ভয়াল ৯/১১ বুধবার
- প্রকাশের সময় : ০৪:৪৬:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯
- / ২৫৬ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: ভয়াল ৯/১১ বুধবার। সভ্যতার ইতিহাসে ভয়াবহ ক্ষত সৃষ্টিকারী ২০০১ সালের ৯/১১ এর ১৭ বছর পূর্ণ হতে চললো। প্রতিবছর এদিন নিউইয়র্কসহ পুরো যুক্তরাষ্ট্রে দিনটি পালনের পাশাপাশি ঐদিন নিহতদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হবে। ২০০১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আমেরিকার অর্থনৈতিক চালিকা শক্তির একমাত্র প্রতীক বলে বিবেচিত ও বিশ্বের সবচে পরিচিত ‘ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে’ আঘাত হানা দুটি যাত্রীবাহি বিমানকে মিসাইল হিসাবে ব্যবহার করে। একই সময়ে আমেরিকার সামরিক শক্তির প্রতীক পেন্টাগনেও একটি বিমানকে ব্যবহার করে ধ্বংস করা হয়। এছাড়াও আরো একটি বিমান লক্ষ্যবস্তুতে আঘাতের পূর্বে পথেই ক্রাশ হয়ে যায়। ঘটনায় সবমিলে প্রাণহানি ঘটে প্রায় তিন হাজার লোকের।
নিউইয়র্ক সিটি প্রশাসনের হিসেবে সেদিনের হামলায় নিহত হন ২হাজার ৭শ ৯৪জন। প্রতিবছর ভাগ্যহত মানুষদের স্মরণে নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে ম্যানহাটানস্থ গ্রাউন্ড জিরোতে শুরু হয় দিনটির মূল আনুষ্ঠানিকতা। সূত্র মতে, সেদিন অন্তত ১০/১৫জন বাংলাদেশী নিহত হন। সরকারি রেকর্ড অনুয়ায়ী নিহতদের তালিকায় রয়েছেন মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া, আবুল কাসেম চৌধুরী, মোহাম্মদ সাদেক আলী, আশফাক আহমেদ, নাভিদ হোসেন, নুরুল হক মিয়া ও শাকিলা ইয়াসমীন দম্পতি, সাব্বির আহমেদ, মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন চৌধুরী এবং ওসমান গনি। সঠিক কাগজপত্রের অভাবে বাংলাদেশীদেরর মধ্যে নিহতরে মধ্যে আরো অনেকেই তালিকার বাইরে থেকে যান বলে ধারণা করা হচ্ছে। নুরুল হক মিয়া ও শাকিলা ইয়াসমীন দম্পতি কাজ করতেন মার্শ এন্ড মেকলেনান কোম্পানীতে। নুরুল হকের বয়স ছিলো ৩৫ আর শাকিলার ২৬। শাকিলা ১৯৯৯ সালে ভার্জিনিয়া কমনওয়েলথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম এমআইএস বিষয়ে ডিগ্রী লাভ করেন। এবং একই সালে এই কোম্পানীতে যোগ দেন তিনি। ঘটনার দিনও কাজ করেছেন স্বামী-স্ত্রী একসাথে। ৩৮ বছর বয়সী মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন চৌধুরী থাকতেন কুইন্সে। তিনি কাজ করতেন সন্ধ্যার শিফটে উইন্ডোজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেস্টুরেন্টে। স্ত্রী ছিলেন প্রেগনেন্ট। ১১ সেপ্টেম্বর বিকেলে ডাক্তারে কাছে এ্যাপয়েন্টমেন্ট ছিলো। তাই শিফট পরিবর্তন করে ঐদিনের জন্যে সকালের শিফটে কাজে আসেন। নিয়তির নির্মম পরিহাস; সন্তানের মুখ আর দেখে যেতে পারলেন না হতভাগা সালাহউদ্দিন চৌধুরী। ঘটনার দু’দিন পর ১৩ সেপ্টেম্বর তার একটি পুত্র সন্তান জন্মলাভ করে। একই প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার এ্যাডমিন হিসেবে কর্মরত ছিলেন মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া। এরকম আরো অনেকেই আছেন যাদের সঠিক তথ্য পাওয়া যায়নি। বলতে গেলে নিহত বাংলাদেশী পরিবারগুলোর খোঁজ এখন আর কেউ রাখছে না। এমন প্রশ্নও উঠে এসেছে সবার মুখে মুখে।
৯/১১-এর ঘটনায় নিহতদের কয়েকজন
উল্লেখ্য, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর, এক চরম নাটকীয় কায়দায় সন্ত্রাসীদের বিমান হামালায় আক্রান্ত হয় নিউইয়র্ক-প্যান্টাগন। ঘটনার পরপরই পুরো বিশ্বের দৃশ্যপট পাল্টে যায়। মুলত: এই আক্রমনটি একই সাথে বিভিন্ন দিক থেকে সংঘটিত করা হয়েছিল। সমালোচকদের মতে, ‘বিশ্বের ইতিহাসে ভয়াবহ এই ঘটনায়কে কেন্দ্র করেই আফগানিস্তান ও ইরাকের বিরুদ্ধে স্বশস্ত্র যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে যুক্তরাষ্ট্র। আমেরিকান প্রশাসন বিষয়টিকে তাদের পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার শক্তি বৃদ্বির অজুহাত হিসাবে ও ব্যবহার করে। তারা এটিকে সেনা, নিরাপত্তা শিল্প, পুলিশি কার্যক্রম, বাজেট বৃদ্বি ও প্রযুক্তিগত বিষয়কে বিপুলভাবে কাজে লাগানোর সুযোগ পায়। পাশাপাশি পুরো বিশ্বকে গোয়েন্দা তথা ইনফরমেশন নজরদারির সুযোগকে কাজে লাগায়। এই আক্রমনটিকে ঘিরে আমেরিকা সীমান্ত এলাকায় সামরীকিকরণ ও অভিবাসী মানুষের উপর বাড়তি নজরদারির শুরু হয়।
এদিকে বরাবরের মতো এবারো সেই ভয়াল ৯/১১ কে স্বরণ করতে বিভিন্ন প্রস্তুতি হাতে নিয়েছে নিউইয়র্ক প্রশাসন। পুরো এলাকাটি ঘিরে নেয়া হচ্ছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। দিনটি উপলক্ষে নিহতদের পরিবারের সদস্যরা আসবেন হারিয়ে যাওয়া প্রিয় মানুষদের শ্রদ্ধা জানাতে।