নিউইয়র্কের বাংলাদেশ স্টুডেন্ট এবং এলামনাই এসোসিয়েশন’র সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য
- প্রকাশের সময় : ০২:৫৯:০৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০২৪
- / ২৮ বার পঠিত
হককথা ডেস্ক: প্রথমেই স্মরণ করছি ৫ আগস্ট আমাদের প্রিয় বাংলাদেশে যে অভ্যুত্থান হয়ে গেছে, সেই অভ্যুত্থানের রূপকার সকল শহীদ ভাই-বোনদের। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি যারা আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছে এবং পঙ্গুত্ব বরণ করে এখনো হাসিমুখে দেশকে নিয়ে আগামীর শুভদিনের স্বপ্ন দেখছে।
শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা তাদের সকলের পরিবার-পরিজনের প্রতি যারা ধৈর্য্য ধরে আছে এবং এই পুরো সময়টা সবরকম সহায়তা দিয়ে গেছেন। দেশের প্রতিটি মানুষ যারা নিজের জীবনের মায়া ত্যাগ করে শেষ মূহুর্তে রাস্তায় নেমে এসেছিলেন। দিয়েছেন খাবার, অর্থ, ঔষধ, সাহস এবং ভরসা; সেই সকল মানুষদের জানাই বিপ্লবের লাল সালাম। আপনারা আমরা আজ সকলেই একই কাতারে একই উদ্দেশ্যে সফল।
উপস্থিত সকল গুনী সাংবাদিকবৃন্দ, আমার সহপাঠি এবং বড়ভাই বোন, আপনাদেরকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি আজকের এই আয়োজনে অংশ নেবার জন্য। সালাম, আদাব এবং শুভেচ্ছা জানিয়ে শুরু করছি আজকের এই সংবাদ সম্মেলন।
আমরা বাংলাদেশ স্টুডেন্ট এবং এলামনাই এসোসিয়েশন, দেশের যে কোনো ক্রান্তিলগ্নে সর্বচ্চো চেষ্টা করেছি দেশের জন্য কাজ করতে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ পরবর্তী ক্রাউড ফান্ডিং করে দেশে ত্রাণ সহায়তা থেকে, নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কোটা সংস্কার আন্দোলন, এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশের নিরীহ জনতা এবং ছাত্রদের প্রতি আমাদের একাত্মতা এবং সংহতি বরাবরের মতোই ছিলো। আমরা সংহতি প্রকাশ করেছি ইউএন অফিসের সামনে, বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসের সামনে। এমনকি জনমত গঠন করে আন্দোলন করেছি জ্যাকসন হাইটস, হিলসাইড এবং টাইমস স্কয়ারের মতোন জায়গাতে। নিয়মিত সোচ্চার থেকেছি বেশ কিছু টেলিভিশনের নিয়মিত টকশোতে। এবং সেই ধারাবাহিকতায় আমরা আজকে এখানে উপস্থিত হয়েছি অভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রতি কিছু দাবী তুলে ধরতে।
বাংলাদেশের অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুসকে অভিবাদন এবং অভিনন্দন জানাই। সেই সাথে শুভেচ্ছা জানাই উপদেষ্টা পরিষদের সকল সদস্যমন্ডলীদের। দেশের প্রতি একনিষ্ঠতার সাথে আপনারা দায়িত্ব পালন করে দেশকে একটা অবকাঠামোগত সংস্কারের সূচনা আপনাদের হাত ধরে আসবে এইটা দেশের সকল মানুষের প্রত্যাশা।
