মঙ্গলবার নিউইয়র্ক সিটি নির্বাচন : মূলধারা ও কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের আহ্বান কেন্দ্রে আসুন, ভোট দিন : কনস্টিটিউশনাল কনভেনশন প্রশ্নে ‘না’ ভোট দেয়ার অনুরোধ
- প্রকাশের সময় : ১২:১২:০৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর ২০১৭
- / ৭১১ বার পঠিত
সালাহউদ্দিন আহমেদ: নিউইয়র্ক সিটির স্থানীয় সরকার নির্বাচন মঙ্গলবার ৭ নভেম্বর। এই নির্বাচন নিউইয়র্ক সিটিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এটি নিউইয়র্ক সিটি ১১০তম মেয়র নির্বাচন। মঙ্গলবার মেয়র নির্বাচনের পাশাপাশি সিটি প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ন পাবলিক অ্যাডভোকেট ও কম্পট্রোলার পদ ছাড়াও ৫ বোরোর প্রেসিডেন্ট, ২ জন ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি ও ৫১ জন সিটি কাউন্সিলর পদেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এদিন ভোর ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিতদ হবে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের সাংবিধানিকভাবে নভেম্বর মাসের প্রথম সোমবারের পরের দিন মঙ্গলবার হলো হচ্ছে ‘ইলেকশন ডে’। এদিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন স্থানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই হিসাবে এবারের ‘ইলেকশন ডে’ ৭ নভেম্বর মঙ্গলবার। এই নির্বাচন ঘিরে বাংলাদেশী কমিউনিটি সরব হয়ে উঠেছে। প্রার্থীদের সমর্থনে সভা-সমাবেশ আর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন বাংলাদেশী কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ সহ প্রবাসী বাংলাদেশীরা। খবর ইউএনএ’র।
নিউইয়র্ক সিটির বোর্ড অব ইলেকশন সূত্রে জানা গেছে, এবারে নির্বাচনে মেয়র পদে তিনজন প্রার্থীর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। এরা হলেন ক্ষমতাসীন ডেমোক্র্যাট দলীয় প্রার্থী বর্তমান মেয়র বিল ডি ব্লাজিও, রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী নিকল মাল্লিওতাকিস এবং ইন্ডেপেন্ডেন্ট প্রার্থী রবি ঘোসিন। মেয়র পদে বিল ডি ব্লাজিও দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য লড়ছেন। প্রাথমিক হিসেবে ডেমোক্র্যাট ষ্টেট হিসেবে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ব্লাজিও আবার নির্বাচিত হতে চলেছেন। অপরদিকে সিটি কাউন্সিলের ৫১ আসনের মধ্যে ৪১টিতে বর্তমান পদাধিকারীগণ পুনরায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বাকী ১০টি আসনে বর্তমান পদাধিকারীরা নির্বাচন করছেন না অথবা বাধ্যবাধকতার কারণে নির্বাচন থেকে সড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে, অভতা স্বেচ্ছায় নির্বাচন থেকে সড়ে গিয়েছেন। ফলে হাতেগোনা কয়েকটি পদে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। আর অন্যান্য পদে শুধুই নিয়ম রক্ষার নির্বাচন হবে।
মঙ্গলবারের নির্বাচনে মেয়র সহ সিটি প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদের প্রার্থীদের মধ্যে মেয়র বিল ডি ব¬াজিও, পাবলিক অ্যাডভোকেট লেটিটা জেমস, কম্পট্রোলার স্কট স্টিংগার এবং পাঁচ বোরোর প্রেসিডেন্ট যথাক্রমে কুইন্সের মিলিন্ডা কাটজ, ম্যানহাটনের গেইল ব্রেয়ার, স্ট্যাটেন আইল্যান্ডের জেমস ওডও, ব্রুকলীনের এরিখ অ্যাডামস এবং ব্রঙ্কসে রুবিন ডায়াজ পুননির্বাচন করছেন। এই নির্বাচনে একমাত্র বাংলাদেশী-আমেরিকান প্রার্থী হিসেবে সিটির ডিস্ট্রক্ট-২৪ থেে লড়ছেন বাংলাদেশী মোহাম্মদ টি রহমান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকাল ছয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত সিটির সকল ভোটেকেন্দ্রে টানা ভোটগ্রহণ চলবে। ভোটদাতা কেবল তাঁর নির্দিষ্ট কেন্দ্রেই ভোট দিতে পারবেন। ভোটাররা কোথায় ভোট দেবেন তা নির্বাচন অফিস থেকে মেইলযোগে ইতিমধ্যেই জানিয়ে দেয়া হয়েছে। অনলাইনে ওয়েবসাইটের (ঠিকানা: https://nyc.pollsitelocator.com/search) মাধ্যমেও নির্বাচন, ভোট কেন্দ্র সহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তথ্য জানা যাবে। নির্বাচনে ব্যালট কেমন হবে, তা-ও জানা যাবে ওয়েবসাইটে। অবশ্য প্রার্থীর ভিন্নতার কারণে একেক এলাকার ব্যালট একেক রকম হবে। এ ছাড়াও সিটির লাইব্রেরীগুলো থেকেও ভোটকেন্দ্রের সব তথ্য পাওয়া যাবে। যাঁরা প্রথমবার ভোট দেবেন, তাঁদের জন্য ভোট কেন্দ্রে সাহায্যের জন্য একাধিক সাহায্যকারী থাকবেন। নিয়ম অনুযায়ী পেপার ব্যালটেই ভোট হবে। ব্যালট পেপারের নির্দিষ্ট স্থানটি বুথে রাখা বিশেষ কলম দিয়ে ভরে (গোল) দিয়ে ব্যালট পেপারটি স্ক্যান মেশিনে ঢুকিয়ে দিতে হবে। যারা ইংরেজী ভাষা জানেন না, বা ভালো করে ইরেজী বলতে পারেন তাদের জন্য কেন্দ্রে সাহায্যকারী দোভাষী থাকবেন।
