দলের বেইমান-মুনাফেকরা ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগকে ক্ষতাচ্যুত করে স্বাধীনতা বিরোধীদের ক্ষমতায় বসিয়েছিলো : বিমান আনতে শর্ত মেনে কাজ চলছে : প্রধানমন্ত্রী
- প্রকাশের সময় : ০৩:৩৮:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮
- / ৮১৩ বার পঠিত
সালাহউদ্দিন আহমেদ: জাতিসংঘের ৭৩তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্ক এসে পৌছেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তিনি নিউজার্সীর লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌছলে বিপুল সংখ্যক দলীয় নেতা-কর্মীরা তাকে স্বাগতম জানান। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ একই দিন সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীকে সংবর্ধিত করেছে। ম্যানহাটানের হোটেল হিলটনের বলরুমে এই সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। সংবর্ধনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের উন্নয়ন-আগ্রগতি আর গণতন্ত্র পূনরুদ্ধারে প্রবাসী বাংলাদেশীদের অব্যাহত অবদানের কথা স্মরণ এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘নিউইয়র্ক-ঢাকা-নিউয়র্ক’ রুটে পুনরায় বিমান চালু করতে যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত মেনে কাজ করা হচ্ছে। সেই সাথে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের অব্যাহত উন্নয়ন-অগ্রগতি আর গণতন্ত্রের ধারা ধরে রাখতে আগামী জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে পুনরায় বিজয়ী করার আহ্বান জানান।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শেখ সেলিম, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ। অনুষ্ঠান মঞ্চে সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ডা. দীপু মনি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি এম ফজলুর রহমান, সহ সভাপতি আকতার হোসেন, সৈয়দ বসারত আলী, মাহবুবুর রহমান, আবুল কাশেম, সামসুদ্দীন আজাদ, লুৎফুল করীম ও ডা. মানিক, সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক নিজাম চৌধুরী ও যুগ্ম সম্পাদক আইরীন পারভীন উপবিষ্ট ছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজদের সঞ্চালনায় পরিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত, গীতা পাঠ আর বাইবেল থেকে পাঠের মধ্য দিয়ে সংবর্ধনা সভা শুরু হয়। এরপর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী শহীদ হাসানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। এরপর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়।
আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতিক নৌকা সামনে রেখে তৈরী বিশেষ মঞ্চে সন্ধ্যা সাড়ে আটটার দিকে সংবর্ধনা সভা শুরু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুরো এক ঘন্টা শত শত প্রবাসী আর দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। তিনি রাত ৯টা ১৭ মিনিটে তার ভাষণ শুরু এবং ঠিক রাত ১০টা ১৭ মিনিটে ভাষণ শেষ করেন। দীর্ঘ যাত্রাপথে লন্ডন থেকে নিউজার্সী হয়ে নিউইয়র্ক পৌছার কয়েক ঘন্টা পড়েই প্রধানমন্ত্রী সংবর্ধনা সভায় যোগ দিলেও তাকে ক্লান্ত বা পরিশ্রন্ত দেখা যায়নি। ছিলেন হাসি-খুশী আর প্রাণবন্ত। সভায় আগত দলীয় নেতা-কর্মীরা বারবার ‘শেখ হাসিনার সরকার, বার বার দরকার’ শ্লোগান তুলে সভাস্থল মুখরিত করে তোলেন। তবে সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের বক্তব্যের সময় দলীয় নেতা-কর্মীদের একটি অংশ হৈচৈ করে। এই হৈচৈ-এর মধ্যেই তিনি সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন এবং প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতিকে ভাষণ দেয়ার আমন্ত্রণ জানান।
সংবর্ধনা সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষনের শুরুতেই ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, মহান মুক্তিযুদ্ধের সকল শহীদ, জাতীয় চার নেতা আর ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলায় নিহতদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে বলেন, আমার রাজনীতি জনগণের সেবার রাজনীতি। ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছ থেকেই এই রাজনীতি শিখেছি। আওয়ামী লীগ জনগণের দল। আর ওদের রাজনীতি জনগণ ও এতিমদের অর্থ লুটপাটের রাজনীতি। ওরা স্বাধীনতা বিরোধী। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ দলীয় বেইমান-মুনাফেকদের ষড়যন্ত্রের কারণেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যার শিকার হতে হয়, পচাত্তুরে ক্ষমতা হারাতে হয়। বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করতেই সপরিবারে তাকে হত্যা করা হয়। কিন্তু ভাগ্যক্রমে বিদেশে থাকায় আমরা দুই বোন বেঁচে যাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে দলীয় নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মওলানা ভাসানী আর জননেতা শামসুল হকের নেতৃত্বে ১৯৪৯ সালের আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন রয়েছে। তার ১৯৪৮-১৯৫০ সালের রাজনৈতিক ইতিহাস নিয়ে ১৪ খন্ডের বই প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী সহ বিভিন্ন নেতার কাছে লেখা চিঠি স্থান পাবে। যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস বেরিয়ে আসবে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের সঠিক ইতিহাস ছাড়া বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়া যাবে না। তিনি বলেন, ঢাকার রোজ গার্ডেন আমরা ক্রয় করেছি। যেখানে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এই রোজ গার্ডেন-কে ‘ঢাকা মিউজিয়াম’-এ পরিণত করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আদর্শের রাজনীতি করি। জনগণের রাজনীতি করি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ দেশকে ভালোবাসা। অথচ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেই খুনীরা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ পাশের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার বনদ্ধ করেছিলো। তারা খুনীদের বিদেশে পাঠিয়ে চাকুরীও দিয়েছিলো। দলের বেইমান-মুনাফেকরা ষড়যন্ত্র করে আওয়ামী লীগকে ক্ষতাচ্যুত করে স্বাধীনতা বিরোধীদের ক্ষমতায় বসিয়েছিলো। খুনি মোস্তাক জিয়াকে সেনা প্রধান করেছিলো। আর জিয়া-এরশাদ-খালেদা ভোট কারচুপি করে ক্ষমতায় বসেছিলো।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবেগ-আপ্লুত কন্ঠে বলেন, মা-বাবা, ভাই হারিয়ে যখন দেশে ফিরেছি তখন একদিকে খুনীদের আরেক দিকে স্বাধীনতা বিরোধীদের দেখেছি। পদে পদে সমস্যা মোকাবেলা করেছি। তিনি বলেন, দেশে ফিরে কখনো হেটে, কখনো রিক্সায় গ্রামের পর গ্রাম ঘুরেছি। জনগণের অভাব দেখেছি, সেই থেকেই জনগণের সেবায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই। ২১ বছর পর আওয়ামী লীগকে রাষ্ট্রক্ষমতায় আনায় তিনি দেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার ফলে ইনডেমনিটি আধ্যাদেশ বাতিল হয়েছে, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হয়েছে, জেলহত্যার বিচার হয়েছে, স্বাধীনতা বিরোধীদের ফাঁসি হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের ১৬ কোটি মানুষ নিয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের ফলে বাংলাদেশ আজ খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ, বিদ্যুৎ সহ সকল ক্ষেত্রেই সাফল্য অর্জন করেছে। বিশ্ব ব্যংকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আমরা পদ্মা সেতু তৈরী করছি। বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল বাংলাদেশে পরিণত হয়েছে। প্রবাসীরা অর্থ দিয়ে দেশকে সমৃদ্ধ করছেন। সবমিলিয়ে সত্যিই বাংলাদেশের দিন বদল হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’ পাসের কথা উল্লেখ করে বলেন, নিরাপত্তার জন্যই এই আইন পাশ করা হয়েছে। অথচ সাংবাদিকরা শুধু তাদের স্বার্থের কথাই ভাবছেন। প্রসঙ্গত তিনি সাম্প্রতিক সময়ের কোটা আর স্কুল ছাত্রদের প্রতিবাদ বিক্ষোভের কথাও তুলে ধরেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ‘জাতীয় ঐক্য’ মঞ্চের সমালোচনা করে বলেন, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কথা বলার লোক দরকার, রাজনৈতিক দল দরকার। তাই তারা ঐক্যমঞ্চ গঠন করেছে। তিনি বলেন, আমার চাচা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে নতুন জোট হয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগ করতেন। তারপর অন্য দল গঠন করে তা নিয়ে চলতে না পারায় অন্যদের সাথে নিয়েছেন। তারা কারা। তারা দূর্নীতিবাজ, সুদখোর, ঘুষখোর, অসৎ। তিনি বলেন, জনগণ আর এতিমের অর্থ আতœসাৎকারী মা-ছেলে তাদের সমর্থন দিচ্ছে। আরেকজন গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থ লুটপাটের জন্য এমডির পদ ছাড়তে চাননি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জয়কে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিলো। সেই ষড়যন্ত্রে মাহমুদুর রহমান, শফিক রেহমানরা জড়িত ছিলো। আর মূল ষড়যন্ত্রকারী যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআইর কাছে ধরা খেয়ে সাজা খেটেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেথ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে আছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকতে না পাড়লে তারা দেশটাকে ধ্বংস করে ফেলবে। সারা বিশ্ব আমাদের সাথে। তাই বাংলাদেশের উন্নয়ন-আগ্রগতি আর গণতন্ত্র ধরে রাখতে তিনি আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে জয়ী করার উদাত্ব আহ্বান জানিয়ে বলেন, আওয়ামী লীগ জয়ী হলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের স্বাগত সমাবেশ: এদিকে প্রধানমমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার দুপুরে নিউইয়র্কের পার্শ্ববর্তী অঙ্গরাজ্য নিউজার্সীর লিবার্টি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌছলেন ভিআইপি লাউঞ্চে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জিয়াউদ্দিন আহমেদ ও জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন প্রধানমন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এরপর প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দর ত্যাগের সময় হাত নেড়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছার জবাব দেন। এদিকে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদের নেতৃত্বে দলীয় এবং বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিমানবন্দরের সমবেত হন। এসময় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কাউন্সিল দাবীদার একটি অংশের নেতা-কর্মীরাও প্রধানমন্ত্রীতে স্বাগত জানাতে বিমানবন্দরে সমবেত হন। সমাবেশকারীরা দলীয় ব্যানার নিয়ে এতে অংশ নিয়ে নানা শ্লোগোনে বিমাবনবন্দর এলাকা মুখরিত করে তোলেন।