আজকে আমরা যারা উপস্থিত আছি এখানে, ‘বাংলাদেশ’ আমাদের সবার কাছে একটা কমন ইমোশন। এক ছাদের নীচে আমরা সবাই বাংলাদেশী। আদর্শিক বা মূলচিন্তাধারা সকলের এক না হলেও, আমরা সবাই জানি দীর্ঘমেয়াদি সরকারব্যবস্থা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে একনায়কতন্ত্র কায়েম করছিলো। উন্নয়নের বুলি দিয়ে ক্ষুন্ন করা হয়েছে মানুষের মৌলিক অধিকার এবং মানবাধিকারকে। আমরা যে বাংলাদেশকে ছোট থেকে অসাম্প্রদায়িক বলে জেনে এসেছি, সেই দেশে ডিভাইড এন্ডপ্রæল জারি করে ধীরে ধীরে বাইনারি রাজনীতি কায়েম করা হয়েছে। এবং এই বাইনারি রাজনীতির প্রধান হাতিয়ার করা হয়েছিলো মুক্তিযুদ্ধকে। একটা রাজনৈতিক দল ধীরে ধীরে মুক্তিযুদ্ধের মতোন মহান অর্জনকে নিজের দলের স্বার্থে ব্যবহার করে দেশের সাধারণ মানুষকে ঠেলে দিতো একটা চরমপন্থী পরিচয়ের দিকে। এবং গনতান্ত্রিক সরকারের ফ্যাসিস্ট হয়ে ওঠার প্রথম ধাপ ছিলো এটা। আমরা চাই বাংলাদেশে এমন বাইনারি রাজনীতি আর থাকবে না। আমরা বিএনপি বনাম আওয়ামিলীগ, হিন্দু বনাম মুসলিম, জামাতি বনাম বামাতি, প্রগতিশীল বনাম প্রতিক্রিয়াশীল দেখতে চাইনা। পরবর্তী সরকার কেবিনেটে আমরা চাই একটা মিশ্র পার্লামেন্ট যেখানে সবাই যুক্তিতর্কের মাধ্যমে দেশের প্রয়োজনীয় উন্নয়ন এবং অগ্রগতিতে কাজ করবে।
একটা জাতিকে আপনি যদি সারাজীবনের জন্য পঙ্গু করে দিতে চান তবে তাদেরকে মূর্খ করে রাখুন। আমার এই একটা লাইন আপনাদেরকে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বিগত কয়েক বছর বা কয়েক দশকের ফ্ল্যাশব্যাকে নিয়ে যাবে। শিক্ষা ব্যবস্থায় যে পরিমান অযৌক্তিক পরিবর্তন আমরা প্রতিবছর দেখি, স্কুল পর্যায়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদেরকে মানসিকভাবে দুর্বল করে দেওয়ার খুবই সুক্ষœ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়ে আসছে। সিলেবাস, বই, পরিক্ষা, কিংবা ক্লাস কারিকুলাম হাতের মোয়া না যে আমরা প্রত্যেক বছর ইচ্ছা হলেই পরিবর্তন করে নতুন নতুন এক্সপেরিমেন্ট করবো। আজকে শর্ট সিলেবাস কালচার, আর অনুকরনীয় শিক্ষা ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে আমাদেরকে স্কুল এবং কলেজের কারিকুলামে যৌক্তিক বিষয়ের উপর পাঠদান নিশ্চিত করতে হবে। আমরা সবাই হয়তো নেপোলিয়ন বোনাপার্টকে চিনি, ‘তুমি আমাকে শিক্ষিত মা দাও, আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দিবো’! আইরোনিক্যালি বাবা মা যদি পড়াশুনা না জানেন তাও একটা সন্তান কিন্তু অনেক দূর যেতে পারে শিক্ষাদিক্ষা নিয়ে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের মাঝে আজকে উপস্থিতিদের মধ্যে খুঁজলেই এমন পেয়ে যাবো। কিন্তু সমস্যাটা কোথায় জানেন? যারা আমাদেরকে শিক্ষা দিবে তাদের মাঝে। আমরা ইউনিভার্সিটির শিক্ষক নিয়োগে রাজনৈতিক মদদ দেখেছি। একটা ফ্যাসিস্ট সরকার পরিবর্তনের পর যত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিজে থেকে পদত্যাগ করেছেন, এমন লজ্জার নজির অন্য কোনো দেশে আছে কি না আমরা জানিনা। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যে শিক্ষক ভাইস চ্যান্সেলর হওয়ার জন্য আবেদন করেছেন উনার রেসুম্যি ৬৫ পৃষ্ঠার। অথচ এর আগে নিয়োগপ্রাপ্ত ভিসি শুধু আওয়ামিলীগ করলেই হইতো। রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে তো ভিসি লবিং এর মাধ্যমে নিজের মেয়ে জামাইকে লেকচারার পদে আসীন করেছিলেন। আমরা চাই এসব বন্ধ হোক। ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানীরা বুদ্ধিজীবী নিধন করে গেছিলো যেনো একটা জাতি মেধাশুন্য হয়ে যায়। সেই প্রক্রিয়া আমরা রাজনৈতিক দলের কর্মীদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার মাধ্যমে দ্বিতীয়বার জাতিকে মেধাশুন্য করার উদ্দেশ্য হিসেবে ধরে নিতেই পারি। দেশের সর্বচ্চো বিদ্যাপিঠে আমরা চাই যোগ্য শিক্ষক, যারা রাজনীতি নয় বরং রিসার্চ এবং ইনোভেশন নিয়ে কথা বলবে।
দক্ষিণ এশিয়ায় জাতি ধর্ম বর্ণ আদর্শ সংস্কৃতিগত পার্থক্য থাকলেও সবাইকে একটা বিষয়ে আপনি একইভাবে দেখতে পাবেন, সেটা হচ্ছে ‘মব জাস্টিস’। মব জাস্টিসের যে ধারাবাহিকতা এইটা আসছে রাজা বাদশাহদের আমল থেকেই। ইংরেজরা এই মব জাস্টিসের ফায়দা নিয়ে বহু মানুষকে নির্যাতন করেছে। এবং এই বর্তমান সময়ে এসেও আমরা নিত্যদিন দক্ষিন এশিয়ার কোনো না কোনো দেশে এই বিচার বহির্ভূত মব জাস্টিস দেখতে পাই। অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার ব্যবস্থায় যে জেনারেশনাল একটা পরিবর্তন এসেছে, আমরা বিশ্বাস করি এখনই উত্তম সময় এই মব জাস্টিস তথা বিচার বহির্ভূত বিচার ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে নির্বাহী তথা শাসন বিভাগ আর বিচার বিভাগকে ঢেলে সাজাতে হবে। নির্বাহী বিভাগকে সর্বচ্চো ব্যবহার করে আমাদের জনগন এবং জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের ধর্মীয় উৎসব বা জাতীয় উৎসবে স্খ্যংালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত সহ, সামাজিক যে কোনো অপরাধ, বাজার নিয়ন্ত্রন, সাইবার ক্রাইম রোধে আমাদের শাসন বিভাগের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিতকরণ আবশ্যিক। বিগত দিনের অহেতুক জনগনকে হয়রানি সহ যারা, সরকার কর্তৃক গুম খুন হত্যার সাথে যুক্ত ছিলো তাদেরকে বহিষ্কার সহ, দলীয় লেজুড়বৃত্তিক সদস্যদের ইস্তফা দিয়ে দেশপ্রেমিক এবং দায়িত্ববান সদস্য নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে হতে হবে জনবান্ধব।
একটা দেশের মানুষ তখনই সরকারব্যবস্থার উপর আস্থা হারায় যখন সেখানে কোনো জবাবদিহি থাকে না। সাগর রুনির হত্যার বিচার ৪৮ ঘন্টা থেকে এখন ৪৮ বছরের অপেক্ষায়। ক্যান্টনমেন্টের মতো সিকিউর এলাকায় তনু ধর্ষন যার রহস্য আজও কাওকে জানতে দেওয়া হয়নি, পাবলিক ট্রান্সপোর্টে নিত্যদিনের সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট থেকে মাদ্রাসায় বলাৎকারের মতোন জঘন্য