নিউইয়র্ক ০৫:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ২২ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

মুক্তিযোদ্ধা-কবিকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সম্মান না জানানো রাষ্ট্রেরই ব্যর্থতা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:৪৮:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
  • / ৪২৭ বার পঠিত

নিউইয়র্ক (ইউএনএ): বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কবি, রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একুশে পদকসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত কবি আল মাহমুদ স্মরণে বাংলাদেশ জার্নালিস্ট এন্ড রাইটার্স এসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকা (বিজেডব্লিউএ) আয়োজিত দোয়া ও শোক সভায় বক্তা কবি-কে দলমতের উর্ধ্বে তাঁকে যথাযথ সম্মান জানানো উচিৎ বলে মন্তব্য করে বলেছেন একাত্তুরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন রণাঙ্গণের একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা-কবি আল মাহমুদকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সম্মান না জানানো রাষ্ট্রেরই ব্যর্থতা। তবে কবি তার লেখনী আর কর্মগুণে বাংলা ভাষা-ভাষী বিশ্ববাসীর কাছে সম্মানিত থাকবেন। বক্তারা দেশ ও প্রবাসে কবি-কে নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্ঠির হীন চেষ্টা এবং কোন কোন ব্যক্তি ও বিশেষ মহলের বিরূপ মন্তব্যেরও সমালোচনা করেন। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের বাইরেও কলকাতায় তার অগুণিত পাঠক ও ভক্ত রয়েছেন, যারা তাঁকে বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে সম্মান করেন। বক্তারা বলেন, কবি আল মাহমুদের ইন্তেকালে দেশ, জাতি আর বাংলা সাহিত্যের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। যা পূরণ হবার নয়। উল্লেখ্য, গত ১৫ ফেব্রুয়ারী, শুক্রবার রাত ১১টা ৫ মিনিটে ঢাকায় ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন। ৮২ বছর বয়সী আল মাহমুদ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ড সিটিস্থ সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা ও টাইম টেলিভিশন-এর বার্তা কক্ষে গত ১৮ ফেব্রুয়ারী, সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় এই দোয়া ও শোকসভার আয়োজন করা হয়। সভায় কবির ইন্তেকালে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে তাঁর বিদেহী আতœার মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া হয়। খবর ইউএনএ’র।
বিজেডব্লিউএ’র সভাপতি ড. শওকত আলীর সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন সাপ্তাহিক আজকাল সম্পাদক মনজুর আহমদ, সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, বিশিষ্ট সাংবাদিক মঈনুদ্দীন নাসের, সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা সম্পাদক ও টাইম টেলিভিশন-এর সিইও এবং বিজেডব্লিউএ’র সেক্রেটারী জেনারেল আবু তাহের, সাপ্তাহিক রানার সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন, মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার ফরহাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের শিক্ষক ড. এটিএম ফকরুদ্দীন, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ, টাইম টেলিভিশন-এর নিউজ প্রেজেন্টার মিজান খন্দকার প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিজেডব্লিউএ’র সহ সভাপতি ড. আবুল কাশেম।
অনুষ্ঠানে মনজুর আহমদ কবি আল মাহমুদের সাথে তার জীবনের নানা স্মৃতি কথা তুলে ধরে বলেন, তাঁর লেখা আমাকে সাংঘাতিকভাবে আলোড়িত করে, উজ্জীবিত করে। তিনি সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, কবি ফররুখ আহমদ-কে খুবই শ্রদ্ধা করতন। তিনি বলেন, মানুষের বিশ্বাস-চেতনা বদলাতেই পরে। কবি কখনো জাসদ বা জামায়াতের রাজনীতি করেননি। তিনি কোন রাজনৈতিক দলের সদস্যও ছিলেন। তিনি তার ধর্মকে ভালোবেসে তার লেখায় নতুন ধারা যুক্ত করেছিলেন। আর কবি আল মাহমুদ যদি সাম্প্রদায়িক হন, তাহলে কবি নজরুল-রবীন্দ্রনাথও সাম্প্রদায়িকতার উর্দ্বে নন। রবীন্দ্র-নজরুলও ধর্ম নিয়ে লিখেছেন। অথচ আমরা যাদের কট্টর মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক হিসেবে জানি তাদের অনেকেই কবি আল মাহমুদকে সম্মান জানিয়েছেন, কেউ কেউ তার কফিন বহন করেছেন। কলকাতার দেশ পত্রিকা’র সাবেক সম্পাদক জয় গোস্বামী কাছে ‘কবি আল মাহমুদের সাথে সাক্ষাৎ তীর্থ দর্শনের মতো’ বলে মন্তব্য করেছেন। সুনীল গঙ্গোপধ্যায়ের মতে- আল মাহমুদ অনেক উঁচু মাপের কবি। তিনি বলেন, আমাদের সঙ্কীর্ণ মানসিকতাই জাতিকে বিভক্ত করছে।
নাজমুল আহসান কবি’র প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, কলকাতার দেশ পত্রিকা’র আল মাহমুদের কবিতা দেখার মাধমেই কবি আল মাহমুদ সম্পর্কে প্রথম জানতে পারি। তার সম্পাদনায় প্রকাশিত দৈনিক গণকন্ঠ’র রাজনৈতিক হেডিং আর সম্পাদকীয় খুবই আলোচিত ছিলো। বাংলা সাহিত্যে আল মাহমুদের কোন প্রতিদ্বন্দ্বি নেই। আরেকটি ‘সোনালী কাবিন’ আর রচিত হবে না। তিনি বাংলা সাহিত্যে যা দিয়েছেন তা শত শত বছর কবি-কে বাঁচিয়ে রাখবে। তার সৃষ্টির জন্য তিনি অজীবন আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। আর রাষ্ট্র সম্মান জানাতে পারেনি, এটা রাষ্ট্রেরই ব্যর্থতা। আর যারা কবির সমালোচনা করছেন তারা ‘ফানুস’।
আবু তাহের তার বক্তব্যে কবি আল মাহমুদের সাথে তার স্মৃতিচারণ করে বলেন, তিনি অনেক অনেক উচু মাপের মানুষ হলেও ব্যক্তি জীবনে অতি সাধারণ মানুষ ছিলেন। তিনি চাইলে অনেক কিছুই করতে পারতেন।
মঈনুদ্দীন নাসের বলেন, ১৯৬৮ সালে একজন পরিণত লেখক হিসেবেই কবি আল মাহমুদ বাংলা একাডেমী পুরষ্কার পান। একটি মহল ১৯৭৫ সালের পরেই তকে ‘জামায়াতী-মৌলবাদী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা কওে, যা সত্য নয়। তিনি কখনো জামায়াতের রাজনীতি করেননি। তিনি সাম্প্রদায়িকতার উর্ধ্বের মানুষ ছিলেন। যারা কবি-কে নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক লেখা-লেখা করছেন তারা তাঁকে না জেনেই এমন করছেন, কবি আল মাহমুদ নয়, তারাই বিভ্রান্ত।
জয়নাল আবেদীন বলেন, কবি আল মাহমুদ-এর বড় পরিচয় তিনি বাংলাদেরে শ্রেষ্ঠ সন্তান। অনেকে যুদ্ধ করেও মুক্তিযোদ্ধা। আর আমরা যুদ্ধ করেও মুক্তিযোদ্ধার সম্মান পাই না। তিনি বলেন, মানুষের চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন হওয়া দোষের কিছু নয়। ‘সোনালী কাবিন’ ইংরেজীতে রচিত হলে কবি আল মাহমুদ নোবেল পুরষ্কার পেতেন বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন এবং কবির চিন্তা-চেতনায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
খন্দকার ফরহাদ বলেন, স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে দৈনিক গণকন্ঠ’র সম্পাদক হিসেবে আল মাহমুদ সাহসিকতার সাথে তৎকালীন সরকারের সমারোচনা করতেন, কড়া ভাষায় সম্পাদকীয় লিখতেন। তিনি সব সময় বাংলাদেশ আর দেশের জনগণের পক্ষে ছিলেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্র তাঁকে সম্মান না জানানো রাষ্ট্রেরই ব্যর্থতা।
ড. এটিএম ফকরুদ্দীন বলেন, কবি আল মাহমুদ অনেক উঁচু মাপের মানুষ হয়েও ছোট-বড় সবাইকে সম্মান দিতেন, তিনি একজন মহৎ মানুষ ছিলেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ কবি আল মাহমুদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তাঁকে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা দু:খজনক। কবির জীবন, চিন্তা-চেতনা, লেখা-লেখি তার ব্যক্তিগণ গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা। তিনি বলেন, কথায় বলে, ‘যে দেশে গুণীর কদর হয় না, সেদেশে নাকি গুনীর জন্ম হয় না’, কথাটি মাথায় রেখেই আমাদের সকল সম্মাণিত ব্যক্তিবর্গকে সম্মান জানানো উচিৎ।
মিজান খন্দকার বলেন, কবি আল মাহমুদ ৭৫-এর আগে এক ধারায় আর ৭৫-এর পরে আরেক ধারায় মানবতার কল্যাণে কাজ করেছেন। কবি চেয়েছিলেন জুম্মার দিন শুক্রবার তার মৃত্যু হোক মৃত্যুর পর শহীদ মিনারে মৃত মানুষের মরদেহ নেয়া বেদাত। সৃষ্টিকর্তা তার ইচ্ছে/প্রত্যাশা পূরণ করেছেন। তাই কবি-কে শহীদ মিনারে নিয়ে শ্রদ্ধা না জানানোর ঘটনা নিয়ে কারো মনে কোন দু:খ বা আক্ষেপ থাকাই শ্রেয়।
সভাপতির বক্তব্যে ড. শওকত আলী বলেন, আল মাহমুদ একমাত্র কবি যিনি বাংলাদেশের কবিদের মধ্যে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর অনেক সম্ভবানা ছিলো। তার মতো মানুষদের সঠিকভাবে মূলায়ন না হওয়া আজ দেশের রাজনীতি, সামাজ আর সাহিত্যাঙ্গণে নানা স্থবিরতা বিরাজ করছে।
ড. আবুল কাশেম বলেন, কবি আল মাহমুদ ছিলেন দুই বাংলার অন্যতম প্রধান কবি। কবি শামসুর রহামান আর কবি আল মাহমুদের সম্পর্ক ছিলো খুব কাছাকাছি। তিনি বাংলা ভাষাভাষী সকল পাঠকের অন্তরের অন্তস্থলেই তার স্থান। কবি-কে জাতি যথাযথ মূল্যায়ন করেনি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

মুক্তিযোদ্ধা-কবিকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সম্মান না জানানো রাষ্ট্রেরই ব্যর্থতা

প্রকাশের সময় : ০১:৪৮:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০১৯

নিউইয়র্ক (ইউএনএ): বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান কবি, রাষ্ট্রীয় পুরস্কার একুশে পদকসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব সাহিত্য পুরস্কারে ভূষিত কবি আল মাহমুদ স্মরণে বাংলাদেশ জার্নালিস্ট এন্ড রাইটার্স এসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকা (বিজেডব্লিউএ) আয়োজিত দোয়া ও শোক সভায় বক্তা কবি-কে দলমতের উর্ধ্বে তাঁকে যথাযথ সম্মান জানানো উচিৎ বলে মন্তব্য করে বলেছেন একাত্তুরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কালীন রণাঙ্গণের একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা-কবি আল মাহমুদকে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সম্মান না জানানো রাষ্ট্রেরই ব্যর্থতা। তবে কবি তার লেখনী আর কর্মগুণে বাংলা ভাষা-ভাষী বিশ্ববাসীর কাছে সম্মানিত থাকবেন। বক্তারা দেশ ও প্রবাসে কবি-কে নিয়ে নানা বিতর্ক সৃষ্ঠির হীন চেষ্টা এবং কোন কোন ব্যক্তি ও বিশেষ মহলের বিরূপ মন্তব্যেরও সমালোচনা করেন। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশের বাইরেও কলকাতায় তার অগুণিত পাঠক ও ভক্ত রয়েছেন, যারা তাঁকে বাংলা ভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি হিসেবে সম্মান করেন। বক্তারা বলেন, কবি আল মাহমুদের ইন্তেকালে দেশ, জাতি আর বাংলা সাহিত্যের অপূরণীয় ক্ষতি হলো। যা পূরণ হবার নয়। উল্লেখ্য, গত ১৫ ফেব্রুয়ারী, শুক্রবার রাত ১১টা ৫ মিনিটে ঢাকায় ধানমন্ডির ইবনে সিনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন। ৮২ বছর বয়সী আল মাহমুদ বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন।
নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ড সিটিস্থ সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা ও টাইম টেলিভিশন-এর বার্তা কক্ষে গত ১৮ ফেব্রুয়ারী, সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় এই দোয়া ও শোকসভার আয়োজন করা হয়। সভায় কবির ইন্তেকালে গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করে তাঁর বিদেহী আতœার মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া হয়। খবর ইউএনএ’র।
বিজেডব্লিউএ’র সভাপতি ড. শওকত আলীর সভাপতিত্বে আয়োজিত অনুষ্ঠানে আলোচনায় অংশ নেন সাপ্তাহিক আজকাল সম্পাদক মনজুর আহমদ, সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, বিশিষ্ট সাংবাদিক মঈনুদ্দীন নাসের, সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা সম্পাদক ও টাইম টেলিভিশন-এর সিইও এবং বিজেডব্লিউএ’র সেক্রেটারী জেনারেল আবু তাহের, সাপ্তাহিক রানার সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধা জয়নাল আবেদীন, মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার ফরহাদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবী বিভাগের শিক্ষক ড. এটিএম ফকরুদ্দীন, নিউইয়র্ক বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ, টাইম টেলিভিশন-এর নিউজ প্রেজেন্টার মিজান খন্দকার প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বিজেডব্লিউএ’র সহ সভাপতি ড. আবুল কাশেম।
অনুষ্ঠানে মনজুর আহমদ কবি আল মাহমুদের সাথে তার জীবনের নানা স্মৃতি কথা তুলে ধরে বলেন, তাঁর লেখা আমাকে সাংঘাতিকভাবে আলোড়িত করে, উজ্জীবিত করে। তিনি সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, কবি ফররুখ আহমদ-কে খুবই শ্রদ্ধা করতন। তিনি বলেন, মানুষের বিশ্বাস-চেতনা বদলাতেই পরে। কবি কখনো জাসদ বা জামায়াতের রাজনীতি করেননি। তিনি কোন রাজনৈতিক দলের সদস্যও ছিলেন। তিনি তার ধর্মকে ভালোবেসে তার লেখায় নতুন ধারা যুক্ত করেছিলেন। আর কবি আল মাহমুদ যদি সাম্প্রদায়িক হন, তাহলে কবি নজরুল-রবীন্দ্রনাথও সাম্প্রদায়িকতার উর্দ্বে নন। রবীন্দ্র-নজরুলও ধর্ম নিয়ে লিখেছেন। অথচ আমরা যাদের কট্টর মুক্তিযুদ্ধের সমর্থক হিসেবে জানি তাদের অনেকেই কবি আল মাহমুদকে সম্মান জানিয়েছেন, কেউ কেউ তার কফিন বহন করেছেন। কলকাতার দেশ পত্রিকা’র সাবেক সম্পাদক জয় গোস্বামী কাছে ‘কবি আল মাহমুদের সাথে সাক্ষাৎ তীর্থ দর্শনের মতো’ বলে মন্তব্য করেছেন। সুনীল গঙ্গোপধ্যায়ের মতে- আল মাহমুদ অনেক উঁচু মাপের কবি। তিনি বলেন, আমাদের সঙ্কীর্ণ মানসিকতাই জাতিকে বিভক্ত করছে।
নাজমুল আহসান কবি’র প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, কলকাতার দেশ পত্রিকা’র আল মাহমুদের কবিতা দেখার মাধমেই কবি আল মাহমুদ সম্পর্কে প্রথম জানতে পারি। তার সম্পাদনায় প্রকাশিত দৈনিক গণকন্ঠ’র রাজনৈতিক হেডিং আর সম্পাদকীয় খুবই আলোচিত ছিলো। বাংলা সাহিত্যে আল মাহমুদের কোন প্রতিদ্বন্দ্বি নেই। আরেকটি ‘সোনালী কাবিন’ আর রচিত হবে না। তিনি বাংলা সাহিত্যে যা দিয়েছেন তা শত শত বছর কবি-কে বাঁচিয়ে রাখবে। তার সৃষ্টির জন্য তিনি অজীবন আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন। আর রাষ্ট্র সম্মান জানাতে পারেনি, এটা রাষ্ট্রেরই ব্যর্থতা। আর যারা কবির সমালোচনা করছেন তারা ‘ফানুস’।
