মায়ের সঙ্গে ঈদ করা হলো না আলাউদ্দিনের

- প্রকাশের সময় : ০১:১১:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ অগাস্ট ২০১৬
- / ৫২৩ বার পঠিত
চুনারুঘাট (হবিগঞ্জ): মাওলানা আলাউদ্দিন আখঞ্জি ২০১১ সালে সপরিবারে পাড়ি দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। তার অশীতিপর মা থাকতেন চুনারুঘাটের গোছাপাড়া গ্রামে। অসুস্থ মাকে দেখার জন্য ৩১ আগষ্ট দেশে ফেরার কথা ছিল তার। মায়ের সঙ্গেই পবিত্র ঈদুল আজহা পালনের ইচ্ছা ছিল। দুর্বৃত্তের গুলিতে তার মৃত্যুর খবর এখনও জানেন না বৃদ্ধ মা। শনিবার (১৩ আগষ্ট) স্থানীয় সময় বেলা ১টা ৫০ মিনিটে কুইন্সের ওজন পার্কে আল ফুরকান জামে মসজিদের কাছে গুলি করে হত্যা করা হয় ওই আলেম ও তার সহকারীকে। মাওলানা আলাউদ্দিনের মৃত্যুতে চুনারুঘাট উপজেলার আমুরোড বাজার সংলগ্ন গোছাপাড়া গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বজনরা তার মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তার ভাই মাওলানা নাছির উদ্দিন আখঞ্জি মরহুমের লাশ দেশে আনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন।
মাওলানা আলাউদ্দিন চুনারুঘাটের আমুরোড গোছাপাড়া গ্রামের সম্ভ্রান্ত আলেম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তার পিতা মাওলনা শাহ সামছুদ্দিন আখঞ্জি আমুরোড জামে মসজিদের সাবেক খতিব। যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে তিনি হবিগঞ্জের বিশিষ্ট আলেম হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি প্রথমে শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে জামে মসজিদ ও পরে হবিগঞ্জ চৌধুরী বাজার জামে মসজিদের ইমাম ও খতিবের দায়িত্ব পালন করেন। তার মেয়ে জান্নাতুন নাঈম আখঞ্জি ২০১১ সালে তাকে সপরিবারে আমেরিকা নিয়ে যান। সেখানকার কুইন্স ওজনপার্কে অবস্থিত আল ফুরকান জামে মসজিদে তিনি ইমামতি করতেন।
হবিগঞ্জের সাবেক ছাত্রনেতা ও নিউইয়র্ক প্রবাসী আবুল কালাম জানান, আলাউদ্দিন আখঞ্জিকে সবাই ভালোবাসত। তিনি ন্যায়পরায়ণ, সৎ ও নিরীহ ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্র হবিগঞ্জ জেলা সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নোমান বলেন, মাওলানা আলাউদ্দিনের মৃত্যুতে প্রবাসীদের মনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এই হত্যাকান্ডের পর প্রবাসীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ইমাম আলাউদ্দিন আখঞ্জির ভাই টাউন মসজিদের ইমাম মাওলানা নাছির উদ্দিন আখঞ্জি বলেন, তার ভাই অত্যন্ত নিরীহ মানুষ ছিলেন। তিনি কখনো একটা মাছিকেও আঘাত করেননি। তিনি অত্যন্ত ধার্মিক এবং সবার কাছে শ্রদ্ধাভাজন ছিলেন।
হবিগঞ্জ চৌধুরী বাজার জামে মসজিদের বর্তমান খতিব মাওলানা আবদুল মজিদ বলেন, আলাউদ্দিন আখঞ্জি বিদেশে থাকলেও এই মসজিদের মুসল্লিরা সব সময় তাঁকে স্মরণ করতেন। তার মৃত্যুতে এই মসজিদের মুসল্লিরা শোকাহত। মাওলানা আলাউদ্দিন আখঞ্জির ছেলে ফয়েজ উদ্দিন আখঞ্জি বলেন, তার দাদি আমিনা খাতুন খুবই অসুস্থ এবং বৃদ্ধ। মূলত: তাকে দেখা এবং মাকে নিয়ে ঈদ করার কথা ছিল তার।
আমুরোড জামে মসজিদের সভাপতি ও মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমান আজাদ বলেন, তাদের পরিবারের সবাই ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত এবং বিভিন্ন মসজিদে ইমামের দায়িত্ব পালন করছেন।
আলাউদ্দিন আখঞ্জির বড় ছেলে ফয়েজ উদ্দিন জানান, তার দাদি আমিনা খাতুনের বয়স ৮৫ বছর। তিনি এখনও জানেন না তার ছেলে মারা গেছেন।
মাওলানা আলাউদ্দিন মৌলভীবাজারের সিরাজনগর মাদরাসা থেকে টাইটেল পাস করার পর ইসলামের বিভিন্ন শাখায় সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেন। তার বাবা শাহ শামসুদ্দিন আখঞ্জি ছিলেন এলাকার প্রখ্যাত আলেম ও পীর। তাদের বাড়িতে প্রতি বছর উরসসহ বিভিন্ন ইসলামী জলসা হয়। তার বাবার নামে বাড়িতেই রয়েছে ইসলামী একাডেমি ও মাদরাসা।
মাওলানার স্ত্রী মিনারা খাতুন, ছেলে শাহ সাইফুদ্দিন আখঞ্জি, নাইম উদ্দিন আখঞ্জি, তাজউদ্দিন আখঞ্জি, ইমামউদ্দিন আখঞ্জি, মেয়ে জান্নাতুল নাইমা আখঞ্জি ও রিমা আখঞ্জিকে নিয়ে তিনি আমেরিকায় বাস করতেন।
এদিকে ইমাম আলাউদ্দিনের মৃত্যুতে হবিগঞ্জ-৪ সংসদীয় আসনের এমপি অ্যাডভোকেট মাহবুব আলী, উপজেলা চেয়ারম্যান আবু তাহের, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, চুনারুঘাট প্রেস ক্লাব, চুনারুঘাট রিপোর্টার্স ইউনিটিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী শোক প্রকাশ করেছেন। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের হবিগঞ্জ জেলা ও চুনারুঘাট উপজেলা শাখার নেতৃবৃন্দ গভীর শোক প্রকাশ করেছেন তার মৃত্যুতে। (দৈনিক মানবজমিন)