বাংলাদেশ সোসাইটির গচ্চা ৬০ হাজার ডলার

- প্রকাশের সময় : ০২:৫১:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ অক্টোবর ২০১৮
- / ৬০৬ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক’র রোববারের (২১ অক্টোবর) দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনের উপর আদলত স্থগিতাদেশ জারি করেছে। ফলে ২১ অক্টোবর রোববারের নির্বাচন হলো না। মামলার পরবর্তী তারিখ পড়েছে ৩০ অক্টোবর মঙ্গলবার। এদিন নির্বাচন বিষয়ে ভাগ্য নির্ধারণ হতে পারে। তবে নির্বাচন হবে কি হবে না তা নিয়ে কমিউনিটিতে নানা শংকা বিরাজ করছে। পাশাপাশি কমিউনিটিতে প্রশ্ন উঠেছে নির্বাচন ঘিরে ইতিমধ্যেই ব্যয় হওয়ার সোসাইটির বিপুল অর্থের দায়ভার কার। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে নির্বাচন স্থগিত হওয়ার কারণে ইতিমধ্যেই সোসাইটির লক্ষাধিক ডলার গচ্চা গুনতে হবে।
এদিকে সোসাইটির নির্বাচন স্থগিত হওয়ার কারণে নির্বাচনের দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি ‘রব-রুহুল’ ও ‘প্যানেল তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। প্যানেল দুটি একে অপরকে দায়ী করে সভা-সমাবেশ করছে। অপরদিকে বাংলাদেশ সোসাইটির কার্যকরী পরিষদ ও নির্বাচন কমিশন সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করে বলেছেন যে, সোসাইটির গঠনতন্ত্র ও বাইলজ অনুযায়ী নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও গঠনতন্ত্র মোতাবেক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এখানে নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছ, স্বাধীন ও পক্ষপাতহীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করেছে, ভবিষ্যতেও করবে।
বাংলাদেশ সোসাইটির এবারের নির্বাচনে ‘নয়ন-আলী’ প্যানেলের দুজন সদস্য প্রার্থীর মনোনয়ন নির্বাচন কমিশন কর্তৃক বাতিল হওয়ার প্রেক্ষিতে তাদের মনোনয়ন বৈধতা এবং অপর একটি প্যানেলের সিনিয়র সহ সভাপতির মনোনয়নপত্র বাতিলের দাবীতে রোববারের নির্বাচনের উপর স্থগিতাদেশ জারি জন্য সংশ্লিটরা বৃহস্পতিবার (১৮ অক্টোবর) আদালতের স্মরণাপন্ন হন বলে জানা গেছে। নির্বাচন কমিশন ও বাংলাদেশ সোসাইটি’র কর্মকর্তারা মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এদিকে শুক্রবার (১৯ অক্টোবর) এই মামলার বিরুদ্ধে আপীল ফলে আদালত ৩০ অক্টোবর মঙ্গলবার মামলার নতুন তারিখ ধার্য করেছেন। এদিকে সোসাইটির নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় কমিউনিটিতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সচেতন প্রবাসীরা সোসাইটি নিয়ে মামলা-মোকদ্দার বিষয়টি ভালো চোখে দেখছেন না এবং এতে সোসাইটি বড় অংকের বারতি খরচের সম্মুখীন হতে যাচ্ছে। অপরদিকে শুক্রবার ব্রুকলীনে অনুষ্ঠিত‘রব-রুহুল’ প্যানেলের এক সভায় বক্তারা মামলাবাজদের সোসাইটি থেকে বহিষ্কার সহ সামাজিকভাবে বয়কটের দাবী জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সোসাইটির রোববারের নির্বাচনে দু’টি প্যানেল সহ কার্যকরী পরিষদের ১৯টি পদে ৩৮জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নিউইয়র্কের ৫টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের কথা। এজন্য নির্বাচন কমিশন সকল প্রস্ততিও ছিলো।
