জাতীয় নির্বাচনে ৫০জন এমপি প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন সহ¯্রাধিক নেতা-কর্মী ॥ ব্যাপক প্রস্তুতি
- প্রকাশের সময় : ০৩:২৫:৫৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারী ২০১৮
- / ১০৪০ বার পঠিত
নিউইয়র্ক (ইউএনএ): বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদের আসন্ন নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ব্যাপক প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচনকালীন সময়ে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে প্রবাসের সহ¯্রাধীক নেতা-কর্মী ৫০জন দলীয় এমপি প্রার্থী’র পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেবেন বলে দলের সাংবাদিক সম্মেলনে দাবী করা হয়েছে। অপরদিকে বড় দল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে কোন বিভেদ-বিভক্তি নেই, তবে দলের অভ্যন্তরে অসন্তোষ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান। উল্লেখ্য, হযরত শাহজালাল (রা:) সহ বারো আউলিয়ার পূন্য ভূমি হিসেবে খ্যাত সিলেট থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের একাদশ জাতীয় সংসদের আসন্ন নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছেন ৩০ জানুয়ারী মঙ্গলবার। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর মধ্য দিয়ে দেশ পেরিয়ে প্রবাসেও দলীয় নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যেনির্বাচনী আমেজ শুরু হয়েছে।
সিটির জ্যাকসন হাইটস্থ পালকি পার্টি সেন্টারে ৩০ জানুয়ারী মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আয়োজিত এক জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে দলীয় নেতৃবৃন্দ বলেন,আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সহ¯্রাধিক নেতা-কর্মী দেশে গিয়ে ৫০জন প্রার্থীর পক্ষে প্রত্যক্ষভাবে কাজ করবেন। এজন্য সকল ব্যয় প্রবাস থেকেইে যোগান দেয়া হবে বলে সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ আজাদ। খবর ইউএনএ’র।
আব্দুস সামাদ আজাদ বলেন, বহুল আলোচিত, প্রত্যাশিত, গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন অত্যাসন্ন। নির্বাচনকে সামনে রেখে স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৫টি উপ কমিটি গঠন করেছে, যে কমিটিগুলোর নেতৃবৃন্দ দেশব্যাপী ব্যাপক সফরের মাধ্যমে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পূর্বে সাংগঠনিক কর্মকান্ড বৃদ্ধি করবে। আমাদের প্রাণপ্রিয় নেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ৩০ জানুয়ারী মঙ্গলবার হযরত শাহজালালের পুণ্যভূমি সিলেট সফরের মাধ্যমে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের প্রচার কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু করেছেন। এই কর্মসূচীকে ধারণ করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যেমে জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী নির্দেশ অনুসরণ করার প্রত্যয় ঘোষনা করছে।
তিনি বলেন, দলীয় সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনা প্রবাসের মাটিতে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের কর্মকান্ডকে সব সময় অতি মাত্রায় মূল্যায়ন করে থাকেন, আর তাই আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করি কিছুটা হলেও তার প্রতিদান দিতে। সেই চেতনায় উদ্ধুদ্ধ হয়েই আমাদের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা কিভাবে আমাদের সন্মিলিত প্রয়াস কাজে লাগাবো তা সবিস্তারে তুলে ধরা হবে। দলীয় হাই কমান্ডের নির্দেশ যথাযতভাবে পালন করেই আমরা সর্বাত্বক প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে নির্বাচন যখন সন্নিকটে হবে তখন প্রাসের এই যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটি বৃহৎ গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নির্বাচনী প্রচারাভিযানে সক্রিয় ভাবে অংশ নিতে স্বদেশ গমন করবেন ।
আব্দুস সামাদ অঅজাদ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে এক হাজারের অধিক প্রবাসীর সমন্বয়ে একটি টিম যাবে ঢাকায় এবং তারা নৌকা প্রতিকের ৫০ প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেবেন। প্রবাসীদের অর্থেই ভাড়া করা হবে ৫০টি বাস/মিনিবাস এবং সবগুলো পোস্টার-ব্যানারসহ প্রচারণায় ব্যবহৃত হবে’।
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশ অনুযায়ী সামনের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিজয় ত্বরান্বিত করতে নিউইয়র্ক, নিউজার্সী, পেনসিলভেনিয়া, কানেকটিকাট, ম্যাসেচুসেটস, ভার্জিনিয়া, ম্যারিল্যান্ড, মিশিগান, ফ্লোরিডা, টেক্সাস, ক্যানসাস, জর্জিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া, আরিজোনা প্রভৃতি অঙ্গরাজ্য থেকে ইতিমধ্যেই আগ্রহী প্রবাসীরা বাংলাদেশে যাবার জন্যে প্রস্তুতি শুরু করেছেন। সকলের তালিকা তৈরী করা হচ্ছে। এই প্রচারাভিযান চালাতে উপ-কমিটি গঠন করা হবে। ‘কারণ, সামনের জাতীয় নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম এবং বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে উঠেছে, তার গতি অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের বিকল্প নেই’।
সাংবাদিক সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ শুধুমাত্র দলীয় প্রার্থীদের পক্ষেই কাজ করবে, অন্যকোন প্রার্থীর জন্য নয়। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে যেখানে আওয়ামী লীগেরই ৪/৫জন করে যোগ্য প্রার্থী রয়েছেন, সেখানে প্রবাস থেকে আমাদের মনোনয়ন পাওয়া সহজ নয়। তবে দল চাইলে প্রয়োজনে আমি আমেরিকান পাসপোর্ট ত্যাগ করে বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে প্রার্থী হবো। দলের জন্য সবকিছু করতে পারি।
প্রবাসীদের মনোনয়ন প্রসঙ্গে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ বলেন, শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, যুক্তরাজ্য সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রবাসীরা এমপি হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। বিগত দিনে যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশে ফিরে গিয়ে একাধিক প্রবাসী আওয়ামী লীগের এমপি নির্বাচিত হয়েছেন, বর্তমান সংসদেও অছেন। আর দল চাইলে সভাপতির (ড. সিদ্দিক) সহযোগিতায় আমরাও প্রার্থী হতে চাই।
প্রবাসীদের ভোটাধিকার সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার দিকে জাতীয় সংসদে আইন পাশ হয়েছে। তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে তিনি বাংলাদেশের ভোটার হয়েছেন এবং দেশে প্রবাসীদের ভোটার হতে কোন বাধা নেই।
অপর এক প্রশ্নের উত্তরে ড. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, দলীয় মন্ত্রী, এমপি, কেন্দ্রীয় নেতাদের মতো প্রবাসের নেতৃবৃন্দ ও প্রবাসীরাও ব্যাংক, ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী, পাওয়ার প্ল্যান্ট সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন এবং সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডে ভূমিকা রাখছেন।
সভাপতির বারবার দেশে যাতায়াতের ফলে দলের অভ্যন্তরীন সাংগঠনিক সঙ্কট বৃদ্ধি ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগ এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সমস্যা সহ দলীয় নেতা-কর্মীদের বহিষ্কারের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ ‘ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণ’ করে কতটুকু সফল হবে এমন এক প্রশ্নেরও জবাবে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বড় দল হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগে কোন বিভেদ-বিভক্তি নেই, তবে দলের অভ্যন্তরে অসন্তোষ রয়েছে বলে শিকার করেন। এসময় তিনি অন্য প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান।
সাংবাদিক সম্মেলনে উল্লেখযোগ্য দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে সহ সভাপতি মাহবুবুর রহমান, সামসুদ্দীন আজাদ ও লুৎফুল করীম, সাংগঠনিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ ও মহিউদ্দিন দেওয়ান, প্রচার সম্পাদক হাজী এনাম, কোষাধ্যক্ষ আবুল মনসুর খান, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম, উপ দপ্তর সম্পাদক আব্দুল মালেক, মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক মিসবাহ আহমেদ কৃষি বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবীদ আশরাফুজ্জামান, প্রবাস বিষয়ক সম্পাদক সোলায়মান আলী, ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান টুকু, কার্যকরী পরিষদ সদস্য শাহানারা রহমান, কফিল চৌধুরী, রফিকুর রহমান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন।
এছাড়াও সাংবাদিক সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উপ দপ্তর সম্পাদক আব্দুল মালেক, নিউইয়র্ক ষ্টেট আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি শেখ আতিক, আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুল হক, রফিকুর রহমান, এডভোকেট মোর্শেদা জামান, মোহাম্মদ আনিসুর রহমান, নূর এ আজম বাবু, যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিক লীগের সভাপতি কাজী আজিজুল হক খোকন, যুক্তরাষ্ট্র যুবলীগ নেতা জামাল হোসেন, সেবুল মিয়া, রহিমুজ্জামান সুমন, নান্টু মিয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।