নিউইয়র্ক ০১:২৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

বাংলাদেশ সোসাইটিকে সর্বজনীন করতে গঠনতন্ত্রের সংস্কার প্রয়োজন

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১০:৫২:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ অক্টোবর ২০১৮
  • / ৪৫২ বার পঠিত

নিউইয়র্ক (ইউএনএ): যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের ‘আমব্রেলা সংগঠন’ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক-কে সকল প্রবাসী বাংলাদেশীদের কল্যাণকর ও সর্বজনীন সংগঠনে পরিণত করতে হলে এর গঠনতন্ত্রের আমূল সংস্কারের পাশাপাশি সদস্য/ভোটার হওয়ার প্রক্রিয়াও পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন সোসাইটির সাবেক তিন কর্মকর্তা। তারা বলেছেন, সেই সাথে কারো পকেটের অর্থে নয় বরং নিজের অর্থে স্ব স্ব উদ্যোগেই প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভোটার হওয়া উচিৎ। তা নাহলে সোসাইটির মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে না, সোসাইটির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে না, সোসাইটি সর্বজনীন সংগঠনে পরিণত হবে না।
বাংলাদেশ সোসাইটি’র আসন্ন কার্যকরী পরিষদ নির্বাচন-২০১৮ ঘিরে নিউইয়র্কের টাইম টেলিভিশন আয়োজিত ‘টাইম ডিবেট’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সোসাইটির সাবেক সভাপতি ডা. ওয়াদুদ এ খান (ডিডিএস), সাবেক সভাপতি নার্গিস আহমেদ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন উপরোক্ত কথা বলেন। গত ১৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টাইম টেলিভিশন-এর নিজস্ব স্টুডিও-তে আয়োজিত ও সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানের প্যানেলে ছিলেন সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান ও সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান। সঞ্চালনায় ছিলেন বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক ও টাইম টেলিভিশন-এর সিইও আবু তাহের। খবর ইউএনএ’র।
ডিবেট অনুষ্ঠানের আলোচনায় সোসাইটির অতীত-বর্তমান, সোসাইটির সর্বজনীনতা, বোর্ড অব ট্রাষ্টি গঠন প্রক্রিয়া, অর্থের বিনিময়ে সদস্য/ভোটার তৈরী ও নেতা হওয়ার প্রবণতা, মামলা-মোকদ্দমা, নতুন প্রজন্মের সোসাইটিতে অংশগ্রহণ প্রভৃতি বিষয় উঠে আসে।
ডা. ওয়াজেদ এ খানের প্রশ্নের উত্তরে সোসাইটির বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক মামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন এবং বৃহত্তর স্বার্থে আদালত নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে রায় দেবেন প্রত্যাশা করে বলেন, সোসাইটির ইতিহাসে ২২জন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনীতি/নির্বাচিত হয়েছেন। এদের মধ্যে একমাত্র নারী সভাপতি নার্গিস আহমেদ। সোসাইটির ৪৩ বছরের ইতিহাসে যে নেতৃত্ব, বিস্তৃত, কমিউনিটির প্রসার, বাংলাদেশ ভবন হওয়ার কথা ছিলো সবমিলিয়ে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি প্রসঙ্গে ডা. ওয়াদুদ ভূইয়া বলেন, ১৯৭৫ সালে সোসাইাটর জন্ম হয়। আর বাংলাদেশের জন্ম মাত্র ৫ বছর। তখন আমেরিকায় বাংলাদেশের চেয়ে পাকিস্তানের লোকই বেশী ছিলো। সোসাইটির উদ্দেশ্য ছিলো আমেরিকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশীদের ঐক্যবদ্ধ করা। দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিলো দেশীয় কালচার আর ফ্যামিলি ভ্যালু প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া। তিনি বলেন, আমি ১৯৮২ সালে সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন সোসাইটির সদস্য ছিলো ৪ শতাধিক। আজ ২৭ হাজারের উপর। আমাদের করণীয় অনেক, পাওয়ারও সুযোগ রয়েছে। আমাদের সময়ের সোসাইটি এখন আর নেই। যা করতে পারিনি সবাইকে তার দায়-দায়িত্ব নিতে হবে। শুধু সোসাইটির নেতৃত্বের দোষ নয়। তিনি বলেন, আমাদের সময় সবাই স্বতফূর্তভাবে সোসাইটির অনুষ্ঠানে বিশেষ করে ২১ ফেব্রুয়ারী, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস প্রভৃতি অনুষ্ঠানে আসতো। মিলনমেলা হতো, গেট টুগেদার হতো, ভাব বিনিময় হতো। আর এখন নির্বাচনের পর অনেকেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। আশা করছি নতুন নেতৃত্ব প্রত্যাশা পূরণ করবে।
নাজমুল আহসানের প্রশ্নের জবাবে ডা. ওয়াদুদ ভূঁইয়া বলেন, আমরা সোসাইটিতে বিভাজন চাইনি। তখন লীগ অব আমেরিকা ছিলো। সেটা নিয়ে এক সংগঠন করতে চেয়েছিলাম। ‘মাদার সংগঠন’ বা ‘আমব্রেলা’ সংগঠন বলা ঠিক নয়। কেননা, সবার আলাদা সংগঠন রয়েছে। সোসাইটিকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা উচিৎ।
নাজমুল আহসানের অপর প্রশ্নের জবাবে নার্গিস আহমেদ বলেন, সোসাইটির স্থবিরতা কাটিয়ে আনতেই আমাকে দায়িত্ব নিতে হয়েছিলো। আমাদের সময় জয়নাল আবেদীন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আমরা বাংলা স্কুল, কম্পিউটার স্কুল চালু করেছিলাম। সকল আঞ্চলিক সংগঠন নিয়ে জাতীয় দিবস পালন করেছি। যা ইতিপূর্বে সোসাইপির ইতিহাসে হয়নি। এছাড়াও রাস্তায় দাঁড়িয়ে অর্থ সংগ্রহ করেছি। দায়িত্ব নেয়ার সময় আমাদেরকে ব্যাংক একাউন্টও বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। জিরো হাতে সোসাইটির দায়িত্ব পালন শুরু করতে হয়েছে। অথচ বিদায়কালে সোসাইটির ফান্ডে ২১৬ হাজার ডলার জমা রেখে এসেছি। অথচ নতুন সভাপতি মিডিয়াকে সাক্ষাৎকারে বললেন, বিদায়ী কমিটি চাবি ছাড়া কিছুই দিয়ে যাননি। যে সভাপতি এমন মিথ্যা করা বলতে পারেন সেখানে তো যাওয়ার পরিবেশ থাকে না। আর যখন পরিবেশ ছিলো তখন আমাদের সন্তানরা সোসাইটিতে আসতো। তিনি বলেন, আমাদের সময় ১৪/১৫ হাজার সদস্য ছিলো। যেকোন বাংলাদেশী সোসাইটির সদস্য হওয়ার সুযোগ আছে বলেই বাংলাদেশ সোসাইটি ‘মাদার সংগঠন’।
নার্গিস আহমেদ বলেন, দুই বছর কাজ করে প্রমাণ করেছি কমিউনিটির সবাইকে নিয়ে কাজ করা যায়। আমরা সোসাইটির প্রয়োজন মিটাতে কাজ করার পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষের প্রয়োজনেও কাজ করেছি। তিনি ২০১৯ সালের ফোবানা সম্মেলনে সবাইকে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান।
ডা. ওয়াজেদ এ খানের অপর প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, সোসাইটির আগের প্রেক্ষাপট আর বর্তমান প্রেক্ষাপট এক নয়। আগের কর্মকান্ড ও কার্যক্রমের সাথে বর্তমান কর্মকান্ড ও কার্যক্রম পাল্টে গেছে। তিনি বলেন, সোসাইটির প্রতিষ্ঠা সময়োপযোগী ছিলো। কমিউনিটির প্রয়োজনেই বাংলাদেশী ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ফার্মাসিস্টরা সোসাইটি গঠন করেন। আগের সমস্যা বা প্রয়োজন, আজকের সমস্যা বা প্রয়োজনের মতো নয়। সঠিক নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে সোসাইটি ‘আব্রেলা সংগঠন’-এ পরিণত হলেই কমিউনিটির কল্যাণ সাধিত হবে।
