নিউইয়র্ক ০২:১৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

ফোবানা ও নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মামলা অনভিপ্রেত ও অনাকাক্ষিত ॥ তারা চাঁদাবাজী করছে

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০১:২৯:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০১৯
  • / ৪৯৯ বার পঠিত

নিউইয়র্ক (ইউএনএ): চলতি বছরের লেবার ডে উইকেন্ডে (৩০-৩১ আগষ্ট ও ১ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কের লাগেডিয়া হোটেল মেরিয়টে অনুষ্ঠিতব্য ফোবানা সম্মেলনের কনভেনার শাহ নেওয়াজ বলেছেন, ফোবানা ও নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মামলা অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্খিত। তিনি অভিযোগ করে বলেন, একটি মহল কমিউনিটিকে বিভক্ত করতেই ফোবানা-কে বিভক্ত করেছেন, মামলা করে বাংলাদেশী অভিবাসীর মুখে ও চপটাঘাত করেছেন। তারা ফোবানা সম্মেলনের নামে চাঁদাবাজী করছেন। তিনি ঐক্যবদ্ধভাবে মামলাবাজদের মোকাবেলা করার আহ্বান জানান।
সিটির জ্যাকসন হাইটসের পালকি পার্টি সেন্টারে বুধবার সন্ধ্যায় আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে শাহ নেওয়াজ উপরোক্ত কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন খান, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী কাজী আজম, সাবেক চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান ইউসুফজাই সালু, প্রধান উপদেষ্টা মোর্শেদ আলমও উপদেষ্টা আলী ইমাম শিকদার সহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের মধ্যে খন্দকার ফরহাদ, তাজুল ইসলাম, মাকসুদুল হক চৌধুরী, আবু তালেব চৌধুরী চান্দু, ডা. নার্গিস রহমান, মোহাম্মদ সেলিম, শাহাবউদ্দিন লিটন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা কনে এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফোবানার সম্মেলনের সদস্য সচিব ফিরোজ আহমেদ। খবর ইউএনএ’র।
কনভেনার শাহ নেওয়াজ-এর লিখিত বক্তব্যের পর তিনি ছাড়াও মোহাম্মদ হোসেন খান উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এক প্রশ্নের উত্তরে মোহাম্মদ হোসেন খান বলেন, ফোবানা সম্মেলন নিয়ে কোন মামলা হয়নি। মামলা হয়েছে ফোবানার নামের ব্যবহার নিয়ে। তিনি বলেন, আমরা ফোবানা সম্মেলন করছি না, করছি ফোবানা কনভেনশন ২০১৯। আর বৃহত্তর স্বার্থ মাথায় রেখেই আমরা লগো রেজিষ্ট্রেশন করেছি। তিনি বলেন, আমরা আইনের দেশে বসবাস করি এবং আইন-কানুন মেনেই চলতে চাই। মামলায় আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেই সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নেবো।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে মোহাম্মদ হোসেন খান বলেন, ফোবানা উত্তর আমেরিকার বাংলাদেশীদের সংগঠনের প্লাটফর্ম। তাই যেকোন বাংলাদেশী সংগঠন এই ফোবানা সম্মেলনের হোস্ট সংগঠন হওয়ার দাবী রাখে।