নিউইয়র্ক ০২:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ অক্টোবর ২০২৪, ২৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

নিউইয়র্কে শুক্রবার থেকে ৩দিনব্যাপী বইমেলা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৫:১৩:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ জুন ২০১৮
  • / ৮৩৫ বার পঠিত

নিউইয়র্ক (ইউএনএ): ‘বই হোক আমাদের উত্তরাধিকার’ শ্লোগানে নিউইয়র্কে শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে ‘২৭তম নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলা-২০১৮’। বাংলাদেশী অধ্যুষিত সিটির জ্যাকসন হাইটসে ২২-২৪ জুন যথক্রিমে শুক্র, শনি ও রোববার এই বইমেলা বসছে। তিন দিনব্যাপী এই মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। শুক্রবার বিকেল ৫টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে জ্যাকসন হাইটসের বেলাজিনো পার্টি হলে। পরবর্তী দু’দিনের অনুষ্ঠান হবে স্থানীয় পিএস-৬৯ স্কুল মিলনায়তনে। প্রতিদিন মেলার কার্যক্রম চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। প্রতি বছরের মতো এবারেরও মেলায় বইয়ের পাশাপাশি থাকবে বাঙালী ঐতিহ্যের পরিপূরক খাদ্য-পণ্যের স্টল। বইমেলার সকল প্রস্তুতি জানিয়ে আমন্ত্রিত অতিথি, কবি, লেখক, সাংবাদিক ও সুধীজনদের নিয়ে মতবিনিময় হয়েছে গত ২১ জুন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। খবর ইউএনএ’র।
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে মেলার বিস্তারিত তুলে ধরেন ‘২৭তম নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলা-২০১৮’ কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা ও বিজ্ঞানী ড. নূরুন নবী। এসময় মেলার অতিথি যথাক্রমে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, নাট্যাভিনেতা রামেন্দু মজুমদার, কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, প্রকাশক আমীরুল ইসলাম, মোঃ আব্দুস সামাদ, সৌরভ সিকদার, গীতালি হাসান, পারমিতা হিম, নাজমুন নেসা পিয়ারী, সালেহা চৌধুরী, নাসরিন জাবিন, আলপনা হাবিব ও পারভিন আক্তার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিশিষ্ট লেখক হাসান ফেরদৌসের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথি ও সুধীবৃন্দ বইমেলার অতীত-বর্তমান নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন এবং নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। এসময় সংশ্লিষ্টরা নিউইয়র্কের বইমেলা-কে ঢাকার বাইরে বাংলা ভাষাবাসীদের সর্ববৃহৎ আর প্রাণের মেলা বলে আখ্যায়িত করেন।
এদিকে ‘নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলা’র আয়োজক প্রতিষ্ঠান মুক্তধারা ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিম বাংলার বাইরে বৃহত্তম ও সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী এই বাংলা বইমেলায় উত্তর আমেরিকার শতাধিক লেখক অংশ নিচ্ছেন। অতিথি হিসেবে ঢাকা থেকে এসেছেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক ও আনিসুল হক ও কবি দিলারা হাফিজ। এছাড়া আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে যোগ দিচ্ছেন ইকবাল বাহার চৌধুরী, আবদুন নূর, আবুল হাসনাত, সাইফ ইমাম (জামি), জাফর আহমেদ রাশেদ, ইফতেখারুল ইসলাম, ইকবাল হাসান, সৈয়দ আল ফারুক, লুৎফর রহমান রিটন, আমীরুল ইসলাম, মোহাম্মদ আব্দুস সামাদ, সৌরভ সিকদার, গীতালী হাসান, পারমিতা হিম, নাজমুন নেসা পিয়ারী, সালেহা চৌধুরী, নাসরিন জাবিন, আলপনা হাবিব ও পারভিন আক্তার।
বইমেলায় সঙ্গীত পরিবেশন করবেন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী লিলি ইসলাম, আধুনিক বাংলা গানের জনপ্রিয় শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী। ফিলাডেলফিয়া থেকে যোগ দিচ্ছেন রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী কাদেরী কিবরিয়া। এছাড়াও বিভিন্ন দিনে গান গাইবেন কন্ঠযোদ্ধা শহীদ হাসান সহ প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পী ড. তনিমা হাদী, জীবন বিশ্বাস, নাহিদ নাজিয়া, শবনম আবেদী, শান্তা নাগ, নীপা ভৌমিক, ফাহমিদা শারিমন, রুবিনা শিল্পী, শাহ মাহবুব ও কৃষ্ণা তিথী।
সেমন্তী ওয়াহেদ-এর পরিচালনায় বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকছে ‘যদি বন্ধু হও’। অংশ গ্রহণে থাকবে- ময়ুরী, চন্দ্রিমা, মাইশা, সুস্বনা, দ্যুতি, উদিতা, অধরা, অনাকা, রেহা, অন্তরা, শ্রাবণী, মৌমি। নৃত্যে মাইশা ও সুস্বনা। গানে ময়ুরী। আবৃত্তি ও পাঠে দ্যুতি ও মাইশা।
বাংলা একাডেমী, প্রথমাসহ বাংলাদেশের ২০টির মতো প্রকাশনা সংস্থা মেলায় নতুন বইয়ের প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছে। বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমদ ও বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন মেলায় উপস্থিত থাকবেন এবং লেখক-পাঠকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশ নেবেন।
প্রতিবছরের মতো এবারও বাংলা সাহিত্যে সার্বিক অবদানের জন্য একজন লেখক পুরস্কৃত হবেন। এই পুরস্কারের নতুন নামকরণ হয়েছে ‘মুক্তধারা-জি এফ বি সাহিত্য পুরস্কার’, যার মূল্যমান ২ হাজার ৫০০ ডলার। এ ছাড়া মুক্তধারা-কথা প্রকাশ ‘চিত্তরঞ্জন সাহা পুরস্কার’ নামে মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশকদের মধ্যে সেরা প্রকাশক পুরস্কার প্রদান করা হবে, যার মূল্যমান ৫০ হাজার টাকা।
বাংলাদেশের রেকর্ডসংখ্যক প্রকাশক অংশ নিচ্ছেন এ বইমেলায়। রয়েছেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির সভাপতি ও সময় প্রকাশনের কর্ণধার ফরিদ আহমেদ, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির নির্বাহী পরিচালক ও অনন্যা প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী মনিরুল হক, আহমেদ, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি পুথিনিলয়ের স্বত্বাধিকারী শ্যামল পাল, নিউইয়র্ক বইমেলা কর্তৃক ঘোষিত চিত্তরঞ্জন সাহা প্রকাশনা পুরস্কার-এর সহযোগী ও কথা প্রকাশ এর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, মাওলা ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী আহমেদ মাহমুদুল হক, কালি ও কলম সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক ও বেঙ্গল প্রকাশনের নির্বাহী আবুল হাসনাত, প্রথমা প্রকাশনের নির্বাহী জাফর আহমেদ রাশেদ। আরো আছেন বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির পরিচালক ধ্রুবপদের স্বত্বাধিকারী এম ডি আবুল বাশার ফিরোজ শেখ, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির পরিচালক ও তা¤্রলিপি প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী এ কে এম তরিকুল ইসলাম রনি, গতিধারা প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী এমডি আবুল বাশার শিকদার, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির প্রাক্তণ সভাপতি ও আকাশ প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী আলমগীর শিকদার লোটন, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ পরিচালক জহিরুল আবেদীন জুয়েল, নালন্দা প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ রেদওয়ানুর রহমান জুয়েল, থিয়েটার, বাবুল বিশ্বাস, গণ প্রকাশন-মাহমুদুর হাসান মানিক ও আলপনার রান্নাঘর-এর আলপনা হাবিব।
উত্তর আমেরিকা থেকে যেসব বই বিক্রেতা ও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান রেজিস্ট্রেশন করেছে তাদের মধ্যে রয়েছে মুক্তধারা নিউইয়র্ক, ঘুংঘুর, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন নিউইয়র্ক, ইসলাম ইন্টারন্যাশনাল পাবলিকেশন্স, গ্লোবাল বাংলা মিশন, সৃজনকাল ও বাংলা গবেষণা, পঞ্চায়েত প্রকাশনী, লুৎফুর রহমান বিনু ও ঊনবাংলা ।
মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট বিশ্বজিৎ সাহা জানান, এবছরই প্রথমবারের মত ২৮টি বইয়ের স্টল হচ্ছে নিউইয়র্ক বইমেলায়। ইতিপূর্বে কখনো এত বইয়ের স্টল হয়নি। বইয়ের স্টল ছাড়াও বাংলাদেশের শুকনো খাদ্য সংস্থা বেঙ্গল বিস্কিটস লিমিটেড, কোলকাতা থেকে তিয়ারা বুটিক, ক্লাসিক বুটিক, ফ্লোরিডা থেকে লিয়া শাড়ী, নিউইয়র্ক থেকে বিভা বুটিক, সায়ীদা কালেকশন্স, পিয়াল কালেকশন্স অংশগ্রহণ করছে। থাকছে রকমারী খাবারের স্টল।
তিন দিনের অনুষ্ঠানমালার অন্যতম আকর্ষণ হলো শহীদ জননী জাহানারা ইমামের স্মরণে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘জননী’। ১৯৯২ সালে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ঢাকায় একাত্তরের ঘাতক-দালালদের বিচারের দাবিতে যে গণ-আদালত বসে, তাতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের আইনজীবী টমাস কিটিং। এই মেলায় কিটিংকে তাঁর সাহসী ভূমিকার জন্য বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হবে।
মেলার অন্যান্য অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের সঙ্গে আলাপচারিতা, ‘লেখক বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক আলোচনা ও ডায়াসপোরা সাহিত্য নিয়ে মতবিনিময়। প্রয়াত কবি রফিক আজাদ ও সৈয়দ শামসুল হকের স্মৃতির উদ্দেশে থাকবে শ্রদ্ধাঞ্জলি। এতে অংশ নেবেন কবিপতœী দিলারা হাফিজ ও আনোয়ারা সৈয়দ হক।
প্রতিবছরের মতো এবারেও থাকবে প্রবাসী শিল্পীদের গান, কবিদের কবিতাপাঠ ও তাঁদের রচিত গ্রন্থের ওপর আলোচনা। উল্লেখ্য, এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাঙালি লেখকদের দেড় শর মতো নানা স্বাদের বাংলা বই প্রকাশিত হয়েছে। এবছর মেলার মূল মিলনায়তনের নাম রাখা হয়েছে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম মিলনায়তন। বইমেলার প্রাঙ্গণের নাম রাখা হয়েছে শওকত আলী প্রাঙ্গণ। সেমিনার কক্ষের নাম রাখা হয়েছে মুস্তাফা নূরউল ইসলাম কক্ষ।
