সাজা খাটতে জেলে সিজার : বিএনপি নেতার কাছ থেকে ৩০ হাজার ডলার হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ
- প্রকাশের সময় : ০৪:০৬:৪৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল ২০১৫
- / ৬২৮ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: সাজা খাটতে আদালত কর্তৃক বেধে দেয়া সময়সীমার মধ্যে কারাগারে যেতে হলো যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতার ছেলে রিজভী আহমেদ সিজারকে (৩৬)। ইউএস তদন্ত সংস্থা এফবিআই’র এক কর্মকর্তাকে ঘুষ প্রদান এবং বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজিব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ প্রচেষ্টার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় সিজারকে গত ৪ মার্চ সাড়ে তিন বছরের কারাদন্ড দেয় নিউইয়র্কের হোয়াইট প্লেইন্সের ফেডারেল আদালত। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী স্থানীয় সময় সোমবার (১৩ এপ্রিল) দুপুরে হাজিরার পর সিজারকে নিউইয়র্কের পার্শ্ববর্তী রাজ্য কানেটিকাটের কারাগারে নেয়া হয়।
এদিকে স্থানীয় সময় শনিবার (১৮ এপ্রিল) কানেকটিকাটের ডানবুরিতে নিজ বাসায় ডাকা সাংবাদিক সম্মেলনে রিজভী আহমেদ সিজার বলেন, সাজা পাওয়ায় তার কোনো অনুশোচনা নেই। তিনি আরো বলেন, ‘আমি বিএনপির স্বার্থে কাজ করেছি, ভবিষ্যতেও করব।’ যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সহ-সভাপতি মোহাম্মদউল্লাহ মামুনের ছেলে সিজার নিউইয়র্কের বাঙালী কমিউনিটিতে পেশাদার মর্গেজ প্রতারক হিসাবে অধিক পরিচিত। সিজার নিজেকে বিএনপির জন্য নিবেদিত প্রাণ দাবি করলেও যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় কোনো নেতা তার সঙ্গে নেই। তবে সিজার তার বাবাকে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সভাপতি পদ এবং আরেকজন বিএনপি নেতাকে কেন্দ্রের বিশেষ পদ পাইয়ে দেয়ার জন্য লন্ডনে হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কথিত ৩০০ মিলিয়ন ডলার দুর্নীতির ফাইল সংগ্রহের জন্য এফবিআই’র এক কর্মকর্তাকে ঘুষ প্রদান করেন। ৩০০ মিলিয়ন ডলারের কথিত দুর্নীতির কোনো তথ্য সিজারের নিজের স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্য ছাড়া এফবিআই’র নথিপত্রে কোথাও উল্লেখ নেই। কেন সে এফবিআইকে ঘুষ দিয়েছিল এর জবাবে সিজার তার স্বীকারোক্তিতে জয়ের কথিত দুর্নীতির প্রসঙ্গ স্বেচ্ছাপ্রণোদিতভাবে টেনে আনেন। আদালতে দেয়া জবানবন্দিতে সিজার জানিয়েছিলেন, সজিব ওয়াজেদ জয় ৩০০ মিলিয়ন ডলারের দুর্নীতির ব্যাপারে এফবিআই তদন্ত করছে। কিন্তু এ পর্যন্ত দুইবার সংবাদিক সম্মেলন করলেও সিজার তার অভিযোগের স্বপক্ষে কোনো তথ্য দিতে পারেননি।
অন্যদিকে আদালতের নথিতে যেসব বিষয় উল্লেখ রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, রিজভী আহমেদ সিজার দুটি উদ্দেশে সজিব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কিত তথ্য পেতে তৎপরতা চালান। আদালতের নথিতে বলা হয়, ‘প্রথমত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের ঠিকানা বের করে তার ক্ষতি করতে চেয়েছিলেন সিজার। সুনির্দিষ্টভাবে নথিতে আরো উল্লেখ রয়েছে, ভার্জিনিয়ায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বসবাসরত প্রধানমন্ত্রীর ছেলেকে অপহরণ ও শারীরিকভাবে ক্ষতি করতে চেয়েছিলেন তিনি। এছাড়াও সজিব ওয়াজেদ জয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হবে এমন তথ্য সংগ্রহ করে তা প্রচারও করতে চেয়েছিলেন সিজার। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ছেলে এবং নিজের দল বিএনপির প্রতিপক্ষের একজন হওয়ায় জয়কে তিনি টার্গেট করেছিলেন বলে নথিতে উল্লেখ আছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় তারা সিজারের ব্যাপারে আর আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির একজন নেতা জানিয়েছেন, সিজার শুধু নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য নয়, নিউইয়র্কে অবস্থানরত বিএনপির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতার সঙ্গেও প্রতারণা করেছেন সিজার। জয় সম্পর্কিত এফবিআই’র তথ্য সরবরাহের কথা বলে সিজার ওই বিএনপির নেতার কাছ থেকে ৩০ হাজার ডলার হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একজন সাংবাদিক এবং যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির তিন নেতা ওই অর্থের মধ্যস্থতা করেছেন। বিষয়টি সম্প্রতি জানাজানি হওয়ায় শেষ মুহূর্তে সিজার বিএনপি নেতাদের আর পাশে পাননি।
এদিকে কারাভোগ শেষ হলেও আরো দুই বছর রিজভী আহমেদ সিজারকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কঠোর নজরদারিতে থাকতে হবে বলে জানা গেছে। একই ঘটনায় ৩০ মাসের দন্ডপ্রাপ্ত সিজারের সহযোগী ইউএস নাগরিক জোহানেস থালেরকেও একইদিন কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঘুষ নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করা মামলার আরেক আসামি এফবিআইয়ের সাবেক বিশেষ এজেন্ট রবার্ট লাস্টিকের সাজার আদেশ হতে পারে আগামী ৩০ এপ্রিল। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট গ্রেফতার হন থালের ও সিজার। গত ১৭ অক্টোবর আদালতে দোষ স্বীকার করেন তারা।