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে মোহাম্মদ হোসেন খান বলেন, ফোবানা নিয়ে মামলা হবে, এমনটি আমরা আশা করিনি। আর মামলা আমরা করিনি। এবার নিয়ে ফোবানার ৩৩ বছরের ইতিহাসে তিনটি মামলা হলো। ২০০১ সালে কানাডার মন্ট্রিয়লে প্রথম মামলায় আমরা জিতেছি। ২০০৮ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে দ্বিতীয় মামলা করার পর তারা মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়। আর এবার (২০১৯) তারাই আবার মামলা করেছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে শাহ নেওয়াজ বলেন, আমার বিষয়ে ফোবানার অপরাংশ ভুল ব্যাখা দিচ্ছেন, আমি কখনো ফোবানা’র আইকন হতে রাজী হয়নি বা প্রমিজ করিনি। তবে প্রস্তাব পেয়েছি। আর তারা যেভাবে মানুষকে ‘ফোবানা আইকন’ বানিয়ে নির্ধারিত অর্থ ঠিক করে তা আদায় করছেন। এটা চাঁদাবাজী ছাড়া আর কিছু নয়। তিনি বলেন, আমরা ফোবানা করছি না, ফোবানা কনভেনশন-২০১৯ করছি।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে মোহাম্মদ হোসেন খান বলেন, আমরা ঐক্য চাই। আর এজন্য সত্য ইতিহাস সবাইকে মেনে নিতে হবে। তিনি বলেন, বিগত ৩২টি ফোবানা সম্মেলনের মধ্যে মাত্র ৯টি সম্মেলন হয়েছে ঐক্যবদ্ধভাবে। বাকী ২৩টি সম্মেলনই হয়েছে বিভক্তিকারে।
সংবাদ সম্মেলনে ফোবানার কনভেনর শাহ নেওয়াজ তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, বিশ্বের রাজধানী নামে খ্যাত যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের লাগেডিয়া এয়ারপোর্টের কাছে আগামী ৩০-৩১ আগষ্ট এবং ১ সেপ্টেম্বর লেবার ডে ইউকেল্ডে হোটেল মেরিয়টের বল রুমে ৩৩তম ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ২০ আগষ্ট হোটেল ক্যাম্পাসের সামনে বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা ও ফোবানার পতাকা পতপত করে উড়বে এবং ক্যাম্পাসে ভেসে উঠবে একটুকরো প্রিয় লাল সবুজের বাংলাদেশ। সকল স্বপ্নের চৌকাঠ বেয়ে সম্মেলনের সকল কর্মকান্ড যথারীতি এগিয়ে যাচ্ছে। নিউইয়র্কের ফোবানা সম্মেলন নিয়ে একাধিক বার আপনাদের সাথে মত বিনিময় এবং আপনাদের প্রশ্ন ও প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে আমরা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এবং যৌক্তিক অবস্থানে দাড়াতে চেষ্টা করি। তারপরও ভুল ভ্রান্তি থাকতেই পারে। এত বড় সম্মেলন করতে গিয়ে ভুল কম হওয়ার জন্যই আমরা বার বার আপনাদের মুখোমুখি হই।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালে কানাডা সম্মেলনে নিউইয়র্কে ২০১৯ সালে ফোবানা সম্মেলন হওয়ার কথা ঘোষণা করা হলে প্রতিপক্ষ আমাদের সম্মেলনকে বন্ধ করার লক্ষ্যে নানা অপকৌশল গ্রহণ করেন। আমরা গভীর ক্ষোভ ও বেদনার সাথে তা লক্ষ্য করে আসছি। তারা পত্র-পত্রিকা গনমাধ্যম ও সামাজিক গণমাধ্যমে আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসিৎ বিষধগার করতে শরু করেন। তারা নিউইয়র্কস্থ একটি টেলিভিশনের স্বাক্ষাৎকারে আমাকে এবং আমাদের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে কিছু অশালীন কথা বলার চেষ্টা করেছেন। যা সকল শালিনতাকে হার মানিয়ে ছিল। আমরা তার প্রতিবাদ করিনি। আমরা মনে করেছি।
‘‘ কুকুরের কাজ কুকুর করেছে
কামড় দিয়েছে পায়
