নিউইয়র্কসহ উত্তর আমেরিকায় পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত

- প্রকাশের সময় : ১০:৪৮:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৭
- / ১১৪৫ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: বিপুল উৎসাহে যথাযোগ্য মর্যাদা আর ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে নিউইয়র্কসহ উত্তর আমেরিকায় ১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হয়েছে। মহান আল্লাহতায়ালার নির্দেশে হযরত ইব্রাহীম (আ:) এর ত্যাগের মহিমায় চির ভাস্বর পবিত্র ঈদুল আযহা। হালকা বাতাস আর চমৎকার আবহাওয়ায় নিউইয়র্কসহ উত্তর আমেরিকার একাধিক মসজিদ আর কমিউনিটি সেন্টারে শুক্রবার পবিত্র ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করা হয়। প্রবাসী বাংলাদেশীদের উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত নিউয়র্কের অন্যতম বৃহৎ মসজিদ জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টারের আয়োজনে সকাল পৌনে ৯ টার দিকে জ্যামাইকা হাই স্কুল খেলার মাঠে খোলা জায়গায় উত্তর আমেরিকায় ঈদুল আযহার সর্ববৃহৎ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। ঈদের জামাত শেষে অনুষ্ঠিত বিশেষ মুনাজাতে সমগ্র মুসলিম উম্মাসহ দেশ-জাতির মঙ্গল ও সমৃদ্ধি এবং দেশে দেশে নিপীড়িত-নির্যাতিত বিশেষ করে মিয়ানমারের (সাবেক বার্মা) রোহিঙ্গা মুসলমানদের রক্ষায় মহান আল্লাহতায়ালার রহমত ও বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সহযোগিতা কামনা করা হয়। এসব জামাতে শিশু-কিশোর-কিশোরী থেকে শুরু করে বয়োবৃদ্ধসহ সর্বস্তরের ১০/১২ হাজার মুসলিম নর-নারী একত্রে ঈদুল আযহার নামাজ আদায় করেন।খবর ইউএনএ’র।
নিউইয়র্কের ম্যানহাটানাস্থ মদিনা মসজিদ, জ্যামাইকাস্থ আল আরাফা ইসলামিক সেন্টার, মসজিদ মিশন সেন্টার (হাজী ক্যাম্প মসজিদ), দারুস সালাম মসজিদ, আসসাফা ইসলামিক সেন্টার, জ্যাকসন হাইটসের নিউইয়র্ক ঈদ গাঁ, ইস্ট এলমহার্সের আবু হুরায়রা মসজিদ, এস্টোরিয়ার গাউছিয়া জামে মসজিদ, শাহজালাল জামে মসজিদ, ব্রঙ্কসের পার্কচেষ্টার জামে মসজিদ, বাংলা বাজার জামে মসজিদ, ব্রুকলীনের বায়তুল জামে মসজিদ, জ্যাকসন হাইটস্থ দারুল ফুরকান মসজিদ, ইস্ট এলমহার্স্টের বায়তুল হামদ জামে মসজিদ, করনার আল ফালাহ মসজিদ, পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যের নর্থপেন জামে মসজিদ ও হার্ডফিল্ড জামে মসজিদে, নিউজার্সী অঙ্গরাজ্যের পেটারসন মসজিদ আল ফেরদৌসে ঈদুল আযহার নামাজ অনুষ্ঠিত হয় বলে জানা গেছে। এসব মসজিদে কোথাও কোথাও একাধিক ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
জ্যামাইকা মুসলিম সেন্টার (জেএমসি) আয়োজিত ঈদুল আযহার জামাতের আগে উপস্থিত হাজার হাজার মুসল্লীদের উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন জেএমসি’র ট্রাষ্ট্রি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সাবেক সভাপতি ডা. এম এম বিল্লাহ, জেএমসি পরিচালনা কমিটির সভাপতি খাজা মিজান হাসান ও ইমাম শামসে আলী। এছাড়া মূলধারার রাজনীতিকদের মধ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্ক ষ্টেট অ্যাসেম্বলীম্যান ডেভিড ওয়েপ্রীন ও স্থানীয় সিটি কাউন্সিলম্যান ররি ল্যান্সম্যান। এই পর্ব পরিচালনা করেন জেএমসি’র সেক্রেটারী মনজুর আহমেদ চৌধুরী।
ঈদের জামাতের পর শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্ক সিটির আসন্ন ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারী নির্বাচনে ডিষ্ট্রিক্ট-২৪ থেকে কাউন্সিলম্যান পদপ্রার্থী বাংলাদেশী-আমেরিকান মোহাম্মদ তৈয়বুর রহমান।
উত্তর আমেরিকার সর্ববৃহৎ এই ঈদের জামাতে ইমামতি করেন হাফেজ মুজাহিদুল ইসলাম। ঈদের জামাত শেষে মুসল্লীরা একে অপরের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
জ্যামাইকার আল আরাফা ইসলামিক সেন্টারের আয়োজনে স্থানীয় সুজান বি এন্থনী স্কুলের খোলা মাঠে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় ঈদুল আযহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
মসজিদ মিশন সেন্টার (হাজী ক্যাম্প মসজিদ)-এর উদ্যোগে মসজিদেই ঈদুল আযহার চারটি জামাত অনুষ্ঠিত হয় যথাক্রমে সকাল সোয়া ৭টায়, সোয়া ৮টায়, সোয়া ৯টায় আর সকাল সাড়ে ১০টায়।
জ্যাকসন হাইটসের মোহাম্মদী সেন্টারের উদ্যোগে নিউইয়র্ক ঈদ গাঁ কমিটির ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় পিএস ৬৯ সংলগ্ন ৭৭ স্ট্রীটে খোলা রাস্তার উপর ঈদুল আযহার ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হয় যথাক্রমে সকাল ৭ট, ৮টা, ৯টা, ১০টা ও সকাল ১১টায়।
ব্রুকলীনের বায়তুল জান্নাহ জমে মসজিদের আয়োজনে স্থানীয় ম্যাকডোনাল্ড এভিনিউর (এভিনিউ সি আর চার্চ এভিউর মাঝে) উপর সুবিশাল খোলা রাস্তার উপর ঈদুল আযহার দু’টি জামাত অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জামাত হয় সকাল ৭টার দিকে আর দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয় সকাল সাড়ে ৮টায়। প্রথম জামাতে ইমামতি করেন হাফেজ মাওলানা আশ্রাফ উল্লাহ এবং দ্বিতীয় জামাতে ইমামতি করেন অধ্যাপক মওলানা মহিবুর রহমান। এই জামাত দুটিতে ৫/৬ হাজার মুসল্লী অংশ নেন বলে স্থনীয়রা ইউএনএ প্রতিনিধিকে জানান।
এদিকে কানাডা ও ওয়াশিংটন ডিসিসহ যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সী, কানেকটিকাট, ম্যারিল্যান্ড, পেনসেলভেনিয়া, ভার্জেনিয়া, ওয়াহিও, ফ্লোরিডা, নর্থ ক্যারোরিনা, সাউথ ক্যারোলিনা, জর্জিয়া, মিশিগান, ক্যালিফোর্নিয়া, টেক্সাস প্রভৃতি অঙ্গরাজ্যে যথাযোগ্য মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
প্রতিটি ঈদের জামাত শেষে নবীন-প্রবীণ, ছোট-বড়, ধনী-গরীব সকলকে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় ও কোলাকুলি করতে দেখা যায়। সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে ঈদের নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদ পরিচালনা কমিটির উদ্যোগে সর্বত্রই নেয়া হয় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সেই সাথে সিটি প্রশাসনেরও বিশেষ নিরাপত্তা রক্ষ্য করা যায়। ঈদের নামাজ আদায়ের স্থানগুলোর আশপাশের রাস্তায় ফ্রি গাড়ী পার্কিং এর ব্যবস্থা থাকায় দূর দূরান্ত থেকে শত শত ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা সপরিবারে ঈদের নামাজে শরীক হন। রং বেরং এর বাহারী পোশাক গায়ে নামাজিদের একত্রে ঈদের নামাজ আদায় ভীন দেশীদের বিশেষভাবে আকৃষ্ট করে। সেই সাথে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ। ঈদের দিনটি উইক ডে (শুক্রবার) থাকায় পরও বিভিন্ন ঈদের জামাতে বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশীকে ঈদের নামাজ আদায় করতে দেখা যায়। ঈদের জামাত শেষে অনেকে স্বপরিবারে বা বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ঘনিষ্ঠজনদের বাসা-বাড়ীতে গিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এছাড়া প্রবাসীরা ফোনে বাংলাদেশে ফোন করে স্বজনদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। শুভেচ্ছা বিনিময় হয় ফেসবুক আর টেক্স ম্যাসেজের মাধ্যমে।
অপরদিকে গ্রোসারীর মাধ্যমে অনেকেই মহান আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির জন্য খাসী ও গরু কোরবানী দেন। কোরবানীর মাংস হাতে পাওয়ার পর সেই মাংস আত্বীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের বাসায় বাসায় গিয়ে বিতরণ করা হয়। অনেকে প্রবাসী আবার দেশেও নিজ নিজ এলাকার গ্রামের বাড়ীতে কোরবানী দেন বলে জানা গেছে।
ছবি: নিহার সিদ্দিকী/ইউএনএ