নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেটের সামনে আ. লীগ-বিএনপির পাল্টাপাল্টি সমাবেশ
- প্রকাশের সময় : ০৮:০৯:৫৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৮
- / ৯৮৮ বার পঠিত
বিশেষ প্রতিনিধি: দুর্নীতির মামলায় নিম্ন আদালতে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার পাঁচ বছর কারাদন্ড হওয়ায় রায়ের পক্ষে-বিপক্ষে সমাবেশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। গত ৯ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার বিকালে সিটির লং আইল্যান্ডে নর্দান বুলেভার্ডস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের সামনে দল দু’টি রাস্তার এপার-ওপার মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে এই কর্মসূচী পালন করে। পরিস্থির্তি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সমাবেশস্থলে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশের অবস্থান লক্ষনীয়। হাড় কাঁপানো ঠান্ডা উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগ-বিএনপির নেতা-কর্মীরা সমাবেশে অংশ নেন।
জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে কারাদন্ডাদেশ দেওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের অর্ধ শতাধিক নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ আহ্বান করে। অপরদিকে এই বিক্ষোভ থেকে কনস্যুলেটে হামলার আশঙ্কায় একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের প্রায় অর্ধশত নেতা-কর্মী সেখানে শান্তি সমাবেশ করে। ফলে দেখা দেয় উত্তেজনা। কনস্যুলেট অফিসের সামনে রাস্তার দুই পাশে উভয়দলের নেতা-কর্মীদের পরস্পরবিরোধী শ্লোগানে মুখর হয়ে উঠে। তবে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তারেক রহমানসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের দাবী জানানো হয়। অপরদিকে আওয়ামী লীগের সমাবেশ থেকে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে বিএনপির কর্মীদের হামলার ঘটনার নিন্দা, প্রতিবাদ ও দায়ীদের শাস্তির দাবী জানানো হয়। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ সমাবেশের এক পর্যায়ে কনস্যুলেটের অভ্যন্তরে অবস্থান নেয় এবং সেখানে কিছু সময় অবস্থান করেন।
দীর্ঘদিন ধরে কমিটি বিহীন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুল লতিফ স¤্রাট, সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান জিল্লু, সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি গিয়াস আহমেদ ও অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন ও সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান ভূঁইয়া (মিল্টন ভূঁইয়া)-এর নেতৃত্বে বিএনপি, যুবদল, জাসাস, ছাত্রদল, তারেক পরিষদ, সন্দ্বীপ জাতীয়তাবাদী ফোরাম, জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের ব্যানারে দলীয় নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন।
সমাবেশে আব্দুল লতিফ স¤্রাট বলেন, আওয়ামী-বাকশালীদের বিরুদ্ধে প্রবাসের সকল জাতীয়তাবদী শক্তি আজ ঐক্যবদ্ধ। সরকার যতই ষড়যন্ত্র করুক লাভ হবে না, বেগম খালেদা জিয়াকে মাইনাস করে বাংলাদেশে আর কোন নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।
জিল্লুর রহমান জিল্লু বলেন, আওয়ামী-বাকশালী ষড়যন্ত্রের শিকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তাকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখতেই এই ষড়যন্ত্র দেশ ও প্রবাসের সকল জাতীয়তাবাদী শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে বেগম জিয়াকে মুক্ত করবেই ইনশা আল্লাহ।
গিয়াস আহমেদ বলেন, বাংলাদেশকে হায়েনামুক্ত করতে দেশ ও প্রবাসে একযোগে আন্দোলনের বিকল্প নেই।
অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ব্যাংক থেকে হাজার কোটি টাকা যারা চুরি করছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা তো দূরের কথা, তাদের নামটি পর্যন্ত উচ্চারিত হচ্ছে না। এমন সরকারের হাতে বাংলাদেশ নিরাপদ নয়।
মিজানুর রহমান ভূইয়া মিল্টন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মমলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, ভোটার বিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা শেখ হাসিনার সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও বাংলাদেশের আগামী দিনের নায়ক তারেক রহমান। তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র মালায় দেশনেত্রীকে জেল দেয়া হয়েছে। আগামী দিনে সরকারের সকল ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙ্গা জবাব দেয়া হবে।
আলহাজ সোলায়মান ভূইয়া বলেন, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত প্রবাসে আন্দোলন চলবে।
আকতার হোসেন বাদল বলেন, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। বাংলাদেশের মানুষ কখনোই একদলীয় স্বৈরশাসন মেনে নেবে না।
সমাবেশে দলের উল্লেখযোখ্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক কাজী আজম, সাবেক কোষাধ্যক্ষ জসীম ভূইয়া, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এম এ বাতিন, যুক্তরাষ্ট্র যুবদল সভাপতি জাকির এইচ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ আহমেদ, জাসাস নেতা গোলাম ফারুক শাহীন, বিএনপি নেতা পারভেজ সাজ্জাদ, রফিকুল ইসলাম ডালিম, ফারুক হোসেন মজুমদার, রাফেল তালুকদার, এম এ সবুর, জাহাঙ্গীর সোহরাওয়ার্দি, ছাত্রদল নেতা মাজহারুল ইসলাম জনি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন ।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ: অপরদিকে সংগঠনের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদের নেতৃত্বে দলীয় নেতা-কর্মীরা সমাবেশে অংশ নেন।
সমাবেশে সংগঠনের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আদালতের রায় যারা মানতে চায় না তারা গণতন্ত্রের শত্রু। এদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। যারা হাইকমিশনে হামলা করে তারা বাংলাদেশের শত্রু। ওরা জামায়াত-শিবিরের এজেন্ট।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক আব্দুল মালেক প্রেরীত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছ: গত ৯ ফেব্রুয়ারী শুক্রবার নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ড সিটির বাংলাদেশ কন্সাল জেনারেল অফিসের সম্মুখে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, নিউইয়র্ক স্টেট আওয়ামী লীগ, নিউইয়র্ক সিটি আওয়ামী লীগ, যুক্তরাষ্ট্র স্বেচ্ছাসেবক লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসীরা যে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে তার তীব্র নিন্দা জানাতে এক সমাবেশের আয়োজন করে। যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমানের নেতৃত্বে সমাবেশের কার্যকলাপ পরিচালিত হয়। সমাবেশ থেকে লন্ডনের হাইকমিশনে যে সকল সন্ত্রাসীরা বঙ্গবন্ধুর ছবির অবমাননা এবং ভাংচুর করেছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি জোড় দাবী জানানো হয়। এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরনকারীদের বক্তারা দেশদ্রোহী বলে আখ্যায়িত করেন।
বক্তারা বলেন, যে মূহুর্তে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে এবং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অনেক উজ্জ্বল হয়েছে সে মূহুর্তে প্রতিক্রিয়াশীল চক্রের এ ধরনের হটকারীতা কঠোর হস্তে দমন করা উচিত। বক্তারা সাম্প্রতিক জিয়া অরফানেজ দুর্নীতি মামলার রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বিচারক সঠিক রায় দিয়েছেন এবং এটি আবারও প্রমানিত হলো কেহই আইনের উর্ধ্বে নন। এই রায় সকল দুর্নীতিবাজদের জন্য একটি শিক্ষণীয় মাইল ফলক। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সকল মত পার্থক্যকে ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার দৃঢ় শপথের মাধ্যমে সমাবেশের সমাপ্তি ঘটে। সমাবেশ সঞ্চালনায় ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ-এর ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবদুস সামাদ আজাদ।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মাহবুবুর রহমান ও সামছুদ্দীন আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দীন দেওয়ান, কোষাধ্যক্ষ মো: মুনছুর খান, প্রচার সম্পাদক হাজী এনাম, উপদেষ্টা ডা. মাসুদুর রহমান এবং নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমদাদ চৌধুরী সহ দলীয় উল্লেখযোগ্য নেতা-কর্মীর মধ্যে মধ্যে মুজাহিদুল ইসলাম, আজিজুর রহমান ড. বাতেন, কাজী কয়েস, আবদুল মালেক, সামসুল আবেদীন, মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, শাহানারা রহমান, নুরুল আফসার সেন্টু, রফিকুল ইসলাম, আলমগীর হেসেন, কানিজ ফাতেমা, আনিছুর রহমান, স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা মোহাম্মদ সাখাওয়াত বিশ্বাস, নুরজ্জামান সরদার, দুরুদ মিয়া রনেল, কবির আলি, জাহিদ মিয়া, সুবল দেবনাথ, গোলাম কিবরিয়া, কামাল হোসেন রাকিব, ফারুক আহম্মেদ, আবুল কাসেম ভুইয়া, মস্তফা কামাল, নান্টু মিয়া নুরে আজম বাবু, সাইফুল ইসলাম আরো অনেক নেতা-কর্মী শান্তি সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ।