চট্টগ্রাম সমিতির নির্বাচন : চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা
‘তাহের-আরিফ’ জয়ী : ‘মাকসুদ-মাসুদ’র প্রত্যাখ্যান
- প্রকাশের সময় : ০২:২১:২২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪
- / ৩৮ বার পঠিত
বিশেষ প্রতিনিধি: অবশেষে চট্টগ্রাম এসোসিয়েশন অব নর্থ আমেরিকা ইনক’র দ্বি-বার্ষিক নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এতে ‘তাহের-আরিফ’ প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী মোহাম্মদ আবু তাহের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আরিফুল ইসলাম-কে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে। গত ২৫ অক্টোবর শুক্রবার নির্বাচন কমিশন সর্বসম্মতভাবে এই ফলাফল ঘোষণা করে। চুড়ান্ত ফলাফলে ‘তাহের-আরিফ’ প্যানেলের প্রর্থীরা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ সহ ১০ এবং ‘মাকসুদ-মাসুদ’ প্যানেলের প্রার্থীরা ৯টি পদে জয়ী হয়েছেন। এদিকে প্রতিদ্ব›িদ্ব ‘মাকসুদ-মাসুদ’ নির্বাচন কমিশনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে প্রবাসী চট্টগ্রামবাসীদের সাথে পরামর্শ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
গত ২০ অক্টোবর রোববার অনুষ্ঠিত নির্বাচন শেষে ভোট গণনায় প্রতিদ্ব›িদ্ব ‘মাকসুদ-মাসুদ’ প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী মাকসুদুল হক চৌধুরী ২ ভোটের ব্যবধানে সভাপতি পদে এগিয়ে থাকলে ৬টি চ্যালেঞ্জ ভোট নিয়ে নির্বাচনী ফল প্রকাশে জটিলতা দেখা দেয়। ফলে ফলাফল প্রকাশে বিরত থাকে নির্বাচন কমিশন। উল্লেখ্য, এসোসিয়েশনের ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিশনের কর্মকর্তারা হলেন- প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইঞ্জিনিয়ার শেখ মোহাম্মদ খালেদ, নির্বাচন কমিশনার যথাক্রমে মোহাম্মদ রুহল আমিন হোসেন, শাহাব উদ্দিন সাগর, মোহাম্মদ সেলিম হারুন ও ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ এ. হান্নান চৌধুরী। । নির্বাচনে সমিতির কার্যকরী পরিষদের ১৯টি পদে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী সহ দুই প্যানেল মিলে ৩৯জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১৪ জুন চট্টগ্রাম এসোসিয়েশনের অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির কাছ থেকে নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণ করে। এর পর থেকে নির্বাচন কমিশন একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করে। কমিশন দায়িত্ব নেয়ার শুরু থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠান পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন, অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি ও নির্বাচন কমিশন মিলে ভার্চুয়াল এবং উপস্থিতিসহ মোট ১৭ টি সভা করে। এসব সভায় নির্বাচন অনুষ্ঠান, নির্বাচনের পদ্ধতি, আচরণবিধি, বাজেটসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই মোতাবেক গত ২০ অক্টোবর রোববার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নিউইয়র্কের জ্যামাইকা, ব্রæকলীন ও কানেক্টিকাটের স্টামফোর্ড এবং পেনসিলভেনিয়ার আপার ডারবি কেন্দ্রে নির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হয়।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, চুড়ান্ত ফলাফর ঘোষণার আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ইঞ্জিনিয়ার শেখ মোহাম্মদ খালেদ কমিশনের অন্যান্য সদস্যদের সাথে বৈঠক করেন। ইলেকশন সার্ভিসেস ইউনাইটেডের কাছ থেকে চ্যালেঞ্জ ভোট গণনাসহ চূড়ান্ত ফলাফল পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশন এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে কমিশনের পাঁচ সদস্য স্বাক্ষর করে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করে। এ ফলাফল নির্বাচনে অংশ নেয়া প্যানেল, প্যানেলের প্রতিনিধি, অর্ন্তবর্তীকালীন কমিটি এবং গণমাধ্যমে পাঠানো হয়।
জানা গেছে, নির্বাচন পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ‘ইলেকশন সার্ভিসেস ইউনাইটেড’ ৬টি চ্যালেঞ্ছ ভোট গণনা বাদ রেখে বেসরকারী ফলাফল প্রকাশ করে। ৬ টি চ্যালেঞ্জ ভোটের মধ্যে ৪ টি ছিল ডিজিটাল আইডি দেখিয়ে ভোট প্রদান, ১টি ভোটার তালিকায় নাম উঠানোর সময় স্পেলিং ভুল এবং অপরটি লাইফ মেম্বারের সনদ প্রদর্শন করা হলেও ভোটার তালিকায় নাম না থাকা। নির্বাচনের বেসরকারী ফলাফল প্রকাশ করার সময় দুই প্যানেলের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিরা ব্রæকলীন কেন্দ্রে উপস্থিত ছিলেন। নির্বাচন কমিশনের পাঁচ সদস্য ওই সময় বক্তব্য রাখেন এবং ফলাফল প্রকাশের আগে প্রায় ১ ঘণ্টা রুদ্ধধার বৈঠক করেন। বৈঠকে চূড়ান্ত ফলাফল দেয়ার পূর্বে ৬ টি চ্যালেঞ্জ ভোট গননার ব্যাপারে ব্যাপক তদন্ত চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
এদিকে গত ২২ অক্টোবর লাইফ মেম্বার এবং ভোটার তালিকায় টাইপিং মিস্টেকের ভোটারের ব্যাপারে তথ্য যাচায়ের জন্য অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির কাছে চিঠি প্রদান করে নির্বাচন কমিশন। একই দিন নির্বাচন কমিশনের পাঁচ সদস্য ব্যাপক স্বচ্ছতার লক্ষ্যে চ্যালেঞ্জ ভোটগুলোর তথ্য যাচাইয়ে উদ্যোগ নেয়। তারা চারটি চ্যালেঞ্জ ভোট তদন্ত করে। স্বাক্ষর মিল না থাকার কারণে নির্বাচন কমিশন একটি ভোট বাতিল করে।
অপরদিকে ২৪ অক্টোবর অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির কাছ থেকে চিঠির জবাব পায় নির্বাচন কমিশন। এতে লাইফ মেম্বারের ব্যাপারে তথ্য না পাওয়া এবং একজন ভোটারের টাইপিং মিস্টেকের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত জানানো হয়। ওই দিনই নির্বাচন কমিশন ৪টি ভোট গণনা করে চূড়ান্ত ফল প্রকাশের ব্যাপারে ‘ইলেশন সার্ভিসেস ইউনাইটেড’-এর কাছে চিঠি দেয়। গত ২৫ অক্টোবর ইলেকশন সার্ভিসেস ইউনাইটেডের কাছ থেকে চূড়ান্ত ফলাফল প্রাপ্ত হয়ে তা প্রকাশ করে কমিশন।
পাশাপাশি নানা ধরণের অভিযোগ উঠার পর নির্বাচন কমিশন ফিলাডেলফিয়ার ভোটগুলোর স্বচ্ছ তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। গত ২২ অক্টোবর অতি স্বচ্ছতায় সে তদন্ত সম্পন্ন হয়। চারজনের চ্যালেঞ্জ ভোটের মধ্যে স্বাক্ষর না মেলায় একজন নারী ভোটারের চ্যালেঞ্জ ভোটটি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন। ি কমিশরের পাঁচ জন সদস্য একমত হয়ে চারটি ভোটের ব্যাপারে গণনা করে চুড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করতে ইলেকশন সার্ভিসেস ইউনাইটেডের কাছে চিঠি প্রদান করে। গত ২৫ অক্টোবর ইলেকশন সার্ভিসেস ইউনাইটেড তাদের সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করে ভোটগুলো গণনার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের কাছে ফলাফল প্রকাশ করে। যা চূড়ান্ত ফলাফল হিসেবে গণমাধ্যমে প্রকাশ এবং সংশ্লিষ্টদের কাছে প্রদান করা হয়।
