শোক, সমবেদনা, গভীর শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় ৯/১১ স্মরণ
- প্রকাশের সময় : ০৬:৫৫:৫৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮
- / ৬২৮ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে পালিত হয়েছে ঐতিহাসিক ‘নাইন ইলেভেন’ হামলার ১৭তম বার্ষিকী। নারকীয় সেই হত্যাযজ্ঞে নিহতদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়েছে নানা ভাবে। শোক, সমবেদনা শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় নাইন-ইলেভেন হামলার ১৭ বষূপূর্তি উদযাপন করা হয়েছে। সেই সাথে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়েছে টুইন-টাওয়ার হামলায় নিহতদের। ১১ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার নিউইয়র্কের ‘গ্রাউন্ড-জিরো’ ঘিরে ছিল লোকে-লোকারণ্য। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বিভিন্ন রাজ্য থেকে ম্যানহাটনের ছুটে এসেছেন অনেকে। পাশাপাশি ছিল পর্যটকদের বাড়তি উপস্থিতি; ছিল পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা। স্মরণ সভার শুরুতেই ফুলেল শুভেচ্ছা আর ভালবাসায় একে একে প্রায় তিন হাজার নিহতের নাম উচ্চারিত হয়। ইতিহাসের অন্যতম প্রাণহানিকর ওই হামলার ভয়াবহতার আজো বয়ে বেড়াচ্ছে অনেককে। যার বেঁচে গেছেন তাদের অনেকেই বিভীষিকাময় দিনটির কথা ভাবতেই আঁতকে উঠেন।
এদিকে, নাইন-ইলেভেনে নিহত ইউএস ‘ফ্লাইট-নাইনটি থ্রি’-এর বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নিউইয়র্কের পাশবর্তী রাজ্য পেনসিলভানিয়া থেকে চুরি করা ওই ফ্লাইটের যাত্রীরা সন্ত্রাসীদের সঙ্গে লড়াই করেছিলেন। তারা ককপিটে সন্ত্রাসীদের বাধা দিয়েছিলেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, এসব বীরদের স্মরণ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তিনি নিহতদের স্বজন ও মা-বাবা, ভাই-বোন এবং সন্তানদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। একই সাথে নিহতদের স্মরণে পেনসিলভানিয়ায় নির্মান করা স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ফার্স্টলেডি মেলানিয়া ট্রাম্পকে সাথে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড স্মৃতিশৌধে প্রবেশকালে তার শারিরীক অঙ্গিভঙ্গি নিয়েও সমালোচনা শুরু হয়েছে। মূলধারার গণমাধ্যমগুলোতে এ নিয়ে নেতিবাচক শিরোনাম প্রকাশ পেয়েছে। ‘পেনসিলভেনিয়ার নাইন-ইলেভেন মেমোরিয়াল শ্যাঙ্কসভিলে’ সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের স্মরণের পাশাপাশি বক্তব্য রাখেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এসময়ে তিনি বলেন, বর্তমান প্রশাসন আমেরিকার নিরাপত্তা বৃদ্ধি’সহ নাগরিক নিরাপদ জীবন-যাত্রার ওপর বেশী প্রাধান্য দিচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, নাইন-ইলেভেন হামলা আমেরিকানদের শুধুই দুঃখ দেয়নি, পাশাপাশি লড়াইয়ের শক্তিও দিয়ে গেছে।
অপরদিকে নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড-ট্রেড সেন্টার ও টুইন টাওয়ার হামলার ১৭ বছরেও নিহতদের সবার পরিচয় এখনো নিশ্চিত করতে পারেননি সংশ্লিষ্টরা। এমন তথ্য নিশ্চিত করেছে প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস। সবশেষ তথ্যে জানা গেছে, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে ২ হাজার ৭শ ৫৩ জন নিহত এবং নিখোঁজ হয়েছিল। এদের মধ্যে ১ হাজার ৬শ ৪২ জনের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। নিহতদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশী রয়েছেন। যাদের হাতেগোনা কয়েকজনের পরিচয় পাওয়া গেলেও; বাকীদের কোন হদিস মিলছে না। হতাহতদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন কাগজপত্রহীন। বেঁচে যাওয়া সহকর্মীদের মতে এরকম অসংখ্য রয়েছেন যাদের নাম নিবন্ধিত ছিলনা কিন্তু তারা প্রাণে বেছে নেই। এ বিষয়ে দ্য নিউ ইয়র্ক সিটি মেডিক্যাল এক্সিমিনারস অফিস ১৭ বছর ধরে ডিএনএ পরীক্ষা করে চলেছে। আধুনিক প্রযুক্তি দিয়েও তারা সবার পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি। এখনো ১১শ’ জনের পরিচয় নিশ্চিত করা বাকি রয়েছে। গেল ৫ বছরে মাত্র ৫ জনের ডিএনএ পরীক্ষায় সফল হয়েছেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা।
১৭ বছর আগের সে ভয়াল সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা আবারো স্মরণ করলো নিউইয়র্কবাসী’সহ পুরো যুক্তরাষ্ট্র। ওই দিন ম্যানহটান ডাউন টাউনের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো ছিল ওয়ার্ল্ড-ট্রেড সেন্টার আর টুইন টাওয়ার। সন্ত্রাসীদের সংঘবদ্ধ বিমান হামলায় যা ধুলোয় মিশে যায়।
দিনটি স্মরণে জ্যাকসন হাইটস ও জ্যামাইকায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্যোগে স্মরণ সভা ও মোমবাতি প্রজ্জলন করা হয়। এসব সভায় কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। তারা তাদের বক্তব্যে যেকোন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে চিরতরে বন্ধ করার জোর দাবী জানান। জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউতে ৯/১১ নিহতদের এর স্মরণে আয়েজিত মানববন্দনে শ্লোগান ছিলো ‘সন্ত্রাস নিপাত যাক, মানবতার জয় হউক’। এতে মোর্শেদ আলম, শরাফ সরকার, এবিএম ওসমান গণি, মনির হোসেন, ফাহিম রেজা নূর, মোহাম্মদ আলী, ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, আনাফ আলম, স্বীকৃতি বড়–য়া, উৎপল চৌধুরী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
ইতিহাস বলে: ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর। ঘড়ির কাঁটা সকাল প্রায় ন’টা। টুইন টাওয়ারে দুটি বিমান আঁছড়ে পড়ে। মুহুর্তে তা পরিণত হয় ধ্বংসস্তুপে। হামলার ১৭ বছর পূর্তীতেও ঠিক ঘটনার সময়ে বেজে উঠলো শ্রদ্ধাবনত ঘন্টির-ঘন্টা। মঙ্গলবার দিবসটিকে স্মরণে জাতীয় সঙ্গীতের পাশাপাশি ছিল সম্মিলিত স্বরণ-সঙ্গীত। এরপর শুরু হয় ফুলেল শুভেচ্ছা আর শ্রদ্ধার পালা। আনুষ্ঠানিক ভাবে জুটি বেঁধে একে একে প্রায় তিন হাজার নিহতের নাম উচ্চারিত হয়। দিনটি ছিল বিশ্বরাজধানী খ্যাত নিউইয়র্ক সিটির জন্য এক কালো অধ্যায়। অশ্রæসজল প্রিয়জনদের চোখে মুখে ঘুরে ফিরে উঠে আসে প্রিয়জন হারানোর সেই দিনের ভয়বহতার ছাপ।
ভয়ঙ্কর ওই সন্ত্রাসী হামলাকে শক্তিতে রূপান্তর করতে নিহতের স্মরণ এখন আনুষ্ঠানিকতায় রূপ নিয়েছে। নিউইয়র্কের স্মরণ সভায় রাজ্য গভর্নর এন্ড্রু কুমো আর সিটি মেয়র বিল ডি বøাজিও উপস্থিত ছিলেন। একইদিন, ওয়াশিংটনের পেন্টাগনে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স ও পেনসিলভানিয়ার মেমোরিয়াল সেন্টারে অংশ নেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল ওয়াশিংটনে আমেরিকান কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা সদর দপ্তর পেন্টাগন। নাইন-ইলেভেনের সেই হামলার ১৭ বছরপূতি উপলক্ষে বিশেষ স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়েছে সেখানে। এতে অংশ নিয়েছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স।
তিনি বলেন, ওইদিনের ঘটনা আমাদের অনেক শিক্ষা দিয়েছে। সেই দিনের ভয়াবহতা কখনো ভুলার নয়। জানান, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার, পেন্টাগনে এক যোগে যে হামলা চালানো হয়েছিল, সেই দুর্বিসহ যন্ত্রণার যুগ যুগ ধরে আমাদের অনেক কিছু স্মরণ করিয়ে দিবে। প্রতিরক্ষা বিভাগের আয়োজনে অনুষ্ঠিত নাইন-ইলেভেন স্মরণ সভায় ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স’সহ উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির বিভিন্ন পর্যায়ের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা।