বাংলাদেশকে ভারতের আজ্ঞাবহ করতেই পরিকল্পতভাবে বিডিআর হত্যাকান্ড সংঘটিত করা হয়েছে: এইচআরডিবি
- প্রকাশের সময় : ০১:৪৪:২৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মার্চ ২০১৮
- / ৮৭১ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: বাংলাদেশকে স্থায়ীভাবে ভারতের আজ্ঞাবহ করতেই সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের পরিকল্পতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নিউইয়র্ক প্রবাসী লেখক, সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। এই হত্যাকান্ডের সাথে সরকারি দল ওৎপ্রোতভাবে জড়িত বলেও মনে করেন তারা। গত ২৩ ফেব্রুয়ারী নিউইর্য়কের বাংলাদেশী অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটসের জুইশ সেন্টারে ‘হিউম্যান রাইটস ডেভেলপমেন্ট ফর বাংলাদেশ’ (এইচআরডিবি) আয়োজনে গোল টেবিল বৈঠকে বক্তারা এ কথা বলেন তারা। এইচআরডিবির সেক্রেটারী সিটি ইউনিভার্সি অফ নিউইয়র্ক-এর অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন মজুমদারের সভাপতিত্বে ও প্রফেসর জাহিদ বিন জামিরের পরিচালনায় আলোচনায় অংশ নেন লে: কর্নেল মোস্তাফিজ, ক্যাপ্টেন (অব:) কামারুজ্জামান, স্কোয়াড্রন লিডার (অব:) খাজা মাঈনুদ্দিন, মেজর (অব:) মোহাম্মদ আলী, সিনিয়র সাংবাদিক মঈনুউদ্দিন নাসের, বিশিষ্ট কলামিস্ট মিনাহ ফারাহ, লং আইল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. শওকত আলী, বাংলাদেশী আমেরিকান প্রগ্রেসিভ ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা প্রফেসর নূরুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাহবুবুর রহমান, এর্টনী আব্দুল আজিজ, কমিউনিটি নেতা আলী ইমাম সিকদার।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কুরআন থেকে তেলাওয়াত করা হয় অর্থসহ। এরপর শহীদ সেনাকে স্বরণে সঙ্গীত পরিবেশন করা হয় ‘আমি চিৎকার করে কাঁদিতে চাহিয়া/করিতে পারিনি চিৎকার/ বুকের ব্যথা বুকে চাপায়ে নিজেকে দিয়েছি ধিক্কার’। পরবর্তীতে হত্যাকান্ডের ১৫ মিনিটের একটি প্রামাণ্য চিত্র পরিবেশন করা হয়। চিত্র দেখে অনেকে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন। উল্লেখ্য, এইচআরডিবির ২৫ ফেব্রুয়ারীকে ‘সেনা শহীদ দিবস’ দিবস হিসেবে পালন করে আসছে।
অনুষ্ঠানে লে: কর্নেল মোস্তাফিজ নিহতদের মাগফেরাত কামনা করে বলেন, বাংলাদেশ আর্মি কোন কর্পোরেশন নয়। দেশ পরিচালনা করেন রাজনীতিবিদরা। দেশের কল্যাণেই আর্মি কাজ করে। তিনি বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারী পিলখানার ঘটনায় কোন ডাল-চালের জন্য হয়নি। এখানে আর্মিদেরকে দোষারোপ করলে হবে না। কর্নেল গুলজার, কর্নেল ইমদাদ খুবই তীক্ষè মেধা সম্পন্ন অফিসার ছিলেন। তাদের মতো একজন চৌকস অফিসারকে মারতে পারে এটা ভাবতেই কষ্ট হয়।
ক্যাপ্টেন (অব:) কামারুজ্জামান বলেন, পিলখানার ঘটনায় আমাদের অনেক প্রিয় বন্ধুদের হারিয়েছি। এই বেদনা ভূলার মতো নয়। তিনি সকলকে দেশ প্রেম বাড়ানোর তাগিদ দেন।
স্কোয়াড্রন লিডার (অব:) খাজা মাঈনুদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে ধ্বংস আর দেশকে মেধাশূন্য করতেই এই হত্যাকান্ড ঘটানো হয়েছে। পিলখানার মত নৃশংস ঘটনা বিশ্বের ইতিহাসে নজিরবিহীন। সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট থেকে শুরু করে মেজর জেনারেল র্যাঙ্কের ৫৭ জন অফিসারকে রাজধানী ঢাকা শহরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। যারা স্বাধীনতা সংগ্রামেও হয় নি।
মেজর (অব:) মোহাম্মদ আলী বলেন, ডাল-ভাতের জন্য বিডিআর হত্যাকান্ড হয়নি এটা ছিল পরিকল্পিত তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বর্তমান যে সময়ের মধ্য দিয়ে দেশ অতিবাহিত হচ্ছে এইটাই তার প্রমাণ। এই হত্যাকান্ড কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় বরং এর বীজ বোপন করা হয়েছিলো বহু আগেই। আমরা দেখতে পাচ্ছি বিডিআর হত্যাকান্ডের বিচার হচ্ছে। কিন্তু এ বিচারে মূলহোতারে অন্যতম তোবার আলী কিভাবে খালাস পায় এটাই আজ আমাদের প্রশ্ন?।
মিনা ফারাহ বলেন, বাংলাদেশকে ধ্বংস করছে কংগ্রেস পরিবার। এর মধ্যে অন্যতম প্রবণ মুখার্জী। বাংলাদেশে বড় যেকোন দুঘর্টনার আগে পরে তার ভূমিকা আছেই। কারণ ভারত বাংলাদেশে তাদের আধিপত্য কায়েম করতে চায়। তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার জীবন নিয়ে আমি সংকিত। বাংলাদেশকে আধিপত্যবাদের ছোঁবল থেকে মুক্তির জন্য প্রয়োজন দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের।
মঈনুউদ্দিন নাসের বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রয়োজন কি এমন প্রশ্ন রেখে বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এখন ব্যবসায়ী কর্পোরেশন। আমার জানা মতে, জায়গা-জমি, বাড়ী-গাড়ীসহ ৮ খাতে ব্যবসা করছে তারা। তিনি বলেন, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে মানুষের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে এবং বর্তমান সেনাবাহিনীতে সংস্কার সাধন করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে তৎকালীন সেনা প্রধান মইন ইউ আহমেদ ভারত থেকে ঘোড়া উপহার পাওয়ার পরেই ২০০৯ সালে ফেব্রুয়ারীতে এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়।
ড. শওকত আলী বলেন, স্বাধীনতার পরবর্তীতে রক্ষীবাহিনীর নির্যাতনের ফসল ৭৫’ এর ঘটনা। আজকে আমাদেরকে সেখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে। ২০০৭ সালের সেনা সমর্থিত সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশকে নিয়ে ষড়যন্ত্র শুরু করে ভারত। ২৫ ফেব্রুয়ারী বিডিআর হত্যাকান্ড ছিল অন্যতম। তিনি বলেন, এ দিনে আমরা শুধু ঘরোয়া অনুষ্ঠান করলেই চলবেনা। বিশ্ববাসীকে জানান দেওয়ার জন্য ঘরের বাহিরে সভা-সমাবেশ ও র্যালি করতে হবে।
প্রফেসর নূরুল ইসলাম বলেন, ৫৭জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করে ভারত সীমান্ত এলাকা বৌমাড়ির ঘটনার প্রতিশোধ নিয়েছে বাংলার মীরজাফরদেরকে দিয়ে। ২৫ ফেব্রুয়ারি সারাদিন ও রাতে পিলখানায় যে হত্যাযজ্ঞ আর লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে তা মধ্যযুগীয় ববর্রতাকেও হার মানায়। সেদিন পিলখানায় যাদেরকে হত্যা করা হয়েছে তাদের বেশীর ভাগ ছিল দেশ ও ইসলাম প্রিয়। নির্বিচারে সেনা কর্মকর্তাদের হত্যার পর লাশ নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে খোদ ঘাতকরা। তাই আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করে চলতে থাকে লাশ গুমের কাজ। পিলখানার ভেতর বিশেষ মেশিন দিয়ে লাশগুলো ধ্বংস করার ব্যর্থ চেষ্টা হয় করা। সেনা কর্মকর্তার লাশ ফেলে দেয়া হয় ম্যানহোলে, অনেকের লাশ গুম করে