নিউইয়র্কে বাড়ী ভাড়ায় বৈষম্য করলেই মামলা : গভর্ণর এন্ড্রু কুমো
- প্রকাশের সময় : ০৬:৪৭:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ ফেব্রুয়ারী ২০১৬
- / ৮৭৩ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: বিশ্বের রাজধানী ও অভিবাসীবান্ধব নিউইয়র্কে বাড়ী ভাড়ার ক্ষেত্রে বর্ণ-বৈষম্যের অভিযোগ বেড়েই চলেছে। বাড়ীর সামনে বা গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দেয়ার পর কালো বর্ণের কেউ গেলে তাদের ভাড়া দিতে অনীহা প্রকাশ করছেন স্টেটের বিভিন্ন এলাকার বাড়ীওয়ালারা। বিষয়টি স্টেট কর্তৃপক্ষের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গেল ৯ মাসে এ ধরনের ১শ ৩০টি অভিযোগ সোস্যাল জাস্টিস কমিশনে জমা পড়ার পর রীতিমতো নড়ে চড়ে বসেছে গভর্ণর এন্ড্রু কুমোর অফিস। এ নিয়ে যেমন উদ্বিগ্ন কুমোর অফিস তেমনিভাবে সরব গভর্ণর নিজেও। ফলে তিনি এ ব্যাপারে বাড়ীওয়ালাদের সতর্ক করতেও পিছ পা হচ্ছেন না। তিনি বলেছেন, গোপনে এজেন্সি’র মাধ্যমে বাড়িওয়ালাদের ভাড়াটিয়া সেজে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। যারাই ভাড়া দেয়ার সময় বর্ণ-বৈষম্যের অভিযোগে অভিযুক্ত হবেন তাদের বিরুদ্ধে কঠিন পদক্ষেপ নেয়া হবে।
১৪ ফেব্রুয়ারী রোববার নিউইয়র্কের হারলেমে একটি অনুষ্ঠানে মানুষের বৈষম্য কমাতে নানা পদক্ষেপের কথা জানান স্টেট গভর্ণর কুমো। তিনি বলেন, মাদক মামলার মত এই বাড়ী ভাড়ায় বৈষম্য মামলা প্রয়োগ করা হবে।
১৮ মিলিয়ন মানুষের বসবাস নিউইয়র্কে। নিউইয়র্ক পৃথিবীর সবচে কর্মব্যস্থ শহর, যেখানে হাজারো গোত্র এবং সম্প্রদায়ের সহাবস্থান। উপর থেকে সেরকম চিত্র দেখালেও এখনও, হাজারো বিভক্তি এখানকার মানুষে মানুষে। সাদা আর কালোর বিভেদ, ইংরেজ আর হিসপ্যানিক বিভেদ, এশিয়ান এবং ইউরোপীয় বিভেদ বিদ্যমান। এই বিভক্তির কারনেই পাশাপাশি বাড়ীতে সাদা কালোর বসবাসের দেখা মেলে কমই।
নিউইয়র্কের হারলেমে’র একটি চার্চে অনুষ্ঠিত সোস্যাল জাস্টিস সংক্রান্ত এক অনুষ্ঠানে গভর্নর কুমো তুলে ধরেন চুপিসারে কোথায় এবং কিভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন মানুষ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ৯ মাসে ১৩০ টি বৈষম্যমূলক কেস (মামলা)জমা হয়েছে নিউইয়র্কে। বিশেষত বাসস্থান পাওয়ার ক্ষেত্রে, এই বৈষম্যমূলক আচরণের যে সব অভিযোগ, সেগুলো আইনত অপরাধ হিসেবে গণ্য। বাসা পাওয়ার ক্ষেত্রে কি কি ভাবে বৈষম্য করা হয়, সেগুলি নজরদারীতে আনা হচ্ছে বলে জানান কুমো। এসব ক্ষেত্রে ব্রোকাররা যদি এমন বৈ ম্যের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়, তার লাইসেন্স বাতিল হয়ে যাবে। আর এ জন্য বৈষম্যের শিকার যে কাউকে বৈষম্যমূলক আচরণের কষ্ট মনের ভিতরে লুকিয়ে না রেখে ভুক্তভোগীকে দ্রুত বিষয়টি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আনার পরামর্শ দেন কুমো।
