টুকিটাকি : মামা-ভাগ্নের লড়াই ও আজিজ ফ্যাক্টর!
- প্রকাশের সময় : ০৬:২৩:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ অক্টোবর ২০১৬
- / ৭৯৪ বার পঠিত
সালাহউদ্দিন আহমেদ: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশীদের ‘মাদার সংগঠন’ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ সোসাইটি ইনক নিউইয়র্কের কার্যকরী পরিষদের দ্বি-বার্ষিক (২০১৭-২০১৮) রোববার (২৩ অক্টোবর)। এই নির্বাচনে সাবেক সভাপতি কামাল আহমেদের নেতৃত্বে ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেল ও বর্তমান সভাপতি আজমল হোসেন কুনু’র নেতৃত্বে ‘কুনু-আজম’ পরিষদ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া সোসাইটির সহ সাধারণ সম্পাদক ওসমান চৌধুরী সভাপতি পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। ফলে সোসাইটির কার্যকরী পরিষদের ১৯ পদে ৩৯জন প্রার্থী লড়ছেন। সোসাইটির নির্বাচন ঘিরে প্রার্থীদের প্রাচারণা এখন তুঙ্গে। রাত দিন চলছে প্রচার-প্রচারণা। দিনের কাজ আর রাতের ঘুম হারাম হয়ে গেছে প্রার্থীদের। রং বে রং-এর পোষ্টারে ছেয়ে গেছে বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকা ছাড়াও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, হোটেল-রেস্তোরা।
সর্বোচ্চ ভোটার: ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ সোসাইটির ইতিহাসে এবারই সর্বোচ্চ সদস্য/ভোটার হয়েছেন ১৮ হাজার ৫৫১জন। আর এই ভোটার ফি বাবদ সোসাইটির তিন লাখ ৫৪ হাজার ৬০০ ডলার রেকর্ড পরিমান অর্থ আয় হয়েছে। ইতিপূর্বে ২০০৯-২০১০ সালের নির্বাচনে সর্বাধিক ভোটার ছিলো ১৩ হাজার।
নির্বাচনে আজিজ ফ্যাক্টর!: বাংলাদেশ সোসাইটির বিগত নির্বচনের মতো এবারের নির্বাচনেও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সোসাইটির দুই দুইবারের সভাপতি (সাবেক) এম আজিজ ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছেন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিগত নির্বাচনে এম আজিজের সমর্থনে কুনু-রহিম’ প্যানেল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। সভাপতি পদে কামাল আহমেদ পরাজিত হন। সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী আব্দুর রহিম হাওলাদার জয়লাভ করেন। এবারের নির্বাচনেও এম আজিজ সমর্থন করছেন ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেল। তারা লড়ছেন, সোসাইটির বর্তমান সভাপতি আজমল হোসেন কুনর নেতৃত্বাধীন ‘কুনু-আজম’ প্যানেলের বিরুদ্ধে লড়ছেন । ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেলের প্রতি এম আজিজের পূর্ণ সমর্থণের কথা ওপেন সিক্রেট। আর তাই প্রতিপক্ষ ‘কুনু-আজম’ প্যানেলের একাধিক প্রার্থী, সমর্থক আর শুভাকাংখীর বক্তব্য হচ্ছে ‘আজিজ ঠেকাও’। বিভিন্ন সভা-সমাবেশের এসব বক্তব্য শুনে সচেতন প্রবাসীদের মন্তব্য এবারের নির্বাচনেও আজিজ ফ্যাক্টর!
মামা-ভাগ্নের লড়াই: শুনতে খারাপ বা দৃষ্টিকুটু লাগলেও বাংলাদেশ সোসাইটির এবারের নির্বাচনেও গত বারের মতো ‘মামা-ভাগ্নে’র লড়াই হচ্ছে। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিাকারী দুই প্যানেলের সভাপতি পদপ্রার্থী যথাক্রমে কামাল আহমেদ আর আজমল হোসেন কুনু’র মধ্যকার সম্পর্ক যথাক্রমে মামা-ভাগ্নে। তারা উভয়ই সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার সন্তান। কামাল আহমেদের বাড়ী লাউতা ইউনিয়নে আর কুনুর বাড়ী মুড়িয়া ইউনিয়নে। সোসাইটির গত নির্বাচনে ‘মামা-ভাগ্নে’র লড়াইয়ে মামার বিরুদ্ধে ভাগ্নে জয়ী হয়েছিলেন। কমিউনিটির সচেতন ভোটারগণ এবারও চেয়ে আছেন দুই প্রার্থীর দিকে। তাদের দৃষ্টি এবার কে জিতে মামা না ভাগ্নে?
কুনু-কামালের যত মিল: শুধু বাংলাদেশ সোসাইটি নয়, কমিউনিটির সমাজিক কর্মকান্ডে আজমল হোসেন কুনু আর কামাল আহমেদের মিলের অভাব নেই। তারা উভয়ই সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার সন্তান। তারা উভয়ই যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বিয়ানীবাজারবাসীদের সর্ববৃহৎ সামাজিক সংগঠন বাংলাদেশ বিয়ানীবাজার সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সমিতি সমিতি ইউএসএ’র এবং বৃহত্তর সিলেটবাসীদের সর্ববৃহৎ সামাজিক সংগঠন জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকার সাবেক কর্মকর্তা। কুনু বিয়ানীবাজার সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক আর কামাল বিয়ানীবাজার সমিতির সাবেক সভাপতি। কুনু-কামাল উভয়ই জালালাবাদ এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি। সর্বোপরি তারা বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতিরও দায়িত্ব পালন করেন।
তারা কই? বাংলাদেশ সোসাইটির ৪১ বছরের ইতিহাসে কম-বেশী প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে সবমসয় বিশেষ করে নির্বাচনের সময় যারা বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন, নেতৃত্ব দিয়েছেন বা কারো কারো ভাষায় ‘কারিগর’-এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকেকেই এবারের নির্বাচনে নিরব দেখা যাচ্ছে। ফলে সোসাইটির সচেতন সদস্য/ভোটারদের প্রশ্ন তারা কই? তাদের মধ্যে সোসাইটির সাবেক সভাপতি আওলাদ হোসেন খান ও মুজিব-উর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন খান, ফখরুল আলম ও একে এম ফাজলে রাব্বী প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। এছাড়াও সোসাইটির সাবেক সভাপতি ডা. এম এম বিল্লাহ, ডা. ওয়াদুদ ভূঁইয়া প্রমুখ সাবেক কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতিও অনেকের মুখে মুখে শোনা যাচ্ছে।
সাবেক নেতৃবৃন্দের মধ্যে সক্রিয় যারা: বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক নেতৃবৃন্দের মধ্যে এবারের নির্বাচনে যাদের সরব ও সক্রিয় দেখা যাচ্ছে বা সচেতন মহলে যাদের কর্মকান্ড আলোচিত হচ্ছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন সাবেক সভাপতি এম এ আজিজ, ডা. মোহাম্মদ হামিদুজ্জামান, ডা. মঈনুল ইসলাম মিয়া ও নার্গিস আহমেদ, ট্রাষ্টি বোর্ড সদস্য নাসির আলী খান পল, জামাল আহমেদ জনি, মকবুল রহিম চুনুই, এম এ কাইয়ুম, আলাউদ্দিন ভুলু প্রমুখ।
বর্তমান কমিটির যারা নির্বাচনে নেই: বাংলাদেশ সোসাইটির বর্তমান কার্যকরী পরিষদের কর্মর্তাদের মধ্যে যারা এবার নির্বাচন করছেন না তাদের মধ্যে রয়েছেন সিনিয়র সহ সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান, সহ সভাপতি ফারুক হোসেন মজুমদার, ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক- সৈয়দ এনায়েত আলী এবং কার্যকরী পরিষদের সদস্য সৈয়দ ইলিয়াস খসরু। মিডিয়াতে সম্পৃক্ত হওয়ায় সৈয়দ ইলিয়াস খসরু নির্বাচন থেকে বিরত থেকেছেন বলে জানা গেছে।
নতুন প্রার্থীরা আলোচনায়: বাংলাদেশ সোসাইটির এবারের নির্বাচনে ‘কুনু-আজম’ ও ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক আর স্বতন্ত্র সভাপতি পদপ্রার্থী ওসমান চৌধুরী ছাড়াও দুই প্যানেলের নতুন প্রার্থীরা আলোচনায় স্থান করে নিয়েছেন। এবারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সোসাইটির নেতৃত্বে আসার স্বপ্ন দেখছেন ‘কুনু-আজম’ প্যানেলের সিনিয়র সহ সভাপতি পদপ্রার্থী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজেসেবী শাহ নেওয়াজ, সহ সভাপতি পদপ্রার্থী সাফি আলম (লাল সফি), সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদপ্রার্থী সেলিম ইব্রাহীম, জনসংযোগ ও প্রচার সম্পাদক রিজু মোহাম্মদ, ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক পদপ্রার্থী বাংলাদেশের সাবেক জাতীয় ফুটবলার সম্রাট হোসেন এমিলি, কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্য সারোয়ার খান বাবু, মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, আশরাব আলী খান লিটন, আবুল খায়ের আকন্দ ও ডা. শাহনাজ। অপরদিকে ‘কামাল-রুহুল’ প্যানেল থেকে নতুন প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন- সহ সভাপতি পদপ্রার্থী আব্দুল খালেক খায়ের, সাংগঠনিক সম্পাদক পদপ্রার্থী আবুল কালাম ভূঁইয়া, ক্রীড়া ও আপ্যায়ন সম্পাদক মোহাম্মদ নওশাদ হোসেন, স্কুল ও শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক পদপ্রার্থী আহসান হাবিব, কার্যকরী পরিষদ সদস্য মাইনুল উদ্দিন মাহবুব ও বিশিষ্ট রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী মঈনুল ইসলাম। নতুন প্রার্থীদের মধ্যে শাহ নেওয়াজ, সাফি আলম (লাল সফি), রিজু মোহাম্মদ, সম্রাট হোসেন এমিলি, সারোয়ার খান বাবু, ডা. শাহনাজ, মঈনুল ইসলামের নাম সচেতন ভোটারদের মুখে মুখে বেশী আলোচিত হচ্ছে।