বাংলাদেশী তিন প্রার্থীর ঐক্যে বিজয়ের সম্ভাবনা

- প্রকাশের সময় : ০১:৪০:৩৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ মে ২০২১
- / ৩৮ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: নিউইয়র্কের বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যামাইকা ও এর আশপাশের বিভিন্ন এলাকা নিয়ে গঠিত সিটি কাউন্সিলের ডিস্ট্রিক্ট-২৪ এর নির্বাচনে তিন বাংলাদেশী প্রার্থী হয়েছেন। এবারই প্রথম বাংলাদেশী প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে প্রচারণা না চালিয়ে বরং অঘোষিত ঐক্যের আভাস দিয়েছেন। এতে করে এবারের নির্বাচনে বাংলাদেশী প্রার্থীর বিজয়ের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশী অধ্যুষিত সিটি কাউন্সিল ডিস্ট্রিক্ট ২৪ এর আওতায় রয়েছে দক্ষিণ ফ্লাশিং, জামাইকা, ব্রায়ার উড, ফরেস্ট হিল, কিউ গার্ডেন ও হিলক্রেস্ট এলাকা। যেখানে বাংলাদেশীদের অবস্থান নির্বাচনে একটি নিয়ামক শক্তি। যার শতকরা ২০ ভাগ ভোটার এশিয়ান তথা বাংলাদেশী। অন্যান্যদের মধ্যে শতকরা সাদা ৫০, হিসপ্যানিক ২০ ও বø্যাক ১০ ভাগ। এশিয়ান ভোটারের সংখ্যা ২০ হাজারের কাছকাছি। যার ১৪ হাজারই বাংলাদেশী। গত নির্বাচনে সাড়ে ৩ হাজার ভোট পেয়ে জিম জেনারো কাউন্সিলম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্ব›িদ্ব ছিলেন বাংলাদেশী প্রার্থী মৌমিতা আহমেদ ও এটর্নী সোমা সাঈদ। মৌমিতার প্রাপ্ত ভোট ছিল ১২০০। সিটি কাউন্সিলের এই আসনে বাংলাদেশীসহ এশিয়ানরা ভোট দিতে গেলে অনায়াসেই পেতে পারেন নিজেদের একজন প্রতিনিধি। ডিস্ট্রিক্ট ২৪ এ শতকরা ৭০ ভাগ ভোটারই রেজিস্টার্ড ডেমোক্র্যাট। যার কারণে ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে বিজয়ী প্রার্থীই হবেন ভবিষ্যতের সিটি কাউন্সিল মেম্বার। ২২ জুন এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আর এতে বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত তিন প্রার্থী হলেন মৌমিতা আহমেদ, মোহাম্মদ উদ্দীন সাবুল ও সাইফুর রহমান খান হারুন। চতুর্থ প্রার্থী হলেন বর্তমান কান্সিলম্যান জিম জেনারো।
মৌমিতা আহমেদ বলেন, ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারিতে জিততে দিনরাত কাজ করে যাচ্ছি। গত নির্বাচনে ১২০০ ভোট পেয়েছিলাম। প্রত্যাশা এবারও তারা আমাকে ভোট দেবেন। যারা গতবার আমাকে ভোট দেননি কিংবা ভোট কেন্দ্রে যাননি তাদের কাছে যাচ্ছি জোড়েসোড়ে। গত নির্বাচনে জিম জেনারো ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু জিতে ছিলেন রিপাবলিকানদের ভোটে। পার্টির ভোট ছিল আমার পক্ষেই। কিন্তু এবার ডেমোক্যাটিক প্রাইমারী। ডেমোক্র্যাটরাই ভোট দিতে আসবেন। রিপাবলিকানদের সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে আমার সম্ভাবনা উজ্জ্বল। বিভিন্ন লেবার ইউনিয়ন, মূলধারার রাজনীতিক ও বাংলাদেশী বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সর্মথন পাচ্ছি। বাংলাদেশী ৩ প্রার্থী একসাথে কাজ করলে ‘র্যাংকিং চয়েচ’ ভোটের কারণে যেকোন একজন বাংলাদেশী সিটি হলে নেতৃত্ব দিতে পারেন।
একই কমিউনিটির একাধিক প্রার্থী থাকায় সমস্যা হবে বলে মনে করছেন কি? জবাবে মৌমিতা বলেন, একটু সমস্যা হচ্ছে। কমিউনিটি ভোটাররা কনফিউজড। তবে বাস্তবে আমাদের লাভই হবে। ভোটটি হচ্ছে র্যাকিং চয়েসের ভিত্তিতে। একজন ভোটার তার চয়েচের ওপর ৫টি ভোট দিতে পারবেন। যেমন প্রথম চয়েচে একজনকে, দ্বিতীয় চয়েসে আরেকজনকে এবং তৃতীয় চয়েছে আরেকজনকে ভোট দিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে সাবুল ভাই ও সাইফুর ভাই একই পদে আমার বিপরীতে নির্বাচন করলে ক্ষতি দেখছি না। বরং সবারই লাভ হবে। ৩ জন বাংলাদেশী প্রার্থীই ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে আনার উদ্যোগ নেবেন। তাদের রিসোর্স কাজে লাগাবেন। নির্বাচনী তহবিল খরচ করবেন। একক প্রার্থী হলে তা আরও কঠিন হতো। আমার প্রত্যাশা বাংলাদেশীরা র্যাকিং চয়েছে আমাদের তিন জনকেই ভোট দিবেন। আর প্রথম চয়েছে যিনি সর্বোচ্চ ভোট পাবেন তিনিই হবেন সম্ভাব্য বাংলাদেশী কমিউনিটির প্রথম কাউন্সিলম্যান। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশী তিন প্রার্থীকেই সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে কাজ করতে হবে। কোন বৈরিতা নয়। ইতিমধ্যেই আমি সাবুল ভাইয়ের সাথে কথা বলেছি। জনাব সাইফুরের সাথেও কথা বলবো। মৌমিতা নিজের প্রার্থীতাকে যৌক্তিক ও যোগ্য মনে করে বলেন, গত নির্বাচনে প্রাপ্ত প্রতি ভোটারের বিপরীতে নিতা জেইন ১০০০ ডলার, মৌমিতা ৭০০ ডলার, দিলীপ নাথ ৪০০ ডলার ও আমি ১০০ ডলার খরচ করেছিলাম। অথচ তাদের মধ্যে আমিই সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছিলাম।
সাইফুর রহমান খান এর্নাজেটিক একজন প্রার্থী। সকাল থেকে রাত অবধি ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন। ক্যাম্পেইন এর জন্য ৬জন ভলেন্টিয়ারকে নিয়োগ দিয়েছেন। প্রচারনায় একধাপ এগিয়ে। তিনি বলেন, একজন বাংলাদেশী প্রার্থী দাড়াঁলে ভালো হতো। যদিও র্যাংকিং চয়েসের কারনে একাধিক প্রার্থীতা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। বরং সবাই যদি ভোটার মোবিলাইজ করে কেন্দ্রে নিয়ে যাই, তাদেরকে বলি চয়েচের ভিত্তিতে তিন জন বাংলাদেশীকেই ভোট দিন। তাতে আমাদের জয়ের সম্ভাবনা বেশি। একটা ইতিহাস হবে। তাহলে আপনারা একসাথে বসে ঐকবদ্ধভাবে কমিউনিটির কাছে এ বার্তা নিয়ে যাচ্ছেন না কেন? জবাবে সাইফুর খান বলেন, নীতিগতভাবে আমি একমত। সাবুল ভাইয়ের সাথে এ ব্যাপারে কথা হয়েছে। মৌমিতাকে ঐভাবে চিনি না। তবে আলোচনা করা যেতে পারে। এর আগে আমার এডভাইজারদের সাথে কথা বলবো। তারপর এক প্লাটফরমের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারবো। ঈদের পর সম্ভাবনা আছে। কমিউনিটি থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। নার্গিস আহমেদ (আপা), নাসির আলী খান পল, শরাফ সরকার ও মহিউদ্দিন দেওয়ান (ভাই) সহ অনেকেই আমার জন্য এগিয়ে আসছেন। মেরিয়ট হোটেলের একটা ইফতার পার্টিতে গিয়েছিলাম। সেখানে উপস্থিত সকলেই সহযোগিতার কথা বলেছেন। আমি কমিউনিটি থেকে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি।
মোহাম্মদ উদ্দীন সাবুল কাউন্সিলম্যান পদে একজন শক্তিশালী প্রার্থী। ৩০ বছর ধরে নির্বাচনী এলাকায় বসবাস করছেন। র্দীর্ঘদিন ধরে ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ও কমিউিনিটির অ্যাক্টিভিটির সাথে জড়িত। একাধিক বাংলাদেশী প্রার্থীতার প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি প্রতিদ্ব›িদ্ব বাংলাদেশী অন্য দুই প্রার্থী মৌমিতা ও সাইফুর রহমান খানের সাথে কথা বলেছি। নিজেদের মধ্যে বৈরিতা সৃষ্টি না করে একসাথে কাজ করতে চাই। ভোটাররা সর্বোচ্চ ৫টি পর্যন্ত ভোট দিতে পারবেন র্যাংকিং চয়েছের মাধ্যমে। তো, বাংলাদেশী ভোটাররা আমাদের তিনজনকেই ভোট দিতে পারবেন। যিনি সর্বোচ্চ ভোট পাবেন তাকেই আমরা মেনে নেব। এলাকায় বাংলাদেশী ১২ থেকে ১৪ হাজার ভোট রয়েছে। সকলেই ভোটারদের কেন্দ্রে আনার চেষ্টা করবো। ইতিবাচক বার্তা নিয়ে সবার কাছে যাবো। তবে কমিউনিটিতে এটাতে সাড়া জাগবে। ভোটাররা উৎসাহী হবেন। তিন জনের প্রষ্টোয় সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোটার আনা সম্ভব। এটা করতে পারলে বাংলাদেশীরা তাদের একজন মুখ সিটি হলে পাবেনই। অতীতের রেকর্ড অনুসারে ৪,০০০ ভোট পেলেই এ এলাকা থেকে সিটি কাউন্সিলম্যান পদে জেতা সম্ভব। মোহাম্মদ উদ্দিন বলেন, আমি কথা বলেছি মৌমিতা ও সাইফুর রহমানের সাথে। একসাথে কাজ করার জন্য আলোচনা করেছ। এক প্ল্যাটফরম থেকে কমিউিনিটির কাছে ভোট চাওয়ার ব্যাপারে কথা বলেছি। তারা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। (সাপ্তাহিক আজকাল)