আবু তাহেরের প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, সঠিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার ব্যর্থতা কার? সোসাইটিতে সংস্কার বিশেষ করে গঠনতন্ত্রের আমূল সংস্কার প্রয়োজন। এজন্য কমিউনিটিকেই এগিয়ে আসতে হবে। সেই সাথে নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে।
নাজমুল আহসানের প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের সন্তানরা কেনো সোসাইটির সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছেন না, তা সবাইকে ভেবে দেখতে হবে।
নাজমুল আহসানের অপর এক প্রশ্নের উত্তরে ডা. ওয়াদুদ ভূঁইয়া বলেন, আমরা অনেক সময় জানিনা সোসাইটির অনুষ্ঠান কোথায় হচ্ছে? ২০০১ সাথে গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে এপ্রিল-জুনের মধ্যে বার্ষিক চাঁদা দেওয়ার নিয়ম ছিলো। পরবর্তীতে একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী নির্বাচনের আগে চাঁদা পরিশোধের অ্যামেন্ডমেন্ট করে। তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মকে সোসাইটিতে আনা সম্ভব নয়। তারা নতুন প্রজন্মের বাঙালী নয়, তারা বাংলাদেশী-আমেরিকান। তাদের সংস্কৃতি ভিন্ন। তবে তাদের মাঝে বাংলা সংস্কৃতি ঢুকিয়ে দিতে পারলেই স্বার্থকতা আসবে। তারা (নতুন প্রজন্ম) তাদের মতো করে আসবে। প্রয়োজনে তারা তাদের মতো করে সংগঠন করছে।
নাজমুল আহসানের এক প্রশ্নের উত্তরে নার্গিস আহমেদ বলেন, সৎ আর যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিই সোসাইটির নেতৃত্বে আসা উচিৎ।
ডা. ওয়াদুদ ভূঁইয়া বলেন, যারা বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা রাখে তাদেরই সোসাইটির নেতৃত্বে আসা উচিৎ।
অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, সৎ, যোগ্য, শিক্ষিত আর বিত্তবানদেরই সোসাইটির নেতৃত্বে আসা উচিৎ।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

বাংলাদেশ সোসাইটিকে সর্বজনীন করতে গঠনতন্ত্রের সংস্কার প্রয়োজন

প্রকাশের সময় : ১০:৫২:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ অক্টোবর ২০১৮

নিউইয়র্ক (ইউএনএ): যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের ‘আমব্রেলা সংগঠন’ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক-কে সকল প্রবাসী বাংলাদেশীদের কল্যাণকর ও সর্বজনীন সংগঠনে পরিণত করতে হলে এর গঠনতন্ত্রের আমূল সংস্কারের পাশাপাশি সদস্য/ভোটার হওয়ার প্রক্রিয়াও পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন সোসাইটির সাবেক তিন কর্মকর্তা। তারা বলেছেন, সেই সাথে কারো পকেটের অর্থে নয় বরং নিজের অর্থে স্ব স্ব উদ্যোগেই প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভোটার হওয়া উচিৎ। তা নাহলে সোসাইটির মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে না, সোসাইটির লক্ষ্য-উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হবে না, সোসাইটি সর্বজনীন সংগঠনে পরিণত হবে না।
বাংলাদেশ সোসাইটি’র আসন্ন কার্যকরী পরিষদ নির্বাচন-২০১৮ ঘিরে নিউইয়র্কের টাইম টেলিভিশন আয়োজিত ‘টাইম ডিবেট’ অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সোসাইটির সাবেক সভাপতি ডা. ওয়াদুদ এ খান (ডিডিএস), সাবেক সভাপতি নার্গিস আহমেদ ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন উপরোক্ত কথা বলেন। গত ১৮ অক্টোবর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টাইম টেলিভিশন-এর নিজস্ব স্টুডিও-তে আয়োজিত ও সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানের প্যানেলে ছিলেন সাপ্তাহিক পরিচয় সম্পাদক নাজমুল আহসান ও সাপ্তাহিক বাংলাদেশ সম্পাদক ডা. ওয়াজেদ এ খান। সঞ্চালনায় ছিলেন বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক ও টাইম টেলিভিশন-এর সিইও আবু তাহের। খবর ইউএনএ’র।