একের পর এক গণকবর খোঁড়া হয়। পিলখানা পরিণত হয় বধ্যভূমিতে। বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তা, একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা, একজন সৈনিক ও দু’জন সেনা কর্মকর্তার স্ত্রীসহ ৬১ জন নিহত হন। সেনা কর্মকর্তাদের বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারান সাত বিডিআর জওয়ান। বিভিন্ন গেট থেকে ফাঁকা গুলি ছোড়ায় আশপাশের আরও ৭জন পথচারী নিহত হন। এ ঘটনায় সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়ায় ৭৫ জনে। নিহতদের মাগফেরাত কামনা করে বলেন, হত্যাকারীদের উপযুক্ত বিচার বাংলার মাটিতে হবেই।
মাহবুবুর রহমান বলেন, চৌকস সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা কেঁদেছে বাংলাদেশ! কিন্তু দীর্ঘ নয় বছর পরেও অনেক প্রশ্নের জবাব নেই। কিন্তু কেন? মাত্র ৩৬ ঘণ্টার নারকীয় বিডিআর হত্যাযজ্ঞে ঝরে গিয়েছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৫৭ জন চৌকস অফিসারসহ ৭৫টি তাজা প্রাণ। রেহাই পাননি তাদের স্ত্রী-সন্তানরাও। হত্যার আগে তাদের ওপর চালানো হয়েছে নির্যাতন। পানির ট্যাংকি, বাথরুম কিংবা গাড়ীর ভেতরে লুকিয়েও প্রাণ রক্ষা করতে পারেননি তারা। এটা ছিল সরকারের সুপরিকল্পিত এবং রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস।
এর্টণী আব্দুল আজিজ বলেন, ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়েছে অথচ রাষ্ট্র জানতে পারেনি এটা বিশ্বাস যোগ্য নয়। সেখানে সরকার নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। যে কোন বিবেচানায় এটা বলা যায়, এই হত্যাকান্ড পরিকল্পিত এবং এখানে সরকারের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছিল।
আলী ইমাম সিকদার প্রশ্ন রেখে বলেন, পিলখানায় ঘটনার দিন বিমানের সিডিউল কেন পরিবর্তন করা হলো?। কোটি কোটি অর্থের বিনিময়ে ভারতের ইঙ্গিতে পিলখানার ঘটনা ঘটেছে। কিলিং মিশনের সদস্যরা বিশেষ বিমানে দুবাই গিয়ে সজীব ওয়াজিদ জয় থেকে অর্থ ভাগাভাগি করে নিয়েছে এ তথ্য আমাদের কাছে রয়েছে। তিনি বলেন, এ সরকার ক্ষমতায় থাকলে আরো বড় ধরনের ঘটনা হবে পারে। এক্ষেত্রে সকলকে সর্তক থাকা প্রয়োজন।
প্রফেসর দেলোয়ার মজুমদার বলেন, বিডিআর এর সদর দফতরে সেনা কর্মকর্তাদের নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনা নিছক কোন হত্যাকান্ড নয়। এটা অনেক সুপরিকল্পিত। এই নৃশংসতা বিচ্ছিন্ন কোনো জনপদে হয়নি যেখানে লোক পাঠানো বা সেনা পাঠানো সময়সাপেক্ষ ব্যাপার ছিল। হত্যা সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, কেন প্রধানমন্ত্রী ডিনারের অনুষ্ঠানে আসার দাওয়াত প্রত্যাখ্যান করলেন? তাহলে তিনি কী কিছু জানতেন আগে থেকে? কেন বিদ্রোহীদের পক্ষ থেকে আসা মধ্যস্থতাকারীদের নাম ও পরিচয় রেজিস্ট্রী করা হয়নি যখন তারা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে সমঝোতার জন্য এসেছিলেন? মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার সর্বশেষ কী কথোপকথন হয়েছিল? এমন অনেকগুলো প্রশ্ন তুলেন। তিনি বলেন, আমরা জানি, দেশের এ অপূরণীয় ক্ষতি সহজেই পূরণ হওয়ার নয়। নিহতদের পরিবারগুলো এ শোক কোনোভাবেই ভুলতে পারবেনা। দোয়া করি মহান আল্লাহ যেন আমাদেরকে ধৈর্য্য ধরবার তৌফিক দেন এবং তাদের শাহাদাতের মর্যাদা দান করেন। -প্রেস বিজ্ঞপ্তি।