নিউইয়র্ক ০৯:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৫ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই নিউইয়র্ক মহানগর আ.লীগ থেকে জাকারিয়া চৌধুরীকে বহিষ্কার : নবী কমান্ডার-ইমদাদ চৌধুরী

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ১১:৪২:৩৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০১৭
  • / ১১৪৮ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে তাকে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেছেন নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি কমান্ডার নুর নবী ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরী। বহিস্কারের কপিটি ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অফিসেও হস্তান্তর করা হয়েছে।
বাংলাদেশে অবস্থানরত নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি কমান্ডার নুর নবী ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুর রহমান চৌধুরী কর্তৃক স্বাক্ষরিত ও জাকারিয়া চৌধুরী বরাবর প্রেরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের সুপারিশক্রমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মাননীয় সভাপতি জননেত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা এমপি’র নির্দেশে সংগঠনের নীতি, আদর্শ, চেতনা, মূল্যবোধ বিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত থাকা এবং সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আপনাকে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কার করা হলো’। গত ২৬ নভেম্বর প্রেরিত ঐ পত্রের কপি একই দিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি কার্যালয়েও প্রেরণ করা হয়েছে বলে পত্রে উল্লেখ করা হয়। এই খবর চাউর হয়ে যাওয়ার পর পরই জাকারিয়া চৌধুরীকে এটাকে ভূয়া খবর বলে মন্তব্য করে স্ট্যাটাস দেন। টাইম টেলিভিশনের সাথে আলাপকালেও তিনি এটাকে বিভ্রান্তিকর বলে অভিহিত করেন।
এবিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নুর নবী কমান্ডার ঢাকা থেকে বাংলা পত্রিকা’র সাথে আলাপকালে বলেন, জাকারিয়া চৌধুরী দলের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছিল। সে ছাত্রাবস্থায় শিবির করতো বলে এলাকাবাসী আমাদের জানিয়েছে। যেহেতু আমি নিজেও একই এলাকার বাসিন্দা। তিনি বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগ নিয়ে তার চক্রান্তের বিষয়টি গত রোববার (২৬ নভেম্বর) দুপুর দু’টার দিকে প্রধানমন্ত্রীকে আমি অবহিত করি। এ সময় আমার সাথে ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রী সবকিছু শুনার পর আমার কাছে জানতে চাইলেন কি চাই। আমি বল্লাম মাননীয় নেত্রী আপনি অনুমতি দিলেই এক্ষনি তাকে বহিস্কার করতে চাই। তখন প্রধানমন্ত্রী আমাকে তাৎক্ষনিকভাবে তাকে বহিষ্কারের অনুমতি দেন। এর প্রেক্ষিতে আমরা তাকে বহিষ্কার করেছি। এ সময় সেখানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ প্রধানমন্ত্রী অফিসের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী আমাদের যে নির্দেশ দিয়েছেন তার সাক্ষী হচ্ছেন সবাই। এছাড়া কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ অফিস থেকে বহিস্কারাদেশ আদেশ গ্রহন করা হয়েছে। বিষয়টি অসত্য হলে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় অফিস প্রধানমন্ত্রীর কথা উদৃত করা বহিষ্কারাদেশ গ্রহণ না করে আমাদের বিরুদ্ধে উল্টা ব্যবস্থা নিতো।
নুর নবী কমান্ডার বলেন, এখন সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরী নিউইয়র্ক ফিরে যাবেন। সেখানে তিনি যার সাথে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করবেন সহ সভাপতিদের মধ্যে এমন যে কাউকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দিতে পারেন। এজন্য তাকে আমি অনুমতি দিয়েছি।
নর নবী কমান্ডার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের এবিষয়ে নাক গলানোর কোন অধিকার নেই। কেননা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি দিয়েছেন স্বয়ং দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি চাইলে যে কাউকে দল থেকে বহিষ্কার করতে পারেন। আর সভাপতি হিসেবে আমি চাইলে যে কারো বিরুদ্ধা গঠনতন্ত্র মোতাবেক সিদ্ধান্ত নিতে পারি। এখানে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কিছু করার নেই।
নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরী রোববার রাতে বাংলা পত্রিকার সাথে ফোনে আলাপকালে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশকে নিয়ে কেউ কোন ধরনের অহেতুক ইস্যু সৃষ্টি করার সাহস নেই। জাকারিয়া চৌধুরীকে প্রধানমন্ত্রীকে নির্দেশেই বহিষ্কার করা হয়েছে। এবিষয়ক বিজ্ঞপ্তি নিয়ে কোন ধরনের সন্দেহ সংশয়ের অবকাশ নেই।
তবে কেউ কেউ এই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাদের উদ্দেশ্যে আমরা বলতে চাই যে, যে বা যারা দলের প্রধান ‘জাতির জনক’-এর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার আদেশকে অগ্রাহ্য করতে অহেতুক বিতর্কের সৃষ্টি করছে। তাদের আওয়ামী লীগ করার কোন অধিকার নেই। এনিয়ে কারো সন্দেহ থাকলে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী অফিসে যোগাযোগ করুন। আমি বাংলাদেশে অবস্থান করছি। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রধানমন্ত্রী এবং দলীয় প্রধানের কোন সিদ্ধান্তকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করবে এমন সাহস কারো আছে কি না আমার জানা নেই।
উল্লেখ্য যে, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি দাবীদার জাকারিয়া চৌধুরী সভাপতি কমান্ডার নুর নবীর পরিবর্তে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। কমান্ডার নবী গত বছর থেকে সাময়িকভাবে দেশে অবস্থানের কারণে জাকারিয়া চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
গত সপ্তাহে জাকারিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে অসাংগঠনিক তৎপরতার অভিযোগ তুলেন সভাপতি নুর নবী কমান্ডার। এর পর পরই বিতর্কিত এক সভায় জাকারিয়া চৌধুরী তাৎক্ষনিকভাবে নিজ গুরু নুরুন্নবীকে বহিস্কার করে নিজেই গুরুর চেয়ার দখল করে নেন। অনুগতদের নিয়ে ডাকা এক সভায় নিজেই নিজেকে অধিষ্ঠিত করেন সভাপতির আসনে।
বাংলাদেশে অবস্থানরত মহনগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরীর বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার নিদেশে আমরা তাকে বহিষ্কার করেছি। দেশে বিএনপি-জামাত জোট যখন সরকার বিরোধী চক্রান্তে মরিয়া হয়ে মাঠে নানা ধরনের চক্রান্ত করছে তখন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতিকে অবৈধভাবে বাদ দিয়ে চর দখলের মত জাকারিয়া চৌধুরী সভাপতির পদ দখল করেছে। মহনগর তথা আওয়ামী লীগ পরিবারকে এটা দ্বিধা বিভক্ত করার সুদুর প্রসারী চক্রান্ত ছাড়া আর কিছু নয়। এছাড়া এর আগে তিনি বিভিন্ন বিতর্কিত পদক্ষেপ নিয়ে একটি কুটারী সৃষ্টি করেছেন।
জাকারিয়া চৌধুরীর উটবস এমন সব লোকদের সাথে যারা এক সময় ফ্রীডম পার্টি এবং সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে বিপদে ফেলার চক্রান্তে লিপ্ত ছিল। এটা এখন প্রমানিত সত্য। এজন্যই এই ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছি আমরা।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধা নুরুন্নবী কমান্ডার এক ভিডিও বার্তায় জাকারিয়া চৌধুরীকে চক্রান্তকারী আখ্যায়িত করে তার কথায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, জাকারিয়া চৌধুরী বা তার ভাই নিজাম চৌধুরী এবং আমি একই এলাকার বাসিন্দা। তারা কখনো আওয়ামী লীগের লোক নয়। এরা হচ্ছে জামাত। তার ভাই বাহাদুর রাজাকার ছিলেন চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধী। তাদের পরিবার কখনো আওয়ামী লীগের পক্ষের নয়। যার প্রমান হচ্ছে জাকারিয়া চৌধুরীর বিভিন্ন কর্মকান্ড এবং তার সহচরবৃন্দ।
তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফের ইন্তেকালের পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে যিনি বছরের পর বছর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনিও নিজে সভাপতি হয়েছেন দলীয় সাধারণ সভার মাধ্যমে। এক্ষেত্রে জাকারিয়া চৌধুরী অনুগত কয়েকজনকে নিয়ে সাধারণ সভা ছাড়াই নিজেকে সভাপতি হিসেবে ঘোষণা দিয়ে সংবিধান ও গঠনতন্ত্র লংঘন করেছেন।