ইনসিডেন্ট। ভূমিদখল, প্রসাশনিক কাজে ঘুষ, লাঞ্চের পর আসেন কালচার, ঘাট থেকে শুরু করে টোল বুথের নামে চাঁদাবাজি। এসকল কিছু বন্ধ কেবল সেদিনই সম্ভব, যেদিন আইন সবার জন্য সমান হবে। নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত, এবং সুপ্রিম কোর্টকে স্বাধীন করতে হবে। যখন দেশের সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে চিফ জাস্টিস সহ সকল উচ্চ পদস্থ বিচারকমন্ডলী পদত্যাগ করতে চায়, তখন আপনাকে আমাকে বুঝতে হবে এই বিচার ব্যবস্থা কতটা কোরাপ্টেড, ম্যানুপুলেটেড এবং একতরফা ছিলো। আপনি বলতে পারেন, এই অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রতি আদালত আস্থা হারিয়েছে। ওয়েল, ইন দ্যাট কেস আদালত একমাত্র উইং যারা জনগনের পক্ষে কিংবা নিউট্রাল গ্রাউন্ড থেকে সরকারকে পরামর্শ দিতে পারে, প্রশ্ন করতে পারে এবং বিশেষ ক্ষেত্রে আদেশ করতে পারে। সুতরাং আমরা ধরে নিতে পারি একমাত্র কোরাপশান আর দলীয় মতাদর্শ না থাকলে এহেন গুরুদায়িত্ব ছেড়ে পালাবার কথা কেউ ভাববে না। তবে বিগতদিনের কালো অধ্যায় ছাপিয়ে আমরা চাই কন্সটিটিউশনাল ল’ কে সংস্কার করতে, ব্রিটিশ শাসনের শিখিয়ে যাওয়া নানান অসংগতিপূর্ন বিচার ব্যবস্থা থেকে বের হয়ে সকলের জন্য সমান আইন নিশ্চিত করতে।
একটা গনতান্ত্রিক দেশের মূলনীতি সবসময় ‘অফ দ্য পিপল, ফর দ্য পিপল, বাই দ্য পিপল নীতিতে চলে।’ যখন আপনি এখানে একটা ‘কিন্তু, অথচ, অথবা’ নিয়ে আসতে চাইবেন তখনই দেশে ডিক্টেটরশিপ বা একনায়কতন্ত্র কায়েমের পক্ষে আপনি কথা বলছেন। সুতরাং জনগনের দ্বারা নির্বাচিত, জনগনের টাকায় চলা জনপ্রতিনিধিকে প্রপার এডুকেটেড হতে হবে। সেটা সেন্ট্রাল গভমেন্ট থেকে লোকাল গভমেন্ট পর্যন্ত। মিনিমাম একটা লেভেল পর্যন্ত শিক্ষা না থাকলে তারা প্রতিনিধিত্ব করার অযোগ্য বলে বিবেচিত হবে।
সেই সাথে নির্বাচন কমিশনকে হতে হবে নির্ভিক এবং প্রত্যেক টার্ম শেষে ফেয়ার ইলেকশন নিশ্চিত করতে হবে। ভোটডাকাতি, রাতের ইলেকশনের মতোন টার্ম বিলুপ্ত করতে হবে। এবং ইলেকশন সম্প্রচারের এক্সেস ইজি করা প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।
আপনার কি মনে হয় এই যে এতো এতো সমস্যা এর পিছে দায়ী কে আসলে?
এর উত্তর আপনি হয়তো যার প্রতি আক্রোশ তাকে দিয়ে দিবেন। কিন্তু না। এর পিছে দায়ী একটা সমাজব্যবস্থা। আপনারা সবাই জানেন, তারপরেও আমরা একটু ব্যাপারটাতে আলোকপাত করি আসেন।
সাম্প্রতিক সময়ে আমরা একটা শব্দের সাথে অনেক বেশি পরিচিত হয়েছি। ‘ফ্যাসিস্ট’ বা ‘ফ্যাসিজম’ যার উৎপত্তি বিখ্যাত/কুখ্যাত মুসোলিনির হাত ধরে। ফ্যাসিস্ট হচ্ছে যারা সরকারের জন্য কাজ করে, যারা প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে শ্রমিকদের দমিয়ে রাখে, শিক্ষিত বেকার তৈরি করে এবং যুদ্ধনীতিতে বিশ্বাস করে।
পলিটিক্যাল আর্মি!! অমুক ভাইয়ের ক্যাডার, অমুক কমিটির সহসভাপতি, অমুক দলের নেতা!!
এদের আইডেন্টিটি এমন ভাবে নিয়ন্ত্রন করা হয়, যেনো তাদের পৃথক কোনো সত্ত¡া, জীবনের দর্শন বা ইচ্ছা, শখ বলে কিছু নাই। এই কারনে আপনারা দেখবেন নিজের ক্যারিয়ার বা পরিবারের আগে এরা দলকে বা রাজনৈতিক মতাদর্শকে প্রাধান্য দেয়। এবং এই গ্রæপের সবচেয়ে বড় অংশটাই শিক্ষিত যুবক বেকার। কোনো এক বিশেষ ব্যক্তির ছত্রছায়ায় ক্যাডার হয়ে জীবন পার করাতেই এদের সার্থকতা। আপনারা এদেরকে ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির হিসেবে চিনে থাকবেন। পরবর্তীতে এরাই যুবলীগ, যুবদল হয়ে টেন্ডারবাজি , চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়। এবং যার কারনে সরকারি বেসরকারি সব খাতে দেখি দুর্নীতি, বা ভাগ বাটোয়ারা। ১০০ কোটি টাকার কাজ হয়, ১০০০ কোটি টাকা।
এই দুর্নীতি মনোপলি থেকে বের হতে চাইলে আমাদের প্রয়োজন বেকারত্ব দূর করা। কলেজ এবং ইউনিভার্সিটিতে পড়াকালীন প্রয়োজন পার্ট টাইম কাজের সূযোগ করে দেওয়া। বিভিন্ন কোম্পানির আন্ডারে যোগ্যতা অনুযায়ী ইন্টার্নির সূযোগ দেওয়া, বা সরকারি কাজে সহায়তার সূযোগ করে দেওয়া। এতে ছাত্রসমাজ, যুবসমাজ কোনো ভাইয়ের তাবেদারি করবে না। শিক্ষাজীবন শেষে কর্ম ক্ষেত্রে যাওয়ার সময়ে ছাত্র-ছাত্রীদের থাকবে কাজের অভিজ্ঞতা এবং সরকারি চাকরির প্রতি কমবে চাহিদা। কারিগরি শিক্ষা সবার জন্য বাধ্যতামূলক করতে হবে। আমরা ছাত্রসমাজকে যতো বেশি ক্রিয়েটিভ রাখবো, আমাদের দেশের মানবসম্পদ ততো বেশি ডাইভার্সড এবং শক্ত হবে।
আমাদের দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি গার্মেন্টসের পরেই কৃষি। আমাদের দেশের কৃষক শ্রমিকদের অবস্থা বোধ করি এখন সবচেয়ে খারাপ। দেশের জিডিপি ২৬৮৮.৩১ পয়সা। যেখানে কৃষকেরা সামান্য সারটুকু কিনতে হিমসিম খায়। আমাদের পাটকল, চিনিকল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমাদের চা শ্রমিকেরা নামে মাত্র মজুরি পাচ্ছে। শিল্প কারখানায় বেতন আটকে রাখা হচ্ছে। দেশের সরকার যদি এনার্জির সাপ্লাই সবচেয়ে বেশি দিয়ে থাকে, তবে সেটা শিল্প কারখানায়। গ্যাস, বিদ্যুৎ, এবং ভর্তুকি এ সবকিছু নিয়ে ক্যাপিটালিস্ট শ্রেণী অধিক মুনাফা অর্জন করেই যাচ্ছে আর এসবের পিছে গরীব শ্রমিক শ্রেণী এখনো দিনের নায্য মজুরি টুকু পাচ্ছে না। মার্কেট লবিং করে অল্প দামে ফসলাদি কিনে মজুদ করে বাজারে পন্যের কৃত্তিম সংকট তৈরি করে অধিক দামে একই ফসলাদি বিক্রি করা হচ্ছে। নিত্য প্রয়োজনীয় চাল, ডাল থেকে কাঁচাবাজার পর্যন্ত এর অন্তর্ভুক্ত। কিছুদিন আগে মাংসের বাজার কেমন ছিলো আমরা সবাই দেখেছি। রমজান মাসে বাজার কেমন থাকে তাও আমাদের অজানা নয়।
এই সরকার যদি ক্যাপিটালিস্ট গোষ্টীর এই আগ্রাসনকে শেষ না করতে পারে দেশ তবে আরেক ফ্যাসিবাদের রূপ দেখতে পাবে। কৃষকদের নায্য মজুরি দেওয়া থেকে শুরু করে চাষাবাদের প্রয়োজনীয় সকল উপাদির মূল্যে সরকারের ভর্তুকি দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। চা বাগানের শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি করতে হবে সেই সাথে বাজার নিয়ন্ত্রনে বিশেষ ইউনিট গঠন এখন সময়ের দাবি। নির্বাহি ম্যাজিস্ট্রেট যদি কোনো অবৈধ কারখানা খুঁজে পায় তবে সেগুলো সিলগালা করে পার্মানেন্ট বন্ধ করতে হবে। চাহিদা অন্যুায়ী পন্য বাজারে সরবরাহ যদি বন্ধ থাকে, তবে সেই সিন্ডিকেটের প্রত্যেকের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। বাজারে কোনো পন্যের দাম সরকার কর্তৃক বেধে দেওয়া দামের তুলনায় বেশি রাখতে চাইলে সেখানেও বিলম্ব না করে ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। একটা দেশের শ্রমজীবী মানুষ যদি না খেয়ে থাকে তবে সেই দেশের আক্ষরিক উন্নতি আশা করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।
এই দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা আমরা রাজধানী কেন্দ্রিক। ঢাকা ছাড়া একটা কাজ আপনি নিজ শহর থেকে করতে পারবেন না। অন্য শহরে কোনো চাকরি, হাসপাতাল, গভমেন্ট সার্ভিস নাই, গ্রামাঞ্চলের কথা বাদই দিলাম।
তাই রাজধানী ঢাকা বিকেন্দ্রিকরণ অতি আবশ্যক হয়ে পড়েছে। এডমিনিস্ট্রেটিভ কাজের ক্ষেত্রে দেশকে বিভিন্ন জোনে ভাগ করে সেক্টর অনুযায়ী লজিস্টিকস ডিস্ট্রিবিউট করে দিতে হবে। নগরায়নের ক্ষেত্রে প্রোপার প্ল্যানিং করতে হবে। যেখানে সেখানে ফ্লাইওভার, ব্রিজ আর টানেল নির্মান মানেই উন্নয়ন না এই বাস্তবতা বিশ্বাস করতে হবে। আপনি উদাহরণ হিসেবে এই নিউইয়র্ক শহরকেই দ্যাখেন। উন্নত নগরায়নের উদাহরণ দেখতে খুব বেশিদূর যেতে হবে না।
একই কাজ করা হচ্ছে পাহাড়ে। যেখানে সেখানে পাহাড় কেটে রিসোর্ট তৈরি, আদিবাসী গ্রাম দখল এবং সেটেলাররা যা করছে তাতে পাহাড় ধ্বস সহ জুমচাষ কমে যাচ্ছে। আদিবাসীরা অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে। আদিবাসীদের উদাহরণ দিতে যেয়ে তাদের খুঁজে না পেয়ে ব্যবহার করতে হচ্ছে নায়ক সিয়াম আহমেদ এবং তার বৌয়ের ছবি। একটা দেশের জন্য এইটা চরম লজ্জার। অথচ পর্যটনখাতকে উন্নত করে আমরা জাতীয় আয় বৃদ্ধি করতে পারি। বাংলাদেশের দর্শনীয় সকল স্থানকে জাতীয়করণ এবং সংস্কার করে সেগুলোর যথাযথ প্রচার করা আবশ্যিক। (উদাহরন ইনক্লুড করা লাগবে)
আজকে দেশের এই দুরাবস্থার জন্য দায়ী যদি কাউকে করতেই হয় তবে সেটা ক্যাপিটালিস্ট ব্যবসায়ী, ফ্যাসিস্ট সরকার এবং পাহাড়ি সেটেলারদের দিতে হবে। আপনি নিজের দেশীয় পন্য বাদ দিয়ে যখন অন্য দেশের পন্য কিনবেন, তখন সেই প্রোডাক্টটা যে দেশ উৎপাদন করছে তাদের সফট কলোনীতে আপনি রূপান্তরিত হচ্ছেন। নাহলে কোনো দেশকে বয়কট করার পর আপনাকে অল্টারনেটিভ দেশীয় পন্য খুঁজতে হতো না। আজকে দেশীয় পোষাক থেকে শুরু করে, খাবার এবং সকল নিত্য প্রয়োজনীয় পন্য আমরা অন্য দেশের থেকে আমদানি করে কিনছি। এবং সেই সাথে ঐতিহ্য হারিয়ে বিলুপ্ত হচ্ছে আমাদের দেশীয় পন্য। এবং যারা এই সকল উৎপাদন ব্যবস্থার সাথে জড়িত ছিলো, তারাও কাজ হারিয়ে হচ্ছে নিঃস্ব। দেশের সরকার যদি এই সেক্টরে আলোকপাত না করে তবে দিন দিন আমরা বাংলাদশী সকল ঐতিহ্য হারিয়ে পরনির্ভর একটি দেশে পরিণত হবো।