ডিবেট অনুষ্ঠানের আলোচনায় সোসাইটির অতীত-বর্তমান, সোসাইটির সর্বজনীনতা, বোর্ড অব ট্রাষ্টি গঠন প্রক্রিয়া, অর্থের বিনিময়ে সদস্য/ভোটার তৈরী ও নেতা হওয়ার প্রবণতা, মামলা-মোকদ্দমা, নতুন প্রজন্মের সোসাইটিতে অংশগ্রহণ প্রভৃতি বিষয় উঠে আসে।
ডা. ওয়াজেদ এ খানের প্রশ্নের উত্তরে সোসাইটির বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক মামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন এবং বৃহত্তর স্বার্থে আদালত নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে রায় দেবেন প্রত্যাশা করে বলেন, সোসাইটির ইতিহাসে ২২জন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক মনোনীতি/নির্বাচিত হয়েছেন। এদের মধ্যে একমাত্র নারী সভাপতি নার্গিস আহমেদ। সোসাইটির ৪৩ বছরের ইতিহাসে যে নেতৃত্ব, বিস্তৃত, কমিউনিটির প্রসার, বাংলাদেশ ভবন হওয়ার কথা ছিলো সবমিলিয়ে প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি প্রসঙ্গে ডা. ওয়াদুদ ভূইয়া বলেন, ১৯৭৫ সালে সোসাইাটর জন্ম হয়। আর বাংলাদেশের জন্ম মাত্র ৫ বছর। তখন আমেরিকায় বাংলাদেশের চেয়ে পাকিস্তানের লোকই বেশী ছিলো। সোসাইটির উদ্দেশ্য ছিলো আমেরিকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশীদের ঐক্যবদ্ধ করা। দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিলো দেশীয় কালচার আর ফ্যামিলি ভ্যালু প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়া। তিনি বলেন, আমি ১৯৮২ সালে সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন সোসাইটির সদস্য ছিলো ৪ শতাধিক। আজ ২৭ হাজারের উপর। আমাদের করণীয় অনেক, পাওয়ারও সুযোগ রয়েছে। আমাদের সময়ের সোসাইটি এখন আর নেই। যা করতে পারিনি সবাইকে তার দায়-দায়িত্ব নিতে হবে। শুধু সোসাইটির নেতৃত্বের দোষ নয়। তিনি বলেন, আমাদের সময় সবাই স্বতফূর্তভাবে সোসাইটির অনুষ্ঠানে বিশেষ করে ২১ ফেব্রুয়ারী, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস প্রভৃতি অনুষ্ঠানে আসতো। মিলনমেলা হতো, গেট টুগেদার হতো, ভাব বিনিময় হতো। আর এখন নির্বাচনের পর অনেকেই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন। আশা করছি নতুন নেতৃত্ব প্রত্যাশা পূরণ করবে।
নাজমুল আহসানের প্রশ্নের জবাবে ডা. ওয়াদুদ ভূঁইয়া বলেন, আমরা সোসাইটিতে বিভাজন চাইনি। তখন লীগ অব আমেরিকা ছিলো। সেটা নিয়ে এক সংগঠন করতে চেয়েছিলাম। ‘মাদার সংগঠন’ বা ‘আমব্রেলা’ সংগঠন বলা ঠিক নয়। কেননা, সবার আলাদা সংগঠন রয়েছে। সোসাইটিকে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা উচিৎ।
নাজমুল আহসানের অপর প্রশ্নের জবাবে নার্গিস আহমেদ বলেন, সোসাইটির স্থবিরতা কাটিয়ে আনতেই আমাকে দায়িত্ব নিতে হয়েছিলো। আমাদের সময় জয়নাল আবেদীন সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। আমরা বাংলা স্কুল, কম্পিউটার স্কুল চালু করেছিলাম। সকল আঞ্চলিক সংগঠন নিয়ে জাতীয় দিবস পালন করেছি। যা ইতিপূর্বে সোসাইপির ইতিহাসে হয়নি। এছাড়াও রাস্তায় দাঁড়িয়ে অর্থ সংগ্রহ করেছি। দায়িত্ব নেয়ার সময় আমাদেরকে ব্যাংক একাউন্টও বুঝিয়ে দেয়া হয়নি। জিরো হাতে সোসাইটির দায়িত্ব পালন শুরু করতে হয়েছে। অথচ বিদায়কালে সোসাইটির ফান্ডে ২১৬ হাজার ডলার জমা রেখে এসেছি। অথচ নতুন সভাপতি মিডিয়াকে সাক্ষাৎকারে বললেন, বিদায়ী কমিটি চাবি ছাড়া কিছুই দিয়ে যাননি। যে সভাপতি এমন মিথ্যা করা বলতে পারেন সেখানে তো যাওয়ার পরিবেশ থাকে না। আর যখন পরিবেশ ছিলো তখন আমাদের সন্তানরা সোসাইটিতে আসতো। তিনি বলেন, আমাদের সময় ১৪/১৫ হাজার সদস্য ছিলো। যেকোন বাংলাদেশী সোসাইটির সদস্য হওয়ার সুযোগ আছে বলেই বাংলাদেশ সোসাইটি ‘মাদার সংগঠন’।
নার্গিস আহমেদ বলেন, দুই বছর কাজ করে প্রমাণ করেছি কমিউনিটির সবাইকে নিয়ে কাজ করা যায়। আমরা সোসাইটির প্রয়োজন মিটাতে কাজ করার পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষের প্রয়োজনেও কাজ করেছি। তিনি ২০১৯ সালের ফোবানা সম্মেলনে সবাইকে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান।
ডা. ওয়াজেদ এ খানের অপর প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, সোসাইটির আগের প্রেক্ষাপট আর বর্তমান প্রেক্ষাপট এক নয়। আগের কর্মকান্ড ও কার্যক্রমের সাথে বর্তমান কর্মকান্ড ও কার্যক্রম পাল্টে গেছে। তিনি বলেন, সোসাইটির প্রতিষ্ঠা সময়োপযোগী ছিলো। কমিউনিটির প্রয়োজনেই বাংলাদেশী ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ফার্মাসিস্টরা সোসাইটি গঠন করেন। আগের সমস্যা বা প্রয়োজন, আজকের সমস্যা বা প্রয়োজনের মতো নয়। সঠিক নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে সোসাইটি ‘আব্রেলা সংগঠন’-এ পরিণত হলেই কমিউনিটির কল্যাণ সাধিত হবে।
আবু তাহেরের প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, সঠিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার ব্যর্থতা কার? সোসাইটিতে সংস্কার বিশেষ করে গঠনতন্ত্রের আমূল সংস্কার প্রয়োজন। এজন্য কমিউনিটিকেই এগিয়ে আসতে হবে। সেই সাথে নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে।
নাজমুল আহসানের প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের সন্তানরা কেনো সোসাইটির সাথে সম্পৃক্ত হচ্ছেন না, তা সবাইকে ভেবে দেখতে হবে।
নাজমুল আহসানের অপর এক প্রশ্নের উত্তরে ডা. ওয়াদুদ ভূঁইয়া বলেন, আমরা অনেক সময় জানিনা সোসাইটির অনুষ্ঠান কোথায় হচ্ছে? ২০০১ সাথে গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে এপ্রিল-জুনের মধ্যে বার্ষিক চাঁদা দেওয়ার নিয়ম ছিলো। পরবর্তীতে একটি সুবিধাবাদী গোষ্ঠী নির্বাচনের আগে চাঁদা পরিশোধের অ্যামেন্ডমেন্ট করে। তিনি বলেন, নতুন প্রজন্মকে সোসাইটিতে আনা সম্ভব নয়। তারা নতুন প্রজন্মের বাঙালী নয়, তারা বাংলাদেশী-আমেরিকান। তাদের সংস্কৃতি ভিন্ন। তবে তাদের মাঝে বাংলা সংস্কৃতি ঢুকিয়ে দিতে পারলেই স্বার্থকতা আসবে। তারা (নতুন প্রজন্ম) তাদের মতো করে আসবে। প্রয়োজনে তারা তাদের মতো করে সংগঠন করছে।
নাজমুল আহসানের এক প্রশ্নের উত্তরে নার্গিস আহমেদ বলেন, সৎ আর যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তিই সোসাইটির নেতৃত্বে আসা উচিৎ।
ডা. ওয়াদুদ ভূঁইয়া বলেন, যারা বিশ্বব্যাপী নেতৃত্ব দেয়ার যোগ্যতা রাখে তাদেরই সোসাইটির নেতৃত্বে আসা উচিৎ।
অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, সৎ, যোগ্য, শিক্ষিত আর বিত্তবানদেরই সোসাইটির নেতৃত্বে আসা উচিৎ।