নানা কর্মসূচী’র মধ্য দিয়ে নিউইয়র্কে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন
- প্রকাশের সময় : ০১:৪৩:৫৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ মার্চ ২০১৯
- / ৫০৯ বার পঠিত
নিউইয়র্ক (ইউএনএ): নানা কর্মসূচী’র মধ্য দিয়ে নিউইয়র্ক তথা উত্তর আমেরিকায় গত মঙ্গলবার ২৬ মার্চ, বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়েছে। চলতি বছর দেশে-প্রবাসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৪৮তম বার্ষিকী উদযাপিত হচ্ছে। দিসটি উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রবাস হয়ে উঠে ‘লাল-সবুজ’ রঙ্গীন এক টুকরো বাংলাদেশ। উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭২ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের প্রথম স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়। যাথাযোগ্য মর্যাদায় নিউইয়র্ক সহ উত্তর আমেরিকায় দিবসটি পালন উপলক্ষ্যে বিভিন্ন সামাজিক, আঞ্চলিক ও রাজনৈতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহণ করে। ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস, জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশন, নিউয়র্কস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট এবং নিউইয়র্ক সিটি হল ছাড়াও বাংলাদেশ সোসাইটি, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ, মুক্তধারা ফাউন্ডেশন ও বাঙালীর চেতনা মঞ্চ, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ফোরাম ইউএসএ প্রভৃতি সংগঠন স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে নানা কর্মসূচী গ্রহণ করে। খবর ইউএনএ’র।
নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল: নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস সেলিব্রেশন করা হয় ২৬ মার্চ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৫টায়। এ উপলক্ষে কাউন্সিল চেম্বারে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সিটি কাউন্সিলম্যান ফ্রান্সিসকো পি ময়া, কাউন্সিলম্যান ব্যারী এস গ্রডনিক ও কাউন্সিলম্যান কস্টা কনসট্যানটিনিডিস-এর বিশেষ উদ্যোগে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন নিউইয়র্ক সিটি কাউন্সিল স্পীকার কোরি জনসন। অনুষ্ঠানের শুরুতে কাউন্সিম্যান ফ্রান্সিসকো পি ময়া ও কাউন্সিলম্যান ব্যারী এস গ্রডনিক শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। এরপর যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়। পরবর্তীতে কমিউনিটিতে বিশেষ অবদান রাখান জন্য সিটি কাউন্সিলের পক্ষ থেকে তিন বাংলাদেশী যথাক্রমে বিশিষ্ট রিয়েল এষ্টেট ব্যবসায়ী রব চৌধুরী, এনওয়াইপিয়পিডি’র ক্যাপ্টেন সুজাত খান ও মাসুম কাদির-কে প্লোকলেমোশন দিয়ে সম্মানিত করা হয়। এসময় তারা সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন কুইন্স ডেমোক্যাটিক ডিষ্ট্রিক্ট লীডার এট লার্জ এটর্র্নী মঈন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব পার্ফমিং আর্টস (বিপা)’র শিল্পীরা যৌথভাবে একাধিক সঙ্গীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে কয়েকজন বাংলাদেশীকে কাউন্সিলম্যান ফ্রান্সিসকো পি ময়া’র পক্ষ থেকে সম্মানসূচক সাইটেশন প্রদান করা হয়। বিপুল সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেন।
বাংলাদেশ মিশন ও কনস্যুলেট: বাংলাদেশের স্বাধীন দিবস উপলক্ষ্যে জাতিসংঘের বাংলাদেশ মিশন ও নিউইয়র্ক বাংলাদেশ কনস্যুলেট ২৬ মার্চ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্ব স্ব অফিসের মিলনায়তনে স্বাধীনতা দিবনের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। উভয় অনুষ্ঠানে দেশী-বিশেী অতিথি আমন্ত্রিত ছিলেন। মিশনের অনুষ্ঠানে অতিথিদের স্বাগত জানান জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন। অপরদিকে কনস্যুলেটের অনুষ্ঠানে অতিথিদের স্বাগত জানান কনসাল জেনারের সাদিয়া ফয়জুননেসা। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিলো শুভেচ্ছা বক্তব্য, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নৈশভোজ প্রভৃতি।
আলবেনীর ক্যাপিটাল হীল: বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস স্মরণে বিগত পাঁচ বছরের মতো এবছর অষ্টমবারের মতো নিউইয়র্কের রাজধানী আলবেনীর ক্যাপিটাল হিলে ‘বাংলাদেশ ডে’ পালন করা হয় ২৭ মার্চ বুধবার। এদিন ষ্টেট অ্যাসেম্বলী ও সিনেটে ‘বাংলাদেশ ডে’ পালিত হবে। এজন্য বাংলাদেশ ডে’র অন্যতম প্রবক্তা বাংলাদেশীদের ‘লুইস ভাই’ হিসেবে পরিচিত ষ্টেট সিনেটর লুইস সিপুলভেদার নেতৃত্বে দিবসটি উদযাপন করা হয়। চলতি বছর ‘বাংলাদেশ ডে পালন কমিটি’র কনভেনর কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট মাহবুব আলম আর সেক্রেটারী নজরুল হক এবং প্রধান সমন্বয়কারী আব্দুস শহীদ। দেশ শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশী নিউইয়র্ক থেকে আলবেনীর অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
বাঙালীর চেতনা মঞ্চ ও মুক্তধারা ফাউন্ডেশন: মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বাঙালীর চেতনা মঞ্চ ও মুক্তধারা ফাউন্ডেশন ২৪ মার্চ রোববার নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটস্থ ডাইভারসিটি প্লাজায় বিকেল ৫টায় স্বাধীনতা প্যারেড এবং স্থানীয় পিএস ৬৯ মিলনায়তনে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ছিলো মুক্তিযুদ্ধের গ্রন্থ প্রদর্শণী, মুক্তিযুদ্ধের কবিতা আবৃত্তি, রনাঙ্গণে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক আলোচনা ও মুক্তিযুদ্ধের গান।
স্বাধীনতা দিবস স্মরণে আয়োজিত র্যালিতে ‘লাল-সবুজ’-এর বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার আদলে সেজে গুজে রাস্তায় নেমে এসেছিল হাজারো মানুষ। সবার মুখে ছিল স্বাধীনতার শ্লোগান। র্যালিতে প্রধান অতিথি ছিলেন গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ ও বন মন্ত্রী মোহাম্মদ শাহাব উদ্দীন।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. জিয়া উদ্দীন আহমদ, নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা, বাংলাদেশ সোসাইটি’র সভাপতি কামাল আহমদ, জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকার সভাপতি বদরুল হোসেন খান, শহীদ সাংবাদিক ও একাত্তুরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যুক্তরাষ্ট্র শাখার আহ্বায়ক ফাহিম রেজা নুর, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ, বাঙালী চেতান মঞ্চের প্রধান আব্দুর রহিম বাদশা প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে পরিবেশ মন্ত্রী শাহাব উদ্দীন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যে চেতনায় প্রবাসীরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস পালন করছেন সে ধরনের উচ্ছাস উদ্দীপনা বাংলাদেশেও সচরাচর দেখা যায় না। এই চেতনাকে ধরে রাখার জন্য তিনি সকলের প্রতি আহবান জানান।
কনসাল জেনারেল সাদিয়া ফয়জুননেসা নতুন প্রজন্মের মধ্যে জাতীয় চেতনা সৃষ্টির আহ্বান জানান। র্যালি শেষে সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয় হয় জ্যাকসন হাইটসের পিএস ৬৯ মিলনায়তনে।