তাই বলে কুকুরের কামড়ানো
কি মানুষের শোভা পায়।’’
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়: একটি বিশেষ মহল আমাদের ফোবানাকে আজ জনমানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। প্রশ্ন বিদ্ধ করেছেন বাংলাদেশের জনমানুষ ও সাংবাদিকদের কাছে। নিউইয়র্কে আমাদের অভিবাসীগণ বাংলাদেশী রেস্তোরাগুলোতে ফোবানা সম্মেলন নিয়ে নানা কথা বলে চায়ের টেবিল উত্তপ্ত করেছেন। ফোবানার ভাগ্যের বিড়ম্বনার কোন শেষ নেই।
নিউইয়র্কের ৩৩তম ফোবানা সম্মেলনের সুবাতাস যখন সমগ্র নর্থ আমেরিকার চতুরদিকে ছড়িয়ে পরেছে এবং আমাদের সম্মেলন একেবারেই যখন দাঁড় প্রান্তে তখন আমার এবং ফোবানার কেন্দ্রিয় স্টেয়ারিং কমিটি নেতাদের বিরুদ্ধে ব্রুকলীনের ফেডারেল কোর্টে নিউজার্সীর জনৈক লোক একটি মামলা দায়ের করেন। এবং কোর্টের সমন আমাদের বাসা বাড়িতে ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের দপ্তরে প্রেরণ করেন (মামলার ফটোকপি আমাদের এই সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যের সাথে সংযুক্ত)। এ একথা সত্য যে দূর্ভাগ্য ফোবানাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এই সব মামলা-মকদ্দমা যারা করেছেন তারা আমাদের নিউইয়র্কেরই লোক। কিন্তু নিজদের মুখোশ আড়াল করে অন্য রাজ্যের একজন লোক দিয়ে মামলা করিয়ে আমার ও ফোবানার কেন্দ্রীয় স্টিয়ারিং কমিটির নেত্রীবৃন্দের আত্মমর্যাদার উপর আঘাত করেছেন, একই সাথে নিউইয়র্কের সকল বাংলাদেশী অভিবাসীর মুখে ও চপটাঘাত করেছেন। তারা এক সময় আমাদের সাথেই ফোবানা করেছেন। নিজের উচ্চাবিলাসী মনোভাবের কারনে পদপদবি না পেয়ে পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে ফোবানা থেকে পদত্যাগ করে ঘরে ফিরে গিয়েছিলেন। তিনি এখন মাঠে সরব, তাদেরই প্ররোচনায় ফোবানা এবং ফোবানার নেতৃবৃন্দ আজ কাঠগোড়ার আসামী। তিনি এখন প্রতিপক্ষের নেতৃত্ব প্রদান করেছেন। তাই আমরা আজ এই অপশক্তি ও এই অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে কমিউনিটির সকল স্তরের নেতৃবৃন্দকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর জন্য উদ্বাত্ত আহবান জানাচ্ছি। আমরা এই অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা এবং ঘৃনা প্রকাশ করছি। মামলা যে কেউ করতে পারে, তার জন্য এই ক্ষোভ ও নিন্দা জ্ঞাপন করছি না। আজ একটি অনভিপ্রেত ও অনাকাক্ষিত মিথ্যা মামলার কারনে ফোবানা সম্মেলন নিয়ে গোটা কমিউনিটিতে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে। সবার মুখে মুখে ছি! ছি! শব্দ। আমাদের উচিত ঐক্যবদ্ধভাবে এই সব মামলাবাজদের বিরুদ্ধে এবং তাদের সকল অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। আমরা সকল বাঁধা বিপত্তি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নিউইয়র্কে ফোবানা সম্মেলন করতে বদ্ধ পরিকর।
শাহ নেওয়াজ তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমরা এ সকল মামলা নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত ও বিচলিত নই। বিষয়টি এখন আদালতে বিচারাধীন। এ বিষয় মাননীয় আদালত সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন। তাই এ বিষয়ে আমাদের কোন বক্তব্য নেই।