এদিকে কুমোর এ ধরনের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ। তারা বলছেন, স্টেটের অনেক বাসিন্দাই বলছেন, নিউইয়র্কের সোনার হরিণ হিসেবে খ্যাত বাসা ভাড়া লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ার বিষয় নিয়েও কাজ করতে হবে স্টেটের। তারা বলেছেন, বছরের পর বছর একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় বাসা ভাড়া বাড়লেও এখন সেই নিয়মের কেউ তোয়াক্কা করছেন না। ৬ মাসের মাথায় বাড়াচ্ছেন অস্বাভাবিকভাবে বাসা বাড়া। কোন কোন এলাকায় শতকার ২ ভাগ করে বাসা ভাড়া বাড়ানোর অঘোষিত নিয়ম থাকলেও তা মানছে না বাড়ী বা অ্যাপার্টমেন্টের মালিকরা। ফলে দিনে দিনে ভাড়াটিয়ারা নিঃস্ব থেকে নিঃস্ব হওয়ার পাশাপাশি বাসা মালিকদের সঙ্গে দূরত্বও সৃষ্টি হচ্ছে। নিউইয়র্কের এস্টোরিয়া, জ্যামাইকা, জ্যাকসন হাইটস, ব্রঙ্কস ও ব্রুকলিনসহ ব্যস্ততম এলাকাগুলো লাফিয়ে লাফিয়ে বাসা ভাড়া বাড়ার খবর পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, এক থেকে দুই বছর আগে এলাকা ভেদে এক বেড রুমের বাসা যেখানে ৯শ থেকে ১১শ ডলারের মধ্যে পাওয়া গেলেও এখন তা ১৩শ থেকে ১৬শ ডলারে ভাড়া নিতে হচ্ছে। আবার এতে দরকারও পড়ছে ভাল ক্রেডিট। আবার ব্রঙ্কসের পার্কচেস্টার কনডোমিনিয়ামে এক বেডরুমের বাসা ভাড়া নিতে হলে বছরে ৩৫ হাজারের ওপর ইনকাম দেখাতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহীম হাওলাদার বলেন, নিউইয়র্কে লোকসংখ্যা যেভাবে বাড়ছে সেভাবে বাসা বাড়ী বাড়ছে না। ফলে বাড়ী বা অ্যাপার্টমেন্টের মালিকরা সে সুযোগ নিচ্ছে। স্টেটের বিষয়টি নিয়ে কাজ করা দরকার।
এস্টোরিয়ার বিভিন্ন এলাকায় বাসা ভাড়ার বৃদ্ধির মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। এস্টোরিয়া ম্যানহাটন লাগোয়া হওয়ার কারণে বাড়ীর বা অ্যাপার্টমেন্টের মালিকরা সুযোগ বুঝে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়াচ্ছেন বাসা ভাড়া। ৩৬ স্ট্রিটের একটি অ্যাপার্টমেন্টের এক বেডরুমের বাসা ভাড়া প্রায় ১৯শ ডলার। এই বাসার প্রতি ছয় মাস পর পর একশ ডলার করে ভাড়া বাড়ানো হয়।
জ্যামাইকাতে বসবাসরত একটি গ্রোসারীর স্বত্বাধিকারী বলেন, আমি ১০ বছর আগে এস্টোরিয়ার ৩৬ স্ট্রিটে ছিলাম। তখন এক বেড রুমের একটি বাসা ভাড়া দিতাম ৭শ ২০ ডলার। দশ বছরের মাথায় তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯শ ডলার। ৩৫ স্টিটের একটি অ্যাপর্টমেন্টে এক বেডরুমের ভাড়া এখন ১৬শ ৫০ ডলার। ওই অ্যাপর্টমেন্টের তিন বছর আগে ভাড়া নেয়া নিউইয়র্কের এক সিলেটের অধিবাসী বলেন, আমি এই বাসায় ১১শ ২০ ডলার ভাড়ায় উঠেছিলাম। কিন্ত প্রতিবছরই বাড়তে বাড়তে তা দাঁড়িয়েছে ১৬শ ৫০ ডলার। তাহলে বুঝতেই পারছেন কি হারে বাসা ভাড়া বেড়েছে। বিষয়টিও নজর দেয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি। (সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা)