বাংলাদেশের রাজকোষ চুরি : ফেডারেল ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা করছেন পল খান
- প্রকাশের সময় : ০৫:৩৪:৫০ অপরাহ্ন, সোমবার, ৪ এপ্রিল ২০১৬
- / ৭৬৯ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে বাংলাদেশ ব্যাংকের একাউন্ট থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার হ্যাকড বা লুটের ঘটনায় ফেড়ারেল ব্যাংকের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। বাংলাদেশ সরকার বা বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসকারী কেউ এ মামলা করছেন না। নিউইয়র্কের পরিচিতমূখ কমিউনিটি এক্টিভিস্ট এবং জ্যামাইকার কলম্বাসখ্যাত নাসির খান পল এ মামলার উদ্যোগ নিয়েছেন। এ লক্ষে তিনি ব্রঙ্কসের এটর্নী লেরি এসপিবেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। নাসির খান পল আশা করছেন, দুই-একদিনের মধ্যে মামলার ইনডেস্ক নাম্বার পেয়ে যাবেন। ৬ মার্চ রোববার রাতে নাসির খান পল এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি ৪০ বছর ধরে নিউইয়র্কে থাকি। আমার মত অনেকেই বিদেশে থেকে বাংলাদেশে টাকা পাঠান এবং আমাদের অর্থে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ সমৃদ্ধ হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সে রিজার্ভ চুরি বা হ্যাকড হওয়ার যে ঘটনা ঘটেছে এতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কের দায় আছে। কারণ এ ব্যাংকে এসব টাকা আমানত ছিল। তাদের এখান থেকে যেহেতু এ টাকা গেছে সুতরাং বিষয়টি তাদের খোলামেলা করতে হবে। আমার ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের এ বিষয়ে যেসব বক্তব্য গণমাধ্যমে দেখে আসছি বাংলাদেশ সরকার বা বিভিন্ন অনুসন্ধানে তা যথোপযুক্ত নয়। আমি বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সুনাগরিক হিসেবে রিজার্ভ ব্যাংক এ ক্ষেত্রে কি ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন সেটি জানার অধিকার রাখি এবং এ নিয়ে আইনের আশ্রয়ের অধিকারও সংরক্ষণ করি।’
নাসির খান পল বলেন, ফলে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কের দায়িত্বশীলদের বিবাদী করে মামলা করবো। এ লক্ষে ইতোমধ্যে আমি এটর্নী লেরি এসপিবেকের দ্বারস্থ হয়েছি। তিনি আজ/ কালকের মধ্যে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট আদালতের নজরে আনবেন এবং এর আইনি দিকগুলো পর্যালোচনা করবেন। তার সঙ্গে কথা হয়েছে আমি দুই-এক দিনের মধ্যে মামলার একটি ইনডেক্স নাম্বার পাবো।
এদিকে নাসির খান পল এ মামলা করতে এগিয়ে আসার খবরটি ক্ষুদ্র আকারে বিভিন্ন মহলে জানাজানি হওয়ার পর আলোচনা শুরু হয়েছে। বলা হচেছ, যেখানে সরকার বিশেষ করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ ঘটনায় ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিলেও কার্যত চুপসে যাওয়ার পর নাসির খান পলের এ উদ্যোগ আলোচনায় ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে।
প্রসঙ্গত: নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভের প্রধান উইলিয়াম ডাডলির কাছে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে কিছুদিন আগে চিঠি লিখেছিলেন মার্কিন কংগ্রেসওম্যান ক্যারোলিন ম্যালোনি। চিঠিতে তিনি শুধুমাত্র সুইফট মেসেজিং নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অন্যদেশের সেন্ট্রাল ব্যাংকের অর্থ ছাড় সঠিক কী না সেই বিষয়েও জানতে চেয়েছিলেন। একইসঙ্গে তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, অপরাধীরা কিভাবে অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সিস্টেম হ্যাক করলো সেই বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রয়োজন। এতে ব্যাংক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিউইয়র্ক ফেডারেল রিজার্ভে রক্ষিত অর্থ হ্যাকিং এর মতো অপরাধ প্রতিরোধের একটি মানদন্ড তৈরি করতে পারবে।
রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ডলার চুরি হওয়ার পর এক মাস ধরে তা সরকারের কাছে গোপন রাখে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফিলিপাইনের সংবাদপত্রে রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার আগ পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে কিছুই জানায়নি বাংলাদেশ ব্যাংক। এই এক মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলম মোট তিন দফায় বোর্ড ও অডিট কমিটির সভায় যোগ দিতে বাংলাদেশ ব্যাংকে গেছেন। পরিচালনা পর্ষদ কিংবা সচিবের কাছেও গোটা বিষয়টি চেপে রাখা হয়।
পরে বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন ভূমিকায় ভীষণ ক্ষুব্ধ হন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। রিজার্ভ চুরির মতো স্পর্শকাতর বিষয় এক মাস ধরে সরকারের কাছে গোপন রাখা, রিজার্ভ চুরিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায় নেই বরং ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক দায়ী অর্থমন্ত্রীকে এমন মিথ্যা কথা বলাসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করেন আবুল মাল আবদুল মুহিত।
অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘বিশ্বব্যাপী সাইবার-সন্ত্রাস প্রতিরোধে সবাই ব্যবস্থা নিয়েছে। আমরাও নিয়েছি। তবে আমাদের ব্যবস্থা ফ্লপ করেছে।’ নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক জানিয়েছে, তাদের ওখানে কোনো সমস্যা হয়নি। এর আগে অর্থমন্ত্রী ফেডারেল রিজার্ভের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা বলেছিলেন। তবে এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ এখনো নেওয়া হয়নি। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের সহযোগিতা নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে।
খোয়া যাওয়া অর্থ ফিরে পাওয়া ও গচ্ছিত সম্পদের বিপরীতে বীমা ক্ষতিপূরণ আদায়ের সুবিধার্থে মামলা করা জরুরি বলে মনে করছেন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।
আইটি নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহার বলেছিলেন, বীমা দাবি করতে হলে বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত নিশ্চিত করা জরুরি। সে ক্ষেত্রে তদন্তকাজে এফবিআই বা স্বীকৃত কোনো বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠানকে সম্পৃক্ত করা দরকার। ব্যাংকের সুইফট কোড হ্যাকড হয়নি এ রকম ঘটনা বিশ্বের কোথাও জানা যায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ক্ষেত্রেও এটি হয়নি। তবে সার্ভারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনা অভ্যন্তরীণ যোগসাজশ ছাড়া ‘একেবারেই অসম্ভব’ বলে মন্তব্য করেছিলেন তানভীর, যিনি নিজেও বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির তদন্তে সহায়তা করছেন। চুরির ঘটনা টের পেয়েও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাতে দেরি করা এবং মামলা দায়ের করার ক্ষেত্রে সময় নেওয়া ঠিক হচ্ছে না বলে মনে করেছিলেন জোহার। পরে তিনি বেশ ক‘দিন নিখোঁজ ছিলেন।
জানা গেছে, রিজার্ভ থেকে লোপাট হওয়া ৮০০ কোটি টাকার ঘটনা তদন্ত করছে একাধিক টিম। সাবেক গভর্নর ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন বড় টিমের কাজ এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও তদন্তের শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছে গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা। তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের রিজার্ভ চুরির সহযোগিতা করতে একাধিক কারণ চিহ্নিত করেছেন। দফায় দফায় কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও সরেজমিন পরিদর্শন করে এসব বিষয় চিহ্নিত করতে পেরেছেন বলে একটি উচ্চ পর্যায়ের সূত্র নিশ্চিত করেছে। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)