অবস্থার প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্ভুত পরিস্থিতি বিশেষ করে জাকারিয়া চৌধুরীর বহিষ্কার সম্পর্কে আমি লিখিত কোন কিছু জানিনা। তাই এব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে চাইনা। তরে নবী কমান্ডারকে বাদ দিয়ে জাকারিয়া চৌধুরী যেভাবে ক্ষমতাসীন হয়েছেন তা কোনভাবেই গঠনতান্ত্রিক হয়নি।
প্রায় একই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আপাতত: কোন মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ।
এদিকে রোববার এক তাৎক্ষনিক এক বিবৃতি দেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান। বিবৃতিতে তিনি বলেন: আমরা সবাই অবগত রয়েছি আমাদের প্রাণ প্রিয় নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ, যুগোপোযুগী এবং গতিশীল নেতৃত্বে বিংশ শতাব্দীতে দেশ এমন সুন্দর ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে যেটি সারা বিশ্বের জন্য একটি বিস্ময়। বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ আজ রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই ধারাকে আরও বেগবান করতে দরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের সুসংহত অবস্থান। কোন অবস্থাতেই আমরা যেন কোন অনৈক্য, একে অপরের প্রতি বিষোদগার, পাল্টাপাল্টি প্রকাশ্য বক্তব্য, বহিস্কার এ সমস্ত কর্মকান্ড জড়িয়ে না পরি। আওয়ামী লীগ একটি সুবিশাল রাজনৈতিক দল। স্বদেশে এবং এই প্রবাসের মাটিতে দলের কর্মকান্ড অত্যন্ত শক্তিশালী। আমার বিশ্বাস দলের প্রতিটি নেতা-কর্মী মন প্রাণ উজাড় করে দলের জন্য নিবেদিত ভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়া এখানে বিবেচ্য বিষয় নয়। আর এটিই হচ্ছে আওয়ামী লীগারদের সবচেয়ে বড় শক্তি। যেটি অন্যান্য দলগুলোর জন্য ঈর্ষণীয়’।
বিবৃতিতে ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন: ‘আমাদের মাঝে কিছু কিছু বিষয়ে মতভেদ, মত পার্থক্য থাকতেই পারে, সেটি গনতন্ত্রেরই অংশ,কিন্ত প্রকাশ্যে সে বিষয়ে মন্তব্য, বক্তব্য মোটেও বিবেচনা প্রসূত নয়। যে কোন উদ্ভূত পরিস্থিতির যদি অবতারনা হয় তা নিয়ে আমরা দলীয় কার্যকরী ফোরামে চুলচেরা বিশ্লে¬ষণ করে সাংগঠনিক নিয়ম-কানুন মেনে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিতে পারি। আর তাই আসুন আমরা সকলে মিলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হতে এই যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ঐক্যের এক মহা দৃষ্টান্ত স্থাপন করি। যে ঐক্যের কথা বার বার বলছেন আমাদের মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনা এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের স্থপতি সজীব ওয়াজেদ জয়। আসুন সমস্বরে আওয়াজ তুলি ‘অনৈক্য নয়, সুদৃঢ় ঐক্যই হোক আমাদের চলার পথের পাথেয়।
বহিষ্কার বিষয়ে রোববার জাকারিয়া চৌধুরীর সাথে (২৬ নভেম্বর) ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কতিপয় প্রতারক চক্র সামাজিক যোগাযোগ মধ্যমে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নাম বিক্রি করে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ সম্পর্কে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর খবর ছড়াচ্ছে যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করে যার কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। এজন্য বিভ্রান্ত না হয়ে এদের সম্পকে সবাইকে সজাগ থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি’।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি কমান্ডার নূর নবী বাংলাদেশে চলে যাওয়ার পর সংগঠনের সহ সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। সভাপতি নূর নবীর সহসাই যুক্তরাষ্ট্র ফিরে না আসা সহ সংগঠনের অভ্যন্তরীন নানা কোন্দলের মুখে গত ২০ নভেম্বর সোমবার নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি রেষ্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদের এক সভায় জাকারিয়া চৌধুরীকে ভারমুক্ত করে সভাপতির দায়িত্ব দেয়া সহ কয়েকটি পদে রদবদল করা হয়। এনিয়ে দলের মধ্যে ব্যাপক মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায় এবং দলীয় নেতা-কর্মী নতুন করে বিভক্ত হয়ে পড়েন। অপরদিকে ঢাকা থেকে প্রেরিত পৃথক পৃথক বার্তায় মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদের কয়েকটি পদে রদবদল করা হয়। এনিয়েও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। উদ্ধুত পরিস্থিতিতে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিয়ে নতুন করে সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে জাকারিয়া চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন মহানগর আওয়ামী লীগের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিদতে বলা হয়েছে: গত ২০ নভেম্বর সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় জ্যাকসন হাইটসের ‘টক অফ দি টাউন’ রেষ্টুরেন্টে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ-এর কার্যকরী পরিষদের এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সর্বসম্মতক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্ত সমুহ নি¤œরূপ:
১. নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরীকে ভারমুক্ত ঘোষনা করে পূর্ণ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সিদ্ধান্ত সর্ব সম্মতক্রমে গৃহীত হয়। এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান কর্তৃক ইতিপূর্বে জাকারিয়া চৌধুরীকে ভারমুক্ত হয়ে পূর্ণ দায়িত্ব পালনের ঘোষনাকে স্বাগত জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয়।
২. দীর্ঘ ১১ মাস যাবৎ বাংলাদেশে অবস্থানরত সভাপতি কমান্ডার নূর নবী কর্তৃক কার্যকরী পরিষদকে পাস কাটিয়ে অবৈধ ভাবে দলে পদোন্নতি ও সংযোজনের নামে দলকে দ্বীধাভিবক্ত করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
৩. মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে সহ সভাপতি মাসুদ হোসেন সিরাজীকে আহ্বায়ক, সহ সভাপতি মোর্শেদা জামানকে প্রধান সমন্বয়কারী ও যুগ্ম সম্পাদক শিমুল হাসানকে সদস্য সচিব করে বিজয় দিবস উদযাপন কমিটি ঘোষনা করা হয়।
৪. সহ সভাপতি সাকুর খান মাখন মিশিগানে চলে যাওয়ার প্রেক্ষিতে তার স্থলে আবুল হোসেনকে সহ সভাপতি পদে পদায়ন করা হয়। খন্দকার হাবীবউল¬া বাহার যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে তার স্থলে মোর্শেদা জামানকে সহ সভাপতি পদে পদায়ন করা হয়। হুমায়ুন কবির বাংলাদেশে চলে যাওয়ার প্রেক্তিতে তার স্থলে আব্দুল কাদের মিঞাকে সহ সভাপতি পদে পদায়ন করা হয়। দলীয় কার্যক্রমে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত থাকায় সহ সভাপতি রফিকুর রহমান এর স্থলে মোহাম্মদ এম. উদ্দিন (আলমগীর) কে সহ সভাপতি পদে পদায়ন করা হয়। দলীয় কার্যক্রমে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত থাকায় যুগ্ম সম্পাদক আইয়ুব আলীর স্থলে শিমুল হাসানকে যুগ্ম সম্পাদকে পদায়ন করা হয়। মুল ধারার রাজনীতিক ও দলীয় কর্মকান্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখায় খায়রুল ইসলাম খোকন ও সুব্রত তালুকদারকে যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে পদায়ন করা হয়।
সাংগঠনিক সম্পাদক শিমুল হাসানের স্থলে মোঃ নান্টু মিয়া, মোঃ মাহফুজুল হক হায়দার ও মোঃ সুমন মাহমুদকে সাংগঠনিক সম্পাদকে পদায়ন করা হয়। এছাড়া শূণ্য পদে রাজ চৌধুরীকে অর্থ ও গবেষনা সম্পাদক, রাজিব খানকে বন ও পরিবেশ সম্পাদক, রানা আহম্মদকে আইন সম্পাদক পদে পদায়ন করা হয়। কার্যকরী সদস্য হিসেবে আব্দুল কুদ্দুস টিটু, শওকত হোসেন খান, নাজিমউদ্দিন, আরবাব সিমন, রায়হানুর রহমান, ইয়াসির শারাফত তুহিন, যুবায়ের আল হাসান, রায়হান কবির বনী, উজ্জল মাহমুদ, রবিউল হোসেন রুবেল, মোসা আহম্মেদ, মোঃ রুহুল আমিন, মোঃ রুহুল আমিন, মোঃ নূরুল আমিন, অমিত হাসান সাজু, মোঃ ফয়সাল আহমেদ রুবেল, সোহাগ চৌধুরী, মোঃ আবদুল হক, মোঃ হাবিব, হারুন মান্নান, লোটাস ধর, মোঃ জিয়উল হক, মোহাম্মদ ওমর ফারুক, এম. ফয়সাল আহমেদ ও মোহাম্মদ সাজ্জাদ।(সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই নিউইয়র্ক মহানগর আ.লীগ থেকে জাকারিয়া চৌধুরীকে বহিষ্কার : নবী কমান্ডার-ইমদাদ চৌধুরী

