নিউইয়র্ক-কানাডায় কোটি কোটি ডলারের সম্পত্তি

- প্রকাশের সময় : ০১:৫০:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২১ অগাস্ট ২০১৯
- / ৫৩৮ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: আমেরিকা-কানাডা ছাড়াও মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দুবাই লন্ডন সহ বিশ্বেও বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী আমলা-রাজনীতিকদের অবৈধভাবে বাড়ী-গাড়ী সম্পত্তি গড়ে তোলার অভিযোগ নতুন নয়। শুধু অভিযোগ-ই নয় এসবের খবর মিডিয়ায় প্রকাশ/প্রচারিত হওয়ার পাশাপাশি প্রবাসীদের মুখে মুখে। অভিযোগ রয়েছে বাংলাদেশের মন্ত্রী-আমলা-রাজনীতিকদের বিদেশে শত শত কোটি ডলারের বাড়ী-গাড়ী-সম্পত্তি রয়েছে। যা অবৈধ অর্থে ক্রয় করে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। এসব ঘটনায় প্রবাসীরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা দেশে-বিদেশে অবৈধ সম্পত্তির তদন্ত পূর্বক সংশ্লিস্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রতি দাবী জানিয়েছেন। গত বছর সাবেক এক মন্ত্রী ও তার পুত্রের নিউইয়র্কে একাধিক বাড়ীর ঘটনার খবর বাংলা পত্রিকা ও টাইম টেলিভিশনে প্রচারিত হওয়ার পর খবরটি ভাইরালে রূপ নেয়।
বাংলাদেশের মন্ত্রী-আমলা-রাজনীতিকদের বিদেশে বাড়ী-গাড়ী-সম্পত্তির হাজারো খবরের ভীড়ে আরো একটি খবর নতুন না হলেও খবরটি চমকপ্রদ, ভীত কাঁপিয়ে দেয়ার মতো, কল্পনাতীত, অবিশ্বাস্য। বাংলাদেশের এক সাবেক আমলার নিউইয়র্ক ও কানাডায় শত কোটি ডলারের বাড়ী-সম্পত্তি। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে এসব সম্পত্তির মালিক তিনি নন, সব সম্পত্তির মালিক তার স্ত্রী-পুত্র-কন্যা আর আত্বীয়-স্বজনের নামে। এক চাকুরী জীবনে এক সম্পত্তির মালিক হওয়ার নেপথ্যে রয়েছে কর্মক্ষেত্রে চরম দূর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, ক্ষমতাসীনদের নাম ভাঙানো প্রভৃতি। দূদকের তার বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। আর এতো সম্পত্তি করার পরও তার কোন সাজা হয়নি। অভিযোগ উঠেছে সংশ্লিস্টরা তার দূর্নীতি দেখেও না দেখার ভান করছেন। ফলে বহাল তবিয়তে ভোগ করে চলেছেন তা। অভিযোগ উঠেছে মোহাম্মদ তৌফিক বাংলাদেশ থেকে ১০ মিলিয়ন ডলারেরও উপর যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা আর দুবাইয়ে হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করেছেন। বাংলা পত্রিকা’র অনুসন্ধানে বাংলাদেশের এমনই এক সাবেক আমলার চরম দূর্নীতির তথ্য পাওয়া গেছে।
ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ তৌফিক-এর এতো বিপুল অবৈধ সম্পত্তির মালিক হওয়ার ঘটনা প্রবাসীদের মুখে মুখে রটলেও জনমনে প্রশ্নের শেষ নেই। প্রবাসীদের প্রশ্ন একটি সরকারী চাকুরী করে মোহাম্মদ তৌফিক এতো সম্পত্তির মালিক হলেন কি করে? মোহাম্মদ তৌফিকের খুঁটির জোর কোথায়? এতো অর্থ আয়ের ‘আলাদিনের চেরাগ’ কোথায় পেলেন মি. মোহাম্মদ তৌফিক? বাংলাদেশের দুদক-এর কাজ কি? প্রভৃতি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাঞ্চল্যকর এই অবৈধভাবে সম্পত্তির মালিক বনে যাওয়া বাংলাদেশের সেই সাবেক আমলার নাম ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ তৌফিক। ছিলেন