সোসাইটির নির্বাচন বিষয়ে প্রথম আদালতের স্মরণপন্ন হন সোসাইটির সাবেক কর্মকর্তা ওসমান চৌধুরী। তিনি গত কুইন্স সুপ্রীম কোর্টে একটি মামলা করেন (ইনডেক্স নং ৭৮৫০/২০১৮। ওসমান চৌধুরীর মামলা নিষ্পত্তি হতে না হতেই বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক ও নির্বাচন কমিশনের প্রধান এস এম জামাল ইউ আহমেদ এবং সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ-কে বিবাদী করে গত ১৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার কুইন্স সুপ্রীম কোর্টে মামলা করেন (ইনডেক্স নং ৭৮০৭/২০১৮) আলী আকবর, জিআর চৌধুলী ও শফিকুল ইসলাম নামের তিন সদস্য। এদের মধ্যে দুজন ‘নয়ন-আলী’ প্যানেলের সদস্য প্রার্থী ছিলেন, ত্রুটির কারণে যাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছিলো।
সোসাইটির নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় ইতিমধ্যেই সোসাইটির ফান্ড থেকে ৬০ হাজার ডলারের মতো ব্যয় হয়ে গেছে। এই তথ্য জানিয়েছেন সোসাইটির সভাপতি কামাল আহমেদ ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার জামাল ইউ আহমেদ জনি।
‘রব-রহুল’ প্যানেলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক আজিমুর রহমান বুরহান জানান, নির্বাচনের দুদিন আগে পরিকল্পিতভাবে নির্বাচন বন্ধ করতেই আদালতের আশ্রয় নেয়া হয়েছে। তারা ‘রব-রহুল’ প্যানেলের বিজয় দেখেই মামলার আশ্রয় নিয়েছে। তিনি বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের সকল প্রস্তুতি ছিলো এবং এজন্য ইতিমধ্যেই বিপুল অর্থও ব্যয় হয়েছে।
অপরদিকে ‘নয়ন-আলী’ প্যানেলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান আবু নাসের জানান, তাদের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা সহ বিভিন্ন নির্বাচনী খাতে ইতিমধ্যেই লক্ষাধিক ডলার ব্যয় হয়েছে। সর্বশেষ গত সপ্তাহে ভোটারদের কাছে ফাস্ট ক্লাস মেইলে চিঠি পাঠানো বাবদ প্রায় ৩০ হাজার ডলার ব্যয় হয়েছে। তিনি বলেন, আমরা ‘নয়ন-আলী’ প্যানেল নির্বাচন করার সকল প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। নির্বাচনী মামলার বিষয়ে ‘নয়ন-আলী’ প্যানেল জড়িত নয়।
সোসাইটির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অপর সভাপতি পদপ্রার্থী জয়নাল আবেদীন এক প্রতিবাদ সভায় মামলাবাজ ও তাদের দোষরদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ এবং প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য আহাবান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ঐ মহলটি আমার বিজয় ও তাদের ভড়াডুবি ঠেকাতে মামলার আশ্রয় নিয়েছে।
অপরদিকে সোসাইটির নির্বাচনে ভোটার তালিকায় নাম উঠেছে এমন অনেকে অভিযোগ করে বলেছেন যে, তাদের অনুমতি ও স্বাক্ষর ছাড়াই একটি প্যানেলের পক্ষ থেকে তাদের ভোটার করেছে। চিঠির মাধ্যমে তারা ভোটার হয়েছেন বলে জানতে পেরেছেন। বিষয়টির সুষ্ঠু সুরাহ না হলে তারাও আদালতে প্রতারণার মামলা করতে পারেণ বলে আভাস দিয়েছেন। এছাড়াও একাধিক ভোটার নির্বাচন নিয়ে মামলার ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছেন সোসাইটি নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার নেতৃবৃন্দের নেই। সোসাইটির ইতিহাসে এতো বিপুল সংখ্যক ভোটারের অংশগ্রহণ কমিউনিটিতে উৎসবের আমেজ তৈরী করেছিলো। কিন্তু একটি মামলার কারণে তা স্থগিত হয়ে গেলো।(বাংলা পত্রিকা)