বাংলাদেশের উন্নয়ন-আগ্রগতি অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনার সরকার বারবার দরকার
- প্রকাশের সময় : ০৩:২২:১৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮
- / ৭৪৯ বার পঠিত
নিউইয়র্ক (ইউএনএ): বিশিষ্ট শিক্ষাবীদ ও কূটনীতিক, জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, উন্নয়ন-আগ্রগতি আর নানা সমস্যা মোকাবেলায় বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জন্য মডেল। জাতিসংঘের শান্তি মিশনে বাংলাদেশের সাফল্য শীর্ষে। বাংলাদেশ আজ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে চলেছে দেশের এই ‘উন্নয়ন-আগ্রগতি অব্যাহত রাখতে ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার, বারবার দরকার। এর কোন বিকল্প নেই’। কেননা, ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য কন্যা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, মেধা, দক্ষতা আর সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে যোগ্যতার সাথে বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে ধাবিত করেছেন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা ‘আমরাই পারি, আমরাই পারবো’ শুধু কথার কথা নয়, কাজে তা প্রমাণিত হয়েছে। দেশের অব্যাহত উন্নয়নে তার অবদান ‘আমি পাড়ি শ্লোগান’। তাই ‘জননেত্রী’ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে তার আহ্বানে সিলেট তথা বাংলাদেশের জনগণের সেবা করতেই প্রবাস জীবন ছেড়ে ‘প্রিয় জন্মভূমি’ বাংলাদেশে ফিরে গেছি। ড. মোমেন বলেন, অপার সম্ভাবনার দেশ বাংলাদেশ। সবাই মিলে এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। বাংলাদেশক উন্নত দেশে কাজে লাগাতে হবে। আমাদের স্বাধীনতার স্বপ্ন, বঙ্গবন্ধু’র স্বপ্ন ‘সোনার বাংলা’ আর শেখ হাসিনার ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে হবে।
নিউইয়র্ক ভিত্তিক বার্তা সংস্থা ইউনাইটেড নিউজ অব আমেরিকা (ইউএনএ)-এর সাথে সাক্ষাৎকালে ড. এ কে আব্দুল মোমেন উপরোক্ত কথা বলেন। গত সপ্তাহে নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ডে তিনি ইউএনএ’র মুখোমুখী হন। সাক্ষারকারটি গ্রহণ করেন ইউএনএ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমেদ।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সী অঙ্গরাজ্যের একটি হাসপাতালে তার পিত্তের পাথর অপসারণের পর তিনি লং আইল্যান্ডে কন্যার বাসায় পূর্ণ বিশ্রামে থাকাকালীন সময়ে সাক্ষাৎকারে তিনি তার কর্মজীবন, জাতিসংঘের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডাকে দেশে ফিরে যাওয়া সহ অন্যান্য বিষয়ে সংক্ষেপে কথা বলেন। উল্লেখ্য, কানাডার টরন্টোতে অনুষ্ঠিত চতুর্থ বিশ্ব সিলেট সম্মেলনে আমন্তিত অতিথি হিসেবে ড. মোমেন গত আগষ্ট মাসের শেষ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র আসেন। গত ১-২ সেপ্টেম্বর এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়ও নিউইয়র্কে অবস্থানকালে তিনি প্রবাসী সিলেটবাসী এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, যুবলীগ সহ দলীয় নেতা-কর্মীদের সাথে একাধিক মতবিনিময় সভায় মিলিত হন। তার শারীরিক সুস্থ্যতার পর তিনি গত ২০ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ঢাকার উদ্দেশ্যে নিউইয়র্ক তথা যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করেন।
আরো উল্লেখ্য, ড. মোমেন আগামী জাতীয় নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী। সেই লক্ষ্যেই তিনি কাজ করে চলেছেন। এই আসনটির বর্তমান এমপি তার বড় ভাই, বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এছাড়াও তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ-এর চেয়ারম্যান এবং বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন-এর কেন্দ্রীয় সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
ইউএনএ’র সাথে সাক্ষাৎকারের শুরুতেই ড. মোমেন মহান আল্লাহতায়ালার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে স্বভাব-সুলভ হাস্যজ্জল মুখে বলেন, ভালো লাগছে যে, দেশে অবস্থানকালে শারীরিক অপরারেশন নিয়ে কতনা ঝামেলা পোহাতে হতো। হয়তো ঢাকা, সিঙ্গাপুর দৌড়াতে হতো। প্রচার অর্থ লাগতো। আর এখানে ভালো চিকিৎসা হলো, সবার দোয়ায় ভালো হয়ে গেছি। তিনি সরলতার সাথেই বলেন, ব্যক্তিগতভাবে বিদেশে চিকিৎসা করানোর অর্থ আমার নেই। প্রবাস জীবন ছেড়ে নেত্রী’র কথায় দেশে অবস্থান করছি, সিলেটবাসীদের সেবা করার চেষ্টা করছি। কনসালটিং আর পারটাইম শিক্ষকতা করে বেশ চলেও যাচ্ছে। পাশাপাশি অর্থমন্ত্রীর ছোট ভাই হিসেবে তার কর্মকান্ড দেখশুনার সুবাদে জনগণের কাছাকাছি গিয়ে সেবা করে সময় কাটছে। তিনি বলেন, দেশে এতো সম্ভাবনা আর নতুন প্রজন্ম এতো ব্রিলিয়ান্ট যে তাদের সঠিকভাবে পথ দেখালে আর কাজে লাগাতে পারলে আমরা ১৬ কোটি মানুষ বিশ্বের বুকে অন্য বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারি।
বাংলাদেশ আর দেশের জনগণ নিয়ে আশাবাদী ড. মোমেন বলেন, বাংলাদেশের বড় সম্পদ হচ্ছে মানুষ আর পানি। এই দুই সম্পদ কাজে লাগাতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের জমি না বাড়লেও খাদ্যের অভাব নেই। দেশের কৃষককূল ভালো করছে। দারিদ্রতা কমছে। দেশে মাছ, সবজির ব্যাপক চাষাবাদ হচ্ছে। বিদ্যুতে সরকার অবাভাবনীয় সাফল্য অর্জন করছে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক প্রসার ঘটছে। পাশাপাশি গার্মেন্টস শিল্পে আমরা ভালো করছি। সেই সাথে প্রতিবছর প্রবাসীদের ১৫ বিলিয়ন ডলার দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে। সব মিলিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়ক পাড়ি দিচ্ছি।
ড. মোমেন বলেন, তারপরও আমাদের অনেক সমস্যা রয়েছে। তারমধ্যে বেকার সমস্যা বড় সমস্যা। প্রসঙ্গত তিনি বলেন, দেশে একটি ব্যবসা চালু করতে সময় লাগে ১৭৮দিন, মালয়েশিয়ায় লাগে ১৭দিন আর আমেরিকায় লাগে মাত্র কয়েক ঘন্টা। ঘূষ-দূর্নীতি, অনৈতিকতা দেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা। এসব সমস্যা সম্মিলতভাবে মোকাবেলা করতে হবে। তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন উন্নত প্রশিক্ষণ আর গুণগত মান বৃদ্ধি করা। তানাহলে আমরা আধুনিক বিশ্ব থেকে পিছিয়ে থাকবো, প্রতিযোগিতায় ঠিকতে পারবো না। আমাদের আইটি সেক্টরকে আরো সবল ও গতিশীল করতে হবে। জনগণের স্কীল বাড়াতে হবে। দরকার উন্নত মানসিকতা, কোয়ালিটি আর সেবার মান বৃদ্ধি করা। জনমনে আস্থা-বিষ¦াস বাড়াতে হবে। ফটো তোলা আর বাহবার রাজনীতি ভুলে যেতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিষণ ২০০১ আর ২০৪১ বুঝতে হবে, অনুধাবণ করতে হবে। সোনার বাংলা আর ডিজিটাল বালাদেশ প্রতিষ্ঠার জন্য তাঁর এই কর্মসূচী সফল করতে হবে। তিনি বলেন, উন্নয়ন আর অগ্রগতির জন্য দরকার অর্থ আর টেকনোলজি।