বাংলাদেশ টেলিকমিনিউকেশন কোম্পানী লিমিটেড (বিটিসিএল)-এর কর্মকর্তা (রক্ষাণাবেক্ষণ ও পরিচালনা)। দায়িত্ব পালন করেছেন প্রতিষ্ঠানটির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) ও পরিচালক পদেও। সর্বশেষ বিটিসিএল-এর সদস্য হিসেবে বছর তিন আগে অবসর নিয়েছেন। এই পদে থাকাকালীন সময়ে তিনি অবৈধ ভিওআইপি ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেডের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করেন। বিটিসিএল-এর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকেই তিনি অর্থের পাহাড় গড়ে সেই অর্থ আমেরিকা-কানাডায় হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করেছেন। আলোচিত এই আমলার স্ত্রীর নাম রৌশন এ তৌফিক। তার দুই পুত্র আর এক কন্যার মধ্যে এক পুত্রের নাম তাসফিকুর রহমান, অপর পুত্রের নাম তৌসিফুর রহমান আর কন্যার নাম তাহাইয়া আরা তৌফিক বলে জানা গেছে। তার পুত্রদ্বয় কানাডার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছেন আর স্ত্রী-কন্যা নিউইয়কেই বসবাস করছেন।
নানা সূত্রের অভিযোগ আর অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিউইয়র্কে নাম সর্বস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে বাংলাদেশ থেকে অর্থ এনে মোহাম্মদ তৌফিক এখানে প্রায় এক ডজন বাড়ী ক্রয় করেছেন। এরধ্যে ৯টি বাড়ীর সন্ধান পাওয়া গেছে। বাড়ীগুলোর ঠিকানা হচ্ছে: ১৪৮-৫২ ৮৭ রোড, ব্রয়ারউড, জ্যামাইকা, নিউইয়র্ক-১১৪৩৫, ২৫-১২ ৮১ স্ট্রীট, ইষ্ট এলমহার্স্ট, নিউইয়র্ক-১১৩৭০, ২৫-০৮ ৮১ স্ট্রীট, ইষ্ট এলমহার্স্ট, নিউইয়র্ক-১১৩৭০, ১৩৯-৪২ ৮৬ রোড, ব্রয়ারউড, জ্যামাইকা, নিউইয়র্ক-১১৪৩৫, ১৪৪-১৫ ২৫৬ স্ট্রীট, রোজডেল, নিউইয়র্ক-১১৪২২, ১৪৭-২৯ ২৩০ প্লেস, স্প্রীংফিল্ড গার্ডেন, নিউইয়র্ক-১১৪১৩,
১৪৭-৩১ ২৩০ প্লেস, স্প্রীংফিল্ড গার্ডেন, নিউইয়র্ক-১১৪১৩, ১০০-৩১ ২০০ স্ট্রীট, হলিস, নিউইয়র্ক-১১৪৩২ এবং ৬৯৮ ড্রিউ স্ট্রীট, ব্রুকলীন, নিউইয়র্ক-১১২৮০।
এছাড়াও মোহাম্মদ তৌফিকের কানাডা ও দুবাই-এ আরো দুটো বাড়ী রয়েছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। কানাডায় ক্রয়কৃত বাড়ীর ঠিকানা ২ পেজ্যাক এভিনিউ, টরন্টো, অন্টারিও, এম.১ ই ২ ডব্লিউ ৭। আর দুবাই-এর বাড়ীর ঠিকানা হচ্ছে ব্রুজসাইড ব্লুবার্ড, ব্রুজ খলিফা কমিউনিটি, ইউনিট নং বিএসবি/৪২/৪২০৩। যার বর্তমান মূল্য দুই মিলিয়ন ইউএস ডলার। দুবাইয়ে ক্রয়কৃত বাড়ীর এগ্রিমেন্ট হয় ২০১১ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর।
সূত্র মতে, মোহাম্মদ তৌফিক দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েই কর্মজীবনে বিপুল অর্থ-বিত্তের মালিক বলে যান। পরবর্তীতে ‘নিরাপদ জীবন’ গড়ার লক্ষ্যে স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের নিয়ে নিউইয়র্কে স্থায়ীনিবাস করার পরিকল্পনা করেন। তার একাধিক আত্বীয়-স্বজন রয়েছেন এই নিউইয়র্ক সহ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অঙ্গরাজ্য আর কানাডায়। তার এক বোন বাসসবাস করেন নিউইয়র্কের ব্রুকলীনে। তার নাম সামসুন নাহার শাহাজাদী। তার অপর এক আপন বোন বসবাস করেন ক্যালিফোর্নিয়ায়। তার নাম মাহমুদা আক্তার লাকী। স্বজনদের সহযোগিতায় তিনি হুনডি’র মাধ্যমে বিপুল অর্থ নিউইয়র্কে পাচার করেন এবং তথা কথিত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যবসা পরিচারণার পাশাপাশি বাড়ী-সম্পত্তি কয়ের উদোগ নেন। এই কাজে তিনি ‘গিভ এন্ড টেক পলিসি’র মাধ্যমে তার স্বজনদের সার্বিক সহযোহিতা নেন।
সূত্র মতে, মোহাম্মদ তৌফিক পরিবার-পরিজন নিয়ে নিউইয়র্কে স্থায়ীভাবে বসবাসের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর একজন এটর্নীর স্মরণাপন্ন হন। তিনি ঐ এটর্নীও পরামর্শ মোতাবেক আইনগত সকল সুবিধা নেয়ার সুযোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু বিধি বাম। মোহাম্মদ তৌফিকের আইনজীবি অনৈতিক কাজের দায়ে তার লাইসেন্স খোয়ালে তার পেশা বন্ধ হয় যায় এবং ঐ এটর্নী নিউইয়র্ক ছেড়ে পালিয়ে যান। আর এই ঘটনার পরই মোহাম্মদ তৌফিকের ‘অবৈধ অর্থ আর সম্পদ’ গড়ার কাহিনী ফাঁস হয়ে পড়ে।
জানা গেছে, মোহাম্মদ তৌফিক তার অবৈধ অর্থে নিউইয়কে আতœীয়-স্বজনদের নামে বাড়ী ক্রয় করেন। প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ ২০১৭ সালে উল্লেখিত অধিকাংশ বাড়ী ক্রয় করা হয়। আর এসব বাড়ী ক্রয়ের জন্য তার পরিবারের সদস্যদের নামে প্রতিষ্ঠিত নাম সর্বস্ব প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে: আদদিন রিয়েলটি এলএলসি, কোটবাড়ি এলএলসি, আরটিটি এলএলসি, জারওয়া হাউজ রিয়েলটি এলএলসি, সানবিম রিয়েলটি এলএলসি, এসেট ডেভলেপমেন্ট এলএলসি, টেকভ্যালি রিয়েলটি এলএলসি, রোভাটেল রিয়েলটি এলএলসি, ওশ্যান হাইট রিয়েলটি এলএলসি, রতœা এলএলসি, হাইওয়ে ইন রিয়েলটি এলএলসি প্রভৃতি। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ওশ্যান হাইট রিয়েলটি এলএলসি নামের প্রতিষ্ঠানের মালিক সামসুন নাহার বেগম আর রতœা এলএলসি’র মাকি রওশন আরা যারা কার নিকট আতœীয় বলে জানা গেছে।
অভিযোগে প্রকাশ, মোহাম্মদ তৌফিক তার চাকুরী জীবনে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে তৎকালীন সরকারের শীর্ষ ব্যক্তি আর ‘হাওয়া ভবন’-এর সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে বা সংশ্লিসষ্টদের নাম ব্যবহার করে টেলিযোগাযোগ খাত থেকে ‘দূর্নীতি’র মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ২০০৬ সালে জোট সরকারের পতনের পর ১/১১ সরকারের সময় দুদুক তার বিরুদ্ধে ৫০০ কোটি টাকার দূর্নীতির অভিযোগ এনে মামলা করে এবং এই অভিযোগে মোহাম্মদ তৌফিক গ্রেফতার হয়ে ৩ মাস কারাগারে ছিলেন। পরবর্তীতে প্রভাব খাটিয়ে এবং আইনের ফাঁক-ফোকরে কারাগার থেকে বেড়িয়ে আসেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে খোদ প্রধানমন্ত্রীর অফিস পর্যন্ত তার ক্ষতার দাপট ছিলো। এছাড়াও ১/১১-এর পর আওয়ামী লীগ নেতৃধ্বাধীন মহাজোট সরকারের সময়েও তিনি তার পদে বহাল তবিয়তে ছিলেন এবং অজ্ঞাত কারণে তার দূর্নীতির মামলা ধামাচাপা পড়ে যায়।
বাংলাদেশের এক আমলার (সাবেক) এতো বড় দূর্নীতির ঘটনায় প্রবাসী বাংলাদেশীদের মাঝে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। প্রবাসীরা তার দূর্নীতির যথাযথ তদন্তের পাশাপাশি এব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে স্থানীয় কনস্যুলেট সহ বাংলাদেশ সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেন।(বাংলা পত্রিকা)