তিনি বলেন, গত ৩২ বৎসর পূর্বে এই অঞ্চলে আমাদের অভিবাসী জীবনের সকল জনমানুষের কল্যাণে এবং আমাদের কমিউনিটি শ্রী-বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে ফোবানা নামক সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কালের আবর্তে এই সব বর্ণ চোরাদের কারণে ফোবানার রং কিছুটা ম্লান হলেও ফোবানার ভাগ্যের সিঁকা ছিড়ে যায়নি। ফোবানা আছে এবং তা থাকবে। ফোবনার পরিচিতি এবং তার সুগন্ধ আজ বকুলের গন্ধ হয়ে সমগ্র নর্থ আমেরিকায় ছড়িয়ে পরেছে। এ কথা সত্য যে, তারপরও ফোবনার বিভক্তি বিভাজন ছিল সময়ে পরিনতি। ফোবনার বিভক্তি ও বিভাজনের খরগের আঘাতে ফোবনা আজ অনেকটাই ক্ষতবিক্ষত। এত কিছুর পর ও আপনারা এই ফোবানার পক্ষে নানাভাবে লিখে আসছেন এবং আপনাদের বহুল প্রচারিত পত্র পত্রিকায় প্রচার প্রচারণা দিয়ে আপনারা এবং আমরা আজ ফোবাবনাকে এত দূর পথ নিয়ে এসেছি। আপনাদের সকল প্রকার সাহায্য সহযোগিতা ফোবানার ইতিহাস স্বর্ণঅক্ষরে লেখা থাকবে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়: সংঘ সমিতির বিভাজন-বিভক্তি আজকের নতুন কোন বিষয় নয়। আমাদের কমিউনিটির জনমানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। যারা মামলা মোকদ্দমা করে কমিউনিটির অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে চান এবং বাঁধা গ্রস্থ করতে চান তারা শেষ পর্যন্ত পরাজিত হবেন। বিজয় আমাদের নিশ্চিত। যারা মামলা করেছেন তারা নিজেকেই কলংকিত করেছেন। তারা যদি ফোবানার চারপাশ থেকে সরে দাঁড়ান তাহলে আমরা এবং ফোবানা সকল দিক থেকে কলংকমুক্ত হবো।
শাহ নেওয়াজ প্রশ্ন রেখে বলেন, আমার এবং ফোবানার কেন্দ্রীয় ষ্টিয়ারিং কমিটির বিরুদ্ধে মামলা করে তারা কার স্বার্থ রক্ষা করতে চান? আমরা জানি ফোবানার নামে চাঁন্দাবাজি করে আমাদের জনমানুষের কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে ক্যাসিনোর আলোর ঝলকানীতে তারা জ্বলে উঠেন। বিনোদীনিদের নিয়ে লাল-নীল বাতির আলোর ঝলকানীতে অনেকে হারিয়ে যান। নিজেদের ও অন্যের পকেট ভারী করেন- এমন কথা বাজারে-রেস্তোরোয় এবং এই জনপদের মানুষের কাছে শুনতে পাওয়া যায়। এই সব করার জন্য ফোবানার জন্ম হয়নি। ফোবানাকে অপসংস্কৃতি মুক্ত করতেই হবে। এবং এর কোন বিকল্প নেই।
শাহ নেওয়াজ বলেন, আমরা মনে করি ফোবানা কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। যারা অনৈতিকভাবে ফোবানার পের্টান করেছেন তাদের উদ্দেশ্য কোন দিনই মহৎ ছিলোনা। ফোবানাকে তারা মনোপলি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান বানাতে চান। ফোবানা হচ্ছে নর্থ আমেরিকার সকল বাংলাদেশী জনমানুষের সংগঠন। তারা আজ নিজদের এবং কোন স্বার্থেন্বেষী মহলের হীন স্বার্থ উদ্ধার করা এবং অর্থ বানানোর হাতিয়ার হিসাবে ফোবানাকে ব্যবহার করে আসছেন। আর তা নির্বিগ্নে করার জন্য আমাদের উপর তাদের এত জ্বালা। আজ যারা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করতে চান তা তাদের করতে দেওয়া হবে না।