ড. আব্দুল মোমেন বলেন, জাতিসংঘে বাংলাদেশ অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। শান্তি মিশনের ভূমিকা বিশ্ব দরবারে প্রশংসনীয়। স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বপালনকালীন সময়ে কূটনৈতিক দায়িত্ব পালনের সকল সফলতা মিশন আর পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের। তবে রোহিঙ্গা ইস্যু বাংলাদেশের অন্যতম বড় ইস্যু। এই ইস্যুতে আমাদের কূটনৈতিক লবি আরো জোরদার হওয়া দরকার, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে আরো ভালো করে তুলে ধরতে পররাষ্ট্রনীতিকে আরো কার্যকর করা উচিৎ।
প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতার আলোকে ড. মোমেন বলেন, আমারদেকে ঢাকা কেন্দ্রীক কর্মকান্ড থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। ঢাকার জানজট আর জনজট মোকাবেলায় জেলায়, জেলায় অফিস-আদালত বিকেন্দ্রীকরণ করা দরকার।
ড. মোমেন বলেন, অপ্রিয় হলেও সত্য যে, সিলেট জেলা এখন বাংলাদেশের অন্যতম অবহেলিত, অনুন্নত জেলা। স্বাস্থ ও শিক্ষায় আমরা অনেক পিছিয়ে, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার বেশী। ঢাকা জেলায় যেখানে ৮৮৭টি স্কুল-কলেজ রয়েছে, সেখানে সিলেট জেলায় স্কুল-কলেজ রয়েছে মাত্র ১১০টি। সিলেটে অবকাঠামোগত নানা সমস্যাও রয়েছে। সিলেটে শিল্পাঞ্চল হচ্ছে অথব শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ার মালিক নেই। সুষ্ঠু পরিকল্পানার অভাবে সিলেট এখন গিঞ্জিমার্কা শহরে পরিণত হয়েছে। শহরের শাহজালাল মাজার লোকে লোকারণ্য। এখানে মাত্র ১৫টি বাথরুম আছে। বাথরুমের বড় সমস্যা। এই সমস্যা সমাধানে দুই কোটি টাকায় তিন তলা ভবন আর রাস্তা বড় করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি শাহ পরান মাজারের রাস্তা বড় করা হবে। তিনি বলেন, সিলেটের যানজট নিরসনে রিং রোড দরকার এবং এই রিং রোড করার সুযোগও রয়েছে।
ড. মোমেন সিলেট নিয়ে তার নানা স্বপ্নের কথা বলতে গিয়ে বলেন, প্রকৃতি আর নদী-নালার দেশ সিলেটকে আধুনিক শহরে পরিণত করা দরকার। ওসমানী বিমানবন্দর আরো তিনগুণ করে আন্তর্জাতিক মানের করা, বড় বড় শপিং মল করা দরকার। প্রাগৌতিহাসিক আমলের রেলওয়ে আধুনিক করা। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আর অর্থমন্ত্রীর উদ্যোগে সিলেটে ৪+২ মোট ছয় লেনের সড়ক তৈরীর প্রকল্প এখন বাস্তবায়নের পথে।
ড. মোমেন নিজেকে প্রবাসীদের প্রতিনিধি আর প্রবাসীদের বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করে বলেন, প্রিয় মাতৃভূমিতে প্রবাসীরা বিনিয়োগ করতে চায়। কিন্তু আমরা তাদের সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারছি না। প্রবাসীরা সরকারের কাছে কোন অর্থ নয়, চায় বিনিয়োগের পরিবেশ আর সুযোগ। তিনি বলেন, প্রবাসীদের জন্য বাংলাদেশে ৩০ ডিসেম্বর ‘প্রবাসী দিবস’ পালনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সরকার এই দিনটি পালননের জন্য নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘জাতির জনক’ বঙ্গবন্ধন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ তার কর্মগুণে জনগণের নেত্রীতে পরিণত হয়েছেন। তিনি স্বার্থক মা, রতœগর্ভা মা, স্বার্থক রাষ্ট্রনায়ক। তিনি উন্নয়নের দ্বার উন্মোচন করেছেন। তাঁর উন্নয়নের ধারা আমাদেরকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সেই ধারায় সম্পৃক্ত করতেই প্রধানমন্ত্রী আমাকে সিলেটে কাজ করার দায়িত্ব দিয়েছেন। অর্থমন্ত্রী আমার বড় ভাই হওয়াতে সেই দায়িত্ব পালন অনেক সহজ হচ্ছে। আর আগামী নির্বাচনে সিলেট-১ আসনের মনোনয়ন পাওয়া না পাওয়া সম্পূর্ণ প্রধানমন্ত্রীর উপর নির্ভর করছে। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলাম। প্রবাসে থেকেও দেশের জন্য সাধ্যমত সেবা করার চেষ্টা করেছি। তবে সিলেটের সন্তান হিসেবে সিলেটবাসী সহ দেশবাসীর সেবায় বাকী জীবন কাটিয়ে দিতে চাই।