জানাজা অনুষ্ঠানেও হাজারো মানুষের দাবী ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’

- প্রকাশের সময় : ০১:২৮:০৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ অগাস্ট ২০১৬
- / ৬৬০ বার পঠিত
নিউইয়র্ক: দৃর্বৃত্তের গুলিতে নিহত সিটির ওজনপার্কের আল ফোরকান মসজিদের ইমাম আলাউদ্দিন আখুঞ্জি ও অপর মুসুল্লি তারা মিয়ার নামাজে জানাজা ১৫ আগষ্ট সোমবার বাদ জোহর (বেলা পৌনে তিনটা) স্থানীয় মিউনিসিপ্যাল পার্কিং লটে (গ্র্যান্ড এভিনিউ ও গ্রীনমোড় এভিনিউর কর্ণার) অনুষ্ঠিত হয়। নিউইয়র্ক প্রবাসী সর্বস্তরের হাজার হাজার বাংলাদেশী ছাড়াও অন্যান্য দেশের মুসলিম কমিউনিটির বিপুল সংখ্যক মানুষ এই জানাজা নামাজে অংশ নেন। নিহত ইমাম আলাউদ্দিনের পুত্র হাফেজ নাদিম আখুঞ্জি জানাজা নামাজে ইমামতি করেন। এদিকে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র বিল ডি ব্লাজিও জানাজা নামাজ অনুষ্ঠানে যোগ দিকে এই হত্যাকান্ডের বিচারের আশ্বাস দেন।
উল্লেখ্য, গত ১২ আগষ্ট শনিবার বেলা এটা ৫০ মিনিটে মসজিদ স্থানীয় আল মসজিদ ফোরকান মসজিদ সংলগ্ন লিবারটি এভিনিউ ও ৭৯ ষ্ট্রীট-এর কোনায় এই হত্যাকান্ড ঘটে। ঘটনার আগে তারা আল ফোরকান মসজিদে জোহরের নামাজ আদায় করে বাসার দিকে ফিরছিলেন। নিহতের বাড়ী বৃহত্তর সিলেটের হবিগঞ্জ জেলায়। মাত্র তিন বছর আগে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী হয়ে নিউইয়র্কে আনে এবং আল ফোরকান মসজিদের ইমামের দায়িত্ব নেন। আরো উল্লেখ্য, ২০১২ সালের ১১ আগষ্ট এই ওজনপার্র্কেই বাংলাদেশী ফটো সাংবাদিক মিজানুর রহমানকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এরপর ২০১৪ সালে একই এলাকায় নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হন যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের অন্যতম সহ সভাপতি নজমুল ইসলাম। সর্বশেষ ‘হেইট ক্রাইম’-এর শিকার হয়ে প্রাণ দিলেন ইমাম আলাউদ্দিন আকুনজি ও তারা মিয়া।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুর্বৃত্ত বন্দুকধারী গাড়ী থেকে নেমে খুব কাছ থেকে গুলি ছুঁড়লে আলাউদ্দিন মাথায় গুলিবিদ্ধ হন এবং তারা মিয়া বুকে গুলিবিদ্ধ হন। ঘটনাটি হেইট ক্রাইম হিসেবে অভিহিত করেছেন কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ। ঘটনার পর পরই সিটি পুলিশ ঘটনাস্থলে কড়া নিরাপত্তা জোরদার করে তদন্ত শুরু করে। অপরদিকে এই ঘটনায় নিউইয়কের সমগ্র বাংলাদেশী কমিউনিটি প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছে। ঘটনাস্থলে হাজার হাজার বাংলাদেশী তাৎক্ষনিক সমবেত হয়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে প্রকৃত হত্যাকারীকে অবিলম্বে গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেছেন। ঘটনার পরদিন ১৪ আগষ্ট রোববারও আল ফোরকান মসজিদের সামনে দ্বিতীয় দিনের মতো প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে। এছাড়া সোমবার জানাজা অনুষ্ঠানেও হাজার হাজার মানুষ ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ প্লাকার্ড বহন করে এই হত্যাকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানান এবং বিচার দাবী করেন। সমাবেশগুলোতে একটিই শ্লোগান ছিলো ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’।
এদিকে পরিবারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ইমমাম আলাউদ্দিন আখুঞ্জির মরদেহ সোমবার রাতেই জেএফকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একটি ফ্লাইটে ঢাকার উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। ১৭ আগষ্ট বুধবার সকালে তার মরদেহ ঢাকায় পৌঁছার কথা। সেখানে তার স্বজনরা ইমাম আলাউদ্দিনের মরদেহ গ্রহণ করে তার গ্রামের বাড়ীতে নিয়ে গিয়ে দাফন করবেন। অপরদিকে তারা মিয়ার মরদেহ মঙ্গলবার (১৬ আগষ্ট) লং আইল্যান্ডস্থ ওয়াশিংটন মেমোরিয়াল কবর স্থানে দাফন করা হয়।
আল ফোরকান মসজিদেও সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ: ইমাম আলাউদ্দিন ও তারা মিয়া হত্যার একদিন পর ১৪ আগষ্ট রোববারও ওজন পার্কের আল ফোরকান মসজিদের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন আল-ফোরকান মসজিদ কর্তৃপক্ষ’সহ ওজনপার্ক কমিউনিটি ও প্রবাসী বাংলাদেশীরা। এই সমাবেশে ইমাম আলাউদ্দিন আখুঞ্জি ও তারা মিয়া হত্যাকান্ডকে নিউইয়র্ক’সহ যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে ভয়াবহ ও নির্মম বলে উল্লেখ করেন মূলধারার রাজনীতিবিদ’সহ কমিউনিটির নেতারা। বিষয়টিকে ‘হেইট ক্রাইম’ বলে আখ্যা দেন কেউ কেউ। তবে, ‘হেইট ক্রাইম’ বিষয়ে মিশ্র-প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সিটির নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। সমাবেশে বক্তারা বলেন, ঘটনা যাই হোক না কেন, বর্বর এ হত্যাকান্ড কোনভাবেই বরদাশত করা হবে না। প্রতিবাদ সমাবেশ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে এমন হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন সিটি কাউন্সিল স্পিকার মেলিসা মার্ক ভিভরিতা, সিটি কম্পট্রোলার স্কট স্ট্রীংগার, ষ্টেট অ্যাসেম্বলীম্যান ডেভিট ওয়েপ্রীন, কুইন্স বরো প্রেসিডেন্ট মেলিন্ড কাটস, সিটি কাউন্সিলম্যান এরিক আলরিচ ও আই ড্যানিক মিলার প্রমুখ মূলধারার রাজনীতিবিদরা। সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন ইমাম আব্দুল মালেক, জালালাবাদ এসোসিয়েশন অব আমেরিকার সভাপতি বদরুল হোসেন খান, কমিউনিটি অ্যাক্টিভিষ্ট ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার প্রমুখ।
সমাবেশে মূলধারার নেতৃবৃন্দ বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত দু:খজনক। এই ঘটনা নগরীরর পরিবেশকে অসহিষ্ণু ও অস্থিতিশীল করে তুলেছে। আমরা সিটির পরিবেশ নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবো। নিহতরা শ্রদ্ধেয় মানুষ ছিলেন। এই হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচারের জন্য আমরাও লড়াই করবো।
এদিকে নিউইয়র্ক সিটি মেয়র বিল ডি ব্লাজিও ইমাম আলাউদ্দিন আখুঞ্জি হত্যার ঘটনায় গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। এছাড়া ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে দোষীদের গ্রেফতারের মাধ্যমে বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট।
এদিকে ইমাম সহ দু’জনকে লক্ষ্য করে দুর্বৃত্তের গুলির ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলীয় প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘হেইট ক্রাইম’ সংক্রান্ত বক্তব্যের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে বর্ণনা করেছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। আর যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথম কোন মসজিদের ইমামকে হত্যা করা হলো। অপরদিকে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ১৫ আগষ্ট রোববার রাত ১১টার দিকে ব্রুকলীন থেকে ইমাম আলাউদ্দিন ও তারা মিয়া হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত অভিযোগে এক যুবককে গ্রেফতার করেছ।