বিদায় হৃদয়-নাঈম ॥ ব্রুকলীনে জানাজায় মানুষের ঢল
- প্রকাশের সময় : ০৬:৪৬:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৫ জুন ২০১৮
- / ৮৪২ বার পঠিত
শিবলী চৌধুরী কায়েস: স্বপ্নের দেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে অসহায় মৃত্যুবরণকারী নাইমুল ইসলাম হৃদয়ের ও শাহাদাত হোসেন নাঈমকে নিউইয়র্ক থেকে শেষ বিদায় জানানো হয়েছে। রোববার ব্রুলীনের বাংলাদেশ-মুসলিম সেন্টারে ‘অকালে ঝরে যাওয়া এ দুই তরুণের নামাজের জানাজায় নামে মানুষের ঢল। যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তবর্তী নদীতে ভেসে উঠা ‘নাঈম-হৃদয়ের’ মরদেহ মাতৃভূমিতে পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছে প্রবাসের অন্যতম শীর্ষ আঞ্চলীক সংগঠন বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটি ইউএসএ ইনক। স্বপ্ন পূরণের রথে-চড়া এ দুই বাংলাদেশীর অপ্রত্যাশিত মৃত্যুতে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন-প্রবাসীরা। তাদের দাবী, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ ধরণের জীবন-ঝুঁকির পথ যাতে আরো কেউ বেছে না নেয়। স্বপ্নের দেশ আমেরিকায় পাড়ি জমাতে এসে হতাভাগা দুই বাংলাদেশীর করুণ মৃত্যুর খবর আগেই জানা ছিল। ব্রুকলীনের চার্চ ম্যাকডোনাল্ডসে অবস্থিত ‘বাংলাদেশ-মুসলিম সেন্টারে’ বাংলাদেশীদের উপস্থিতি তার বড় প্রমাণ। স্বদেশী এই দুই তরুণকে শেষ বিদায় জানাতেই নির্ধারিত স্থানে হাজির হন শত শত প্রবাসীরা।
মরদেহবাহি কফিন যখন মুসলিম সেন্টারে এসে পৌঁছায় তখন, উপস্থিত বাংলাদেশীদের মাঝে নেমে আসে পিনপতন নীরবতা। এ দু’জনের জানাজা ঘিরে ছিল মানবাধিকার সংগঠন, নিউইয়র্কে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিক’সহ ব্রুকলীন কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষ।
গত মে মাসের শুরুর দিকে ‘টেক্সাস-মেক্সিকো’ সীমান্তবর্র্তী রিও-রিভারে ডুবে প্রাণ হারান, বৃহত্তর নোয়াখালীর সন্তান ও টগবগে তরুণ ‘নাইমুল ইসলাম হৃদয়’ এবং ‘শাহাদাত হোসেন নাঈম। যদিও নদীতে ভেসে উঠে হতভাগা এ দুই তরুণের গলিত লাশ দেখার সুযোগ ছিল না কারোর।
জানাজা পূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে অকালে ঝরে যাওয়া এ দুই বাংলাদেশী তরুণের লাশের অবস্থা বর্ণনা করেন সংশ্লিষ্টরা। এরপর সারিবদ্ধ ভাবে নামাজের জানাজায় অংশ নেন সবাই। এর আগেও গেল বছর পানামা খালে পড়ে নিহত হয়েছিল আরমান নামের এক বাংলাদেশী তরুণ। সেই হতভাগার দলে এবার যোগ হলো আরো দু’জন। নিইউয়র্ক ভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন ড্রামের সহায়তায় এদের মরদেহ পরিবারের কাছে পাঠানোর উদ্যোগ নেয় নোয়াখালী সোসাইটি।
হতাভাগ্য তরুণদ্বয়ের করুণ মৃত্যু কোনভাবে মেনে নিতে পারছে না বাংলাদেশী কমিউনিটি। যদিও এ তালিকায় রয়েছে নাম না জানা আরো অংসখ্য বাংলাদেশী। এদের মধ্যে অতীতে আমেরিকাতে প্রবেশ করতে পেরেছেন, এমন একজন হচ্ছেন আশরাফুল হাসান। যিনি তার দীর্ঘ সীমান্ত পথযাত্রার তীক্ত অভিজ্ঞতার কথা এ ভাবেই তুলে ধরেন।
এর আগে, শনিবার রাতে বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির উদ্যোগে টেক্সাস থেকে হৃদয় ও নাঈমে’র মরদেহ নিউইয়র্কে আনা হয়। রোববার জানাজা শেষে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে বৈঠকে বসেন সংশ্লিষ্টরা। প্রবাসের অন্যতম ও প্রতিষ্ঠিত এ আঞ্চলিক সংগঠনটির নিজস্ব ভবনে অনুষ্ঠিত এ সভায় দু’জনের মরদেহ দেশে পাঠানোর সবশেষ অবস্থা তুলে ধরেন, সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ মিন্টু।
তাদের লাশ দেশে পাঠানোর মানবিক উদ্যোগ নেয়ায় এর সাথে সম্পৃক্ততের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন, ড্রামের প্রতিনিধিরা। সংগ্রহকৃত অর্থে তাদের লাশ দেশে পাঠানো সহ’ যাবতীয় আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হলেও; আর্থিকভাবে স্বচ্ছল থাকায় কোন সহায়তা নিচ্ছে না নাঈমের পরিবার। এমনটি জানান, তারই যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী চাচা মামুন।
জানা গেছে, স্বপ্নের দেশের সীমান্ত অতিক্রম করতে গিয়ে মৃত্যু বরণ করা ‘নাইমুল ইসলাম হৃদয়ের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে। আর ‘শাহাদাত হোসেন নাঈমের’ বাড়ি ফেনির সোনাইমুড়ি উপজেলার দেউটি ইউনিয়নে। ‘নাঈম ও হৃদয়’এর মতো আর যাতে কাউকে এভাবে ঝরে পড়তে না হয় সে বিষয়ে পরিবার থেকে শুরু করে সবাইকে আরো সচেতন হওয়ার তাগিদ দিয়েছে বাংলাদেশী কমিউনিটি।