অন্যান্য বছরের মতো এবারের বইমেলায় অনুষ্ঠানের জন্য কোন প্রবেশমূল্য থাকবেনা। বইমেলা উপলক্সে প্রকাশিত ম্যাগাজিন সম্পাদনা করেছেন আহমাদ মাযহার। প্রচ্ছদ এঁকেছেন কে সি মং। মঞ্চ সজ্বা করেছেন এটিএন বাংলার শিল্প নির্দেশক জসীম উদ্দীন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

নিউইয়র্কে শুক্রবার থেকে ৩দিনব্যাপী বইমেলা

প্রকাশের সময় : ০৫:১৩:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ জুন ২০১৮

নিউইয়র্ক (ইউএনএ): ‘বই হোক আমাদের উত্তরাধিকার’ শ্লোগানে নিউইয়র্কে শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে ‘২৭তম নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলা-২০১৮’। বাংলাদেশী অধ্যুষিত সিটির জ্যাকসন হাইটসে ২২-২৪ জুন যথক্রিমে শুক্র, শনি ও রোববার এই বইমেলা বসছে। তিন দিনব্যাপী এই মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব রামেন্দু মজুমদার। শুক্রবার বিকেল ৫টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে জ্যাকসন হাইটসের বেলাজিনো পার্টি হলে। পরবর্তী দু’দিনের অনুষ্ঠান হবে স্থানীয় পিএস-৬৯ স্কুল মিলনায়তনে। প্রতিদিন মেলার কার্যক্রম চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। প্রতি বছরের মতো এবারেরও মেলায় বইয়ের পাশাপাশি থাকবে বাঙালী ঐতিহ্যের পরিপূরক খাদ্য-পণ্যের স্টল। বইমেলার সকল প্রস্তুতি জানিয়ে আমন্ত্রিত অতিথি, কবি, লেখক, সাংবাদিক ও সুধীজনদের নিয়ে মতবিনিময় হয়েছে গত ২১ জুন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। খবর ইউএনএ’র।
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে মেলার বিস্তারিত তুলে ধরেন ‘২৭তম নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলা-২০১৮’ কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা ও বিজ্ঞানী ড. নূরুন নবী। এসময় মেলার অতিথি যথাক্রমে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, নাট্যাভিনেতা রামেন্দু মজুমদার, কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক, ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, প্রকাশক আমীরুল ইসলাম, মোঃ আব্দুস সামাদ, সৌরভ সিকদার, গীতালি হাসান, পারমিতা হিম, নাজমুন নেসা পিয়ারী, সালেহা চৌধুরী, নাসরিন জাবিন, আলপনা হাবিব ও পারভিন আক্তার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
বিশিষ্ট লেখক হাসান ফেরদৌসের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথি ও সুধীবৃন্দ বইমেলার অতীত-বর্তমান নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন এবং নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন। এসময় সংশ্লিষ্টরা নিউইয়র্কের বইমেলা-কে ঢাকার বাইরে বাংলা ভাষাবাসীদের সর্ববৃহৎ আর প্রাণের মেলা বলে আখ্যায়িত করেন।
এদিকে ‘নিউইয়র্ক বাংলা বইমেলা’র আয়োজক প্রতিষ্ঠান মুক্তধারা ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিম বাংলার বাইরে বৃহত্তম ও সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী এই বাংলা বইমেলায় উত্তর আমেরিকার শতাধিক লেখক অংশ নিচ্ছেন। অতিথি হিসেবে ঢাকা থেকে এসেছেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক ও আনিসুল হক ও কবি দিলারা হাফিজ। এছাড়া আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে যোগ দিচ্ছেন ইকবাল বাহার চৌধুরী, আবদুন নূর, আবুল হাসনাত, সাইফ ইমাম (জামি), জাফর আহমেদ রাশেদ, ইফতেখারুল ইসলাম, ইকবাল হাসান, সৈয়দ আল ফারুক, লুৎফর রহমান রিটন, আমীরুল ইসলাম, মোহাম্মদ আব্দুস সামাদ, সৌরভ সিকদার, গীতালী হাসান, পারমিতা হিম, নাজমুন নেসা পিয়ারী, সালেহা চৌধুরী, নাসরিন জাবিন, আলপনা হাবিব ও পারভিন আক্তার।
বইমেলায় সঙ্গীত পরিবেশন করবেন বিশিষ্ট রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী লিলি ইসলাম, আধুনিক বাংলা গানের জনপ্রিয় শিল্পী সৈয়দ আব্দুল হাদী। ফিলাডেলফিয়া থেকে যোগ দিচ্ছেন রবীন্দ্র সঙ্গীতশিল্পী কাদেরী কিবরিয়া। এছাড়াও বিভিন্ন দিনে গান গাইবেন কন্ঠযোদ্ধা শহীদ হাসান সহ প্রবাসের জনপ্রিয় শিল্পী ড. তনিমা হাদী, জীবন বিশ্বাস, নাহিদ নাজিয়া, শবনম আবেদী, শান্তা নাগ, নীপা ভৌমিক, ফাহমিদা শারিমন, রুবিনা শিল্পী, শাহ মাহবুব ও কৃষ্ণা তিথী।
সেমন্তী ওয়াহেদ-এর পরিচালনায় বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকছে ‘যদি বন্ধু হও’। অংশ গ্রহণে থাকবে- ময়ুরী, চন্দ্রিমা, মাইশা, সুস্বনা, দ্যুতি, উদিতা, অধরা, অনাকা, রেহা, অন্তরা, শ্রাবণী, মৌমি। নৃত্যে মাইশা ও সুস্বনা। গানে ময়ুরী। আবৃত্তি ও পাঠে দ্যুতি ও মাইশা।
বাংলা একাডেমী, প্রথমাসহ বাংলাদেশের ২০টির মতো প্রকাশনা সংস্থা মেলায় নতুন বইয়ের প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছে। বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমদ ও বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন মেলায় উপস্থিত থাকবেন এবং লেখক-পাঠকদের সঙ্গে মতবিনিময়ে অংশ নেবেন।
প্রতিবছরের মতো এবারও বাংলা সাহিত্যে সার্বিক অবদানের জন্য একজন লেখক পুরস্কৃত হবেন। এই পুরস্কারের নতুন নামকরণ হয়েছে ‘মুক্তধারা-জি এফ বি সাহিত্য পুরস্কার’, যার মূল্যমান ২ হাজার ৫০০ ডলার। এ ছাড়া মুক্তধারা-কথা প্রকাশ ‘চিত্তরঞ্জন সাহা পুরস্কার’ নামে মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশকদের মধ্যে সেরা প্রকাশক পুরস্কার প্রদান করা হবে, যার মূল্যমান ৫০ হাজার টাকা।
বাংলাদেশের রেকর্ডসংখ্যক প্রকাশক অংশ নিচ্ছেন এ বইমেলায়। রয়েছেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির সভাপতি ও সময় প্রকাশনের কর্ণধার ফরিদ আহমেদ, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি আরিফ হোসেন ছোটন, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির নির্বাহী পরিচালক ও অনন্যা প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী মনিরুল হক, আহমেদ, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি পুথিনিলয়ের স্বত্বাধিকারী শ্যামল পাল, নিউইয়র্ক বইমেলা কর্তৃক ঘোষিত চিত্তরঞ্জন সাহা প্রকাশনা পুরস্কার-এর সহযোগী ও কথা প্রকাশ এর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, মাওলা ব্রাদার্সের স্বত্বাধিকারী আহমেদ মাহমুদুল হক, কালি ও কলম সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক ও বেঙ্গল প্রকাশনের নির্বাহী আবুল হাসনাত, প্রথমা প্রকাশনের নির্বাহী জাফর আহমেদ রাশেদ। আরো আছেন বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির পরিচালক ধ্রুবপদের স্বত্বাধিকারী এম ডি আবুল বাশার ফিরোজ শেখ, বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশনা সমিতির পরিচালক ও তা¤্রলিপি প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী এ কে এম তরিকুল ইসলাম রনি, গতিধারা প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী এমডি আবুল বাশার শিকদার, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির প্রাক্তণ সভাপতি ও আকাশ প্রকাশনার স্বত্বাধিকারী আলমগীর শিকদার লোটন, ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ পরিচালক জহিরুল আবেদীন জুয়েল, নালন্দা প্রকাশনের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ রেদওয়ানুর রহমান জুয়েল, থিয়েটার, বাবুল বিশ্বাস, গণ প্রকাশন-মাহমুদুর হাসান মানিক ও আলপনার রান্নাঘর-এর আলপনা হাবিব।
উত্তর আমেরিকা থেকে যেসব বই বিক্রেতা ও প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান রেজিস্ট্রেশন করেছে তাদের মধ্যে রয়েছে মুক্তধারা নিউইয়র্ক, ঘুংঘুর, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন নিউইয়র্ক, ইসলাম ইন্টারন্যাশনাল পাবলিকেশন্স, গ্লোবাল বাংলা মিশন, সৃজনকাল ও বাংলা গবেষণা, পঞ্চায়েত প্রকাশনী, লুৎফুর রহমান বিনু ও ঊনবাংলা ।
মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট বিশ্বজিৎ সাহা জানান, এবছরই প্রথমবারের মত ২৮টি বইয়ের স্টল হচ্ছে নিউইয়র্ক বইমেলায়। ইতিপূর্বে কখনো এত বইয়ের স্টল হয়নি। বইয়ের স্টল ছাড়াও বাংলাদেশের শুকনো খাদ্য সংস্থা বেঙ্গল বিস্কিটস লিমিটেড, কোলকাতা থেকে তিয়ারা বুটিক, ক্লাসিক বুটিক, ফ্লোরিডা থেকে লিয়া শাড়ী, নিউইয়র্ক থেকে বিভা বুটিক, সায়ীদা কালেকশন্স, পিয়াল কালেকশন্স অংশগ্রহণ করছে। থাকছে রকমারী খাবারের স্টল।
তিন দিনের অনুষ্ঠানমালার অন্যতম আকর্ষণ হলো শহীদ জননী জাহানারা ইমামের স্মরণে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘জননী’। ১৯৯২ সালে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ঢাকায় একাত্তরের ঘাতক-দালালদের বিচারের দাবিতে যে গণ-আদালত বসে, তাতে বিশেষজ্ঞ হিসেবে অংশ নিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের আইনজীবী টমাস কিটিং। এই মেলায় কিটিংকে তাঁর সাহসী ভূমিকার জন্য বিশেষ সম্মাননা প্রদান করা হবে।
মেলার অন্যান্য অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের সঙ্গে আলাপচারিতা, ‘লেখক বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক আলোচনা ও ডায়াসপোরা সাহিত্য নিয়ে মতবিনিময়। প্রয়াত কবি রফিক আজাদ ও সৈয়দ শামসুল হকের স্মৃতির উদ্দেশে থাকবে শ্রদ্ধাঞ্জলি। এতে অংশ নেবেন কবিপতœী দিলারা হাফিজ ও আনোয়ারা সৈয়দ হক।
প্রতিবছরের মতো এবারেও থাকবে প্রবাসী শিল্পীদের গান, কবিদের কবিতাপাঠ ও তাঁদের রচিত গ্রন্থের ওপর আলোচনা। উল্লেখ্য, এ বছর যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাঙালি লেখকদের দেড় শর মতো নানা স্বাদের বাংলা বই প্রকাশিত হয়েছে। এবছর মেলার মূল মিলনায়তনের নাম রাখা হয়েছে শহীদ জননী জাহানারা ইমাম মিলনায়তন। বইমেলার প্রাঙ্গণের নাম রাখা হয়েছে শওকত আলী প্রাঙ্গণ। সেমিনার কক্ষের নাম রাখা হয়েছে মুস্তাফা নূরউল ইসলাম কক্ষ।
অন্যান্য বছরের মতো এবারের বইমেলায় অনুষ্ঠানের জন্য কোন প্রবেশমূল্য থাকবেনা। বইমেলা উপলক্সে প্রকাশিত ম্যাগাজিন সম্পাদনা করেছেন আহমাদ মাযহার। প্রচ্ছদ এঁকেছেন কে সি মং। মঞ্চ সজ্বা করেছেন এটিএন বাংলার শিল্প নির্দেশক জসীম উদ্দীন।