নিউইয়র্ক ০৫:৫৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজ্ঞাপন :
মঙ্গলবারের পত্রিকা সাপ্তাহিক হককথা ও হককথা.কম এ আপনার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিতে যোগাযোগ করুন +1 (347) 848-3834

নিউইয়র্কে বাংলাদেশী সুমির আত্মহত্যা

রিপোর্ট:
  • প্রকাশের সময় : ০৫:১৯:৫৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ অগাস্ট ২০১৭
  • / ৮১৬ বার পঠিত

নিউইয়র্ক: নিউইয়র্কে বাংলাদেশী কমিউনিটির পরিচিত মুখ, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতা মাহফুজুর রহমানের স্ত্রী নাদিয়া আফরোজ সুমি (৩২) আত্মহত্যা করেছেন। গত ৪ আগস্ট শুক্রবার রাত ১০টার দিকে নিজ বাসায় (৭৩-১১, ৩১ এভিনিউ ইস্ট এলমহার্স্ট) ফ্যানের সাথে ঝুলে তিনি আতœহত্যা করেন বলে জানা গেছে। তার আত্মহত্যার সময় একমাত্র পুত্র শামীম রহমানকে বলেছিলেন ৯১১ কল করে পুলিশকে ডাকতে। মায়ের কথা অনুযায়ী ইবনে শামীম রহমান পুলিশকে কল দিলে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ আসার আগেই সুমি জীবনের হিসাব-নিকাশ মিটিয়ে ফেলে। পুরিশ এসে তার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (সোমবার ভোর) সুমির মরদেহ কুইন্স হাসপাতাল মর্গে ছিল। সোমবার সকাল ১১টায় স্থানীয় জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে তার জানাজা হওয়ার কথা রয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রমতে, স্বামীর দীর্ঘ অসুস্থতা, স্বামী পরিবারের অসহযোগিতায় বিরক্ত সুমি আত্মহত্যা করেছেন। ঢাকার খিলগাঁতে সুমির জন্ম। তার আতœহত্যার ঘটনায় কম্যুনিটিতে চাঞ্চল্যের পাশাপাশি শোকের ছায়া নেমে এসেছে। খবর ইউএনএ’র।
প্রায় দেড় বছর আগে সুমির স্বামী মাহফুজুর রহমান ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে ৫ বছরের একমাত্র শিশু সন্তানকে নিয়ে একাই সংসারের ঘানি টানছিলেন সুমি। মাহফুজুর রহমান অসুস্থ হওয়ার পর তাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিলেন কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট ডা. মাসুদুল হাসান, খুলনা সমিতির সভাপিত আসাদুল ইসলাম আসাদ সহ আরো কতিপয় সুহৃদ ব্যক্তি। তবে একটি সংসার চালনানোর জন্য এটি পর্যাপ্ত ছিল না। যার ফলে বাসার একরুম ভাড়া দিয়ে সংসার আর অসুস্থ্য স্বামী সেবাকে জীবনের ব্রত হিসেবে নিয়ে পরিবারের হাল ধরে রেখেছিলেন স্ত্রী নাদিয়া আফরোজ সুমি।
সূত্র মতে, অসুস্থ্য স্বামীর নিকট আত্মীয়দের থেকে সাহায্য পাওয়ার পরিবর্তে তার বিরুদ্ধে কুৎসা ও সন্দেহ রটনার বিষয়টি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না তিনি। এবিষয়ে ঘনিষ্টদের কাছে বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেছিলেন সুমি। সুমির এই করুণ পরিণতি নিয়ে কমিউনিটিতে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।
জানা গেছে, খুলনা সমিতি ইউএসএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান বিগত ১ বছর ৯ মাস আগে স্ট্রোকের শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। গত প্রায় ২ বছর ধরে তার চিকিৎসা চলছিলো। বর্তমানে তিনি ফøাশিং-এর একটি রিহ্যাব সেন্টারে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হার্ট এ্যাটাকের পর মাহফুজ দীর্ঘদিন অবচেতন অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরবর্তীতে উন্নত চিকৎসার ফলে তার অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতি হলেও তার দেহের এক সাইড প্যারালাইজড হয়ে যায়। রিহ্যাব সেন্টারে চিকিৎসাধীন মাহফুজ পরিচিতজনদের দেখে চিনতে পারছিলেন এবং একটু একটু কথাও বলতে পারতেন বলে সর্বশেষ খবরে জানা যায়। এই প্রবাসে তার স্ত্রী সুমিই তাদের পরিবারের একমাত্র অবলম্বন ছিলেন। মাহফুজ-সুমি দম্পতির ৫ বছরের একমাত্র পুত্র সন্তান হচ্ছে ইবনে শামীম রহমান।
সূত্রমতে, সুমির এই সংকটে এগিয়ে এসেছিলেন খুলনা সমিতির কর্মকর্তারা। সমিতির উপদেষ্টা ডা. মাসুদুর রহমান, জিয়াউর রহমান লিটু, সভাপতি আসাদুল ইসলাম আসাদ, সাধারণ সম্পাদক মুরারী মহন দাস, শেখ ফারুকুল ইসলাম ও সরকার মুনিরুল ইসলামসহ অনেকেই অসহায় সুমিকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। সূত্র জানায়, প্রথম দিকে খুলনা সমিতির পক্ষ থেকে ২ মাসের বাসা ভাড়াও দেয়া হয়। পরে সিটির কাছ থেকে কিছু সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পর ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনেকে সহযোগিতা করেন। সিটির অর্থিক অনুদান ও একজন মহিলাকে রুমমেট নিয়ে সুমি কোনভাবে সংসার চালাচ্ছিলেন। অভিযোগ উঠেছে, মাহফুজুর রহমানের আত্মীয়রা এক সময় অসহযোগিতা নানা অপবাদও দিয়ে বিষিয়ে তুলেন তাকে।
প্রবাসী খুলনাবাসীদের ধারণা অপবাদ সইতে না পেরেছে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা সুমি গত ৪ আগস্ট রাত ১০টার দিকে নিজ বাসায় আত্মহত্যা করেন।
খুলনা সমিতির সভাপতি আসাদুল ইসলাম আসাদ জানান, ঘটনাটি নাদিয়া আফরোজ সুমির মাকে জানানো হয়েছে। তিনি ঢাকায় রয়েছেন। তিনি জানান, ৭ আগস্ট সোমবার বাংলাদেশ থেকে সুমির খালা নিউইয়র্ক আসছেন। সুমির মায়ের ইচ্ছা অনুযায়ী তার মরদেহ ৮ আগস্ট মঙ্গলবার বাংলাদেশে পাঠানো হবে। অন্যদিকে মাহফুজ-সুমির একমাত্র সন্তান বর্তমানে খুলনা সমিতির উপদেষ্টা জিয়াউর রহমান লিটুর স্ত্রী হ্যাপি চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে রয়েছে। তার খালা আসার পর তাদের পুত্র ইবনে শামীম রহমানের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খবরটি শেয়ার করুন

About Author Information

নিউইয়র্কে বাংলাদেশী সুমির আত্মহত্যা

প্রকাশের সময় : ০৫:১৯:৫৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ অগাস্ট ২০১৭

নিউইয়র্ক: নিউইয়র্কে বাংলাদেশী কমিউনিটির পরিচিত মুখ, যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি নেতা মাহফুজুর রহমানের স্ত্রী নাদিয়া আফরোজ সুমি (৩২) আত্মহত্যা করেছেন। গত ৪ আগস্ট শুক্রবার রাত ১০টার দিকে নিজ বাসায় (৭৩-১১, ৩১ এভিনিউ ইস্ট এলমহার্স্ট) ফ্যানের সাথে ঝুলে তিনি আতœহত্যা করেন বলে জানা গেছে। তার আত্মহত্যার সময় একমাত্র পুত্র শামীম রহমানকে বলেছিলেন ৯১১ কল করে পুলিশকে ডাকতে। মায়ের কথা অনুযায়ী ইবনে শামীম রহমান পুলিশকে কল দিলে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ আসার আগেই সুমি জীবনের হিসাব-নিকাশ মিটিয়ে ফেলে। পুরিশ এসে তার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত (সোমবার ভোর) সুমির মরদেহ কুইন্স হাসপাতাল মর্গে ছিল। সোমবার সকাল ১১টায় স্থানীয় জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারে তার জানাজা হওয়ার কথা রয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রমতে, স্বামীর দীর্ঘ অসুস্থতা, স্বামী পরিবারের অসহযোগিতায় বিরক্ত সুমি আত্মহত্যা করেছেন। ঢাকার খিলগাঁতে সুমির জন্ম। তার আতœহত্যার ঘটনায় কম্যুনিটিতে চাঞ্চল্যের পাশাপাশি শোকের ছায়া নেমে এসেছে। খবর ইউএনএ’র।
প্রায় দেড় বছর আগে সুমির স্বামী মাহফুজুর রহমান ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে ৫ বছরের একমাত্র শিশু সন্তানকে নিয়ে একাই সংসারের ঘানি টানছিলেন সুমি। মাহফুজুর রহমান অসুস্থ হওয়ার পর তাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছিলেন কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট ডা. মাসুদুল হাসান, খুলনা সমিতির সভাপিত আসাদুল ইসলাম আসাদ সহ আরো কতিপয় সুহৃদ ব্যক্তি। তবে একটি সংসার চালনানোর জন্য এটি পর্যাপ্ত ছিল না। যার ফলে বাসার একরুম ভাড়া দিয়ে সংসার আর অসুস্থ্য স্বামী সেবাকে জীবনের ব্রত হিসেবে নিয়ে পরিবারের হাল ধরে রেখেছিলেন স্ত্রী নাদিয়া আফরোজ সুমি।
সূত্র মতে, অসুস্থ্য স্বামীর নিকট আত্মীয়দের থেকে সাহায্য পাওয়ার পরিবর্তে তার বিরুদ্ধে কুৎসা ও সন্দেহ রটনার বিষয়টি কোনভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না তিনি। এবিষয়ে ঘনিষ্টদের কাছে বিভিন্ন সময় অভিযোগ করেছিলেন সুমি। সুমির এই করুণ পরিণতি নিয়ে কমিউনিটিতে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে।
জানা গেছে, খুলনা সমিতি ইউএসএ’র সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান বিগত ১ বছর ৯ মাস আগে স্ট্রোকের শিকার হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। গত প্রায় ২ বছর ধরে তার চিকিৎসা চলছিলো। বর্তমানে তিনি ফøাশিং-এর একটি রিহ্যাব সেন্টারে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হার্ট এ্যাটাকের পর মাহফুজ দীর্ঘদিন অবচেতন অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরবর্তীতে উন্নত চিকৎসার ফলে তার অবস্থা ধীরে ধীরে উন্নতি হলেও তার দেহের এক সাইড প্যারালাইজড হয়ে যায়। রিহ্যাব সেন্টারে চিকিৎসাধীন মাহফুজ পরিচিতজনদের দেখে চিনতে পারছিলেন এবং একটু একটু কথাও বলতে পারতেন বলে সর্বশেষ খবরে জানা যায়। এই প্রবাসে তার স্ত্রী সুমিই তাদের পরিবারের একমাত্র অবলম্বন ছিলেন। মাহফুজ-সুমি দম্পতির ৫ বছরের একমাত্র পুত্র সন্তান হচ্ছে ইবনে শামীম রহমান।
সূত্রমতে, সুমির এই সংকটে এগিয়ে এসেছিলেন খুলনা সমিতির কর্মকর্তারা। সমিতির উপদেষ্টা ডা. মাসুদুর রহমান, জিয়াউর রহমান লিটু, সভাপতি আসাদুল ইসলাম আসাদ, সাধারণ সম্পাদক মুরারী মহন দাস, শেখ ফারুকুল ইসলাম ও সরকার মুনিরুল ইসলামসহ অনেকেই অসহায় সুমিকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন। সূত্র জানায়, প্রথম দিকে খুলনা সমিতির পক্ষ থেকে ২ মাসের বাসা ভাড়াও দেয়া হয়। পরে সিটির কাছ থেকে কিছু সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার পর ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনেকে সহযোগিতা করেন। সিটির অর্থিক অনুদান ও একজন মহিলাকে রুমমেট নিয়ে সুমি কোনভাবে সংসার চালাচ্ছিলেন। অভিযোগ উঠেছে, মাহফুজুর রহমানের আত্মীয়রা এক সময় অসহযোগিতা নানা অপবাদও দিয়ে বিষিয়ে তুলেন তাকে।
প্রবাসী খুলনাবাসীদের ধারণা অপবাদ সইতে না পেরেছে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা সুমি গত ৪ আগস্ট রাত ১০টার দিকে নিজ বাসায় আত্মহত্যা করেন।
খুলনা সমিতির সভাপতি আসাদুল ইসলাম আসাদ জানান, ঘটনাটি নাদিয়া আফরোজ সুমির মাকে জানানো হয়েছে। তিনি ঢাকায় রয়েছেন। তিনি জানান, ৭ আগস্ট সোমবার বাংলাদেশ থেকে সুমির খালা নিউইয়র্ক আসছেন। সুমির মায়ের ইচ্ছা অনুযায়ী তার মরদেহ ৮ আগস্ট মঙ্গলবার বাংলাদেশে পাঠানো হবে। অন্যদিকে মাহফুজ-সুমির একমাত্র সন্তান বর্তমানে খুলনা সমিতির উপদেষ্টা জিয়াউর রহমান লিটুর স্ত্রী হ্যাপি চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে রয়েছে। তার খালা আসার পর তাদের পুত্র ইবনে শামীম রহমানের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।