়ন ডলার। যার মধ্য দিয়ে অ্যার্ফোডেবল হাউজিংয়ের আওতায় প্রতিবছর ২৫ হাজার নতুন আবাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে সিটি প্রশাসন। এসব প্রকল্পে বাংলাদেশীদেরও আবেদনের সুযোগ রয়েছে। যাদের পরিবার সদস্যসংখ্যা ও ন্যুন্যতম আয়ের ওপর নির্ভর ও লটারি প্রক্রিয়ায় অ্যাপার্টমেন্ট বরাদ্দ দেয়া হবে। তবে, আবেদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশী কমিউনিটি অনেকটা উদাসীন। এমনটি বলছেন, বিশ্লেষকরা। এ জন্য বাংলাদেশ সোসাইটি’সহ আঞ্চলিক সংগঠনগুলোকেই এগিয়ে আসতে হবে।
নিউইয়র্ক সিটি অভিবাসীদের স্বর্গরাজ্য। আর এই নগরী জুড়ে নানা ধর্ম-বর্ণ ও জাতিগোষ্ঠীর মানুষের বাস। বিশেষত আফ্রিকার-আমেরিকান ও হিস্পানিকদের পাশাপাশি বাংলাদেশী’সহ সাউথ-এশিয়ানদের অবস্থান বেশ শক্ত বলা চলে। কিন্তু সিটি ও রাজ্য প্রশাসনের নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত অনেকে।
সংশ্লিস্ট সূত্রে আরো জানা গেছে, সিটি অ্যার্ফোডেবল হাউজিংয়ের আওতায় প্রতিবছর ২৫ হাজার নতুন আবাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০২৬ সালের মধ্যে অ্যাপার্টমেন্টর সংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে ৩ লাখে। মেয়র বলেছেন সিটির পাবলিক অ্যান্ড প্রাইভেট হাউজিং-এর বৈষম্য দুরীকরণ’সহ ভিশন-জিরোর আওতায় এগুচ্ছে সিটি প্রশাসন।
বিভিন্ন প্রকল্পে পুরোনো অ্যাপার্টমেন্টগুলোর আধুনিকায়ন সম্পন্ন হলে ম্যানহাটন ও ব্রুকলিনে ঘিরে প্রায় ৫ হাজার ৩শ পরিবার সরাসরি উপকৃত হবেন। এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে নিউইয়র্ক সিটি হাউজিং অথিরিটি। একই সাথে ভাড়াটিয়ারা পূর্বের নিয়মেই সব সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। এতে সিটির পাশাপাশি রাজ্য সরকারও কাজ করেেছ।
অপরদিকে এসব প্রকল্পের আধুনিকায়নে নিউইয়র্ক সিটি হাউজিং অথোরিটিকে বিপুল অর্থ গুনতে হবে। ২০১৯ সালকে সামনে রেখে এর বাস্তবায়নে প্রতিবছর প্রায় ১শ ৫০ মিলিয়ন বা ১৫ কোটি ডলার প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে। নিউইয়র্ক ওয়ানের সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে বিষয়টি আবারো তুলে ধরেন মেয়র ডি ব্লাজিও।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও মেয়র অফিসের তথ্য মতে, এ পর্যন্ত অ্যার্ফোডেবল হাউজিং-এর আওতায় ৪০ শতাংশ বাসস্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। নিউইয়র্ক সিটি সাশ্রয়ী হাউজিং প্রকল্পে আবেদন করার সুযোগ বাংলাদেশী অভিবাসীদেরও রয়েছে। যাদের পরিবার সদস্যসংখ্যা ও ন্যুন্যতম আয়ের ওপর নির্ভর করে বরাদ্দ দেয়া হবে। তবে, এ জন্য কমিউনিটি ও আঞ্চলিক সংগঠনগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।
২০১৭ সালে নিউইয়র্ক সিটিতে প্রতি চারজনের একটি পরিবারের মধ্যম আয় ধরা হয়েছে বছরে ৯৫ হাজার ৪০০ ডলার। যাঁদের আয় বছরে ৩৩ হাজার ৫০০ থেকে ৪৩ হাজার ডলার এবং যাঁদের পরিবারের আকার তিনজন, তাঁদের মাঝে এসব অ্যার্পাটমেন্ট বণ্টন করা হচ্ছে।
নিউইয়র্কের অধিবাসীদের মধ্যে যাঁদের আয় সীমা ৩৩ হাজার ডলারেরও কম, তাঁদের মনোনীত করা হবে সিটির নতুন প্রকল্পে। এ ছাড়া, প্রত্যেক পরিবারের ন্যুন্যতম ২ বছরের জন্য ভাড়া বৃদ্ধি স্থগিত, বাড়িওয়ালার হয়রানির শিকার হলে আইনি সহায়তা এবং উচ্ছেদ নোটিশের বিরুদ্ধে আইনি সহায়তা প্রদানও থাকছে সিটি হাউজিং আইনে। সূত্র: টাইম টেলিভিশন