‘তাহের-আরিফ’
কে কত ভোট পেলেন: নির্বাচন কমিশন ঘোষিত চূড়ান্ত ফলাফলে দেখা যায়, সভাপতি পদে মাত্র ২ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন ‘তাহের-আরিফ’ প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী মোহাম্মদ আবু তাহের। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী একই প্যানেলের মো: আরিফুল ইসলাম ২৯ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী মোহাম্মদ আবু তাহের পেয়েছেন ১০৩০ ভোট। তার একমাত্র প্রতিদ্ব›দ্বী ‘মাকসুদ-মাসুদ’ প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী মাকসুদুল হক চৌধুরী পেয়েছেন ১০২৮ ভোট।
সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী মো: আরিফুল ইসলাম পেয়েছেন ৯৬২ ভোট, তার একমাত্র প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী মোহাম্মদ মাসুদ এইচ সিরাজী পেয়েছেন ৯৩৩ ভোট।
সিনিয়র সহ সভাপতি পদে ‘মাকসুদ-মাসুদ প্যানেলের মোহাম্মদ মুক্তাদির বিল্লাহ ১১০৯ ভোট পেয়ে বিজীয় হয়েছেন। তার প্রতিদ্ব›দ্বী মোহাম্মদ আলী নূর পেয়েছেন ৯২০ ভোট।
সহ সভাপতি পদে দমাকসুদ-মাসুদ প্যানেলের আলী আকবর বাপ্পীর ১০৬৮ ভোট এবং মোহাম্মদ আইয়ুব আনছারী ১০২৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। এ পদে ‘তাহের-আরিফ’ প্যানেলের প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী ফরিদ আহমেদ চৌধুরী পেয়েছেন ৯৭৫ এবং হাজী মোহাম্মদ টি আলম পেয়েছেন ৯৫০ ভোট।
সাধারণ সম্পাদক পদে ‘তাহের-আরিফ’ প্যানেলের মো: আরিফুল ইসলাম পেয়েছেন ৯৬২ ভোট, তার প্রতিদ্ব›দ্বী ‘মাকসুদ-মাসুদ’ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মোহাম্মদ মাসুদ এইচ সিরাজী পেয়েছেন ৯৩৩ ভোট। স্বতন্ত্র সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মুহাম্মদ মহিউদ্দিন চৌধুরী (খোকন) পেয়েছেন ১৪৫ ভোট।
যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ‘মাকসুদ-মাসুদ’ প্যানেলের ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া ১০৬৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্ব›দ্বী মো: কলিম উল্যাহ পেয়েছেন ৯৫৬ ভোট।
সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে ‘মাকসুদ-মাসুদ’ প্যানেলের মোহাম্মদ হারুন মিয়া ১০৩৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রতিদ্ব›িদ্ব মোহাম্মদ নওশাদ কামাল পেয়েছেন ৯৯৫ ভোট।
কোষাধ্যক্ষ পদে ‘তাহের-আরিফ’ প্যানেলের মোহাম্মদ শফিকুল আলম ১ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রাপ্ত ভোট ১০১৪ এবং প্রতিদ্ব›দ্বী মোহাম্মদ সুমন উদ্দিন পেয়েছেন ১০১৩ ভোট।
সহকারী কোষাধ্যক্ষ পদে ‘তাহের-আরিফ’ প্যানেলের মোহাম্মদ নুরুল আমিন বিজীয় হয়েছেন, তার প্রাপ্ত ভোট ১০৩১। তার প্রতিদ্ব›দ্বী তমাল কান্তি চৌধুরী পেয়েছেন ৯৮১ ভোট।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ‘মাকসুদ-মাসুদ’ প্যানেলের মোহাম্মদ ফরহাদ বিজয়ী হয়েছেন, তার প্রাপ্ত ভোট ১০৩২। প্রতিদ্ব›দ্বী মোহাম্মদ তানিম মহসিন পেয়েছেন ৯৮৯ ভোট।
দপ্তর সম্পাদক পদে ‘তাহের-আরিফ’ প্যানেলের অজয় প্রসাদ তালুকদার এক ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রাপ্ত ভোট ১০০৪। প্রতিদ্ব›দ্বী শিমুল বড়ুয়া পেয়েছেন ১০০৩ ভোট।
সহকারী দপ্তর সম্পাদক পদে ‘তাহের-আরিফ’ প্যানেলের ইমরুল কায়সার ১৯ ভোট বেশি পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রাপ্ত ভোট ১০২২। প্রতিদ্ব›দ্বী মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন (আতিক) পেয়েছেন ১০০৩ ভোট।
শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ২৮ ভোট বেশি পেয়ে ‘তাহের-আরিফ’ প্যানেলের এনামুল হক চৌধুরী নির্বাচিত হয়েছেন। তার প্রাপ্ত ভোট ১০২১। প্রতিদ্ব›দ্বী সুশান্ত দত্ত পেয়েছেন ৯৯৩ ভোট।
প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ‘তাহের-আরিফ’ প্যানেলের মোহাম্মদ জাবের শফি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি পেয়েছেন ১০২২ ভোট। তার প্রতিদ্ব›দ্বী মোহাম্মদ আবদুল অদুদ পেয়েছেন ৯৯৪ ভোট।
সমাজ কল্যাণ সম্পাদক পদে ‘মাকসুদ-মাসুদ’ প্যানেলের আকতার উল আজম নির্বাচিত হয়েছেন, তার প্রাপ্ত ভোট ১০৩৪। প্রতিদ্ব›দ্বী মোহাম্মদ আকতার হোছাইন পেয়েছেন ৯৭৯ ভোট।
ক্রীড়া সম্পাদক পদে ‘তাহের-আরিফ’ প্যানেলের মোহাম্মদ ইসা ৬ ভোট বেশি পেয়ে বিজীয় হয়েছেন, তার প্রাপ্ত ভোট ১০১৩। প্রতিদ্ব›দ্বী মোহাম্মদ জাহেদুল আজম (জাহেদ) পেয়েছেন ১০০৭ ভোট।
কার্যকরী সদস্য পদে ‘মাকসুদ-মাসুদ’ প্যানেলের তিন জন নির্বাচিত হয়েছেন। তারা হলেন মোহাম্মদ শওকত আলী (১০৪৮ ভোট), মোহাম্মদ শাহ আলম (১০২১ ভোট) ও নুরুস সোফা (১০১৯ ভোট)। এছাড়াও ‘তাহের-আরিফ’ প্যানেলের কার্যকরী সদস্য পদে বিজয় তিন জন হলেন- মোহাম্মদ নাসির চৌধুরী (৯৯৬ ভোট), পল্লব রায় (৯৬৫ ভোট) এবং মোহাম্মদ মহিম উদ্দিন (৯৬০ ভোট)।
‘মাকসুদ-মাসুদ’ প্যানেলের ফল প্রত্যাখ্যান
নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যান করে ‘মাকসুদ-মাসুদ’ প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী মাকসুদুল এইচ চৌধুরী বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি বলেন, প্রবাসের বৃহত্তম সংগঠন চট্টগ্রাম সমিতি আজ আবারো কিছু গ্রাম্য মোড়লের ছোবল পড়েছে। এই ছোবল থেকে রক্ষা করতে হলে সকল প্রবাসীদের সহযোগিতা দরকার! গত ২০ অক্টোবর রোববার অনুষ্টিত নির্বাচনে আমি সভাপতি নির্বাচিত হয়েছি কিন্তু নির্বাচনের ৬ দিনের মাথায় নির্বাচন কমিশন সম্পূর্ন অন্যায়ভাবে নির্বাচনের দিন ঘোষিত ফলাফল পরিবর্তন করে গোপন জায়গায় বসে সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে একতরফা একটি ফলাফল ঘোষনা করেছে! এই ফলাফলে আমাকে ২ ভোটে বিজিত ঘোষণা করা হয়েছে, তা সম্পুর্ন বেআইনি, অনৈতিক, গঠনতন্ত্র পরিপন্থি এবং সংগঠনের ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক। কেন তিনি এই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন তার কিছু কারণ উল্লেখ করে মাকসুদুল হক চৌধুরী বিবৃতিতে বলেন-
১) নির্বাচনের পুর্বে নির্বাচন কমিশন একটি নির্বাচনী বিধিমালা (লিখিত) ঘোষণা করেছিল, সে বিধিমালায় পরিস্কার করে লেখা আছে ভোট দিতে হলে ভোটারদের আইডি হাতে তৈরী রাখতে হবে (নির্বাচনের দিনের বিধিমালা নাম্বার ৩-এ)।
২) উক্ত বিধিমালা নিউইয়র্কের সব কয়টি কেন্দ্রে পুরোপুরি মানা হলেও পেনসেলভেনিয়াতে মোটেও মানা হয়নি, যা ইতিপুর্বে আমি সংবাদ সম্মেলনে বলেছি।
৩) নির্বাচন কমিশনের ভাষ্য অনুযায়ী রিয়েল আইডি এবং ভার্চ্যুয়াল আইডি একই মান, যদিও নির্বাচন কমিশন আমাকে মৌখিকভাবে বলেছিল কোন ভার্চ্যুয়াল আইডি হবে না, তারপরও তর্কের খাতিরে যদি ধরেও নিই তাদের কথা সঠিক। তাহলে যারা ভার্চ্যুয়াল আইডি দিয়ে ভোট প্রদান করেছে সে সকল ভোট চ্যালেঞ্জ ভোট হিসেবে গ্রহণ করা হলো কেন?
৪) নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত এবং প্রকাশিত নির্বাচনী বিধিমালায় কোথাও চেলেঞ্জ ভোট নেয়ার কথা বা চ্যালেঞ্জ ভোটের কারণ ব্যাখ্যা করা হয়নি।
৫) নির্বাচন কমিশনের তথ্যানুযায়ী ৬টি চ্যালেঞ্জ ভোট গ্রহণর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু ফলাফল ঘোষণায় চারটি ভোটের হিসাব দেখা গেলেও বাকি দুটি ভোটের কোন তথ্য কাউকে জানায়নি।
৬) ঘোষিত বিতর্কিত চ্যালেঞ্জ ভোট আমার কোন প্রতিনিধি ছাড়া কিভাবে গণনা করা হলো?
৬) পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম নির্বাচন কমিশন কোন ভোটারের বাসায় গিয়ে স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছে, যা নজিরবিহীন!
৭) রোববার নির্বাচন শেষ হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমাদের অভিযোগ কমিশন বরাবর এবং তাদের ভাড়া করা নির্বাচনী কোম্পানিকে অফিসিয়ালি জানালেও আজ পর্যন্ত তার কোন উত্তর নির্বাচন কমিশন আমাদের দেয়ার প্রয়োজন মনে করেনি!
৮) নির্বাচন কমিশনকে নিয়োগ দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন কমিটি, যেখানে চারটি ভোটের কারণে পুরো নির্বাচনের ফল প্রশ্নবিদ্ধ সে চারটি ভোট তদন্তে অথবা ঐ চারটি ভোটের বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির থেকে কোন রকম পরামর্শ বা সহযোগিতা না নিয়ে নির্বাচন কমিশন নিজেদের বিতর্কিত করেছেন।
৯) অন্তর্বর্তীকালীন কমিটির স্বাক্ষর করে দেয়া ভোটার তালিকার বাইরে আরো দুজন ভোটারকে ভোটার তালিকায় কিভাবে অন্তর্ভুক্তি করল নির্বাচন কমিশন?
১০) কোন স্কুল আইডি দিয়ে ভোট দিতে পারবে না বললেও ব্রæকলীন কেন্দ্রে কি করে স্কুল আইডি দিয়ে ভোট নেয়া হলো?
১১) চট্টগ্রাম সমিতির নিজস্ব অফিস থাকা সত্বেও কাউকে না জানিয়ে এমনকি কোন মিডিয়াকেও না জানিয়ে এত বড় গুরুত্বপুর্ণ ভোটের ফল গোপন জায়গা থেকে ফেসবুকের মাধ্যমে কেন ঘোষণা করা হলো?
এ ছাড়া আরো অনেক অনিয়ম নির্বাচন কমিশন করেছে, যা সময়মতো বলা হবে! প্রবাসের সকল চট্টগ্রামবাসী এবং অন্যান্য অঞ্চলের সংগঠনসমুহের নেতৃবৃন্দ, নির্বাচন কমিশন (বাংলাদেশ সোসাইটিসহ) ও সমাজের বিশেষজ্ঞদের কাছে আমার অনুরোধ, যদি আমাদের নির্বাচন কমিশন উপরের সকল প্রশ্ন সমুহের সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারে, তাহলে আপনারা যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমি তা মাথা পেতে নেব। অন্যথায়, গত ২০ অক্টোবর রাত ১১টায় নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত ফল অনুযায়ী চট্টগ্রামবাসীর ভোটে আমি চট্টগ্রাম সমিতির নির্বাচিত সভাপতি। সুতরাং সকলের প্রতি বিনীত অনুরোধ চট্টগ্রাম সমিতিকে আর বাজারে তুলবেন না। আসুন সবাই বসে সমস্যার সমাধান কর। অন্যথায় সংগঠনের ক্ষতির জন্য সংশ্লিষ্ট সকলেই দায়ী থাকবেন বলে উল্লেখ করেন মাকসুদ চৌধুরী।