ব্যতিক্রমী আয়োজনে খলিল বিরিয়ানীর প্রথম বর্ষপূর্তি পালন
- প্রকাশের সময় : ১০:৩৫:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৯
- / ৪৪৪ বার পঠিত
নিউইয়র্ক (ইউএনএ): ব্যতিক্রমী আয়োজনে পালিত হলো নিউইয়র্কে বাংলাদেশী মালিকানাধীন জনপ্রিয় রেষ্টুরেন্ট ‘খলিল বিরিয়ানী ও খলিল হালাল চায়নিজ’-এর প্রথম বর্ষপূর্তি আর ‘কাস্টমাস অ্যাপ্রিসিয়েশন সেরিমনি’। অনুষ্ঠানটি স্মরণীয় করে রাখতে রেষ্টুরেন্টির পক্ষ থেকে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিলো দোয়া মাহফিল, শুভেচ্ছা বিনিময়, এ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড প্রদান, মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং নৈশভোজ। মূলধারার রাজনীতিবিদ সহ কমিউনিটির সর্বস্তরের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ছাড়াও কয়েক’শ প্রবাসী বাংলাদেশী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সিটির ব্রঙ্কসের গোল্ডেন প্যাালেস পার্টি হলে গত ৬ ফেব্রুয়ারী বুধবার সন্ধ্যায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিশেষ আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক সিনেটর ও সিটি কাউন্সিলম্যান রুবিন ডিয়াজ, নিউইয়র্ক ষ্টেট সিনেটর লুইস সেপুলভেদা, নিউইয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের ফাস্ট সেক্রেটারী শামীম হোসেন।
পবিত্র কোরআন তেলওয়াত ও দোয়া মাহফিলের মাধমে অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে দোয়া পরিচালনা করেন বাংলাবাজার জামে মসজিদের ইমাম আবুল কাশেম এয়াহিয়াএ। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মূলধারার রাজনীতিক ও কমিউনিটি বোর্ডের ভাইস চেয়ার এন মজুমদার। পুরো অনুষ্ঠান উপস্থাপনায় ছিলেন আশরাফুল হাসান বুলবুল। খবর ইউএনএ’র।
অনুষ্ঠানে নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলম্যান রুবিন ডিয়াজ ‘খলিল বিরিয়ানী’র প্রশংসা করে বলেন, নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নাগরিকদের অধিকার। বাস্তবতা হলো আমরা নিউইয়র্কে যা খাই তা অনেক ক্ষেত্রেই স্বাস্থ্য সম্মত ও সুস্বাদু না। কিন্তু খলিল বিরিয়ানী এর ব্যতিক্রম। তারা শহরের বাসিন্দাদের দারুন এবং স্বাস্থ্যকর সব খাবার উপহার দিচ্ছেন। এটা আমার এলাকা তাই আমি এই প্রতিষ্ঠান নিয়ে গর্ব বোধ করি এবং খলিল বিরানী খুব শিগগিরই তিন নম্বর স্টোর খুলবে বলে আশা রাখি। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, আমি আগে যখন ষ্টেট সিনেটর ছিলাম তখন বাংলাদেশী কমিউনিটির জন্য তেমন কিছুই করতে পারিনি। কারণ তখন করার মতো তেমন একটা সুযোগ ছিলোনা। কিন্তু সিটি কাউন্সিলের সাহায্য করার মতো যথেষ্ট রিসোর্সেস আছে। কমিনিটিকে সাহায্য করার জন্য সম্ভব সব কিছুই আমরা করবো। বাংলাদেশী কমিউনিটির জন্য আমি আমার সাধ্যের সবটুকু দেবো।
প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছে ‘লুইস ভাই’ হিসেবে পরিচিত ষ্টেট সিনেটর লুইস সেপুলভেদা তার বক্তব্যে বাংলাদেশী কমিউনিটির প্রশংসা করে বলেন, ব্রঙ্কস তথা নিউইয়র্কের বাংলাদেশী কমিউনিটি বন্ধুবৎসল কমিউনিটি। তারা আমার ভাই-বোন। বাংলাদেশীরা নানান পেশায় সফলতার মাধ্যমে কমিউনিটির সেবার পাশাপাশি সিটিকেও সমৃদ্ধ করছেন। তিনি ‘খলিল বিরিয়ানী’রও প্রশংসা করেন।
এরপর কেক কেটে এক বছর পূর্তিকে স্বাগত জানানো হয়। এ সময় শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর লুইস সেপুলভিদা, বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল অফিসের ফাষ্ট সেক্রেটারী শামীম হোসেন। অনুষ্ঠানের মাঝে আরো শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান, বাংলা পত্রিকার সম্পাদক ও টাইম টিভি’র সিইও আবু তাহের, সাপ্তাহিক প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ, সাপ্তাহিক জনতার কন্ঠ সম্পাদক সাখাওয়াত সেলিম, এটর্নী এইচ ব্রুস ফিশার, বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সভাপতি নার্গিস আহমেদ, খানস টিউটোরিয়ালের চেয়ারপার্সন নাঈমা খান, আস্যাল-এর সভাপতি মাফ মিজবাউদ্দিন, স্থানীয় বাংলা বাজার এভিনিউ ব্যবসায়ী এসোাসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ্ব