নিউইয়র্ক ০১:৪২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

ব্রুকলীনে ইমিগ্র্যান্ট গ্রুপের গণ আদালত : আইস-কে দোষী সাব্যস্ত

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৯:০১:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ মে ২০১৮
  • / ৭৫৪ বার পঠিত

হককথা ডেস্ক: নিউইয়র্কের ব্রুকলীনে এ এক ভিন্ন আয়োজন, ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। অভূতপূর্ব দৃশ্য। প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্প প্রশাসনের অভিভাসন বিরোধী ‘গণ আদালত’। এই আদালতে বাংলাদেশী একজন অভিবাসী ‘দোষী’ লেখা একটি প্ল্যাকার্ড হাতে ধরে আছেন। অন্যান্যরা নানা দাবী যুক্ত ব্যানার, ফেস্টুন, প্লাকার্ডও বহন করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের ধরপাকড় ও দেশ থেকে বিতাড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘দেশিজ রাইজিং আপ অ্যান্ড মুভিং (ড্রাম)’ ও ‘জুইশ ফর রেসিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক জাস্টিস (জেএফআরইজে)’-সহ বেশ কয়েকটি স্থানীয় সামাজিক সংগঠন এই গণ-আদালত বসায়। প্রতীকি এই গণ আদালতে যোগ দিয়েছিলেন এমন অনেকেই। মূলত: যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন এন্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)-এর বিরুদ্ধেই এই কর্মসূচি।
ব্রুকলীনের এভিনিউ সি প্লাজায় (চার্চ ম্যাকডোনাল্ড এভিনিউ’র কাছে) গত ২৭ এপ্রিল শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর এ প্রতীকী ‘গণ আদালত’ কর্মসূচির আয়োজন করে ড্রাম নামে একটি সংগঠন। কর্মসূচি চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রে আইস-এর হাতে আটক চার অভিবাসীর নির্মম কারাবাসের বিবরণ তুলে ধরা হয়। এরপর, প্রতীকী বিচারে জনগণের রায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয় আইস-কে। যুক্তরাষ্ট্রে এমন প্রতিবাদ খুব সচরাচর নয়।
আইস অন ট্রায়াল ক্যাম্পেইন’ শীর্ষক এ কর্মসূচির আওতায় ভার্জিনিয়া, হিউস্টন, ডালাস, শিকাগো, লস এঞ্জেলেস, ফিলাডেলফিয়া, বস্টন, সানফ্রান্সিসকো, সিয়াটল, মায়ামি, আটলান্টাসহ নানা স্থানেও গণ-আদালত বসে এবং এসব আদালতে আঞ্চলিক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দোষী সাব্যস্থ করা হয় বলে জানা গেছে।
নিউইয়র্কের প্রতীকি আদালতে আইস তথা ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট’-এর পরিচালক থমাস আর ডেকার ও উপ-পরিচালক স্কট মেকাওয়াস্কিকে অভিযুক্ত করা হয়। এই আদালতে আইসের অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশী মোহাম্মদ ইসলামসহ তিনজন ভুক্তভোগীর অভিযোগ উত্থাপন করা হয়।
গণ আদালতে নোয়াখালীর সন্তান মোহাম্মদ ইসলাম বলেন, ‘দালালকে ৩০ হাজার ডলার দিয়ে ঢাকা থেকে দুবাই-ব্রাজিল-পেরু হয়ে বলিভিয়ায় পৌঁছানোর পর বিভিন্ন দেশের আরও ২০ জনের সাথে মিলিত হই। বলিভিয়া থেকে দুর্গম পথে কলম্বিয়ায়, তারপর নৌকায় ইকুয়েডরে এসে গভীর জঙ্গল পথে পায়ে হেঁটে পানামা সীমান্ত অতিক্রম মেক্সিকো অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সীমান্ত রক্ষীরা গ্রেপ্তার করে ফেলে। পরবর্তীতে আমি অ্যাসাইলাম প্রার্থনা করি। এরপর রাখা হয় ডিটেনশন সেন্টারে। টানা তিন মাস অতিবাহিত হলো ডিটেনশন সেন্টারে। জানি না কবে মুক্তি পাব।’
গণ অদালতে পাঞ্জাবের ‘সুরিন্দার সিংহ-রায়ান সাম্পাত দম্পতি’ও তাদের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন-ব্যবস্থাকে সহজ-সরল মানুষের কাছে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। এজন্যে দায়ীদের গণ-আদালতে বিচার চান এই দম্পতি।
ব্রুকলীনের এই আদালতে প্রতিকী বিচারক ছিলেন নাঈম। দীর্ঘ শুনানী শেষে নাঈম তার মন্তব্যে বলেন, ‘আইসের অমানবিক আচরণ নতুন কিছু নয়। এর সমর্থনে যথেষ্ট তথ্য-উপাত্তও পাওয়া গেছে। আজ আমরা এই গণ-আদালত থেকেও সত্যিকারের মতামত জানতে সক্ষম হলাম। জনতার আদালতই হচ্ছে গণতান্ত্রিক একটি সমাজের সর্বোচ্চ ফোরাম।’ তিনি অসহায় অভিবাসীদের আটকের পর ডিটেনশন সেন্টারে রাখা ও সরকারি অর্থে নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দিতে বার্ষিক ৩ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করে সেই অর্থ স্বল্প আয়ের লোকজনের কল্যাণে ব্যয় করার পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
গণ আদালত পরিচালকদের অন্যতম ‘ডিটেনশন ওয়াচ নেটওয়ার্ক’-এর সাংগঠনিক পরিচালক ডেনি সিন্ডারেজ বলেন, আইস একটি সরকারি সংস্থা হিসেবে গ্রেপ্তারকৃতদের নির্যাতন ও কারো কারো মৃত্যুর দায় এড়াতে পারে না। এ আদালত মনে করছে, আইসের সকল কর্মকান্ড জনসমক্ষে প্রকাশ পাওয়া উচিত। আইসের বর্বরোচিত আচরণ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
ড্রামের নির্বাহী পরিচালক ফাহাদ আহমেদ অভিবাসন বিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার আহ্বান জানান। এছাড়াও গণ আদালতে স্বাক্ষী হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক সোহেল মাহমুদ। (বাংলা পত্রিকা)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

ব্রুকলীনে ইমিগ্র্যান্ট গ্রুপের গণ আদালত : আইস-কে দোষী সাব্যস্ত

প্রকাশের সময় : ০৯:০১:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ মে ২০১৮

হককথা ডেস্ক: নিউইয়র্কের ব্রুকলীনে এ এক ভিন্ন আয়োজন, ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। অভূতপূর্ব দৃশ্য। প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্প প্রশাসনের অভিভাসন বিরোধী ‘গণ আদালত’। এই আদালতে বাংলাদেশী একজন অভিবাসী ‘দোষী’ লেখা একটি প্ল্যাকার্ড হাতে ধরে আছেন। অন্যান্যরা নানা দাবী যুক্ত ব্যানার, ফেস্টুন, প্লাকার্ডও বহন করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের ধরপাকড় ও দেশ থেকে বিতাড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘দেশিজ রাইজিং আপ অ্যান্ড মুভিং (ড্রাম)’ ও ‘জুইশ ফর রেসিয়াল অ্যান্ড ইকোনমিক জাস্টিস (জেএফআরইজে)’-সহ বেশ কয়েকটি স্থানীয় সামাজিক সংগঠন এই গণ-আদালত বসায়। প্রতীকি এই গণ আদালতে যোগ দিয়েছিলেন এমন অনেকেই। মূলত: যুক্তরাষ্ট্রের ইমিগ্রেশন এন্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)-এর বিরুদ্ধেই এই কর্মসূচি।
ব্রুকলীনের এভিনিউ সি প্লাজায় (চার্চ ম্যাকডোনাল্ড এভিনিউ’র কাছে) গত ২৭ এপ্রিল শুক্রবার জুম্মার নামাজের পর এ প্রতীকী ‘গণ আদালত’ কর্মসূচির আয়োজন করে ড্রাম নামে একটি সংগঠন। কর্মসূচি চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রে আইস-এর হাতে আটক চার অভিবাসীর নির্মম কারাবাসের বিবরণ তুলে ধরা হয়। এরপর, প্রতীকী বিচারে জনগণের রায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয় আইস-কে। যুক্তরাষ্ট্রে এমন প্রতিবাদ খুব সচরাচর নয়।
আইস অন ট্রায়াল ক্যাম্পেইন’ শীর্ষক এ কর্মসূচির আওতায় ভার্জিনিয়া, হিউস্টন, ডালাস, শিকাগো, লস এঞ্জেলেস, ফিলাডেলফিয়া, বস্টন, সানফ্রান্সিসকো, সিয়াটল, মায়ামি, আটলান্টাসহ নানা স্থানেও গণ-আদালত বসে এবং এসব আদালতে আঞ্চলিক পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দোষী সাব্যস্থ করা হয় বলে জানা গেছে।
নিউইয়র্কের প্রতীকি আদালতে আইস তথা ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট’-এর পরিচালক থমাস আর ডেকার ও উপ-পরিচালক স্কট মেকাওয়াস্কিকে অভিযুক্ত করা হয়। এই আদালতে আইসের অভিযানে গ্রেপ্তার হওয়া বাংলাদেশী মোহাম্মদ ইসলামসহ তিনজন ভুক্তভোগীর অভিযোগ উত্থাপন করা হয়।