জানা গেছে, নিউইয়র্ক সিটির মোট জনসংখ্যা ৮৬ লাখ। এরমধ্যে ভোটার হচ্ছেন ৫৫ লাখ। এই বিপুল ভোটারদের মধ্যে গড়ে ৫০% ভোটার ভোট দিয়ে থাকেন। সিটির ৫ বরোর মধ্যে সবেচেয়ে বেশী ভোটার হচ্ছেন ব্রুকলীনে বা কিংস কাউন্টিতে। এরপরে ক্রমাগতভাবে অবস্থান করছে কুইন্স, ব্রঙ্কস, ম্যানহাটান ও স্ট্যাাটান আইল্যান্ড বরো। মঙ্গলবারের নির্বাচনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বিষয় হচ্ছে কনসটিটিউশনাল কনভেনশন বিষয়ক প্রপোজিশন।
এদিকে এবারের নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের পাশাপাশি কনস্টিটিউশনাল কনভেনশন বিষয়ে ‘হ্যা’, ‘না’ ভোট দেয়ার সুযোগ থাকবে। মূলধারাসহ কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ এক্ষেত্রে ‘না’ ভোট দেয়ার জন্য ভোটারদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। গত সপ্তাহে জ্যামাইকায় অনুষ্ঠিত পৃথক দুটি নির্বাচনী সভায় ডেমোক্র্যাট দলীয় কাউন্সিলম্যান (পুনরায় প্রার্থী) ড্যানিক মিলার ও কাউন্সিরওম্যান পদপ্রার্থী অ্যাডরিনী অ্যাডামস এবং বাংলাদেশী-আমেরিকান কাউন্সিলম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ টি রহমান কনভেনশন বিষয়ে ‘না’ ভোট দেয়ার জন্য ভোটারদের প্রতি অনুরোধ জানান।
নির্বাচন বিষয়ে অ্যাসাল-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি মাফ মিসবাহউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশী কমিউনিটির সকল ভোটার নির্বাচনের দিন ব্যালট পেপারটির অপর পৃষ্ঠায় উল্লেখিত প্রপোজিশন এক-এ ‘না’ ভোট দেয়ার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন। কেননা, অগ্রসরমান কমিউনিটি হিসেবে সোস্যাল সার্ভিসেস জাতীয় সুযোগ-সুবিধা অক্ষুন্ন অবস্থায় রাখতেই ‘না’ ভোট দেয়া উচিৎ। তা না হলে প্রশাসন কনস্টিটিউশন পরিবর্তন করার ক্ষমতা পাবে। আর এই ক্ষমতা পেলে সোস্যাল সার্ভিসেস জাতীয় সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে আইন করা সহজ হবে। যা মোটেই কাম্য হতে পারে না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
কাউন্সিলম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ টি রহমান কনভেনশন বিষয়ে ‘না’ ভোট দেয়ার জন্য ভোটারদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এখনই সময় আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার। তিনি বলেন, নিউইয়র্ক সিটিতে বিশেষ করে জ্যামাইকায় বাংলাদেশী কমিউনিটি চাইলে সিটি কাউন্সিলে প্রতিনিধি প্রেরণের ক্ষমতা রাখে। এই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে ভোটের বিকল্প নেই। যত বেশী বাংলাদেশী ভোটার ভোট দেবেন তত বেশী প্রশাসনে কমিউনিটি প্রভাব ফেলে অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হতে পারেবেন। তাই সকল ভোটারের উচিৎ হবে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়া।
একইভাবে ভোটারদের ভোট দেয়ার জন্য কেন্দ্রে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন মূলধারার রাজনীতিক মোর্শেদ আলম, মুক্তিযোদ্ধা সরাফ সরকার, ফার্মাসিস্ট আওয়াল সিদ্দিকী, বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক’র ট্রাষ্টি বোর্ডের সদস্য আলী ইমাম, অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন, সোসাইটির সাবেক সহ সভাপতি কাজী আজহারুল হক মিলন, সিনিয়র সহ সভাপতি আব্দুর রহীম হাওলাদার, বাংলাদেশ সোসাইটির কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ আলী, সোসাইটির শিক্ষা ও সাহিত্য সম্পাদক আহসান হাবিব, জেবিবিএ’র সিনিয়র সহ সভাপতি লায়ন শাহ নেওয়াজ, কমিউনিটি বোর্ড-এর ভাইস চেয়ার এভোকেট কমিউনিটি এন মজুমদার, বাংলাদেশী ডেমোক্যাটিক কাউন্সিলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক কবীর চৌধুরী, কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার ড. জাহাঙ্গীর কবীর ও সৈয়দ ইলিয়াস খসরু, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট আজিমুর রহমান বুরহান, আমজাদ হোসেন সেলিম, কাজী আশরাফ হোসেন নয়ন, মজিবর রহমান জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার, ফ্রেন্ডস সোসাইটির সাবেক সভাপতি বিলাল চৌধুরী প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।