নিউইয়র্কে প্রতারণা ও ছিনতাইয়ের কবলে দুই বাংলাদেশী
- প্রকাশের সময় : ০৫:৫৪:৫১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৪ এপ্রিল ২০১৭
- / ৬৭৬ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: নিউইয়র্কে অভিনব কায়দায় দিনে দুপুরে ছিনতাই, ডাকাতি বেড়ে গেছে। একইদিনে অভিনব প্রতারণার কবলে পড়েছেন দুই বাংলাদেশী। ভূয়া পুলিশ সেজে ডাকাতি চেষ্টার সময় ব্রুকলীনে আটক হয়েছে দুই দূর্বৃত্ত। আর কুইন্সে বাংলাদেশী ট্যাক্সিচালককে মারধোর করে অর্থসহ মানিব্যাগ ছিনিয়ে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থা আশংকাজনক। গত ২২ এপ্রিল শনিবার ঘটনা দুটি ঘটে। হঠাৎ করে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং ছিনতাই-ডাকাতির ঘটা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নিউইয়র্কবাসী সহ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
জানা গেছে, শনিবার বেলা ১১টার দিকে ব্রুকলীনে ‘ব্রডওয়ে‘ নামের একটি চেক এন্ড ক্যাশ প্রতিষ্ঠান থেকে ছয় হাজার টাকা তুলে হোসলি স্ট্রিটে গাড়ি পার্কিং করছিলেন বাংলাদেশী ব্যবসায়ী পরান চৌধুরী। এরমধ্যে একটি পুলিশের গাড়ি তাকে সিগন্যাল দেয়। এরপর পুলিশ বিভাগের আন্ডার কভার নামধারী দুই ব্যক্তি তার সামনে এসে দাঁড়ায়। অভিযোগ করে যে, গাড়িতে অস্ত্র আছে, তল্লাশী করতে হবে। ওই দুই ব্যক্তি নিজেদেরকে পুলিশের গোয়েন্দা সদস্য অর্থাৎ ‘আন্ডার কভার’-এর পরিচয়পত্র দেখায়। তাদের শরীরের ছিলো একই সাইন। কিন্তু তাদের আচরণ সন্দেহজনক লাগে পরান চৌধুরীর। তারপরও পুলিশের লোক ভেবে পরান চৌধুরী গাড়ী থেকে নেমে তাদের কথামতো গাড়ী তল্লাশী করতে দেয়। এমন সময় সেখান দিয়ে চলমান এনওয়াইপিডি’র একটি গাড়ি যাওয়ার সময় তিনি (পরান চৌধুরী) পুলিশকে ইশারা দিলে পুলিশ গাড়ী থামিয়ে তার সমস্যা জানতে চায়। এরপর এনওয়াইপিডি’র দুই সদস্য তথাকথিত অন্ডার কভারের দুইজনকে চ্যালেঞ্জ করলে প্রথমে তারা নিজেদেরকে পুলিশের আন্ডার কভারের সদস্য বলে পরিচয় দেয়। কিন্তু পরান চৌধুরী চ্যালেঞ্জের মুখে সিটি পুলিশ তাদেরকে পুনরায় জেলা করতে থাকে এবং আইডি দেখতে চাইলে তাদের সন্দেহ বেড়ে যায়। এরসই মধ্যে আন্ডার কভারধারী একজন পরান চৌধুরীর গাড়ী তল্লাশীর সময় তার গাড়ীর ড্যাসবোর্ডে থাকা নগদ ছয় হাজার ডলার হাতিয়ে নিয়ে তাদের গাড়ী উঠে। এসময় পরাম চৌধুরী তার গাড়ী ছয় হাজার ডলার না পেয়ে পুলিশকে পুনরায় চ্যালেঞ্জ করে এবং সিটি পুলিশ পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। একপর্যায়ে তাদের একজন হাতিয়ে দেয়া ছয় হাজার ডলার পকেট থেকে বের করে দেয়। এরপর পুলিশ তাদের আটক করে হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে স্থানীয় প্রিসিক্টে নিয়ে যায়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মিলটন নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা শনিবার অপরাহ্নে এই প্রতিনিধির কাছে ঘটনার বিবরণ তুলে ধরেন। এই ঘটনায় বিস্মিত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীও। তাদের আশংকা, এ ধরণের ঘটনার পেছেনে বড় চক্র রয়েছে। তাদের খুজে বেড় করার চেষ্টা করছে পুলিশ। ঘটনার ব্যাপারে ঐদিন অপরাহ্নে স্থানীয় পুলিশ সাংবাদিক সম্মেলন করে মিডিয়াকে বিস্তারিত অবহিত করেছে। ঘটনাটি টাইম টেলিভশন সহ মূলধারার মিডিয়ায়ও গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয়েছে।
পরান চৌধুরীও শনিবার অপরাহ্নে ঘটনাস্থলে এই প্রতিনিধির কাছে ঘটনাটি তুলে ধরেন এবং সতর্কতার সাথে চলাচলের জন্য বাংলাদেশী-আমেরিকান সহ সবার প্রতি আহ্বান জানান।
ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন আরেক বাংলাদেশী: অপরদিকে একই দিন ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন মসিউর রহমান নামক আরেক বাংলাদেশী গ্রীন ক্যাব চালক। জানা গেছে, শনিবার ভোররাত দুইটার পর থেকে তার কোন সন্ধান না পেয়ে ৯১১ এ ফোন দেয় পরিবার। পরবর্তীতে খোঁজখবর নিয়ে পুলিশ পরিবারকে জানায়, কুইন্সে গাড়ির মধ্যেই অচেতন হয়ে ছিলেন মসিউর রহমান। যাত্রীবেশী দৃর্বত্তরা তাকে মারধোর করে মানিব্যাগ নিয়ে পালিয়ে যায়। বর্তমানে তিনি এলমহার্স্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি দু-একবার চোখ মেলে তাকালেও তার জ্ঞান ফেরেনি এবং তিনি কথা বলতে পারছেন না।
এলমহার্স্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মসিউর রহমানের শয্যাপাশে অবস্থানকারী তার পরিবারের সদস্যরা শনিবার সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদকের সাথে আপালকালে জানান, তার মাথায় প্রচন্ড আঘাত করা হয়েছে। কান দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে। ব্যথায় মাঝে-মধ্যে কুকিয়ে উঠছে আর দু’-একবার চোখ মেলে তাকাচ্ছে। তবে কোন কথা বলতে পারছেন না। পরিবারের ধারনা যাত্রীবেশী দূর্বৃত্তরাই তাকে মারধর করে তাকে গাড়ীতে ফেলে রেখে ম্যানিব্যাগ সহ সকল অর্থ ছিনতাই করে পালিয়েছে। এই ঘটনায় তারা গভীর উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা প্রকাশ করে পুলিশ বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ পূর্বক ঘটনার তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধীদের আটক করে বিচারের দাবী জানিয়েছেন।