শীতের প্রকোপে নিউইয়র্কে ফুটপাতের ব্যবসায় ধস : ভালো অবস্থানে ট্যাক্সি চালকেরা
- প্রকাশের সময় : ০৭:৫৫:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০১৪
- / ১৬৫২ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: তীব্র ঠান্ডার কবলে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গত সপ্তাহে বাফেলো’সহ নিউইয়র্কের আপ ষ্টেট ও এর আশেপাাশের এলাকায় প্রবল তুষারপাতে ঢাকা পড়ে যায়। যার প্রভাব পড়েছে নিউইয়র্ক সিটিতেও। তুষারপাত না ঘটলেও কনকনে শীতের তীব্রতায় স্থবির হয়েছে পড়েছে জনজীবন। অসহনীয় কনকনে শীতের তীব্রতায় বেন্ডার এবং ফুটাপাতের ব্যবসয়ীদের বেচাকেনা কমলেও বেড়েছে ট্যাক্সি চালকদের আয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আবহাওয়া অফিসের আগাম পূর্বাভাসকেও হার মানিয়েছে বাফেলোর এই তুষার ঝড় । রেকর্ড বলছে, নিউইয়র্কের পশ্চিমাঞ্চল বাফেলো’সহ যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৫০টি রাজ্য তুষার ঝড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ঘণ্টায় ৪০ মাইল গতিবেগের কনকনে বাতাস আর অবিরাম তুষারপাতে অচল হয়ে যায় আক্রান্ত অঞ্চলের জনজীবন। যা শুক্রবার পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। যদিও তুষার ঝড়ের কবলে এখনো পড়েনি নিউইয়র্ক সিটি। নিউইয়র্কে তুষারপাত না থাকলেও কনকনে শীতে ঘর থেকে বের হওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। শীতের তীব্রতায় হিম কাঁপন লেগেছে এখানকার জনজীবনেও। কনকনে শীতের প্রভাবে সিটির ফুটপাতের চলাচলও কমে গেছে। যার প্রভাব পড়েছে ভ্রাম্যমাণ বাবসায়ীদের ওপর।
নিউইয়র্ক থেকে সম্প্রচারিত টাইম টেলিভিশন ও বাংলা পত্রিকার সাথে আলাপকালে সিটির জ্যকসন হাইটস এবং অন্যান্য এলাকায় ফুটপাতের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ‘বাফেলোতে যা ঘটেছে তা নজির বিহীন অনেকে মারাও গেছেন শুনেছি। আসলে এখানে তুষার ঝড় নেই। কিন্তু শীতের প্রকোপটা একটু বেশী। লোকজন ঘর থেকে নেহাত প্রয়োজন ছাড়া বের হচ্ছেন না। ফুটপাত বলতে গেলে প্রায় ফাঁকা। তাই আমাদের ব্যবসা গুটিয়ে দেয়া ছাড়া উপায় নেই’।
তারা জানান, ‘বলতে গেলে আমাদের বেচাকেনা আশি ভাগ কমে গেছে। লোকজন ঘর থেকে বেরই হচ্ছে না। যারা প্রয়োজনের তাগিদে বের হচ্ছেন তারা কেনাকাটা করছেন শপিং মল অথবা গ্রোসারিতে। প্রতিবছরই আমাদের ব্যবসায় ধস নামে। বলতে পারেন এটা আমাদের ভেকেশন। তাই অনেকেই বাংলাদেশে চলে যাই’।
শাফিন আহমেদ নামের একজন ইয়োলো ক্যাবি তার অবস্থান তুলে ধরে বলেন, ‘উইন্টারে আগে একচেটিয়া ব্যবসা করতাম। এখন গ্রীণ ক্যাব ও উভার আমাদের আয়ের মধ্যে অনেকটা ভাগ বসিয়েছে। তবে, প্রচন্ড শীত হলেও আমাদের আয় বেড়েছে তুলনামূলক ভাবে। বলতে পারেন যাত্রীরা পায়ে হাঁটা পথ ছেড়ে এখন ট্যাক্সি নির্ভর হয়ে পড়েছেন’।
কুইন্সের এস্টোরিয়ার একজন চালক জানান, ‘শীতের প্রকোপে আমাদের আয় বেড়েছে ঠিকই। কিন্তু বিড়ম্বনা পড়তে হচ্ছে পরিবার নিয়ে। সন্তানদের ভোর বেলায় স্কুলে নিয়ে যাওয়া-আসা। অন্যদিকে যেসব বাংলাদেশী পরিবারে বৃদ্ধ বাবা মা রয়েছেন; তারা তো ঘর থেকে বেরই হতে পারছেন না। শীতের মধ্যে আবদ্ধ থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের জন্য’।
এদিকে, বাংলাদেশী অধ্যুষিত বিভিন্ন এলাকায় বসবাসকারি বিভিন্ন ভাড়া বাড়িতে হিটিং সিস্টেম জটিলতায় ভুড়গছেন অনেকে। বাড়িওলা মালিকরাও ঠিকমত হিটিং সরবরাহ করছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অন্যদিকে, বাড়িওয়ালাদের অভিযোগ ভাড়াটিয়ারা হিটিং ছেড়ে দিয়ে জানালা খুলে রাখে। শীতের মধ্যে এ সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে এটর্নি এম এ আজিজ জানান, মালিক ও ভাড়াটিয়ারা একে অন্যের পরিপূরক। এখানে কেউই আইনের উর্ধ্বে নয়। সিটিতে বসবাসকারি হাউজ মালিক ও টেনেন্টদের জন্য আইন রয়েছে। আর বাংলাদেশী মালিক বলতে গেলে হাতেগোনা। ভাড়াটিয়ার সংখ্যাই বেশী। তাই সবার উচিত মানবকি দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল আচরণ করবেন। আইনের মাধ্যমে জটিলতা আরো বাড়ে। তবে, কোন বাড়িওয়ালা যদি ইচ্ছে করে হিটিং সিস্টেম বন্ধ করে রাখে; তবে, তার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেয়া উচিত। অভিযোগ করা মাত্রই সিটির সংশ্লিষ্ট বিভাগ এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিবেন’।
এদিকে, বাফেলো’সহ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলে স্মরনকালের সবচেয়ে ভয়াবহ তুষারঝড়ে এপর্যন্ত ১০ জনের প্রাণহানি ঘটলেও কোন প্রবাসী বাংলাদেশী মারা যায়নি। আবওয়া দপ্তর থেকে আশঙ্কা করা হচ্ছে; ১৯২১ সালে সিলভার লেক কোলো’র তুষার ঝড়ের রেকর্ড ছাড়িয়ে যেতে পারে এবছর। তাদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পুরো বিশ্বের আবহাওয়া এখন টালমাটাল। তুষার ঝড়ে বেশএসময়েআবহাওয়া দপ্তর জানায়, বুধবারের চেয়ে বৃহস্পতিবার শীতের তীব্রতা কিছুটা নেমে এলেও শুক্রবার তা আবার বেড়ে গিয়ে তাপমাত্র নেমে যায় সর্বনি¤œ ২৭ ডিগ্রি ফারেনহাইটে। তবে, এ সপ্তাহে জুড়ে তাপমাত্রা কিছুটা সহনীয় অবস্থানে থাকবে। এর পর থেকেই নিউ ইয়র্ক সিটিতে ¯েœায়ের দেখা পাবে এখানকার বাসিন্দারা।