গণ আদালতে নোয়াখালীর সন্তান মোহাম্মদ ইসলাম বলেন, ‘দালালকে ৩০ হাজার ডলার দিয়ে ঢাকা থেকে দুবাই-ব্রাজিল-পেরু হয়ে বলিভিয়ায় পৌঁছানোর পর বিভিন্ন দেশের আরও ২০ জনের সাথে মিলিত হই। বলিভিয়া থেকে দুর্গম পথে কলম্বিয়ায়, তারপর নৌকায় ইকুয়েডরে এসে গভীর জঙ্গল পথে পায়ে হেঁটে পানামা সীমান্ত অতিক্রম মেক্সিকো অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে গিয়েছিলাম। কিন্তু সীমান্ত রক্ষীরা গ্রেপ্তার করে ফেলে। পরবর্তীতে আমি অ্যাসাইলাম প্রার্থনা করি। এরপর রাখা হয় ডিটেনশন সেন্টারে। টানা তিন মাস অতিবাহিত হলো ডিটেনশন সেন্টারে। জানি না কবে মুক্তি পাব।’
গণ অদালতে পাঞ্জাবের ‘সুরিন্দার সিংহ-রায়ান সাম্পাত দম্পতি’ও তাদের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন-ব্যবস্থাকে সহজ-সরল মানুষের কাছে ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। এজন্যে দায়ীদের গণ-আদালতে বিচার চান এই দম্পতি।
ব্রুকলীনের এই আদালতে প্রতিকী বিচারক ছিলেন নাঈম। দীর্ঘ শুনানী শেষে নাঈম তার মন্তব্যে বলেন, ‘আইসের অমানবিক আচরণ নতুন কিছু নয়। এর সমর্থনে যথেষ্ট তথ্য-উপাত্তও পাওয়া গেছে। আজ আমরা এই গণ-আদালত থেকেও সত্যিকারের মতামত জানতে সক্ষম হলাম। জনতার আদালতই হচ্ছে গণতান্ত্রিক একটি সমাজের সর্বোচ্চ ফোরাম।’ তিনি অসহায় অভিবাসীদের আটকের পর ডিটেনশন সেন্টারে রাখা ও সরকারি অর্থে নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দিতে বার্ষিক ৩ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করে সেই অর্থ স্বল্প আয়ের লোকজনের কল্যাণে ব্যয় করার পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান।
গণ আদালত পরিচালকদের অন্যতম ‘ডিটেনশন ওয়াচ নেটওয়ার্ক’-এর সাংগঠনিক পরিচালক ডেনি সিন্ডারেজ বলেন, আইস একটি সরকারি সংস্থা হিসেবে গ্রেপ্তারকৃতদের নির্যাতন ও কারো কারো মৃত্যুর দায় এড়াতে পারে না। এ আদালত মনে করছে, আইসের সকল কর্মকান্ড জনসমক্ষে প্রকাশ পাওয়া উচিত। আইসের বর্বরোচিত আচরণ কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
ড্রামের নির্বাহী পরিচালক ফাহাদ আহমেদ অভিবাসন বিরোধী অভিযানের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার আহ্বান জানান। এছাড়াও গণ আদালতে স্বাক্ষী হিসেবে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক সোহেল মাহমুদ। (বাংলা পত্রিকা)