আবু তাহের তার বক্তব্যে কবি আল মাহমুদের সাথে তার স্মৃতিচারণ করে বলেন, তিনি অনেক অনেক উচু মাপের মানুষ হলেও ব্যক্তি জীবনে অতি সাধারণ মানুষ ছিলেন। তিনি চাইলে অনেক কিছুই করতে পারতেন।
মঈনুদ্দীন নাসের বলেন, ১৯৬৮ সালে একজন পরিণত লেখক হিসেবেই কবি আল মাহমুদ বাংলা একাডেমী পুরষ্কার পান। একটি মহল ১৯৭৫ সালের পরেই তকে ‘জামায়াতী-মৌলবাদী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা কওে, যা সত্য নয়। তিনি কখনো জামায়াতের রাজনীতি করেননি। তিনি সাম্প্রদায়িকতার উর্ধ্বের মানুষ ছিলেন। যারা কবি-কে নিয়ে বিভ্রান্তিমূলক লেখা-লেখা করছেন তারা তাঁকে না জেনেই এমন করছেন, কবি আল মাহমুদ নয়, তারাই বিভ্রান্ত।
জয়নাল আবেদীন বলেন, কবি আল মাহমুদ-এর বড় পরিচয় তিনি বাংলাদেরে শ্রেষ্ঠ সন্তান। অনেকে যুদ্ধ করেও মুক্তিযোদ্ধা। আর আমরা যুদ্ধ করেও মুক্তিযোদ্ধার সম্মান পাই না। তিনি বলেন, মানুষের চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন হওয়া দোষের কিছু নয়। ‘সোনালী কাবিন’ ইংরেজীতে রচিত হলে কবি আল মাহমুদ নোবেল পুরষ্কার পেতেন বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন এবং কবির চিন্তা-চেতনায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে বাংলাদেশের অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
খন্দকার ফরহাদ বলেন, স্বাধীনতাপরবর্তী সময়ে দৈনিক গণকন্ঠ’র সম্পাদক হিসেবে আল মাহমুদ সাহসিকতার সাথে তৎকালীন সরকারের সমারোচনা করতেন, কড়া ভাষায় সম্পাদকীয় লিখতেন। তিনি সব সময় বাংলাদেশ আর দেশের জনগণের পক্ষে ছিলেন। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্র তাঁকে সম্মান না জানানো রাষ্ট্রেরই ব্যর্থতা।
ড. এটিএম ফকরুদ্দীন বলেন, কবি আল মাহমুদ অনেক উঁচু মাপের মানুষ হয়েও ছোট-বড় সবাইকে সম্মান দিতেন, তিনি একজন মহৎ মানুষ ছিলেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ কবি আল মাহমুদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তাঁকে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা দু:খজনক। কবির জীবন, চিন্তা-চেতনা, লেখা-লেখি তার ব্যক্তিগণ গণতান্ত্রিক স্বাধীনতা। তিনি বলেন, কথায় বলে, ‘যে দেশে গুণীর কদর হয় না, সেদেশে নাকি গুনীর জন্ম হয় না’, কথাটি মাথায় রেখেই আমাদের সকল সম্মাণিত ব্যক্তিবর্গকে সম্মান জানানো উচিৎ।
মিজান খন্দকার বলেন, কবি আল মাহমুদ ৭৫-এর আগে এক ধারায় আর ৭৫-এর পরে আরেক ধারায় মানবতার কল্যাণে কাজ করেছেন। কবি চেয়েছিলেন জুম্মার দিন শুক্রবার তার মৃত্যু হোক মৃত্যুর পর শহীদ মিনারে মৃত মানুষের মরদেহ নেয়া বেদাত। সৃষ্টিকর্তা তার ইচ্ছে/প্রত্যাশা পূরণ করেছেন। তাই কবি-কে শহীদ মিনারে নিয়ে শ্রদ্ধা না জানানোর ঘটনা নিয়ে কারো মনে কোন দু:খ বা আক্ষেপ থাকাই শ্রেয়।
সভাপতির বক্তব্যে ড. শওকত আলী বলেন, আল মাহমুদ একমাত্র কবি যিনি বাংলাদেশের কবিদের মধ্যে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর অনেক সম্ভবানা ছিলো। তার মতো মানুষদের সঠিকভাবে মূলায়ন না হওয়া আজ দেশের রাজনীতি, সামাজ আর সাহিত্যাঙ্গণে নানা স্থবিরতা বিরাজ করছে।
ড. আবুল কাশেম বলেন, কবি আল মাহমুদ ছিলেন দুই বাংলার অন্যতম প্রধান কবি। কবি শামসুর রহামান আর কবি আল মাহমুদের সম্পর্ক ছিলো খুব কাছাকাছি। তিনি বাংলা ভাষাভাষী সকল পাঠকের অন্তরের অন্তস্থলেই তার স্থান। কবি-কে জাতি যথাযথ মূল্যায়ন করেনি।