নিউইয়র্কে বিয়ানীবাজার পঞ্চখন্ড উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী পালন

- প্রকাশের সময় : ১০:২১:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অগাস্ট ২০১৮
- / ৬৮৬ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: মহামিলনের মহা আনন্দে তারা অবগাহন করলেন। স্মৃতিতে রোমন্থন করলেন নিজেদের অতীত আর বর্তমানের কথা। পুরনো দিনের কথা আর গল্পে অনুষ্ঠানের পরতে পরতে ছিল আবেগের ছাপ। অনেকেই ছিলেন নস্টালজিক। তারা কবিতা পড়লেন। পুরনো বন্ধুদের নিয়ে মেতে উঠলেন সরস আড্ডায়। মেলবন্ধনের এ যেন এক অপরুপ দৃশ্য। এমনই ছবি সেদিন বিমূর্ত হয়ে উঠেছিল জ্যাকসন হাইটসের বেলাজিনো পার্টি হলে।
রোববার সন্ধ্যায় যখন উপছে পড়ছে নিউইয়র্ক সিটির রুপ লাবন্য। তখন বেলাজিনো সেজেছিলেন অন্য এক সাজে। ঝলসে উঠা আলো চাপা পড়েছিলে আলোকিত সব মানুষের আলোর ঝলকানিতে। গৌরবের শতবাষির্কীর অনুষ্ঠানে সবাই ছিলেন এর অংশীদার। সিলেটের বিয়ানীবাজারের পঞ্চখন্ড হরগোবিন্দ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শতবার্ষিকী পালনে আয়োজন করা হয়েছিল বর্ণাঢ্য এই অনুষ্ঠানের। নিউইয়র্কে অবস্থানরনত উক্ত স্কুলের শিক্ষার্থীরা আয়োজন করেছিলেন মেলবন্ধনের এই অনুষ্ঠানের। এতে উপস্থিত ছিলেন এক সময়ের তরুন শিক্ষার্থী যিনি এখন বয়সের ভারে ন্যুজ। আবার সদ্য শেষ করে আসা তারুন্যও।
নিউইয়র্কে বসবাস করছেন এমন শিক্ষার্থীদের কোলাহল কলরবে রোববারের সন্ধ্যা মেতে উঠেছিল। অনুষ্ঠানে ১৯৫৯ থেকে ২০০৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেয়া হলো। প্রপিতা সম অনেকেও উপস্থিত ছিলেন সেখানে। বাবা এবং সন্তান একই স্কুলের শিক্ষার্থী হিসেবে স্মৃতি হাতড়িয়েছেন সেখানে। উপস্থিত অনেকের মানুষপটকে যা প্রতিক্ষনে দুলিয়েছে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে ছুটে এসেছিলেন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা পবিত্রনাথ দাশের প্রপৌত্র ড. শান্তনু দাশ। তিনি বলেন, আমাদের উপমহাদেশের মধ্যে ভারত-পাকিস্তানের চাইতে শিক্ষা ও জীবনমানের উন্নয়নে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। যা বিশ্বয়কার। তিনি বলেন, আমার পরিবারের উদ্যেগ ও সবার অংশ গ্রহনে বিয়ানীবাজারের বাতিঘর হিসেবে আলো ছড়াচ্ছে পঞ্চখন্ড গরগোবিন্দ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়। দেশ বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাজার হাজার শিক্ষার্থীদের মুখে এই স্কুলের বন্ধনা আমাদের সকলের জন্যই আবেগ ও অনুপ্রেরণার। মানবকল্যাণ আর শিক্ষার আলো ছড়াতে এখনো এধরনের উদ্যোগে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানালেন তিনি।
অনুষ্ঠানের সূচনা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ও জন্মভুমি বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছায় উপস্থিত সবাইকে সিক্ত করেন, বিয়ানীবাজারের কৃতি সন্তান বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যিক তমিজ উদ্দীন লোদী ও আব্দুন নুর।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন শতবর্ষ উদযাপন কমিটির অহ্বায়ক বিয়ানীবাজার সমিতির সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন সদস্য সচিব মোহাম্মদ খসরুজ্জামান খসরু, নিবন্ধন উপমিটির আহ্বায়ক বিশিষ্ট সংগঠনক মোহাম্মদ আলীম ও আব্দুল বাসিত। পুরো অনুষ্ঠানটি ছিল সুনিপুন ও সুশৃংখল।
আলো ঝলোমলো বেলাজিনোতে শতবর্ষ উপযাপন কমিটিকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। একে একে উপদেষ্টা পরিষদ সহ বিভিন্ন কমিটির সবাইকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়। স্বীকতি ও সম্মান জানানো হয় বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীদের। যারা ১৯৬৯ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত এই স্কুলের শিক্ষার্থী ছিলেন।
পরিচয় পর্বের এই অনুষ্ঠানে পুরনো এবং নবীনরা তাদের স্মৃতির কথা বলেছেন। স্মৃতিচারণ অনুষ্ঠানে কথা বলেন- আব্দুল হাসিব মুনিয়া, তমিজ উদ্দীন লোদী, হাজী এম মোতাহের আলী, আবুল কালাম, আলম উদ্দীন, হাবিবুর রহমান, আজিজুর রহমান পাখি, আব্দুল খালিক লালু, বিয়ানীবাজার সমিতির সাবেক সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক, আজমুল হোসেন কুনু, জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সভাপতি বদরুল হোসেন খান, আব্দুল হাফিজ, শামসুল আবদীন, কয়সর আহমেদ, মিছবাহ আহমদ প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে কানাডা থেকে আগত শিক্ষার্থী আব্দুল হাসিব স্বরিচত কবিতা পড়ে শুনান। এর আগে শত বার্ষিকীর অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে প্রকাশিত ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন করেন ম্যগাজিনের সম্পাদক কবি তমিজ উদ্দীন লোদী, অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক অবুল কালাম এবং প্রধান অতিথি ড. শান্তনু দাশ। এ সময় মঞ্চে কমিটি কর্মকর্তা ছাড়াও বাংলা পত্রিকা’র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, প্রথম আলো পত্রিকার উত্তর আমেরিকা প্রধান ইব্রাহিম চৌধুরী খোকন সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবাই বলেছেন, প্রবাসে অনেক অনুষ্ঠানে আমরা অংশ নিয়েছি। কিন্তু পঞ্চখন্ড গরগোবিন্দ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শত বার্ষিকীর এই অনুষ্ঠানের শৃংখলা ও সৌন্দর্য ছিল সত্যিই মনে রাখার মত। একটি পরিচছন্ন অনুষ্ঠান উপহার দিয়ে আয়োজকরা প্রবাসে একটি ব্যতিক্রমী নজির স্থাপন করলেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ছিল বাড়তি আকর্ষণ। এতে সঙ্গীত পরিবেশন করেন জনপ্রিয় শিল্পী রিজিয়া পারভীন ও শাহ মাহবুব সহ প্রবাসের নন্দিত শিল্পীরা। (বাংলা পত্রিকা)