প্রকাশের সময় : ১১:৪২:৩৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০১৭

নিউইয়র্ক: নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরীকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে তাকে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেছেন নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি কমান্ডার নুর নবী ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরী। বহিস্কারের কপিটি ইতোমধ্যেই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অফিসেও হস্তান্তর করা হয়েছে।
বাংলাদেশে অবস্থানরত নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি কমান্ডার নুর নবী ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুর রহমান চৌধুরী কর্তৃক স্বাক্ষরিত ও জাকারিয়া চৌধুরী বরাবর প্রেরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যনির্বাহী সংসদের সুপারিশক্রমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মাননীয় সভাপতি জননেত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা এমপি’র নির্দেশে সংগঠনের নীতি, আদর্শ, চেতনা, মূল্যবোধ বিরোধী কার্যক্রমে যুক্ত থাকা এবং সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আপনাকে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি পদ থেকে বহিষ্কার করা হলো’। গত ২৬ নভেম্বর প্রেরিত ঐ পত্রের কপি একই দিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি কার্যালয়েও প্রেরণ করা হয়েছে বলে পত্রে উল্লেখ করা হয়। এই খবর চাউর হয়ে যাওয়ার পর পরই জাকারিয়া চৌধুরীকে এটাকে ভূয়া খবর বলে মন্তব্য করে স্ট্যাটাস দেন। টাইম টেলিভিশনের সাথে আলাপকালেও তিনি এটাকে বিভ্রান্তিকর বলে অভিহিত করেন।
এবিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নুর নবী কমান্ডার ঢাকা থেকে বাংলা পত্রিকা’র সাথে আলাপকালে বলেন, জাকারিয়া চৌধুরী দলের বিরুদ্ধে চক্রান্ত করছিল। সে ছাত্রাবস্থায় শিবির করতো বলে এলাকাবাসী আমাদের জানিয়েছে। যেহেতু আমি নিজেও একই এলাকার বাসিন্দা। তিনি বলেন, মহানগর আওয়ামী লীগ নিয়ে তার চক্রান্তের বিষয়টি গত রোববার (২৬ নভেম্বর) দুপুর দু’টার দিকে প্রধানমন্ত্রীকে আমি অবহিত করি। এ সময় আমার সাথে ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রী সবকিছু শুনার পর আমার কাছে জানতে চাইলেন কি চাই। আমি বল্লাম মাননীয় নেত্রী আপনি অনুমতি দিলেই এক্ষনি তাকে বহিস্কার করতে চাই। তখন প্রধানমন্ত্রী আমাকে তাৎক্ষনিকভাবে তাকে বহিষ্কারের অনুমতি দেন। এর প্রেক্ষিতে আমরা তাকে বহিষ্কার করেছি। এ সময় সেখানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সহ প্রধানমন্ত্রী অফিসের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী আমাদের যে নির্দেশ দিয়েছেন তার সাক্ষী হচ্ছেন সবাই। এছাড়া কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ অফিস থেকে বহিস্কারাদেশ আদেশ গ্রহন করা হয়েছে। বিষয়টি অসত্য হলে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় অফিস প্রধানমন্ত্রীর কথা উদৃত করা বহিষ্কারাদেশ গ্রহণ না করে আমাদের বিরুদ্ধে উল্টা ব্যবস্থা নিতো।
নুর নবী কমান্ডার বলেন, এখন সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরী নিউইয়র্ক ফিরে যাবেন। সেখানে তিনি যার সাথে কাজ করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করবেন সহ সভাপতিদের মধ্যে এমন যে কাউকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দিতে পারেন। এজন্য তাকে আমি অনুমতি দিয়েছি।
নর নবী কমান্ডার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের এবিষয়ে নাক গলানোর কোন অধিকার নেই। কেননা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি দিয়েছেন স্বয়ং দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি চাইলে যে কাউকে দল থেকে বহিষ্কার করতে পারেন। আর সভাপতি হিসেবে আমি চাইলে যে কারো বিরুদ্ধা গঠনতন্ত্র মোতাবেক সিদ্ধান্ত নিতে পারি। এখানে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কিছু করার নেই।
নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরী রোববার রাতে বাংলা পত্রিকার সাথে ফোনে আলাপকালে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশকে নিয়ে কেউ কোন ধরনের অহেতুক ইস্যু সৃষ্টি করার সাহস নেই। জাকারিয়া চৌধুরীকে প্রধানমন্ত্রীকে নির্দেশেই বহিষ্কার করা হয়েছে। এবিষয়ক বিজ্ঞপ্তি নিয়ে কোন ধরনের সন্দেহ সংশয়ের অবকাশ নেই।
তবে কেউ কেউ এই বিজ্ঞপ্তি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাদের উদ্দেশ্যে আমরা বলতে চাই যে, যে বা যারা দলের প্রধান ‘জাতির জনক’-এর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার আদেশকে অগ্রাহ্য করতে অহেতুক বিতর্কের সৃষ্টি করছে। তাদের আওয়ামী লীগ করার কোন অধিকার নেই। এনিয়ে কারো সন্দেহ থাকলে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী অফিসে যোগাযোগ করুন। আমি বাংলাদেশে অবস্থান করছি। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রধানমন্ত্রী এবং দলীয় প্রধানের কোন সিদ্ধান্তকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করবে এমন সাহস কারো আছে কি না আমার জানা নেই।
উল্লেখ্য যে, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি দাবীদার জাকারিয়া চৌধুরী সভাপতি কমান্ডার নুর নবীর পরিবর্তে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। কমান্ডার নবী গত বছর থেকে সাময়িকভাবে দেশে অবস্থানের কারণে জাকারিয়া চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
গত সপ্তাহে জাকারিয়া চৌধুরীর বিরুদ্ধে অসাংগঠনিক তৎপরতার অভিযোগ তুলেন সভাপতি নুর নবী কমান্ডার। এর পর পরই বিতর্কিত এক সভায় জাকারিয়া চৌধুরী তাৎক্ষনিকভাবে নিজ গুরু নুরুন্নবীকে বহিস্কার করে নিজেই গুরুর চেয়ার দখল করে নেন। অনুগতদের নিয়ে ডাকা এক সভায় নিজেই নিজেকে অধিষ্ঠিত করেন সভাপতির আসনে।
বাংলাদেশে অবস্থানরত মহনগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ চৌধুরীর বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার নিদেশে আমরা তাকে বহিষ্কার করেছি। দেশে বিএনপি-জামাত জোট যখন সরকার বিরোধী চক্রান্তে মরিয়া হয়ে মাঠে নানা ধরনের চক্রান্ত করছে তখন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতিকে অবৈধভাবে বাদ দিয়ে চর দখলের মত জাকারিয়া চৌধুরী সভাপতির পদ দখল করেছে। মহনগর তথা আওয়ামী লীগ পরিবারকে এটা দ্বিধা বিভক্ত করার সুদুর প্রসারী চক্রান্ত ছাড়া আর কিছু নয়। এছাড়া এর আগে তিনি বিভিন্ন বিতর্কিত পদক্ষেপ নিয়ে একটি কুটারী সৃষ্টি করেছেন।
জাকারিয়া চৌধুরীর উটবস এমন সব লোকদের সাথে যারা এক সময় ফ্রীডম পার্টি এবং সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে বিপদে ফেলার চক্রান্তে লিপ্ত ছিল। এটা এখন প্রমানিত সত্য। এজন্যই এই ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছি আমরা।
এদিকে মুক্তিযোদ্ধা নুরুন্নবী কমান্ডার এক ভিডিও বার্তায় জাকারিয়া চৌধুরীকে চক্রান্তকারী আখ্যায়িত করে তার কথায় বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, জাকারিয়া চৌধুরী বা তার ভাই নিজাম চৌধুরী এবং আমি একই এলাকার বাসিন্দা। তারা কখনো আওয়ামী লীগের লোক নয়। এরা হচ্ছে জামাত। তার ভাই বাহাদুর রাজাকার ছিলেন চিহ্নিত স্বাধীনতা বিরোধী। তাদের পরিবার কখনো আওয়ামী লীগের পক্ষের নয়। যার প্রমান হচ্ছে জাকারিয়া চৌধুরীর বিভিন্ন কর্মকান্ড এবং তার সহচরবৃন্দ।
তিনি বলেন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ হানিফের ইন্তেকালের পর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে যিনি বছরের পর বছর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনিও নিজে সভাপতি হয়েছেন দলীয় সাধারণ সভার মাধ্যমে। এক্ষেত্রে জাকারিয়া চৌধুরী অনুগত কয়েকজনকে নিয়ে সাধারণ সভা ছাড়াই নিজেকে সভাপতি হিসেবে ঘোষণা দিয়ে সংবিধান ও গঠনতন্ত্র লংঘন করেছেন।