গিয়াস উদ্দিন, নিউইয়র্ক সিটি পাবলিক এ্যাডভোকেট নির্বাচনে প্রার্থী হেলাল শেখ, মূলধারার রাজনীতিক ও কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট আব্দুস শহিদ, কউিনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট কফিল চৌধুরী, দাদা হোম কেয়ারের সুমাইয়া মাহজাবিন, পার্কচেষ্টার কমডোমোনিয়াম বোর্ডের পরিচালক জালাল আহমেদ, পার্কচেষ্টার ব্রঙ্কস রিয়ালটির অন্যতম স্বত্তাধিকারী সালেহ উদ্দিন সাল, বাংলাদেশ স্পোর্টস কাউন্সিল অব আমেরিকার সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট হাসান আলী, মেরী জোবাইদা, মাহবুব আলী, মোজাফফর হোসেন, নাজিম উদ্দিন, শাহেদ আহমেদ, শামীম আহমেদ, গৌরভ কোটারিয়া, এনওয়াইপিডি ট্রাফিক ডিভিশনের অফিসার সৈয়দ উৎবা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বক্তারা খলিল বিরিয়ানী এন্ড হালাল চাইনজি-এর মুখরোচক খাবারের প্রশংসা করে বলেন, খলিল বিরিয়ানীর সুনাম এখন শুধু ব্রঙ্কস বা নিউইয়র্ক শহরেই সীমাবদ্ধ নয়, এর সুনাম যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অঙ্গরাজ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। খলিল বিরিয়ানী ভোজন রশিকদের ব্রঙ্কসে টেনে আনছে। বক্তারা বলেন, ব্রঙ্কস এলাকায় ৫০ থেকে ৬০টি বাংলাদেশী মালিকানাধীন দোকান আছে। আর নিউইয়র্কে তিনশোর মতো বাংলাদেশী রেষ্টুরেন্ট আছে। কিন্তু কাস্টমারদের স্বাস্থ্য সম্মত খাবার পরিবেশন করতে পারেন এমন শেফ (রাঁধুনী) আছে দশ থেকে বারো জন। তাদের মধ্যে খলিলুর রহমান অন্যতম। তিনি সত্যিকারের বাংলাদেশী বিরিয়ানী ও অন্যান্য খাবারের স্বাদ দিচ্ছেন। বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রী খলিলুর রহমানের আমেরিকাতেও রন্ধন শিল্পের ওপর বিশেষ ডিগ্রী রয়েছে। ফলে কাস্টমারদের স্বাস্থ্যকর খাদ্য পরিবেশনে সুস্থতার বিষয়টি তার কাছে সর্বাধিক গুরুত্ব। সেদিকে খেয়াল রেখেই তিনি নিজেই খাবার রান্না ও তদারকি করেন। তাছাড়াও তার রেষ্টুরেন্টটিতে পারিবারিক ছোঁয়াও পাওয়া যায়, কাস্টমাদের সেবায় আন্তরিকতার অভাব নেই। ফলে অনেকে কুইন্স থেকে ব্রঙ্কসে গিয়েও খলিল বিরিয়ানীর স্বাদ গ্রহণ করেন। বক্তারা রেষ্টুরেন্টটির উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে ‘খলিল বিরিয়ানী ও খলিল হালাল চায়নিজ’-এর সফল কর্মচারীদের মধ্যে ১০ জনকে ‘বেষ্ট পারফরমেন্স অ্যাওয়ার্ড’ প্রদান করা হয়। অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্তরা হলেন- আব্দুল জে খান (ম্যানেজার), শাহ আলম, রিয়াজুল ইসলাম, আলাউদ্দিন, ফাহমিদা ইমু, তারিকুল ইসলাম, উজ্জল হোসেন, কামাল হোসেন, নজরুল ইসলাম ও শিল্পী।
অনুষ্ঠানের সবেশেষে ছিলো মনমুগ্ধকর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এই পর্বের প্রথমে ‘মহেশ খালির পানের খিলি তারে বানাই খাবাইতাম’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন বাংলাদেশী অব ফাইন আর্টস (বাফা)-এর এর শিশু শিল্পীরা। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন ‘চ্যানেল আই তারকা খ্যাত’ শিল্পী কৃষ্ণা তিথি, প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পী তানভীর শাহিন এবং ড. তনিমা হাদী প্রমুখ। এছাড়াও সবার অনুরোধে খলিল বিরিয়ানীর স্বত্তাধিকারী খলিলুর রহমান দুটি গানের অংশ বিশেষ গেয়ে শুনান।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্কে বাংলাদেশী মালিকানাধীন কোন রেষ্টুরেন্ট কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে আয়োজিত এমন অনুষ্ঠান এটিই প্রথম। যা কমিউনিটিতে প্রশংসিত হয়। আরো উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানটি সফল করতে গঠিত অনুষ্ঠান আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকার বার্তা সম্পাদক ও বাংলা ট্যুরের সিইও হাবিবুর রহমান। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন বাফা’র প্রেসিডেন্ট ফরিদা ইয়াসমিন ও সাংবাদিক শিবলী চৌধুরী কায়েস। বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যায় প্রতিকূল পরিবেশ উপেক্ষা করে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী সপরিবারে অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন।