নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে নারীরাও এগিয়ে চলেছে
- প্রকাশের সময় : ০১:১৩:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ৫ ডিসেম্বর ২০১৮
- / ৬৪৭ বার পঠিত
নিউইয়র্ক (ইউএনএ): নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত উত্তর আমেরিকা প্রবাসী বাংলাদেশীদের জনপ্রিয় সংবাদপত্র সাপ্তাহিক বাংলা পত্রিকা’র ‘নারীর কথা’ পাতার বর্ষপূর্তী উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা নারী সমাজের অধিকার আদায়ে আলোকিত শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, সময়ের তালে তালে নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে নারীরাও এগিয়ে চলেছে। তবে এখনো নানা সমস্যাও মোকাবেলা করতে হচ্ছে। তবে নারী হিসেবে নয়, একজন মানুষ হিসেবে নারী সমাজের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য শুধু একাডেমিক শিক্ষা থাকলেই হবে। সত্যিকারের আলোকিত শিক্ষার মানুষ হতে হবে। পাশাপাশি সমাজের সবার সহযোগিতাও প্রয়োজন। বক্তারা নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাংলা পত্রিকার বিশেষ পাতা প্রকাশনার উদ্যোগকে স্বাগত জানান। উল্লেখ্য, গত এক বছর ধরে ‘নারীর কথা’ শীর্ষক পাতা বাংলা পত্রিকায় মাসে একবার করে প্রকাশিত হয়ে আসছে। এতে উত্তর আমেরিকা সহ দেশ-বিদেশের নারী লেখকরা নানা বিষয়ে নিয়মিত লিখে আসছেন। এই বিভাগের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন ড. বিলকিস রহমান দোলা। খবর ইউএনএ’র।
বাংলা পত্রিকা ও টাইম টেলিভিশন-এর বার্তা কক্ষে গত ১ ডিসেম্বর শনিবার বিকেলে আয়োজিত ব্যতিক্রমী এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা, সদ্য নির্বাচিত নিউইয়র্ক ষ্টেট অ্যাসেম্বলীম্যান জন লু ও নবাগতা অ্যাসেম্বলীওম্যান জেসিকা রামোস, ওজন পার্ক এলাকা থেকে নির্বাচিত সিটি কাউন্সিল মেম্বার রাফায়েল ইস্পানিয়াল ও কুইন্স বরো’র প্রেসিডেন্টের ডেপুটি শ্যারন লী।
ড. বিলকিস রহমান দোলার চমৎকার উপস্থপনায় অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলা পত্রিকা’র সম্পাদক ও টাইম টেলিভিশন-এর সিইও আবু তাহের। এছাড়াও মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন প্রবীণ সাংবাদিক নিনি ওয়াহেদ, কলামিস্ট হাসান ফেরদৌস, বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক’র সাবেক সভাপতি নার্গিস আহমেদ, কবি কাজী আতীক ও বাফা’র সভাপতি ফরিদা ইয়াসমীন সহ নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিরা।
অনুষ্ঠানে উল্লেখযোগ্য নর-নারী ব্যক্তিবর্গের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন টাইম টেলিভিশন-এর পরিচালক (মার্কেটিং ও কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স) সৈয়দ ইলিয়াস খসরু, বাংলা পত্রিকা’র সাহিত্য সম্পাদক কবি তমিজ উদদীন লোদী, আবৃত্তিকার আনোয়ারুল হক লাভলু, লেখিকা রানু ফেরদৌস, সংগঠক শাহানারা খাতুন, কবি নাসরিন চৌধুরী, পলি শাহীনা, মোশাররফ হোসেন, টাইম টেলিভিশনের অনুষ্ঠান প্রযোজক মেরী জোবায়দা, বেনজির শিকদার, মাহফুজা নাসরীন, শুক্লা রায়, শুভ্রা রায়, রোকসানা জাহান রিনি, পর্ণা ইয়াসমীন, চন্দ্রা, রাজিয়া নাজনী, কামরুন মনি, মুক্তি জহির, ফারজানা আহমেদ, নুসরাত কবীর, জারিন মাইশা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে আবু তাহের নারীর কথা’র সাথে সম্পৃক্ত সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, নারীদের ভালো-মন্দ, সুবিধা-অসুবিধা, অধিকার-প্রাপ্তি-সাফল্য তুলে ধরা তথা নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলার জন্যই বাংলা পত্রিকায় ‘নারীর কথা’ প্রকাশের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, নারীর কথার সাফল্য আমাদের উৎসাহিত করেছে। এই পাতার দায়িত্বে তারা চাইলে প্রয়োজনে মাসে এক সংখ্যা নয়, প্রতি সপ্তাহে ‘নারীর পাতা’ প্রকাশ করা হবে। তবে লেখা-লেখির জন্য নারীদের এগিয়ে আসতে হবে।
কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা অনুষ্ঠানে উপস্থিত বক্তাদের সাথে ঐক্যমত পোষণ করে বলেন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাগ্রে নিজেদের নিজস্ব প্লাটফর্ম তৈরী করতে হবে। তিনি বাংলা পত্রিকা’র ‘নারীর কথা’ (নারীর পাতা) প্রকাশের উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান।
নিনি ওয়াহেদ বলেন, নারীদের শুধু শিক্ষিত হলেই চলবে না। সত্যিকারের আলোকিত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। তিনি তার দীর্ঘ প্রবাস জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, প্রবাসে বাংলাদেশী কমিউনিটির নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আইনী সহয়াতা কেন্দ্র দরকার। পাশাপাশি মানসিক ও সামাজিকভাবে আমাদের মনেরও পরিবর্তন দরকার।
হাসান ফেরদৌস বলেন, নারীর অধিকার বা নারীদের স্বাধীনতা বিষয়ে যত কথা হচ্ছে তা সব যেমন সঠিক নয়, আবার মিথ্যাও নয়। কেননা, একে সমস্যার একে প্রেক্ষাপট রয়েছে। তবে বড় কথা হচ্ছে মানুষ হিসেবে সবার সমান অধিকার রয়েছে এবং এজন্য সবার আগে দরকার পরিবেশ। সেই সাথে সকল মহলেরই সচেতনতার পাশাপাশি সুশিক্ষা আর সুচিন্তার প্রয়োজন।
নার্গিস আহমেদ তার দীর্ঘ প্রবাস জীবনের নানা অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে আগে নারীদের নিজকেই চিনতে হবে। নিজে ভালো ভালো থাকলে, পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে চলতে পাড়লে অনেক সমস্যাই মোকাবেলা সম্ভব। তবে ব্যক্তিগতভাবে তিনি তার কর্ম যোগ্যতায় সিনিয়রদের মন জয় করে কমিউনিটি সেবায় কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন বলে উল্লেখ করেন।
কাজী আতীক তার পেশাগত আর দীর্ঘ প্রবাস জীবনের নানা অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেন, আমেরিকান মিশ্র কালচারের সমাজে আমরা বসবাস করলেও মন-মানসিকতায় এখনো আমরা পরিবর্তিত হতে পারিনি। এদেশে যেখানে মানুষ হিসেবে প্রত্যেকের অধিকারটাই বড়, সেখানে চাপা-চাপির কিছু নেই। বিশেষ করে আমাদের নতুন প্রজন্মের কথা শুনে তাদেরকে নিজের মতো করে এগিয়ে নিতে হবে।
ফরিদা ইয়াসমীন বলেন, নিউইয়র্ক তথা আমেরিকান সমাজে আমাদের মতো বাঙালী নারীদের নানা সমস্যা, নানা সমালোচনা মোকাবেলা করেই এগিয়ে যেতে হচ্ছে। তবে নারীদেরকে ‘সুন্দরী’ মনে না করে তার কর্মগুণ আর যোগ্যতাকেই পূঁজি করে এগিয়ে যেতে হবে। আর যখন একজন নারী তার কাজের গুরুত্ব সবার মাঝে তুলে ধরতে পারবেন, তখনই নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা সহজ হবে।