কবিতা দিয়ে শেষ করতে চাই।
‘‘নাগিনীরা আজ চারদিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিশ্বাস
শান্তির ললিত বানী শুধাইবে ব্যর্থ পরিহাস।’’

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

ফোবানা ও নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মামলা অনভিপ্রেত ও অনাকাক্ষিত ॥ তারা চাঁদাবাজী করছে

প্রকাশের সময় : ০১:২৯:১৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৫ জুলাই ২০১৯

নিউইয়র্ক (ইউএনএ): চলতি বছরের লেবার ডে উইকেন্ডে (৩০-৩১ আগষ্ট ও ১ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্কের লাগেডিয়া হোটেল মেরিয়টে অনুষ্ঠিতব্য ফোবানা সম্মেলনের কনভেনার শাহ নেওয়াজ বলেছেন, ফোবানা ও নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মামলা অনভিপ্রেত ও অনাকাঙ্খিত। তিনি অভিযোগ করে বলেন, একটি মহল কমিউনিটিকে বিভক্ত করতেই ফোবানা-কে বিভক্ত করেছেন, মামলা করে বাংলাদেশী অভিবাসীর মুখে ও চপটাঘাত করেছেন। তারা ফোবানা সম্মেলনের নামে চাঁদাবাজী করছেন। তিনি ঐক্যবদ্ধভাবে মামলাবাজদের মোকাবেলা করার আহ্বান জানান।
সিটির জ্যাকসন হাইটসের পালকি পার্টি সেন্টারে বুধবার সন্ধ্যায় আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে শাহ নেওয়াজ উপরোক্ত কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে ফোবানা স্টিয়ারিং কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ হোসেন খান, এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারী কাজী আজম, সাবেক চেয়ারম্যান আতিকুর রহমান ইউসুফজাই সালু, প্রধান উপদেষ্টা মোর্শেদ আলমও উপদেষ্টা আলী ইমাম শিকদার সহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের মধ্যে খন্দকার ফরহাদ, তাজুল ইসলাম, মাকসুদুল হক চৌধুরী, আবু তালেব চৌধুরী চান্দু, ডা. নার্গিস রহমান, মোহাম্মদ সেলিম, শাহাবউদ্দিন লিটন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা কনে এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফোবানার সম্মেলনের সদস্য সচিব ফিরোজ আহমেদ। খবর ইউএনএ’র।
কনভেনার শাহ নেওয়াজ-এর লিখিত বক্তব্যের পর তিনি ছাড়াও মোহাম্মদ হোসেন খান উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এক প্রশ্নের উত্তরে মোহাম্মদ হোসেন খান বলেন, ফোবানা সম্মেলন নিয়ে কোন মামলা হয়নি। মামলা হয়েছে ফোবানার নামের ব্যবহার নিয়ে। তিনি বলেন, আমরা ফোবানা সম্মেলন করছি না, করছি ফোবানা কনভেনশন ২০১৯। আর বৃহত্তর স্বার্থ মাথায় রেখেই আমরা লগো রেজিষ্ট্রেশন করেছি। তিনি বলেন, আমরা আইনের দেশে বসবাস করি এবং আইন-কানুন মেনেই চলতে চাই। মামলায় আদালত যে সিদ্ধান্ত দেবেন সেই সিদ্ধান্ত আমরা মেনে নেবো।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে মোহাম্মদ হোসেন খান বলেন, ফোবানা উত্তর আমেরিকার বাংলাদেশীদের সংগঠনের প্লাটফর্ম। তাই যেকোন বাংলাদেশী সংগঠন এই ফোবানা সম্মেলনের হোস্ট সংগঠন হওয়ার দাবী রাখে।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে মোহাম্মদ হোসেন খান বলেন, ফোবানা নিয়ে মামলা হবে, এমনটি আমরা আশা করিনি। আর মামলা আমরা করিনি। এবার নিয়ে ফোবানার ৩৩ বছরের ইতিহাসে তিনটি মামলা হলো। ২০০১ সালে কানাডার মন্ট্রিয়লে প্রথম মামলায় আমরা জিতেছি। ২০০৮ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে দ্বিতীয় মামলা করার পর তারা মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়। আর এবার (২০১৯) তারাই আবার মামলা করেছে।
এক প্রশ্নের উত্তরে শাহ নেওয়াজ বলেন, আমার বিষয়ে ফোবানার অপরাংশ ভুল ব্যাখা দিচ্ছেন, আমি কখনো ফোবানা’র আইকন হতে রাজী হয়নি বা প্রমিজ করিনি। তবে প্রস্তাব পেয়েছি। আর তারা যেভাবে মানুষকে ‘ফোবানা আইকন’ বানিয়ে নির্ধারিত অর্থ ঠিক করে তা আদায় করছেন। এটা চাঁদাবাজী ছাড়া আর কিছু নয়। তিনি বলেন, আমরা ফোবানা করছি না, ফোবানা কনভেনশন-২০১৯ করছি।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে মোহাম্মদ হোসেন খান বলেন, আমরা ঐক্য চাই। আর এজন্য সত্য ইতিহাস সবাইকে মেনে নিতে হবে। তিনি বলেন, বিগত ৩২টি ফোবানা সম্মেলনের মধ্যে মাত্র ৯টি সম্মেলন হয়েছে ঐক্যবদ্ধভাবে। বাকী ২৩টি সম্মেলনই হয়েছে বিভক্তিকারে।
সংবাদ সম্মেলনে ফোবানার কনভেনর শাহ নেওয়াজ তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, বিশ্বের রাজধানী নামে খ্যাত যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের লাগেডিয়া এয়ারপোর্টের কাছে আগামী ৩০-৩১ আগষ্ট এবং ১ সেপ্টেম্বর লেবার ডে ইউকেল্ডে হোটেল মেরিয়টের বল রুমে ৩৩তম ফোবানা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ২০ আগষ্ট হোটেল ক্যাম্পাসের সামনে বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা ও ফোবানার পতাকা পতপত করে উড়বে এবং ক্যাম্পাসে ভেসে উঠবে একটুকরো প্রিয় লাল সবুজের বাংলাদেশ। সকল স্বপ্নের চৌকাঠ বেয়ে সম্মেলনের সকল কর্মকান্ড যথারীতি এগিয়ে যাচ্ছে। নিউইয়র্কের ফোবানা সম্মেলন নিয়ে একাধিক বার আপনাদের সাথে মত বিনিময় এবং আপনাদের প্রশ্ন ও প্রশ্ন উত্তরের মাধ্যমে আমরা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য এবং যৌক্তিক অবস্থানে দাড়াতে চেষ্টা করি। তারপরও ভুল ভ্রান্তি থাকতেই পারে। এত বড় সম্মেলন করতে গিয়ে ভুল কম হওয়ার জন্যই আমরা বার বার আপনাদের মুখোমুখি হই।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালে কানাডা সম্মেলনে নিউইয়র্কে ২০১৯ সালে ফোবানা সম্মেলন হওয়ার কথা ঘোষণা করা হলে প্রতিপক্ষ আমাদের সম্মেলনকে বন্ধ করার লক্ষ্যে নানা অপকৌশল গ্রহণ করেন। আমরা গভীর ক্ষোভ ও বেদনার সাথে তা লক্ষ্য করে আসছি। তারা পত্র-পত্রিকা গনমাধ্যম ও সামাজিক গণমাধ্যমে আমাদের বিরুদ্ধে কুৎসিৎ বিষধগার করতে শরু করেন। তারা নিউইয়র্কস্থ একটি টেলিভিশনের স্বাক্ষাৎকারে আমাকে এবং আমাদের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে কিছু অশালীন কথা বলার চেষ্টা করেছেন। যা সকল শালিনতাকে হার মানিয়ে ছিল। আমরা তার প্রতিবাদ করিনি। আমরা মনে করেছি।
‘‘ কুকুরের কাজ কুকুর করেছে
কামড় দিয়েছে পায়
তাই বলে কুকুরের কামড়ানো
কি মানুষের শোভা পায়।’’
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়: একটি বিশেষ মহল আমাদের ফোবানাকে আজ জনমানুষের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলছে। প্রশ্ন বিদ্ধ করেছেন বাংলাদেশের জনমানুষ ও সাংবাদিকদের কাছে। নিউইয়র্কে আমাদের অভিবাসীগণ বাংলাদেশী রেস্তোরাগুলোতে ফোবানা সম্মেলন নিয়ে নানা কথা বলে চায়ের টেবিল উত্তপ্ত করেছেন। ফোবানার ভাগ্যের বিড়ম্বনার কোন শেষ নেই।
নিউইয়র্কের ৩৩তম ফোবানা সম্মেলনের সুবাতাস যখন সমগ্র নর্থ আমেরিকার চতুরদিকে ছড়িয়ে পরেছে এবং আমাদের সম্মেলন একেবারেই যখন দাঁড় প্রান্তে তখন আমার এবং ফোবানার কেন্দ্রিয় স্টেয়ারিং কমিটি নেতাদের বিরুদ্ধে ব্রুকলীনের ফেডারেল কোর্টে নিউজার্সীর জনৈক লোক একটি মামলা দায়ের করেন। এবং কোর্টের সমন আমাদের বাসা বাড়িতে ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের দপ্তরে প্রেরণ করেন (মামলার ফটোকপি আমাদের এই সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যের সাথে সংযুক্ত)। এ একথা সত্য যে দূর্ভাগ্য ফোবানাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এই সব মামলা-মকদ্দমা যারা করেছেন তারা আমাদের নিউইয়র্কেরই লোক। কিন্তু নিজদের মুখোশ আড়াল করে অন্য রাজ্যের একজন লোক দিয়ে মামলা করিয়ে আমার ও ফোবানার কেন্দ্রীয় স্টিয়ারিং কমিটির নেত্রীবৃন্দের আত্মমর্যাদার উপর আঘাত করেছেন, একই সাথে নিউইয়র্কের সকল বাংলাদেশী অভিবাসীর মুখে ও চপটাঘাত করেছেন। তারা এক সময় আমাদের সাথেই ফোবানা করেছেন। নিজের উচ্চাবিলাসী মনোভাবের কারনে পদপদবি না পেয়ে পত্রিকায় বিবৃতি দিয়ে ফোবানা থেকে পদত্যাগ করে ঘরে ফিরে গিয়েছিলেন। তিনি এখন মাঠে সরব, তাদেরই প্ররোচনায় ফোবানা এবং ফোবানার নেতৃবৃন্দ আজ কাঠগোড়ার আসামী। তিনি এখন প্রতিপক্ষের নেতৃত্ব প্রদান করেছেন। তাই আমরা আজ এই অপশক্তি ও এই অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে কমিউনিটির সকল স্তরের নেতৃবৃন্দকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ানোর জন্য উদ্বাত্ত আহবান জানাচ্ছি। আমরা এই অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা এবং ঘৃনা প্রকাশ করছি। মামলা যে কেউ করতে পারে, তার জন্য এই ক্ষোভ ও নিন্দা জ্ঞাপন করছি না। আজ একটি অনভিপ্রেত ও অনাকাক্ষিত মিথ্যা মামলার কারনে ফোবানা সম্মেলন নিয়ে গোটা কমিউনিটিতে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড় বইছে। সবার মুখে মুখে ছি! ছি! শব্দ। আমাদের উচিত ঐক্যবদ্ধভাবে এই সব মামলাবাজদের বিরুদ্ধে এবং তাদের সকল অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। আমরা সকল বাঁধা বিপত্তি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নিউইয়র্কে ফোবানা সম্মেলন করতে বদ্ধ পরিকর।
শাহ নেওয়াজ তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমরা এ সকল মামলা নিয়ে বিন্দুমাত্র চিন্তিত ও বিচলিত নই। বিষয়টি এখন আদালতে বিচারাধীন। এ বিষয় মাননীয় আদালত সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন। তাই এ বিষয়ে আমাদের কোন বক্তব্য নেই।