আজকে আমরা দেখছি ইউরোপ সহ বিশ্বের সকল দেশ ফুয়েল এনার্জি থেকে বের হয়ে নেভার এন্ডিং সাস্টেইনেবল এনার্জির দিকে ধাবিত হচ্ছে। সেখানে আমাদের কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন সহ অধিক মূল্যে কেনো বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে হচ্ছে, এই প্রশ্নের উত্তর সবার অজানা। চেরনোবিলের পর কমবেশি সব দেশ পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র কনসেপ্ট থেকেও সরে আসছে। সেখানে রূপপুর তো নয়া হটকেক বাংলাদেশের এনার্জি প্রোডিউসের ক্ষেত্রে। এখন দেখার বিষয় বাংলাদেশের মতোন জনবহুল এই দেশে দক্ষজনবল দিয়ে কতো সুক্ষ্মভাবে এই প্রোজেক্ট চালিয়ে যেতে পারে। আজকে লক্ষ কোটি টাকা ঋণ আমাদের এই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ক্ষাতে। আমরা যদি দ্রæততম সময়ের মধ্যে রি-ইউজেবল রিসোর্স এরাতে না ঢুকতে পারি তবে এই নেভার এন্ডিং লুপ অফ ডেট চলতেই থাকবে। সোলার প্যানেল থেকে জলবিদ্যুৎ এবং উইন্ডমিল, একটা প্রোপার প্ল্যানিং এর মাধ্যমে জ্বালানি বন্টন নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশের অবকাঠামোগত সংস্কার এবং উন্নয়নের জন্য যে রাস্তায় আমাদের হাঁটা দরকার, সেই রাস্তা অনেক লম্বা। স্বাধীনতার অর্ধশতক পার করেও আমরা হয়তো বুঝিনি, বুঝছিনা কিংবা ইচ্ছা করেই বুঝতে চাচ্ছিনা। আমরা মুখ খুলিনা, কথা বলিনা। আমরা বিগত বছরগুলোতে দেখেছি যাদের দ্বায়িত্ব ছিলো ‘কথা বলা’ তারা কেবল চাটুকারিতা করে গেছে। যাইহোক, একটা অভ্যুত্থান আমরা করেছি কেবল মাত্র স্যোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে। এটা সত্য এবং বাস্তব। একমাত্র একটি বিশেষ টিভি চ্যানেল ছাড়া আমাদের পক্ষে কাউকে কাজ করতে দেখিনি। আমরা এই লজ্জা আর চাইনা। আমরা চাই গণমাধ্যম উন্মুক্ত হোক, গনমাধ্যম কথা বলুক। আপনারা প্রশ্ন করলে দুর্নীতিবাজ দুর্নীতি করার আগে দুইবার ভাববে। ঘুষখোররা, ভেজালকারীরা, চাঁদাবাজরা যে কোনো অন্যায়কারীরা অন্যায়ের আগে দুইবার ভাববে। তাই বিগত বছরগুলোতে আপনাদেরকে যেমন কুক্ষিগত করে রাখা হয়েছিলো, সেই দশা থেকে বের হয়ে এই মুক্ত বাতাসের স্বাদ নিন। স্বাধীনতার থেকে শান্তিময় আর কি হতে পারে?
তবে আহ্বান একটাই। কথা বলতে পারাটাই সবকিছু না এইটা ভুলে গেলেও চলবে না। আজকে আমরা আমেরিকায় বসে এখানকার প্রেসিডেন্টের সমালোচনা করতে পারি। গর্বে উদাহরণ টেনে বলি, এই দ্যাখো এইটাই স্বাধীনতা। কিন্তু মজার ব্যাপার কি জানেন? আপনি এখানে বসে ফিলিস্তিন, সিরিয়া, লেবানন, ইরাকে চালানো ‘মার্কিন আগ্রাসন’-এর কথা বলতে পারবেন না। আপনার কণ্ঠরোধ করা হবে। সুতরাং কথা বলতে পারা আর মত প্রকাশ করতে পারা যে এক না, সেটা ভুলে গেলেও চলবে না। আপনি কারও পক্ষে কথা বললে সেটা দুর্বলের পক্ষে বলুন, সততার পক্ষে বলুন। কারও বিরুদ্ধে গেলে অন্যায়ের পক্ষে যান।
আমাদের সকল দাবীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দাবিটি এখন আমরা তুলে ধরবো-
জুলাইয়ের বিপ্লব চলাকালীন যারা গনহত্যার মদদ দাতা ছিলো এবং যারা এই গণহত্যার অংশ ছিলো, সকলকে অনতিবিলম্বে গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
যারা দেশ ত্যাগ করেছে তাদেরকে দ্রæত বিচার ট্রাইবুনালের আন্ডারে দেশে ফিরিয়ে এনে শাস্তির সম্মুখীন করতে হবে।
নিহতের পরিবারের পুনর্বাসন, আর্থিক সহায়তা এবং আহতদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।