রাতের জামাইকা আলোকিত করছেন বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা
- প্রকাশের সময় : ০৪:২৪:৪৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫
- / ৫৭২ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: স্থানীয়দের ভাষায় একসময় দিন দুপুরেও মানুষজন যেখানে যেতে সাহস পেতো না সেই জামাইকাকে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রাণ কেন্দ্রে পরিণত করছেন বাংলাদেশীরা। শুধু তাই নয় ইত্যাদি সুপার মার্কেট, কাঁচা বাজার ও কারওয়ান বাজারের মতো গ্রোসারী শপগুলো রাতের জামাইকাকে আলোকিত করছে। দিনের বেলা যেমন ওই এলাকায় সবর থাকে ঠিক রাতের বেলায়ও তাই। ইত্যাদিসহ খোলা থাকা দোকানগুলোর সামনে ক্রেতা সাধারণের ভীড় লেগেই থাকে। বলতে গেলে দিনের কর্মজীবি মানুষের কেনাকাটার আস্থার স্থানের পরিণত হয়েছে এই জামাইকা।
ইত্যাদি সুপার স্টোরের মালিকদের একজন শাকিল আবু নোমান জানান, ব্যবসার পাশাপাশি সেবার মনোবৃত্তি নিয়ে রাতের বেলায় স্টোর খোলা রাখা হচেছ। এতে করে তারা ক্যাবীদের ধন্যবাদও পাচ্ছেন। আর প্রথম জামাইকাতে গ্রোচারি শপ রাতের বেলায় খোলা রাখার নজির স্থাপনকারী কাঁচা বাজারের স্বত্বাধীকারি সুলতান মাহমুদ বলেন, দুই বছর আগে যখন দোকান খোলা রাখার সাহস করেছিলাম তখন সত্যিই বিষয়টি চ্যালেঞ্জের ছিল। কিন্তু এখন অনেকেই দোকানপাট খোলা রাখতেছেন এবং সেটির দাবীদার বাংলাদেশিরাই।
নিউইয়র্কের বাংলাদেশিদের বাণিজ্যিক হাব হচ্ছে জ্যাকসন হাইটস। সময়ের বাস্তবতায় ব্রুকলীন, ব্রঙ্কসে বাণিজ্যের সম্প্রসারণ হলেও পিছিয়ে নেই জামাইকা। গেল কয়েক বছরের মধ্যে সেখানে গড়ে উঠেছে নামীদামি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ডানকিন ডোনার, পাপাইস ও সেভেল ইলেভেনের মতো সুপরিচিত ফাস্টফুড রেষ্ট্ররেন্ট। আছে মান্নানের মতো বড়ো সুপার মার্কেটও। রয়েছে সাগর ও ঘরোয়ার মতো বাংলাদেশীদের মজাদার রেসিপির রেষ্টুরেন্ট। প্রিমিয়াম সুইটস, তিতাস গ্রোসারী আর সিভিএসের মতো প্রতিষ্ঠানও আছে জ্যামাইকার হিলসাইড এভিনিউতে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হিলসাইড এভিনিউর বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা নতুন বিপ্লব সাধন করেছেন। যে জ্যামাইকতে এক সময় দিনে দুপুরে মানুষ যেতে ভয় পেতেন সেখানে রাতের বেলায় আলো ছড়াচ্ছেন বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা। সিটির সুইডিয়াম লাইটের আলোর সঙ্গে সঙ্গে জ্বলছে ইত্যাদি সুপার মার্কেট, কাঁচা বাজার ও কারওয়ান বাজারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর লাইটের আলো। কারণ এসব প্রতিষ্ঠান বলতে গেলে প্রায় ২৪ ঘন্টাই খোলা রাখা হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সামনে রাতের বেলায় জমায়েত হয় চোখে পড়ার মতো। রাতে যারা ট্যাক্সি চালান তাদের অধিকাংশই এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে আসেন এবং কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
ইত্যাদি সুপার মার্কেটের স্বত্তাধীকারিদের একজন শাকিল আবু নোমান বলেন, ‘আমরা বিগত চার মাস ধরে রাতে-দিনে সুপার মার্কেট খোলা রাখছি। কারণ ব্যবসার চেয়ে মানুষের সেবাকে আমরা বেশি প্রাধান্য দিচ্ছি।’
ব্যবসা কেমন এবং রাতের কাস্টমার কারা এমন প্রশ্নে শাকিল আবু নোমান বলেন, অধিকাংশ কাস্টমার হলো যারা দিনের বেলায় কাজে থাকেন। এছাড়া ক্যাবীদের একটি অংশও রয়েছে। তবে যারা দিনের বেলায় ব্যস্ত থাকেন তাদের পরিবার পরিজন নিয়েও সুপার মার্কেটে একসঙ্গে বাজার করতে আসার পরিমাণও নেহায়েত কম নয়।
রাতের বেলায় মার্কেট খোলা রাখার কারণে পণ্যের অতিরিক্ত মূল্য রাখা হয় কি না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, প্রশ্নই উঠেনা। যেতেতু আমরা সেবার মনোবৃত্তি রাখছি সেহেতু এটা করতে পারি না বা ইচ্ছাও নেই।
ইত্যাদি সুপার মার্কেটের কর্মচারী সরওয়ার বলেন, আমরা রাতের বেলায় ডিউটি করি এবং দিনে যেভাবে সেবা দিয়ে থাকি ঠিক তেমনি রাতেই তাই করে থাকি। তবে রাতের বেলায় কাস্টমার দিনের চেয়ে কম থাকার কারণে সেবা আরো বেশি দেয়া হয়।
কাঁচা বাজারের স্বত্বাধীকারি সুলতান মাহমুদ বলেন, আমি প্রথমে জামাইকাতে সাহস করে রাতের বেলায় দোকান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। হিলসাইড এলাকায় প্রায় দুই বছরের একটু বেশি সময় আগে পুরো রাত দোকান খোলা রাখার বিষয়টি চ্যালেঞ্জ ছিল। কিন্তু অনেক ক্যাবী বা বন্ধুরা আমাকে সাহস দিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, এমনও হয়েছে আমাদের দোকান খোলা থাকার কারণে কোন মানুষ বিপদে পড়ে চিৎকার দিয়েছে দোকান থেকে আমরা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের গিয়ে উদ্ধার করেছি। কিন্তু সময়ের আবর্তে এখন অনেকেই প্রতিষ্ঠানগুলো রাতের বেলায় খোলা রাখছেন। এটা দেখে ভালোই লাগছে।
হিলসাইড এলাকার কারওয়ান বাজার সুপার মার্কেটের ফ্রন্ট ডেস্কের এক নারী কর্মচারী বলেন, আমরা রাতের বেলায় সুপার মার্কেট খোলা রাখছি সেটি বেশিদিন না হলেও কাস্টমার সাড়া পাচ্ছি ব্যাপকভাবে। বিশেষ করে আমাদের দিনের বেলায় যেসব কাস্টমার ব্যস্ততায় আসতে পারতো না এখন তারা আসছেন এবং স্বাচ্ছন্দবোধ করছি।
ফাতেমা গ্রোসারির স্বত্বাধীকারী মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার বলেন, আমরা এখন রাত ১২ টা পর্যন্ত গ্রোসারী খোলা রাখি। যেভাবে জ্যামাইকাতে বাণিজ্যের সম্প্রসারণ হচ্ছে তাতে এ ধরনের পরিকল্পনা আমাদেরর রয়েছে।
তিতাস গ্রোসারীর স্বত্বাধীকারিদের একজন বিজয় কুমার নন্দি বলেন, আমরা বেশি দিন হয়নি তিতাস গ্রোসারী চালু করেছি। নতুন প্রতিষ্ঠানে নতুন চমকতো থাকবেই। তবে ভবিষ্যত পরিকল্পনা আছে বাণিজ্যের আরো সম্প্রসারণের।
বাংলাদেশীদের বাণিজ্যের প্রসারকে ইতিবাচক মন্তব্য করে কমিউনিটি নেতা চট্টগ্রাম সমিতি যুক্তরাষ্ট্র’র সাবেক সভাপতি কাজী সাখাওয়াত হোসেন ওরফে কাজী আজম বলেন, বাংলাদেশীরা নিজেদের পরিশ্রম এবং কঠোর সাধনা করে এ বাণিজ্যের সম্প্রসারণ করছে। আজ রাতের জামাইকাকে যেভাবে আলোকিত হচ্ছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবী রাখে। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)