অবস্থার প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের উদ্ভুত পরিস্থিতি বিশেষ করে জাকারিয়া চৌধুরীর বহিষ্কার সম্পর্কে আমি লিখিত কোন কিছু জানিনা। তাই এব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে চাইনা। তরে নবী কমান্ডারকে বাদ দিয়ে জাকারিয়া চৌধুরী যেভাবে ক্ষমতাসীন হয়েছেন তা কোনভাবেই গঠনতান্ত্রিক হয়নি।
প্রায় একই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আপাতত: কোন মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ।
এদিকে রোববার এক তাৎক্ষনিক এক বিবৃতি দেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান। বিবৃতিতে তিনি বলেন: আমরা সবাই অবগত রয়েছি আমাদের প্রাণ প্রিয় নেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ, যুগোপোযুগী এবং গতিশীল নেতৃত্বে বিংশ শতাব্দীতে দেশ এমন সুন্দর ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে যেটি সারা বিশ্বের জন্য একটি বিস্ময়। বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশ আজ রোল মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই ধারাকে আরও বেগবান করতে দরকার দলীয় নেতা-কর্মীদের সুসংহত অবস্থান। কোন অবস্থাতেই আমরা যেন কোন অনৈক্য, একে অপরের প্রতি বিষোদগার, পাল্টাপাল্টি প্রকাশ্য বক্তব্য, বহিস্কার এ সমস্ত কর্মকান্ড জড়িয়ে না পরি। আওয়ামী লীগ একটি সুবিশাল রাজনৈতিক দল। স্বদেশে এবং এই প্রবাসের মাটিতে দলের কর্মকান্ড অত্যন্ত শক্তিশালী। আমার বিশ্বাস দলের প্রতিটি নেতা-কর্মী মন প্রাণ উজাড় করে দলের জন্য নিবেদিত ভাবে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়া এখানে বিবেচ্য বিষয় নয়। আর এটিই হচ্ছে আওয়ামী লীগারদের সবচেয়ে বড় শক্তি। যেটি অন্যান্য দলগুলোর জন্য ঈর্ষণীয়’।
বিবৃতিতে ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন: ‘আমাদের মাঝে কিছু কিছু বিষয়ে মতভেদ, মত পার্থক্য থাকতেই পারে, সেটি গনতন্ত্রেরই অংশ,কিন্ত প্রকাশ্যে সে বিষয়ে মন্তব্য, বক্তব্য মোটেও বিবেচনা প্রসূত নয়। যে কোন উদ্ভূত পরিস্থিতির যদি অবতারনা হয় তা নিয়ে আমরা দলীয় কার্যকরী ফোরামে চুলচেরা বিশ্লে¬ষণ করে সাংগঠনিক নিয়ম-কানুন মেনে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত নিতে পারি। আর তাই আসুন আমরা সকলে মিলে আগামী জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হতে এই যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ঐক্যের এক মহা দৃষ্টান্ত স্থাপন করি। যে ঐক্যের কথা বার বার বলছেন আমাদের মাননীয় নেত্রী শেখ হাসিনা এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের স্থপতি সজীব ওয়াজেদ জয়। আসুন সমস্বরে আওয়াজ তুলি ‘অনৈক্য নয়, সুদৃঢ় ঐক্যই হোক আমাদের চলার পথের পাথেয়।
বহিষ্কার বিষয়ে রোববার জাকারিয়া চৌধুরীর সাথে (২৬ নভেম্বর) ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘কতিপয় প্রতারক চক্র সামাজিক যোগাযোগ মধ্যমে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের নাম বিক্রি করে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ সম্পর্কে বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর খবর ছড়াচ্ছে যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ করে যার কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। এজন্য বিভ্রান্ত না হয়ে এদের সম্পকে সবাইকে সজাগ থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি’।
উল্লেখ্য, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি কমান্ডার নূর নবী বাংলাদেশে চলে যাওয়ার পর সংগঠনের সহ সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। সভাপতি নূর নবীর সহসাই যুক্তরাষ্ট্র ফিরে না আসা সহ সংগঠনের অভ্যন্তরীন নানা কোন্দলের মুখে গত ২০ নভেম্বর সোমবার নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি রেষ্টুরেন্টে অনুষ্ঠিত মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদের এক সভায় জাকারিয়া চৌধুরীকে ভারমুক্ত করে সভাপতির দায়িত্ব দেয়া সহ কয়েকটি পদে রদবদল করা হয়। এনিয়ে দলের মধ্যে ব্যাপক মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যায় এবং দলীয় নেতা-কর্মী নতুন করে বিভক্ত হয়ে পড়েন। অপরদিকে ঢাকা থেকে প্রেরিত পৃথক পৃথক বার্তায় মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদের কয়েকটি পদে রদবদল করা হয়। এনিয়েও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। উদ্ধুত পরিস্থিতিতে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব নিয়ে নতুন করে সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে জাকারিয়া চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন মহানগর আওয়ামী লীগের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিদতে বলা হয়েছে: গত ২০ নভেম্বর সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় জ্যাকসন হাইটসের ‘টক অফ দি টাউন’ রেষ্টুরেন্টে নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ-এর কার্যকরী পরিষদের এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সর্বসম্মতক্রমে গৃহীত সিদ্ধান্ত সমুহ নি¤œরূপ:
১. নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরীকে ভারমুক্ত ঘোষনা করে পূর্ণ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সিদ্ধান্ত সর্ব সম্মতক্রমে গৃহীত হয়। এবং যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান কর্তৃক ইতিপূর্বে জাকারিয়া চৌধুরীকে ভারমুক্ত হয়ে পূর্ণ দায়িত্ব পালনের ঘোষনাকে স্বাগত জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করা হয়।
২. দীর্ঘ ১১ মাস যাবৎ বাংলাদেশে অবস্থানরত সভাপতি কমান্ডার নূর নবী কর্তৃক কার্যকরী পরিষদকে পাস কাটিয়ে অবৈধ ভাবে দলে পদোন্নতি ও সংযোজনের নামে দলকে দ্বীধাভিবক্ত করার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
৩. মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে সহ সভাপতি মাসুদ হোসেন সিরাজীকে আহ্বায়ক, সহ সভাপতি মোর্শেদা জামানকে প্রধান সমন্বয়কারী ও যুগ্ম সম্পাদক শিমুল হাসানকে সদস্য সচিব করে বিজয় দিবস উদযাপন কমিটি ঘোষনা করা হয়।
৪. সহ সভাপতি সাকুর খান মাখন মিশিগানে চলে যাওয়ার প্রেক্ষিতে তার স্থলে আবুল হোসেনকে সহ সভাপতি পদে পদায়ন করা হয়। খন্দকার হাবীবউল¬া বাহার যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে তার স্থলে মোর্শেদা জামানকে সহ সভাপতি পদে পদায়ন করা হয়। হুমায়ুন কবির বাংলাদেশে চলে যাওয়ার প্রেক্তিতে তার স্থলে আব্দুল কাদের মিঞাকে সহ সভাপতি পদে পদায়ন করা হয়। দলীয় কার্যক্রমে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত থাকায় সহ সভাপতি রফিকুর রহমান এর স্থলে মোহাম্মদ এম. উদ্দিন (আলমগীর) কে সহ সভাপতি পদে পদায়ন করা হয়। দলীয় কার্যক্রমে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত থাকায় যুগ্ম সম্পাদক আইয়ুব আলীর স্থলে শিমুল হাসানকে যুগ্ম সম্পাদকে পদায়ন করা হয়। মুল ধারার রাজনীতিক ও দলীয় কর্মকান্ডে সক্রিয় ভূমিকা রাখায় খায়রুল ইসলাম খোকন ও সুব্রত তালুকদারকে যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে পদায়ন করা হয়।
সাংগঠনিক সম্পাদক শিমুল হাসানের স্থলে মোঃ নান্টু মিয়া, মোঃ মাহফুজুল হক হায়দার ও মোঃ সুমন মাহমুদকে সাংগঠনিক সম্পাদকে পদায়ন করা হয়। এছাড়া শূণ্য পদে রাজ চৌধুরীকে অর্থ ও গবেষনা সম্পাদক, রাজিব খানকে বন ও পরিবেশ সম্পাদক, রানা আহম্মদকে আইন সম্পাদক পদে পদায়ন করা হয়। কার্যকরী সদস্য হিসেবে আব্দুল কুদ্দুস টিটু, শওকত হোসেন খান, নাজিমউদ্দিন, আরবাব সিমন, রায়হানুর রহমান, ইয়াসির শারাফত তুহিন, যুবায়ের আল হাসান, রায়হান কবির বনী, উজ্জল মাহমুদ, রবিউল হোসেন রুবেল, মোসা আহম্মেদ, মোঃ রুহুল আমিন, মোঃ রুহুল আমিন, মোঃ নূরুল আমিন, অমিত হাসান সাজু, মোঃ ফয়সাল আহমেদ রুবেল, সোহাগ চৌধুরী, মোঃ আবদুল হক, মোঃ হাবিব, হারুন মান্নান, লোটাস ধর, মোঃ জিয়উল হক, মোহাম্মদ ওমর ফারুক, এম. ফয়সাল আহমেদ ও মোহাম্মদ সাজ্জাদ।(সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)