তিনি বলেন, গত ৩২ বৎসর পূর্বে এই অঞ্চলে আমাদের অভিবাসী জীবনের সকল জনমানুষের কল্যাণে এবং আমাদের কমিউনিটি শ্রী-বৃদ্ধি ও সমৃদ্ধ করার লক্ষ্যে ফোবানা নামক সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। কালের আবর্তে এই সব বর্ণ চোরাদের কারণে ফোবানার রং কিছুটা ম্লান হলেও ফোবানার ভাগ্যের সিঁকা ছিড়ে যায়নি। ফোবানা আছে এবং তা থাকবে। ফোবনার পরিচিতি এবং তার সুগন্ধ আজ বকুলের গন্ধ হয়ে সমগ্র নর্থ আমেরিকায় ছড়িয়ে পরেছে। এ কথা সত্য যে, তারপরও ফোবনার বিভক্তি বিভাজন ছিল সময়ে পরিনতি। ফোবনার বিভক্তি ও বিভাজনের খরগের আঘাতে ফোবনা আজ অনেকটাই ক্ষতবিক্ষত। এত কিছুর পর ও আপনারা এই ফোবানার পক্ষে নানাভাবে লিখে আসছেন এবং আপনাদের বহুল প্রচারিত পত্র পত্রিকায় প্রচার প্রচারণা দিয়ে আপনারা এবং আমরা আজ ফোবাবনাকে এত দূর পথ নিয়ে এসেছি। আপনাদের সকল প্রকার সাহায্য সহযোগিতা ফোবানার ইতিহাস স্বর্ণঅক্ষরে লেখা থাকবে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়: সংঘ সমিতির বিভাজন-বিভক্তি আজকের নতুন কোন বিষয় নয়। আমাদের কমিউনিটির জনমানুষের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। যারা মামলা মোকদ্দমা করে কমিউনিটির অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে চান এবং বাঁধা গ্রস্থ করতে চান তারা শেষ পর্যন্ত পরাজিত হবেন। বিজয় আমাদের নিশ্চিত। যারা মামলা করেছেন তারা নিজেকেই কলংকিত করেছেন। তারা যদি ফোবানার চারপাশ থেকে সরে দাঁড়ান তাহলে আমরা এবং ফোবানা সকল দিক থেকে কলংকমুক্ত হবো।
শাহ নেওয়াজ প্রশ্ন রেখে বলেন, আমার এবং ফোবানার কেন্দ্রীয় ষ্টিয়ারিং কমিটির বিরুদ্ধে মামলা করে তারা কার স্বার্থ রক্ষা করতে চান? আমরা জানি ফোবানার নামে চাঁন্দাবাজি করে আমাদের জনমানুষের কষ্টার্জিত টাকা দিয়ে ক্যাসিনোর আলোর ঝলকানীতে তারা জ্বলে উঠেন। বিনোদীনিদের নিয়ে লাল-নীল বাতির আলোর ঝলকানীতে অনেকে হারিয়ে যান। নিজেদের ও অন্যের পকেট ভারী করেন- এমন কথা বাজারে-রেস্তোরোয় এবং এই জনপদের মানুষের কাছে শুনতে পাওয়া যায়। এই সব করার জন্য ফোবানার জন্ম হয়নি। ফোবানাকে অপসংস্কৃতি মুক্ত করতেই হবে। এবং এর কোন বিকল্প নেই।
শাহ নেওয়াজ বলেন, আমরা মনে করি ফোবানা কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। যারা অনৈতিকভাবে ফোবানার পের্টান করেছেন তাদের উদ্দেশ্য কোন দিনই মহৎ ছিলোনা। ফোবানাকে তারা মনোপলি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান বানাতে চান। ফোবানা হচ্ছে নর্থ আমেরিকার সকল বাংলাদেশী জনমানুষের সংগঠন। তারা আজ নিজদের এবং কোন স্বার্থেন্বেষী মহলের হীন স্বার্থ উদ্ধার করা এবং অর্থ বানানোর হাতিয়ার হিসাবে ফোবানাকে ব্যবহার করে আসছেন। আর তা নির্বিগ্নে করার জন্য আমাদের উপর তাদের এত জ্বালা। আজ যারা সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রিত করতে চান তা তাদের করতে দেওয়া হবে না।
কবিতা দিয়ে শেষ করতে চাই।
‘‘নাগিনীরা আজ চারদিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিশ্বাস
শান্তির ললিত বানী শুধাইবে ব্যর্থ পরিহাস।’’